জ্ঞান তাপস গবেষক শিক্ষাবিদ ডক্টর হুমায়ুন কবির, আকবরপুর থেকে বাংলাদেশ, সফল শিক্ষা ও মানব জীবন যার সুস্ব্যাস্থ দীর্ঘায়ূ ও কল্যান কামনায়
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের মহান ¯্রষ্টাও পরিচালক- দোজাহানের খালিক-মালিক-সর্ব শক্তিমান আল্লাহ তায়াল ফেরেশতা জ্বিরাইল আঃ সাঃ মারফত রাসুলে খোদা খাতিমুন্নাবীয়ীন স্যাঈয়েদুলমুরছালিন মহানবী মাহামনব মোহাম্মাদ মোস্তাফা (দূঃ)র নিকট প্রথম যে,- বানীটি প্রেরন করেছিলেন তা ছিল-ইকরা-পাঠকরা। কালামুল্লা আলকোরআনে আল্লাহ বলেন-“ইক্রা বিছমি রাব্বুকাল লাজি খালাক্ক- খালাকাল ইনছানা মিন আলাক্ক-”। মহাপবিত্র ইসলাম ধর্মের বিধান মোতাবেক মানুষকে বলা হয়েছে আশরাফুল মাখলুখাত”- সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব। সনাতনী শাস্ত্রানুসারে মানুষকে বলা হয়েছে “নর রুপী নারায়ন”। মানুষের শিক্ষাও জ্ঞান, মেধাও মনন, প্রজ্ঞা ও পান্ডিত্য মানুষকে শ্রেষ্টত্বের এই আসনে বসিয়েছে। পঞ্চাশের দশকের শুরুতে পল্লী প্রধান তৎকালীন পূর্ব বাংলায় পল্লী অঞ্চলে এখনকার মত লেখাপড়ার এত চর্চাও প্রচলন শিক্ষা আন্দোলন বেগবান ও গতিশীল ছিল না। গ্রামঞ্চলে নামকাওয়াস্তে প্রাইমারি শিক্ষা এবং দীনহীন ভাবে ধর্মীয় মক্তবী শিক্ষার ছিটে ফোটা প্রচলন চর্চা ছিল তাও অধিকতর বিত্তবান ও অভিজাত সম্প্রদায়ের মাঝে। ষাটের দশকের শুরুতে যখন বাঙ্গাঁলি জাতীয়তা বাদী আন্দোলনের কিঞ্চিত জোয়ার মফস্বল পর্য্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে তখন পাক সামরীক স্বৈর শাসক স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শফল আয়ুবী স্বৈর শাসনামলে আমাদের জাতীয় জীবনে যখন ঘোর অন্ধকার চরম নৈরাজ্য ও নৈরাশ্য, বাংলাও বাঙ্গাঁলির আশ আকাংখার বিমূর্ত প্রতীক বাঙ্গাঁলি জাতীয়তা বাদী আন্দোলনের মহাননেতা বঙ্গঁশার্দুল শেখ শেখ মুজিব বার বার কারাগারে, ডি.পি.আর, এবডো, প্রডো-জাতীয় কালাকানুন জারীকরে পাক জঙ্গীঁসরকার গতিশীল-গনমুখী রাজনীতি এবং জনজীবন স্তব্দ, বিপর্য্যস্থ, বেহাল ও নাজেহাল করে রেখেছে তখন তৎকালীন ছাত্র প্রিয় সংঘটন ছাত্রলীগ এবং সাংস্কৃতিক সংঘটন পূর্ব পাকিস্তান শিল্প ও সাহিত্য সংঘের মাধ্যমে আমরা কতেক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংঘটক আমাদের ছোট এই মহকুমা শহরকে স্বরগরম রাখার চেষ্টা করতাম। আমার সহপাঠি বন্ধুদের মধ্যে আজিজুলহক ইকবাল, দেওয়ান গোলাম ছবোওয়ার হাদিগাজি এবং হারুনুর রশীদ ছাত্রলীগ করতাম ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলাম। আমি প্রথমে কলেজ শাখা ছাত্র লীগ অতঃপর মহকুমা শাখা ছাত্রলীগ এবং শিল্প ও সাহিত্য সংঘের সভাপতি ছিলাম। মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরী কেন্দ্রীক আমরা ক্ষুদ্রাকারে হলেও মুক্ত বুদ্ধির আন্দোলন চালাতাম। মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরীর দক্ষিনাংশে পাকাদেয়াল সমেত মাঝারি আকারের চৌ চালা টিনের ঘরে ছিল মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব। তৎকালীন সময় মফস্বল পর্য্যায়ে এটি ছিল দ্বিতীয় স্থায়ী প্রেসক্লাব।