বন্যাদুর্গতের জন্য এনডিএফ’র ত্রাণ তৎপরতা, বন্যা সমস্যার সমাধানে জাতীয় স্বার্থে নদনদী, খাল-বিল খনন করতে হবে

September 4, 2024,

স্টাফ রিপোর্টার : মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনীসহ দেশের অন্তত ১১ টি জেলায় উজানের আকস্মিক ঢলে সৃষ্ট বন্যায় আক্রান্ত জনসাধারণের মধ্যে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের ত্রাণ তৎপরতার অংশ হিসেবে

বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার এলাকায় বন্যাকবলিত জনসাধারণের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহিত জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় তহবিল হতে শতাধিক পরিবারের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে চাল, ডাল, তৈল, লবন, আলু, পিয়াজ বিতরণ করা হয়।

ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি ডাক্তার আব্দুশ শহীদ ও সিলেট জেলা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মো: ছাদেক মিয়া, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মো: নুরুল মোহাইমীন ও সিলেট জেলা কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক রমজান আলী পটু, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক রমজান আলী পটু, জাতীয় ছাত্রদল সিলেট জেলা কমিটির আহবায়ক শুভ আজাদ শান্ত, সিলেট জেলা স’মিল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ সোহেল আহমেদ, চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক হরিনারায়ন হাজরা, শ্রমিকনেতা খোকন আহমদ, রজত বিশ্বাস, আশরাফ উদ্দিন।

ত্রাণ বিরতণের পূর্বে সমবেত জনসাধারণের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নেতৃবৃন্দ বলেন বন্যায় জনসাধারণের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা ত্রাণ দিয়ে কোন পুরণ হবার নয়। জনগণ বন্যা সমস্যা থেকে পরিত্রাণ চায়। তাই বন্যা সমস্যার সমাধানের জন্য জাতীয় স্বার্থে দেশের সকল নদনদী, খাল বিল খনন করতে হবে। নদী দখল, অবৈধ ও অপরিকল্পিত স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। ভাটি এলাকায় আজ বন্যা প্রায় নিয়মিত রূপ নিচ্ছে। এবছর মৌলভীবাজার জেলা তিন দফায় বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। চলতি মাসে আবারও বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তাই বন্যা সমস্যার প্রকৃত কারণ জেনে সমাধানের দাবিতে সোচ্চার হওয়া এখন সময়ের দাবি। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে তাদের শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবারাহ এবং শিল্পজাত দ্রব্যাদি নিজ দেশে প্রেরণ করার উদ্দেশ্যে পাহাড় কেটে, প্রকৃতি ধ্বংস করে এবং নদীর উপর ব্রীজ তৈরি করে গড়ে তোলে রেললাইন। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে নদী শাসনের বৈজ্ঞানিক নিয়মকে প্রয়োগ না করায় নদীগুলোর স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ হয়ে যায়। সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় দেশ বিভাগের পর নয়াঔপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী পাকিস্তানে প্রভু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ক্রুগ মিশনের পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার জন্য গড়ে তোলা ওয়াপদার বাঁধ-বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রতিকূলতা বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসে আছে। তারই ধারাবাহিকতায় নয়াঔপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের স্বার্থে অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিকভাবে রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, ঘরবাড়ী, ইটভাটা, ভূমিদস্যুদের রিয়েল স্টেট ব্যবসা, কলকারখানা, অর্থনৈতিক জোন, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণে ফসলি জমিসহ নদ-নদী, খাল-বিল, প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ ধ্বংস করা হয়। এমন কি কিশোরগঞ্জের হাওরের বুকে চিরে আড়াআড়িভাবে সড়ক নির্মাণ পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করা হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদের দালাল ভারত সরকার কর্তৃক আন্তর্জাতিক নদী আইন ও পানি প্রবাহের প্রাকৃতিক নিয়ম উপেক্ষা করে একতরফাভাবে ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীর উপর ড্যাম, গ্রোয়েন ইত্যাদি নির্মাণ করে শুকনো মৌসুমে পানি আটকে রেখে কৃত্রিম মরুময়তা এবং বর্ষা মৌসুমে পানি ছেড়ে দিয়ে অকাল বন্যা সৃষ্টি করছে। এর পাশাপাশি নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের স্বার্থে অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিকভাবে রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কার্লভাট, ইটভাটা, ভূমিদস্যুদের রিয়েল স্টেট ব্যবসা, কলকারখানা, অর্থনৈতিক জোন, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণে ফসলি জমিসহ নদ-নদী, খাল-বিল, প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ ধ্বংস করা হয়। সাম্রাজ্যবাদী একচোটিয়া পুঁজিপতিরা এবং তাদের দালালদের মুনাফার নিচে বলি দেওয়া হচ্ছে প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশকে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার ও আবহওয়ার পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলসহ বাংলাদেশে। পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতির বেপরোয়া লুন্ঠনের পরিণতি হচ্ছে প্রকৃতির প্রতিশোধ। তাই বন্যা সমস্যার সমাধানের জন্য সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংস করে লুটপাটের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলে বিদ্যমান শোষণমূলক সমাজ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন করে শ্রমিক-কৃষক জনগণের জীবনের নিশ্চয়তাসহ প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশকে উৎপাদন শক্তির বিকাশে পরিপূরক হিসাবে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে অগ্রসর হতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com