ন্যায্য ভাড়ার তালিকা, স্থায়ী স্ট্যান্ড প্রদান ও ব্যাটারি চালিত রিকশা উচ্ছেদ বন্ধের দাবি
স্টাফ রিপোর্টার: ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধ এবং দ্রব্যমূল্য কমানো, বর্তমান বাজারদরের সমন্বয় করে রিকশা ভাড়া পুণঃনির্ধারণ, রিকশা ও ভ্যান শ্রমিকসহ শ্রমজীবী জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিষপত্রের রেশনিং চালুসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন।
মঙ্গলবার ৩১ ডিসেম্বর রাত ৭ টায় শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে বিভিন্ন আঞ্চলিক কমিটির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ সুহেল মিয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ দুলাল মিয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশ, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের কালেঙ্গা আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ গিয়াস মিয়া, ঢাকা বাসস্ট্যান্ড আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ জসিমউদ্দিন, চাঁদনীঘাট আঞ্চলিক কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাহেল আহমেদ, বড়হাট আঞ্চলিক কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ স্বাধীন মিয়া, মোস্তাফাপুর আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি জসিমউদ্দিন সেবক, জাকির হোসেন, আশরাফুল আলম খোকন প্রমূখ।
সভায় বক্তারা বলেন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির বাজারে রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। রিকশা-ভ্যান শ্রমিকরা প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত প্রখর রোদ ও ঝড়বৃষ্টির মধ্যে অমানুষিক পরিশ্রম করে রিকশা-ভ্যান চালিয়ে দুঃখ কষ্টের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এরকম সময়ে কখনো বিদ্যুত অপচয়, কখনো দুর্ঘটনা, কখনো যানজটসহ নানা অজুহাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ চালানো হয়। অথচ খোদ সরকারের বিআরটির প্রতিবেদনে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র হতে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়।
শহরে যানজট নিরসনে যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ, ফুটপাতের অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং আলাদা লেন ব্যবস্থা কার্যকরের জন্য রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। অথচ ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’ কোন রকম বাছবিচার ছাড়াই দরিদ্্র শ্রমিকদের পেটে লাথি মারার জন্য রিকশা উচ্ছেদ চালানো হয়। কেউ শখ করে রিকশা চালানোর মতো কঠিন পেশায় আসতে চায় না।
নিতান্ত পেটের দায়ে পড়ে এনজিও ও মহাজনের নিকট হতে উচ্চ সুদে ঋণ করে অথবা নিজের শেষ সহায়-সম্বলটুকু বিক্রি করে ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনে জীবন সংগ্রাম চালাচ্ছেন। তারপরও যখন তখন ব্যাটারিচালিত রিকশা ধরপাকড় চলছে এবং ২ হাজার ৮০ টাকা জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।
একদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে অবৈধ বলা হচ্ছে আবার অন্যদিকে ব্যাটারিচালিত এসকল রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক বিক্রিতে কোন বাঁধা নেই, এমন কি এখনও শোরূম খোলে এসব পরিবহণ বিক্রি হচ্ছে। মানুষ হয়ে মানুষকে টেনে নেওয়ার বদলে ব্যাটারিচালিত রিকশায় শ্রমিকরা যেমন তুলনামূলক সহজে কম পরিশ্রমে যাত্রী পরিবহণ করতে পারছেন তেমনি অল্প সময়ের মধ্যে যাত্রী সাধারণের কাছে স্বল্প খরচে আরামদায়ক পরিবহণ হিসেবে এই সকল রিকশা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
বর্তমানে দেশের অনেক জেলায় এমন কি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর, জুড়ী, বড়লেখা উপজেলাতেও ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান অবাধে চলছে, এমনকি অনেক উপজেলাতে পা-চালিত রিকশা প্রায় উঠেই গেছে।
সভা থেকে সম্প্রতি রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মাসিক চাঁদা উত্তোলনের সময় জনৈক নামধারী সাংবাদিকের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে অপপ্রচার চালিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
সভা থেকে শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করে অবিলম্বে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধ, বর্তমান বাজারদরের সাথে তাল মিলিয়ে রিকশা ভাড়া পুণঃনির্ধারণ, যানজট নিরসনে যত্রতত্র অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং বন্ধ, যাত্রী ও শ্রমিকদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত রিকশা স্ট্যান্ড স্থাপন, রিকশা-ঠেলা-ভ্যান শ্রমিকসহ শ্রমজীবী জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিষপত্রের রেশনিং ব্যবস্থা চালু এবং সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানানো হয়।
মন্তব্য করুন