মৌলভীবাজারে চাঞ্চল্যকর লক্ষণ পাল হত্যা মামলায় ৭ আসামির যাবজ্জীবন কারাদন্ড

স্টাফ রিপোর্টার : চাঞ্চল্যকর লক্ষণ পাল হত্যা মামলায় ৭ আসামির যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেছেন মৌলভীবাজার জেলা জজ আদালতের সিনিয়র দায়রা জজ মোঃ খাদেম উল কায়েস। আজ দুপুরে রায় দেন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক। একই রায়ে আসামীদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০২১ সালের ১২ মার্চ তারিখে শ্রীমঙ্গল শহরের সেন্ট্রাল রোডস্থ শাহাদাত আলী মার্কেটের মা ভেরাইটিজ স্টোরের মালিক লক্ষণ পাল তার দোকানের পাওনা টাকা আদায়ের জন্য রাজনগর উপজেলার মোকাম বাজার ও আজাদের বাজারে যান। ওখানকার ব্যবসায়ীদের কাছে তার দোকানের বাকী পাওনা টাকা সংগ্রহের জন্য। ফেরার পথে আজাদের বাজার আসার পর পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা খুনিরা সিএনজিতে ছদ্মবেশে যাত্রী সেজে তার সাথে উঠে। রাত অনুমান ১০ টার দিকে আজাদের বাজার হতে রাজনগর আসার পথে রাস্তায় লক্ষণ পাল কে আজাদের বাজার ও রাজনগর মধ্যবর্তী স্থানে হত্যা করে। লাশ রাস্তায় ফেলে রেখে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা লুটে নিয়ে যায় খুনিরা।
পরবর্তীতে খবর পেয়ে রাজনগর থানা পুলিশ কর্ণীগ্রাম এলাকা থেকে লক্ষণ পালের লাশ উদ্ধার করে থানা নিয়ে আসে। লক্ষণ পালের স্ত্রী রানী পাল শিমুল ও ভাই স্বপন পাল (৫০) খবর পেয়ে রাজনগর থানায় এসে লাশ সনাক্ত করেন। ঘটনা পরদিন লাশ সনাক্ত হওয়ার পর লক্ষণ পালের ভাই স্বপন পাল বাদী হয়ে রাজনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে রাজনগর থানার পুলিশ তদন্তে রবীন্দ্র দেবসহ সাতজনের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
ব্যবসায়ী লক্ষণ পাল (৪০)। পাওনা টাকা না দিতেই পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়। এই হত্যা কান্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলো রাজনগর উপজেলার উত্তর ঘরগাঁও গ্রামের রনজিত দেবের ছেলে রবীন্দ্র দেব। তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার মুড়াকরি গ্রামে।
নিহত লক্ষণ পাল প্রায় ১৫ বছর থেকে শ্রীমঙ্গল শহরে ব্যবসা করতেন। তার স্ত্রী পূর্ণিমা রানী পাল শিমুল (৩০) ও মেয়ে সৃষ্টি রানী পাল (০৪) সহ কলেজ রোডে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
দীর্ঘ শুনানী ও সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে মৌলভীবাজার জেলার সিনিয়র দায়রা জজ মোঃ খাদেম উল কায়েস এ রায় দেন। আসামি রিয়াদ মিয়া, রবীন্দ্র দেব, জয়নাল আবেদীন, ইকরাম উদ্দিন, সবুজ মিয়া, জালাল মিয়া ও মাসুদ আহমদ এর বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধ সন্দেহাতীত ভাবে দোষী সাব্যস্ত ক্রমে তাদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। বাদী পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন দায়েরা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট ড. আব্দুল মতিন চৌধুরী এবং আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট মোঃ সানোয়ার হোসেন। এই মামলায় রিয়াদ মিয়া ও রবেন্দ্র দেব জেল হাজতে থাকলেও সাজাপ্রাপ্ত অন্য ৫জন আসামীরা পলাতক রয়েছেন।
মন্তব্য করুন