ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি-আরিফুল হক চৌধুরী

February 17, 2025,

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য ও সাবেক সিলেট সিটি করপোরশেনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, এখনও ওই ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর আমলারা সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে রয়েছেন। তারা জায়গা পরিবর্তন করে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গেলেও আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সবকিছু রেকর্ডে রেখেছি। আমরা চাই ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলারা যারা দালালী করেছে তাদের বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করতে হবে।
তিনি আরও বলেন সংস্কারের কথা বলে সময় ক্ষেপন না করে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে অনতিবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আশ^স্ত করবেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র উদ্যোগে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জনদাবীর সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরের উল্লেখিত কথা বলেন।
সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মৌলভীবাজার পৌরসভা চত্তরে জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাজী মুজিবুর রহমান চৌধুরী।
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন- এই মৌলভীবাজারে আমি কেন্দ্রের একটি প্রোগ্রামে এসেছিলাম ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে। আমি তখন দায়িত্ব প্রাপ্ত মেয়র ছিলাম। এখানে সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান ছিলেন। আমাদেরকে সরকারি স্কুলের মাঠের গেইটের সামনে পেটোয়া পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে তারা তাদের ফ্যাসিস্ট কায়দায় আমাদের মিছিলের উপর আঘাত করেছে। মুক্ত অবস্থায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দিতে পারিনি। সেদিন আমাদের সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ আহত হয়েছিলেন। আল্লাহর কি বিচার দেখেন, সেই অবস্থা থেকে আজকে আমরা মুক্ত অবস্থায় এখানে বক্তব্য রাখছি। আর ঐ ফ্যাসিস্ট দলের চেনা ৫/৬ জন উনাদের আমি চিনি আপনারাও চেনেন। উনাদের ওপর বিএনপি এখনো প্রতিশোধ মূলক কোনো ব্যবস্থায় নেয়নি। আমরা ধিক্কার দেই তাদেরকে আজকে তারা সাধারণ জনগনের সামনে মুক্ত অবস্থায় আসতে পারছে না। এর চাইতে কঠিন শাস্তি আর কি হতে পারে? । জনগণ থেকে তারা আজ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
তিনি আরও বলেন আপনারা যারা দায়িত্ব প্রাপ্ত জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দরা আছেন- তাদেরকে বলবো- “আমার খালাতো ভাই, আমার বহুদিনের পরিচিত বন্ধু, এই বলে ফ্যাসিস্টদের সহযোগীতা করার কোন সুযোগ নেই। কারণ তারা তখন ভুলে নাই, তারা আপনার আমার আত্মীয় কুটুম, সেদিন আমাদের কাউকেই তারা ছাড় দেয় নাই। তারা আমাদের এমন কোন নেতাকর্মী নাই তাদের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা থেকে শুরু করে সব কিছু করেছে। কাজেই এব্যাপারে কোনো আপোষ নেই। এবং একই সাথে আমি বলবো বিএনপির যে পরীক্ষীত সৈনিক যারা রাজ পথে আন্দোলনে ছিল, যাদের রক্ত ঝড়েছে, যারা মামলা খেয়েছে। যারা কারাগারে গিয়েছে। তাদেরকে যেন আপনারা মূল্যায়ন করেন। হঠাৎ শুভ বাতাস বইছে আর হঠাৎ করে জার্সি পরিবর্তন করে বললেন আমার মতো খাঁটি বিএনপি আর কেউ নাই এদের যেন বিএনপির মধ্যে জায়গা না হয়।
তিনি আরও বলেন আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা আমাদের বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনে মিশে যাওয়া যে পায়তারা করছে এ বিষয়ে সকলে সজাগ দৃষ্টি রাখতে। কোন অবস্থাতেই যাতে আমাদের সংগঠন ঢুকে মানুষের কাছে বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ তারা না করতে পারে। তিনি বলেন- আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীদের তারেক রহমানের নির্দেশিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে সকলে মাঠে ময়দানে কাজ করতে হবে। দলের ভেতর বিভাজন সৃষ্টি করা যাবে না। আগামী নির্বাচনে দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার জন্য কাজ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য এম নাসের রহমান বলেন এখন আড়ালে থাকা অনেক লোকদের আলখেল্লা পরিয়ে নেতা বানানোর চেষ্ঠা চালানো হচ্ছে। ৩ সপ্তাহের আন্দোলনে নিশ্চয় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পড়ে যায়নি। এটা কোনো মাকালও বিশ্বাস করবেনা। ৩৬ জুলাই ছাত্ররা সামনে থাকলেও নেপথ্যের ভূমিকায় ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই আন্দোলনে বিএনপির ৮২৪ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। আমরাতো অন্যদের মতো এই সাইনবোর্ড নিয়ে ঘুরাচ্ছিনা বা বড়াই করছিনা। ১৮ বছর কারা মাঠে ঘাটে ছিলো তা সবাই জানেন।
জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপনের পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মৌলভী ওয়ালী সিদ্দিকী, এড্যাভোকেট সুনিল কুমার দাস, আলহাজ্ব মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক, সিলেট জেলা বিএনপির নেতা সাদিকুর রহমান সাদিক, মো: ফখরুল ইসলাম, বকশী মিছবাহ উর রহমান, বদরুল আলম, মুজিবুর রহমান মজনু, মারুফ আহমদ,শ্যামলী সুত্রধর, পৌর বিএনপির আহবায়ক সৈয়দ মমসাদ আহমদ, যুগ্ম আহবায়ক সারোয়ার মজুমদার ইমন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এম এ মুহিত, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহানসহ জেলা ও উপজেলা বিএনপিরআহবায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীরা।
স্থানীয় পৌরসভা চত্বরে বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া সমাবেশ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সমাবেশে জেলা সদর ছাড়া প্রতিটি উপজেলা থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com