আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী (রহ.) আমাদের বেহেশতের পথ দেখিয়েছেন-বার্মিংহামে দামেস্কের শায়খ সাইয়্যিদ ফাদি জু’বা
বার্মিংহাম প্রতিনিধি (যুক্তরাজ্য) : সিরাজাম মুনিরা জামে মসজিদ ও অ্যাডুকেশন সেন্টার, বার্মিংহাম, ইউকেতে হযরত আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী (রহ.) এর ১৭তম ঈসালে সাওয়াব উপলক্ষ্যে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কালচারাল অর্গ্যানাইজেশন আহলে মুহাব্বাহ ইউকের উদ্যোগে ১৪ জানুয়ারি বাদ ইশা অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিরিয়া, দামেস্কের প্রখ্যাত শায়খ হাফিজুল হাদিস সাইয়্যিদ ফাদি জুবা ইবেন আলী। বিশেষ মেহমান ছিলেন জর্ডানের শায়খ সালাহ উদ্দিন ইবন সাঈদ আল কুর্দি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শায়খ সাইয়্যিদ ফাদ্বি বলেন, একজন প্রকৃত শায়ক মানুষকে আল্লাহর দিকে নিয়ে যান। যিনি আমলে সালেহ ও দ্বীন শিখান তিনি আমাদের ধর্মীয় অভিভাবক। একজন জন্মদাতা পিতা সন্তানকে পৃথিবীতে আনেন আর একজন শায়খ তার অনুসারিদের বেহেশতের পথ দেখান। আমরা এই মাহফিল থেকে আমাদের শায়খ ও সালেহীনদের জীবন অনুস্মরণ করবো। আমাদের প্রিয় শায়খ আল্লামা আব্দুল লতিফ ফুলতলী তাঁর নিজের জন্য কিছু করেন নি। যদি একান্ত নিজের জন্য করতেন তাহলে তিনি এতো বিখ্যাত হতেন না। তাঁর ইন্তেকালের ১৭ বছর পর আমরা এখানে বসে তার জন্য বিশেষ দোয়া করতাম না। সত্যিকার অর্থে আমাদের প্রফেটের জীবন ও সালেহীনদের জীবন অনুস্মরণ করতে হলে আমাদেরকে শায়খ ফুলতলীকে কপি করতে পারি।
সিরাজাম মুনিরা জামে মসজিদ বামিংহাম ইউকের পরিচালক আলহাজ জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সিরাজাম মুনিরার পরিচালক আলহাজ হাফিজ সাব্বির আহমদ এবং মাওলানা আবুল হাসানের পরিচালনায় মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন লন্ডনের দারুল হাদিস লতিফিয়ার মুহাদ্দিস শায়খ আল্লামা নজরুল ইসলাম, বার্মিংহামের দি ব্রিটিশ মুসলিম স্কুলের প্রিন্সিপাল মাওলানা এম এ কাদির আল হাসান, দারুল হাদিস নর্থওয়েস্টের প্রিন্সিপাল মাওলানা সালমান আহমদ চৌধুরী, ইসলামিক স্কলার মাওলানা বদরুজ্জামান রিয়াদ, ওল্ডহাম শাহজালাল মসজিদের খতিব মাওলানা খায়রুল হুদা খান।
শায়খ সাইয়্যিদ ফাদি আরো বলেন, আমি বাংলাদেশে গিয়ে নিজ চোখে আল্লামা ফুলতলী ছাহেব (র.) এর বিভিন্ন খেদমত দেখে এসেছি। তাঁর বাড়িতে হাজার হাজার ইয়াতিম ছেলেমেয়েদের পদচারণা আমাকে আপ্লত করেছে। আমি দেখেছি শায়খ ইমাদ উদ্দীন নিজ হাতে এতিমদের মধ্যে জিনিসপত্র বিতরণ করছেন, তাদের জামা-কাপড় ধোয়ে দিচ্ছেন। এসব কিছু রাসূল (সা.) এর শিখানো কাজ। আমরা যদি এসব অনুসরণ করি তাতে উপকৃত হবো।
কনফারেন্সে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাদ্দিস আল্লামা নজরুল ইসলাম বলেন, আল্লাহ তাঁর পছন্দের মানুষ দ্বারা দ্বীনের খেদমত করান। যেমন হযরত ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী দ্বারা তাঁর দ্বীনের বিশাল খেদমত করিয়েছেন। তিনি বলেন, বেশি করে ইবাদত-বন্দেগী করবেন। কারণ কিয়ামতের ময়দানে নিজের কাজের হিসাব নিজেই দিতে হবে।
