১০ দিন থেকে বন্যার পানিতে প্লাবিত কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-দুর্ভোগ লাঘবে, স্বেচ্ছাশ্রমে হাসপাতালের সম্মুখে ভাসমান সেতু
মাহফুজ শাকিল॥ মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে কুলাউড়া উপজেলা একটি সর্ববৃহৎ উপজেলা। এই উপজেলার প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল হলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। কিন্তু গত কয়েকদিনের বন্যায় কুলাউড়ার ৭টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার সাথে তলিয়ে গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। বন্যায় মানুষের জীবনরক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রবেশ মুখে রাস্তায় হাঁটুপানি। এমন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে পানিময় দুর্ভোগের কথা মাথায় নিয়ে যে কেউই বিরত থাকেন এরূপ বন্যায় স্বাভাবিকভাবে চলাচলের ক্ষেত্রে। এই হাঁটুময় পানির দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীর উদ্যোগে এমন বাঁশকাঠযুক্ত সেতু তৈরি পরিকল্পনা। আগত রোগীরা যেনো স্বাচ্ছন্দ্যে হাসপাতালে আসতে পারেন তার জন্য ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নেন কুলাউড়ার তিনজন ব্যবসায়ী। তারা হাসপাতালের সম্মুখে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করেছেন ৩০০ ফুট লম্বা ভাসমান সেতু। বেশ কয়েকটি প্লাস্টিকের খাঁচার ওপর বাঁশকাঠ লোহা ও রশি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। যাতে করে অনায়াসে লোকজন তার ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন।
এরআগে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় দীর্ঘদিন হাসপাতাল সড়কটি জলমগ্ন ছিল। তখন বাজারের ব্যবসায়ী ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আখই, প্রমিজ ষ্টিল হাউসের স্বত্ত্বাধিকারী ইকবাল হোসেন সুমন ও কেবি এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল কাইয়ুম মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ভাসমান সেতু তৈরি করে প্রশংসিত হয়েছিলেন।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকালে কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানের আহ্বানে কুলাউড়া বাজারের ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন সুমন ও আব্দুল কাইয়ুম এর অর্থায়নে সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়। ধীরে ধীরে কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের সদস্যরাও এগিয়ে আসেন। তাদের ঐকান্তিক সহায়তায় নির্মিত হয় সেতুটি।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কুলাউড়া শহরের প্রধান সড়কের হাসপাতাল প্রবেশ থেকে হাসপাতালের ভেতর পর্যন্ত প্রায় ২৫০-৩০০ ফুট লম্বা ভাসমান সেতুর কাজ চলছে। আর সেতুর ওপর দিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা যাতায়াত করছেন। অন্যদিকে জরুরী চিকিৎসা নিতে আসা রোগী-স্বজনরা সেতুর পাশ দিয়ে রিকশা ও ভ্যানগাড়ি দিয়ে চলাচল করছেন। এতে তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এসময় কথা হয় কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব করেরগ্রাম এলাকার বাসিন্দা কইতরী বেগমের সাথে। তিনি বলেন, গত তিনদিন ধরে আমার নাতি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি করাই। তখন হাসপাতালের সামনে প্রচুর পানি থাকায় অনেক কষ্ট করে হাসপাতালে যাই নাতিকে দেখতে। কিন্ত এখন সেতুটি তৈরি করার কারণে দূর্ভোগ ছাড়াই চলাচল করতে পারবো। যারা সেতুটি তৈরি করেছেন তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ জানাই তাদের উদ্যোগের জন্য।
কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আখই জানান, গত ১০ দিন ধরে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে হাসপাতাল এলাকাটি। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। বন্যার পানিতে হাসপাতাল সড়কটি তলিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কেউই এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেননি। হাসপাতাল এলাকাটি প্লাবিত হলে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনায় পানি দূষিত হওয়ার কারণে এই পানি মাড়িয়ে যারা চলাচল করছেন তারা চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষের এই কষ্ট লাগবে ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বানে এই ভাসমান সেতু স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে কিছুটা হলেও সহজ হবে যাতায়াত ব্যবস্থা। আমরা আশা রাখছি, অচিরেই স্থায়ীভাবে এই দুর্ভোগ লাগবে সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন রাস্তাটি উঁচুকরণের উদ্যোগ নেন। আর যাতে আগামীতে আমাদের এ ধরণের সেতু তৈরি না করতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌস আক্তার বলেন, এই সেতুটি খুবই ভালো এবং সময়োপযোগী উদ্যোগ। আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রচুর রোগী ও তাদের স্বজনদের জন্য যথেষ্ট সুবিধা হয়েছে। তিনি বলেন, গত অর্থবছর হাসপাতালের সামনে ড্রেন ও সড়ক উঁচুকরণের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও সেটির কোন সুরাহা হয়নি। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে অবহিত করেছি। হাসপাতাল আঙ্গিনা প্রধান সড়ক থেকে প্রায় দেড় ফুট নিঁচু হওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ড্রেন ও রাস্তা উঁচু করলে এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবেনা।
মন্তব্য করুন