শ্রীমঙ্গলে বরুণা মাদরাসার আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলনে মুসল্লিদের ঢল
এহসান বিন মুজাহির : কুতবে দাওরান, মুজাদ্দিদে যামান আল্লামা লুৎফুর রহমান শায়খে বর্ণভী (রহ.) প্রতিষ্ঠিত ও ফেদায়ে ইসলাম শাইখুল হাদিস আল্লামা শায়খ খলীলুর রহমান হামিদীর (রহ.) স্মৃতিবিজড়িত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী জামেয়া লুৎফিয়া আনোয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণা মাদরাসার আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন শুক্রবার শেষ রাতে বিশেষ জিকির ও আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে।
বরুণা মাদরাসার ছদরে মুহতামিম মাওলানা শায়খ সাইদুর রহমান হামিদির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিলেট বিভাগের সর্ববৃহৎ এই মহাসম্মেলনে দেশের বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা শুক্রবার সকাল থেকেই মাদরাসা ময়দানে এসে জমায়েত হতে থাকেন। এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শ্রীমঙ্গলের বরুণা ও আশপাশা এলাকায় আলাদা এক উৎসবের আমেজ বিরাজ করে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই।
বিশেষ করে বরুণার ছালানা ইজলাসের মাঠে সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় জুমআর জামাতে শরীক হতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আলেম-ওলামা, ইমাম-খতিব, বুজুর্গ, বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা, সাধারণ মানুষসহ হজরত শায়খে বর্ণভীর (রহ.) মুরিদানের ঢল নামে বরুণা মাদরাসা ময়দানে। গতকাল সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বড় জুমআ বরুণা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জুমআর নামাজে ইমামতি করেন বরুণা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শায়খ বদরুল আলম হামিদী। বাদ জুমা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জিকির আসকারসহ বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগিতে বরুণা মাদরাসা ময়দান এক পবিত্র পুণ্যভূমিতে পরিণত হয়।
শুক্রবার শেষরাতে লাখো মানুষের জিকিরে বিমোহিত হয় আল্লাহু আল্লাহু ধ্বনি। শেষরাতে দেশ-জাতির শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন বরুণার পীর, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী।
ছালানা ইজলাসে মুসল্লিরা রবের প্রার্থনায় দুই হাত তুলে কান্নায় আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। এসময় আমিন আমিন ধ্বনিতে ইজলাস ময়দানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
অনুষ্ঠিত মহাসম্মেলনে বয়ান পেশ করেন ভারত থেকে আগত আওলাদে রাসূল (সা.) আল্লামা সায়্যিদ আসজাদ মাদানী, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী, শায়খুল হাদিস হাফেজ আল্লামা ওলিউর রহমান বর্ণভী, মাওলানা আবদাল হোসেন খান,
বরুণা মাদরাসার ছদরে নায়েবে মুহতামিম মাওলানা শেখ নূরে আলম হামিদী, মুফতী জসীম উদ্দীন, হাটহাজারী,
মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী, হাফিজ শায়েখ মুহসিন আহমদ সাহেবজাদায়ে শায়খে কৌড়িয়া, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসিমী, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা শুয়াইব আহমদ আশ্রাফি, মাওলানা উবায়দুর রহমান হুজাইফি, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আব্দুস সবুর, খেলাফত মজলিসের যুগ্ন মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, শেখবাড়ি জামিয়ার ভাইস প্রিন্সিপাল হাফিজ মাওলানা শেখ আহমদ আফজল বর্ণভী, হাফিজ মাওলানা সাদ আমীন বর্ণভী, রাজনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আহমদ বিলাল, মাওলানা মুজিবুর রহমান মুজাহিদ প্রমুখ।
১৯৪১ সালে বরুণা মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন আল্লামা শায়খ লুৎফুর রহমান বর্ণভী। বরুণা মাদরাসায় দারুল উলুম দেওবন্দের সিলেবাস অনুসরণের পাশাপাশি কম্পিউটার প্রক্ষিণ, কারিগরি শিক্ষা ও ইলেকট্রিকসহ বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়। দ্বীনি এই প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক উন্নয়ন ও মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। এই মাদরাসার উদ্যোগে সমাজের গরিব ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণের পাশাপাশি টিউবওয়েল, সেলাই মেশিন ও প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইল চেয়ার বিতরণ করা হয়। বরুণা মাদরাসার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে মসজিদে আবু বকর। এখানে একসঙ্গে ৭ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। এত বড় মসজিদ সিলেট বিভাগে আর নেই। বর্তমানে বরুণা মাদরাসার সদরে মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা শায়খ সাইদুর রহমান বর্ণভী। আর নায়েবে সদরে মুহতামিম হলেন মাওলানা শেখ নুরে আলম হামিদী ও প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা শেখ বদরুল আলম হামিদী।
মন্তব্য করুন