আমার সহপাঠি ও বিশিষ্ট বন্ধু আজিজুলহক ইকবাল এর সাহিত্য ও সাংবাদিকতায়-বক্তৃতায় বেশনাম ডাক হয়েগিয়ে ছিল। মহকুমা সদরের আদিও স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে আমাদের একটি আলাদা মর্য্যাদাও অবস্থান ছিল। আমাদের পৈত্রিক বাসাবাড়ি ও ছিল। আমার ও ইকবালের পৈত্রিক বৈঠক খানা আমাদের বারোয়ারি আড্ডা, অস্থায়ী দলীয় দপ্তর কাম ক্লাব গৃহ হিসাবে ব্যবহৃত হত। আমাদের কাছে তখন মফস্বল থেকে সাহিত্য সংস্কৃতি এবং ছাত্র লীগ কর্মিরা আসতেন। তখন এখনকার মত টাকা পয়সা ব্যবসাবানিজ্যের এত ছড়া ছড়ি না থাকলেও একটা প্রান প্রাচুর্য্য মায়ামমতা ছিল। ছোট মহকুমা শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দুরে ছায়াসু-নিবির শান্তির নীড় আকবরপুর গ্রাম। এই গ্রামের মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারের সু-সন্তান আমাদের বয়োঃ কনিষ্ট হুমায়ুন কবির। ছাত্র রাজনীতির চাইতে লেখাপড়া এবং গবেষনার প্রতি অধিক উৎসাহী শ্যামলা চেহারার বিনয়ী ও স্বজ্জন হুমায়ুন কবিরকে আমাদের ভালো লাগত। বাল্য কৈশোর কালেই তাঁর শিক্ষানুরাগ শিষ্টাচার ও সৌজন্য বোধ আমাকে বিমুগ্ধ করত। তার সদিচ্ছা অধ্যবসায় দেখে মনেহত এই ছেলে একদিন একটা কিছু হবে। উনসত্তোরের ছাত্র গনআন্দোলন, ইতিপূর্বেই আমার গ্রেজুয়েশন শেষে মাষ্টার্স অধ্যয়নে পিতা-মাতার ইচ্ছায় ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্ত্তি, একাত্তোরে মহান মুক্তিযুদ্ধ-আমার দেশত্যাগ ভারতবর্ষ গমন ও মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে আকবরপুরের হুমায়ন কবির এর সঙ্গেঁ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, দেখা সাক্ষাত ও আর হয়নি। স্বাধীনতা উত্তর কালে ঢাকাই সংবাদিকতা ও রঙ্গীন জীবন পিছনে ফেলে ঘরের ছেলেঘরে ফিরে আসি। পেশাগত ভাবে যোগদেই মৌলভীবাজার জেলা বারে। সহকর্মি হিসাবে পাই আকবরপুর নিবাসী বিশিষ্ট আইনজীবি অগ্রজ প্রতিম এডভোকেট মোহাম্মদ ইছমাইল। অতঃপর অনুজ প্রতিম এডভোকেট গবিন্দমোহন পালকে। আমার বিয়ের পর ভায়রা ভাই হিসাবে পাই মোঃ আব্দুল গফুরকে। আকবর পুরের সু-সন্তান গবেষক ও জ্ঞান তাপস ডক্টর হুমায়ুন কবির এর খূজ খবর পেতে আর অসুবিধা হয় না। জেনে আনন্দ হই ডক্টর হুমায়ুন কবির কৃতিত্বের সাথে অধ্যাপনা করছেন। গবেষনা মূলক গ্রহ্ণ রচনা করছেন। এ হপ্তায় কয়েক যুগ পর দেখা আমার প্রিয়জন হুমায়ুন কবির এর সঙ্গেঁ। সাক্ষাত করে তার বাড়িতে দাওয়াত দিলেন একটি শিক্ষাট্রাষ্ট্রের শুভানুষ্টানে। শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় ভাবি বেগম সুফিয়া ইসমাইল ও আকবর পুরের শুভানুষ্টানে প্রধান মেহমান হিসাবে যেতে আমন্ত্রন জানালে আমি সম্মতি না দিয়ে পারি না। বাসায় এসে পাই স্বয়ং ডক্টর হুমায়ুন তার আধাডজন গবেষনা গ্রহ্ণ বাসায় এস উপহার দিয়ে গেছেন। গ্রহ্ণ গুলির মধ্যে” কেন্টনমেন্টের আদি শিক্ষা প্রতিষ্টান ইউনিট স্কুল ১৯৩৯ থেকে শহীদ বীর বিক্রম রামিজ উদ্দিন কেন্টনমেন্ট স্কুল ও ডিগ্রী কলেজ, শিক্ষা সংস্কৃতি সমাজ ও সাহিত্য, এক নম্বর শহীদ মান্নান লাইন, চর্য্যাপদ ও অন্যান্য লোক সাহিত্য, দুই বাংলার বহু জাতীয় সংস্কৃতি, সমাগত সত্য এবং ঐতিহ্যবাহী দাউদ পাবলিক স্কুল যশোর