প্রিন্সিপাল মাওলানা এম এ কাদির আল হাসান বলেন, ফুলতলী ছাহেব কিবলা ভারত উপমহাদেশের পরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি শুধু তাসবীহ আর খানকা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন না বরং যখনই দ্বীনের উপর কোন আঘাত এসেছে তখনই তিনি মর্দে মুজাহিদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
ফুলতলী ছাহেব কিবলার নাতী মাওলানা সালমান আহমদ চৌধুরী বলেন, আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত বা অপমানিত করেন। ছাহেব কিবলাহকে আল্লাহ সম্মানিত করেছেন। কারণ তিনি ছিলেন সুন্নতে নববীর প্রকৃত ধারক, বাহক ও প্রচারক। তাঁর প্রতিটি কাজ ছিল সুন্নাহ বেষ্টিত। তিনি মানুষকে সম্মান আর ছোটদেরকে স্নেহ করতেন। এটা রাসুলুল্লাহর শেখানো কাজ। ছাহেব কিবলাহর এতো ব্যস্ততার মধ্যেও আমরা (নাতি-নাতনিগণ) তাঁর স্নেহ, মায়া-মমতা থেকে কিঞ্চিৎ বঞ্চিত ছিলামনা। এটা তাঁর মধ্যে সুন্নতে নববীর অন্যতম উদাহরণ।
শায়খ মাওলানা বদরুজ্জামান রিয়াদ বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের হেদায়াতের জন্যে এ জমিনে পাঠিয়েছিলেন। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তাঁকে দিয়েছিলেন চারটি কর্মসূচি। তিনি যেন তাঁর কুরআনের আয়াতসমূহ মানুষকে তেলাওয়াত করে শুনান, তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেন ও তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন। আমরা দেখেছি আল্লামা ফুলতলী ছহেব কিবলাহ (র.) ও তাঁর জীবনব্যাপী এ কর্মসূচিগুলো আনজাম দিয়ে গেছেন।
অনুষ্ঠানে আজিমুশ্বান মিলাদ, কিয়াম ও কাসিদা পাঠ করেন জর্ডানের শায়খ সালাহ উদ্দিন ইবন সাঈদ আল কুর্দি। এছাড়া অনুষ্ঠানে ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর মুরিদ ৫ প্রবীণকে দৃষ্টিনন্দন ক্যালিওগ্রাফি সম্মাননা উপহার হিসাবে প্রদান করা হয়। তারা হলেন হাজী মৌলভী মো. মকবুল আলী, হাজী মো. রাশিদ আলী, হাজী মো. আমিরুল হক, হাজী মো. আব্দুল বাসিত, হাজী আলতাব উদ্দিন।
মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা হাফিজ করিমুল ইসলাম, তালামীযে ইসলামিয়ার সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা আখতার হোসেন জাহেদ ও মাওলানা দুলাল আহমদ, মাওলানা হুসাম উদ্দিন আল হুমায়দি, মাওলানা আব্দুল বাসিত আশরাফ, মাওলানা নুরুজ্জামান, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, সিলসিলা ইসলামিক সোসাইটি ইউকের পরিচালক আলহাজ গোলাম কিবরিয়া, সাবেক চেয়ারম্যান হাজী এমরান উদ্দিন, হাফিজ দেলাওয়ার হাসান সুমন, ক্বারি আবুল খায়ের, আহলুল মোহাব্বাহ ইউকের পরিচালক ক্বারি মো. মাহফুজ ও মো. হানিফ উদ্দিন, ক্বারি আহমদ আলী ও হাফিজ শামসুল আলম সহ অন্যন্যরা।
এছাড়া ফুলতলী ছাহেব কিবলাহর অসংখ্য মুরিদিন, মুহিব্বিন, ছাত্র-শিক্ষক, ইয়াং চিলড্রেন নারীপুরুষ ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন