কুলাউড়ায় সাবেক মেয়রসহ সংখ্যালঘু, প্রবাসী, যুবদল ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা

March 27, 2025,

বিশেষ প্রতিনিধি : কুলাউড়ায় স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকার পতনের সাত মাস পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় আরেকটি বিস্ফোরক মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ মামলায় কুলাউড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিপার উদ্দিন আহমদকে প্রধান আসামি এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনুকে ২ নম্বর, সাধারণ সম্পাদক আসম কামরুল ইসলামকে ৩ নম্বর ও ভাটেরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলামকে ৫ নম্বর আসামীসহ ৩১ জনের নামোল্লেখ করে কুলাউড়া থানায় মামলাটি (নং-১৭) দায়ের করা হয়। তাছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি আরও ১০০-১৫০ জনকে রাখা হয়েছে।

১৫ মার্চ দিবাগত রাতে ভাটেরা ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা মো. রকিব আলীর ছেলে, জিঙ্গাবাড়ী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হাফিজুর রহমানের ভাই সাইদুর রহমান এ মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে গত ৫ আগষ্টের পর বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় ১০৩ জনের নামোল্লেখ করে কুলাউড়া থানায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়। এদিকে গত ৪ আগস্ট ভাটেরা স্টেশন বাজারে মিছিল করে জনমনে আতঙ্ক ছড়ায় ভাটেরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগ। কিন্তু তাদের মধ্যে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছাড়া আর কাউকে এ মামলায় আসামী করা হয়নি। ৪ আগস্ট ভাটেরার সর্বস্তরের ছাত্র জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলে সাধারণ ছাত্রদের সাথে ছাত্রদল, ছাত্র শিবির ও তালামীযের সদস্যরা অংশ নেন। রাজনৈতিক মামলায় আওয়ামীলীগের নেতা ছাড়াও সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের চারজন সদস্য, টিলাগাঁও ইউনিয়ন যুবদলের এক নেতা, বেশ কয়েকজন শিক্ষক, আল ইসলাহ ও তালামীযে ইসলামীর নেতাসহ অনেক প্রবাসীদের আসামী করা হয়েছে। ওই মামলায় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সাথে অন্য দলের এবং শিক্ষক, প্রবাসী ও নিরীহ ব্যক্তিদের আসামী করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। জানা গেছে, নতুন মামলায় আসামীদের মধ্যে রয়েছেন দুবাই প্রবাসী নুরুল আমিন ও পর্তুগাল প্রবাসী বদরুল আমিন, তালামীয নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ, হরিপুর লতিফিয়া সাত্তার মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক তালামীয নেতা মুজিবুর রহমান ও সহকারী শিক্ষক শাকিল আহমদ, ফ্রান্স প্রবাসী বুলবুল উদ্দিন, সৌদি প্রবাসী রিপন মিয়া, সুজন মিয়া, ফার্মেসী ব্যবসায়ী ও আল ইসলাহ নেতা আবুল হোসেন, ভাটেরার বড়গাঁও সুন্নী জামে মসজিদের ইমাম শামছু উদ্দিন, পর্তুগাল প্রবাসী ফাহাদ আলী, কর্মধার হোসনাবাদ জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুজাহিদুল ইসলাম জামাল, ভবানীপুর ছি.পি দাখিল মাদরাসার সুপার আব্দুস সালাম, শাহজালাল দারুস সুন্নাহ দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক শিপন মিয়া ও আল ইসলাহ নেতা, রবিরবাজারের ব্যবসায়ী সুমেল আরেফিন। এদিকে টিলাগাঁও ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক লোকমান মিয়াকে ৩০ নম্বর আসামী করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় আসামী করা হয়েছে সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের সদস্য ভাটেরা স্কুল এন্ড কলেজের দপ্তরী সুখময় কর শিবের দুই ছেলে রিপন কর ও শিপন কর এবং ভাটেরা সাইফুল তাহমিনা আলিম মাদ্রাসার দপ্তরী রসময় করের দুই ছেলে সুভাষ কর ও নিবাস করকে। ভাটেরা ইউনিয়নের মাইজগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সুখময় কর ও রসময় করের সাথে মামলার বাদী সাইদুর রহমান ও তার পরিবারের দীর্ঘদিন থেকে জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল। এছাড়া ভাটেরা করইতলা গ্রামের দুই প্রবাসী রিপন ও সুজনকেও জায়গা জমির বিরোধের জেরে মামলায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তাদের আসামী করা হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়দের। এদিকে ভাটেরায় ২০২৪ সালে আলোচিত লিল মিয়া হত্যাকান্ডের মামলাটি আপোষ করতে নিহত লিল মিয়ার ভাই আইয়ুব আলীকে ওই মামলায় ৯ নম্বর আসামী করা হয়েছে। মামলার বিষয়ে আইয়ুব আলী বলেন, আমার ভাই লিল মিয়া হত্যার মামলা আপোষ করার জন্য আমাকে হমকি দেয়া হয়েছে যার প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। আমার ভাইয়ের হত্যা মামলাটি যদি আমি আপোষ করি তাহলে আমাকে ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে বলে জানানো হয়। আমি খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বিকেল ৩টায় উপজেলার ভাটেরা স্টেশন বাজারে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সরকার পতনের এক দফা দাবীতে আন্দোলনের জন্য ছাত্র জনতা জড়ো হন।

এসময় মামলার এজাহারে উল্লেখিত আসামীগণসহ অজ্ঞাতনামা ১০০-১৫০ লোক সাবেক মেয়র সিপার উদ্দিন আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু ও সাধারণ সম্পাদক আসম কামরুল ইসলামসহ অন্যদের নির্দেশেআন্দোলনকারীদের উপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রাণে মারার উদ্যেশ্যে হাত পা ভেঙ্গে পঙ্গুত্ব করে এবং গুরুতর রক্তাক্ত জখম করেন। আসামীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করে আন্দোলনকারীদেরকে খুন করে লাশ গুম করার হুমকি এবং রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় আসামী করার হুমকি দেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়। মামলার এক নম্বর স্বাক্ষী ভাটেরার নওয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. শাইস্তা মিয়া মুঠোফোনে বলেন, মামলার বিষয়ে কেউ আমাদের জানায়নি। যাদের স্বাক্ষী দেয়া হয়েছে তারা কেউই কিছু জানেনা। তিন নম্বর স্বাক্ষী সুহেল আহমদ তাঁর ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, কে বা কারা আমাকে স্বাক্ষী দেখিয়ে মামলা করা হয়েছে অথচ আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই যাতে নিরাপরাধ কোন ব্যক্তি অযথা হয়রানির শিকার না হয়। মামলার বাদী সাইদুর রহমান বলেন, মামলা বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা, সব পুলিশ জানে। আর লিল মিয়া হত্যা মামলার আপোষ বিষয়ে আইয়ুব আলীকে আসামী করা প্রসঙ্গেও আমি কিছু জানিনা। জায়গা জমির বিরোধের জেরে ভাটেরার হিন্দু পরিবারের সদস্যদের আসামী করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বলতে পারবো না। কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আপছার মুঠোফোনে বলেন, ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকলে কাউকে অযথা হয়রানি করা হবেনা। মামলায় প্রবাসীদের আসামী করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা জানিনা, বাদি জানেন। তবে ঘটনার সময় যদি প্রবাসীরা প্রবাসে থাকেন তাহলে তারা পাসপোর্টের কপি জমা দিলে তাদের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com