হাকালুকি হাওরপারে বোরো কাটার ঘুম, কৃষক পরিবারে নবান্নের উৎসব

আব্দুর রব : হাকালুকি হাওরপারের বড়লেখা উপজেলা অংশে এবার বোরোর ভাল ফলনে কৃষকের মূখে হাসি ফুটেছে। প্রতিকুল আবহাওয়ায় শিলাবৃষ্টি, ভারিবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলের শঙ্কার মধ্যেও কৃষকরা ইতিমধ্যে প্রায় ৫৫ ভাগ ধান কর্তন সম্পন্ন করেছেন। হাওরপারের কৃষকের ঘরে ঘরে এখন চলছে নবান্নের উৎসব। আরও এক সপ্তাহ কোনো দুর্যোগ না হলে কৃষকরা শতভাগ বোরো ধান গোলায় তোলতে পারবেন বলে তারা আশাবাদি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, এবার উপশী প্রণোদনার আওতায় সরকারিভাবে বড়লেখার ৩৮০০ প্রান্তিক কৃষকের প্রতিজনকে ৫ কেজি করে উফশী জাতের বোরো ধানের বীজ, ১০ কেজি করে ডিএপি ও এমওপি সার এবং ২০০০ কৃষকের প্রতিজনকে হাইব্রিড প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ২ কেজি করে হাইব্রিড বোরো ধানের বীজ বিতরণ করা হয়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, হাকালুকি হাওরের বড়লেখা উপজেলা অঞ্চলে এবার ৩ হাজার ৬শ’ হেক্টরে বোরোর আবাদ হয়েছে। সাড়ে ২২ হাজার মে. টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও ভাল ফলনের কারণে তা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণত ১ লা মে বোরো ধান কাটা শুরু হয়ে থাকে। কিন্তু আগাম ফলরে কারণে এবার পহেলা বৈশাখ ধানকাটার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে উপজেলা কৃষি বিভাগ। সরেজমিনে হাকালুকি হাওরপারের তালিমপুর ইউনিয়নের হাল্লা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা প্রফুল্ল মনে ধান কাটছেন। কেউবা ক্ষেতের কিনারায় মাড়াইয়ের জন্য স্তুপ করছেন। গ্রামের বোরো চাষি রিয়াজ উদ্দীন, সুলেমান আহমদ, বিলন আহমেদ, আব্দুর রহিম, স্বপন আহমদ প্রমুখ জানান, এবার ধানে অন্য বছরের তুলনায় চিটা অনেক কম। রমজানের শেষদিকের বৃষ্টি ধানের খুবই উপকারে আসে। থোড় বের হওয়ার আগে বৃষ্টির সাথে শিলাবৃষ্টি হলেও ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে প্রায় প্রতিদিনই তারা ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশংকায় ছিলেন। দুর্যোগের আশংকার মধ্যেও ইতিমধ্যে তারা প্রায় ৫৫ শতাংশ ধান ঘরে তোলেছেন। প্রান্তিক বোরো চাষি সেলিম উদ্দিন জানান, তিনি ১২ বিঘা জমি চাষ করেছেন। প্রতিকুল আবহাওয়ার শঙ্কার মধ্যেও প্রায় অর্ধেক ধান কেটে ফেলেছেন। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার অনেক ভাল ফলন হয়েছে। এবার আগাম বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কারো কাচা-পাকা ধান তলিয়ে যায়নি। কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, কৃষি অফিস থেকে বীজ ও সার সহায়তা নিয়ে তিনি ২২ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছিলেন। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা সব সময় তাদের পরামর্শ দিয়েছেন। ভাল ফলন হওয়ায় গ্রামের প্রত্যেক কৃষক বাড়িতে উৎসব বিরাজ করছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বিন হাফেজ জানান, বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওর অঞ্চলে ৩৬০০ হেক্টর ও নন-হাওড় অঞ্চলে ২০০০ হেক্টরসহ মোট ৫৬০০ হেক্টর জমিতে এবার বোরোর অবাদ করা হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৩৪ হাজার মেট্টিক টন নির্ধারণ করা হয়। প্রতিকুল আবহাওয়ার শঙ্কার মধ্যেও কৃষকরা প্রায় ৫৫ ভাগ ধান কর্তন সম্পন্ন করছেন। আরো এক সপ্তাহ সময় পেলে শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন করা যাবে বলে তিনি আশাবাদি। ফলন ভাল হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্তব্য করুন