ক্যন্টনমেন্ট কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতি-ষ্টান”- উল্লেখ্য যোগ্য। আর্কষনীয় বোর্ড বাঁধাই, সাদা অফসেট কাগজে নির্ভূল ছাপার গ্রহ্ণ গুলি অত্যন্ত মানসম্পন্ন, বিষয় ভিত্তিক ও আর্কষীয়। কেন্টেনমেন্ট আদি শিক্ষা প্রতিষ্টান ইউনিট স্কুল ১৯৩৯ থেকে শহীদ বীর বিক্রম রমীজ উদ্দিন কেন্টেনমেন্ট স্কুল ও ডিগ্রী কলেজ” গ্রহ্ণে মূলবান ও অভিমত ব্যক্ত করে ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোঃ নূরুল মোমেন খান এন.ডি.সি পি.এস.সি যথার্থই বলেন-“ বইটির রচয়িতা ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির একজন শিক্ষনুরাগি এবং শহিদ রমিজ উদ্দিন কেন্টেনমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি যশোর কেন্টনমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ও অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি একাধারে আঠাশ বছর কেন্টনমেন্টের শিক্ষা প্রশাসনে সম্পৃক্ত থেকে তার বোধ বৃদ্ধি, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, মনন, চর্চা করে শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়ন এবং উৎকর্ষ সাধনে নিরলস ভাবে কাজ করেছেন। তিনি সর্বদাই কেন্টনমেন্টের নিয়ম শৃংখলা অগ্র সরমান শিক্ষা, চিন্তা, চেতনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন-”। একজন উর্ধ্বতন সেনাকর্মকর্তার তাঁর কর্ম ও জীবনের উচ্ছসিত প্রশংসা তার পেশাগত দক্ষতা, সততা, আনুগত্য ও উৎকর্ষ তারই প্রমান। একজন লোক গবেষক হিসাবে ডক্টর কবির প্রতিভারছাপ রেখেছেন। গ্রহ্ণ গুলির উৎসর্গে গ্রহ্ণকার ডক্টর কবির তার জন্মদাতা পিতা ও শিক্ষকের নামে উৎসর্গ করে মহত্ব ও উদারতার উৎকৃষ্ট উদাহরন রেখেগেলেন। শিক্ষাবিদ ডক্টর হুমায়ুন কবির পেশাগত জীবনে সেনাবাহিনীর মত জাতীয় মর্য্যাদা সম্পন্ন প্রতিষ্টানের অত্যাধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্টানে পেশাগত জীবন শেষে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছেন। দক্ষিন শ্রীহট্রের নিভৃত পল্লী আকবরপুরে তার জন্ম ও বেড়ে উঠা এই মাটিতে পুতা তার নাড়ি, হয়ত এখানেই চীর শয়ানে শায়িত হবেনতিনি। এখানকার মাটির মায়ায় এই মানবের কল্যানে মানব প্রেমিক ডক্টর হুমায়ুন কবির গড়ে তুলেছেন মানব কল্যান মূলক ট্রাষ্ট। হুমায়ুন একটি ফার্সি শব্দ-অর্থ ভাগ্যবান। নিঃসন্দেহেই প্রফেসর ডক্টর হুমায়ুন কবির একজন সৌভাগবান ব্যক্তি। সফল মানব জীবন তাঁর। আজীবন তিনি শিক্ষাও জ্ঞানের আলো বিতরন করেছেন। আলোকিত করেছেন আমাদের প্রায়ান্ধকার জগত ও জীবনকে। ট্রাষ্টের সাবির্ক সাফল্য এবং তিনিও তার সহ ধর্মিনীর সূস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সার্বিক কল্যান কামনা করি। মহান মালিকের কাছে এই মোনাজাত সহ আমীন। ছুম্মাআমীন।
[ষাটের দশকের সাংবাদিক ও শিক্ষানুরাগি। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার সাবেক অবৈতনিক শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি ও জিবির সাবেক সদস্য ও সাবেক সভাপতি। মুক্তিযোদ্ধা। সাবেক সভাপতি জেলা বারও মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব।]
মন্তব্য করুন