আমি মুক্তির জন্য আবেদন করিনি : মুচলেকা দিয়ে মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি, ব্রিগেঃ জেনারেল (অবঃ) আযমী

January 30, 2025,

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস এর “গুম” সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই রিপোর্টে আমাকে যারা গুন্ডাদের মত গায়ের জোরে বেআইনি ও অবৈধভাবে অপহরণ করে বেআইনি ও অবৈধভাবে আটক রেখেছিল তাদের মধ্য হতে “একজন সেনা কর্মকর্তা”র বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, “যেহেতু আযমী একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন, তাই শেখ হাসিনার কাছে তিনি মুক্তি দেয়ার আবেদন জানাতে থাকেন। কিন্তু প্রতিবারই তার আবেদন নাকচ করে হাসিনা”।  সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার “আমি আবেদন করেছিলাম” মর্মে বক্তব্যটি সর্বৈব মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

প্রসঙ্গে প্রথম কথা হলো : আবেদন জানাতে হলে “সেনা কর্মকর্তা” কেন, যে কোন ব্যক্তিই তো আবেদন জানাতে পারেন। আবেদন জানানোর জন্য “সেনা কর্মকর্তা” হতে হবে এ ধরণের কোন বিধান নেই। তাই, এখানে “সেনা কর্মকর্তা দেখে আবেদন” করার বক্তব্যটি হাস্যকর।

দ্বিতীয়ত : আট বছরের বন্দীজীবনে আমি কখনো প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কারো নিকট “মুক্তি”র জন্য কোনো ধরণের কোনো আবেদন করিনি। এটা সকলেই জানেন যে, আমাকে ডিজিএফআই অপহরণ করে ঢাকা সেনানিবাসের পশ্চিম প্রান্তে, কচুক্ষেতে অবস্থিত ডিজিএফআই কমপ্লেক্স এর ভিতরে তথাকথিত “আয়নাঘর” এ দীর্ঘ আট বছর প্রাকৃতিক আলো-বাতাসহীণ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বন্দী করে রেখে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করে সীমাহীন মানসিক নির্যাতন করেছে। সুতরাং, যদি কোন সেনা কর্মকর্তা ‘আমি আবেদন করেছিলাম’ মর্মে বক্তব্য দিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি ডিজিএফআই এর অফিসারই হবেন। আমি বন্দী থাকাকালীন ডিজিএফআই এর ৫ জন ডিজি (যাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়েছে) এবং ডিজিএফআই এর  যেই শাখা আমাকে অপহরণ করে বন্দী করে রেখেছিল সেই শাখার ৫ জন ডাইরেক্টর ছিলেন। আমি যদি মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে থাকি তাহলে এই ১০ জনের মধ্য হতে দুই তা তার অধিক অফিসারের মাধ্যমেই তা প্রধানমন্ত্রীর নিকট পাঠানোর কথা। আমি এই ১০ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, আমি আবেদন করেছি মর্মে যেই দাবী করা হয়েছে সেই ধরণের কোন দলিল/ প্রমাণ আপনাদের নিকট থেকে থাকলে তার মূল কপি জনসম্মুখে প্রকাশ করে আপনাদের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করুন।

আমি জানি আপনারা তা পারবেন না, কারণ আমি কোনো আবেদনই করিনি, এবং এই দাবী শতভাগ মিথ্যা ও নির্লজ্জ মিথ্যাচারের এক নমুনা। এছাড়া, যিনি এ দাবী করেছেন, তিনিও যেহেতু ডিজিএফআই এর কর্মকর্তা, তাই তিনিসহ যেসব কর্মকর্তা আমিসহ আরো যেসব নিরপরাধ ব্যক্তিদের “গুম করা, বিভিন্ন মেয়াদে অবৈধভাবে বন্দী রাখা এবং বন্দীদের উপর নির্যাতন করা”র মত মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, তারা সকলেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাদের সকলের বিরুদ্ধে চরম দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত বলতে আরো বলতে চাই যে, আবেদন করা তো দূরের কথা, বরং আমি তাদের পক্ষ হতে “মুচলেকা দিয়ে মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি”। বন্দী থাকাকালীন বিগত ২৩শে মে ২০২১ তারিখ বিকেলে সেখানকার এক কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন যে, “আমি দেশে থাকবোনা, রাজনীতি করবোনা, নিজের পরিবার নিয়ে বিদেশ চলে যাবো” এই মর্মে একটি মুচলেকা দিলে তারা আমাকে মুক্তি দিতে পারে। আমি সাথে সাথে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছি যে, “আমি স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমি রাজনীতি করবো কি করবোনা, দেশে থাকবো কি থাকবোনা সেটা আমার সিদ্ধান্ত। আমি মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পেতে চাই না”। সেই কর্মকর্তা কয়েকবার বললেও আমি আমার বক্তব্যে অটল থাকি।

আমি ডিজিএফআই এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার এ ধরণের নির্লজ্জ মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা জানাই। ভবিষ্যতে এ ধরণের মিথ্যাচার না করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com