॥মহান স্বাধীনতার সংঘটক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগি অগ্রজ প্রতিম কাজি ফারুকুজ্জামান আহমদঃ আমাদের ফারুক ভাইঃ ভুলি নাইঃ ভুলি নাইঃ সম্মানঃ স্মরণঃ ॥
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ ভয়াবহ বৈশ্বিক মরন ব্যাধি কোভিড নাইনটিন-করনার হানায় বিশ্ব সমাজ-বিশ্ব স্ব্যাস্থ সংস্থা নাজেহাল বিপর্যস্থ। মৃত্যোর মিছিল চলছেই। ঘাতক ব্যাধি করনার শিকার হয়ে মৃত্যোর মিছিলে শরিক হলেন মহান স্বাধীনতার সংঘটক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগি, সহজ সরল সাদা মনের মানুষ অগ্রজ প্রতিম কাজি ফারুকুজ্জামান আহমদ-আমাদের শ্রদ্ধেয় ফারুক ভাই। বহুবিধ বার্ধক্য জনিত জটিল ব্যার্ধিতে আক্রান্ত ঢাকা প্রবাসী আমাদের প্রিয় ফারুক ভাই আসির কোঠায় এসেও জীবন যন্ত্রনার মাঝে ও মুখে সদা সর্বদা একচিলতে মুচকি মিষ্টি হাসি লেগে থাকত। সেই গুয়ামেরি হাসির পিছনের কান্না অব্যক্ত বেদনা কেউ জানত না-কাউকে কোন দিন শরীক করেন নি। সে আগুনে তিনি একাই আজীবন দগ্ধ হয়েছেন। শারীরিক অসুস্থততা দূর্বলতার মাঝেও মানুষের দূঃখ কষ্ট বেদনায় এগিয়ে গেছেন সাহায্যের হাত নিয়ে, স্বজনের মত পাশে দাঁড়িয়েছেন। অভয় বানী শুনিয়েছেন। পেরেশান না হয়ে সর্ব শক্তিমানের উপর আস্থা বিশ্বাস ও ভরসা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। এহেন বন্ধু বৎসল-ভ্রাতৃ বৎসল কাজি ফারুকুজ্জামান আহমদ তাঁর ঢাকাস্থ মোহাম্মদ পুরের বাসায় করনা আক্রান্ত হলে তাঁর জ্যেষ্ট ভ্রাতা বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন পি.কে.এস.এফ. এর সম্মানিত সভাপতি ডক্টর কাজি খলীকুজ্জামান আহমদ প্রিয় সহোদর কাজি ফারুক কে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাস্থ আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্ত্তি করিয়ে দেন। এখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল।
ফিল্ম সেন্সর বোর্ড এর অবসর প্রাপ্ত সচিব, ঢাকাস্থ ই.এন্ড.টি. ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এর ডেপুটি ডাইরেক্টার ভ্রাতৃ প্রতিম এম.এ. রৌফ মোবাইল ফোনে কান্না জড়িত কন্ঠে জানালেন, আমাদের প্রিয় ফারুক ভাই হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই মায়াময় মাটির পৃথিবী থেকে চীর বিদায় নিয়েছেন, চীর তরে চলে গেছেন- না ফেরার দেশে। কাজি ফারুকের আজীবনের বন্ধু হাজি এম.এ.রউফ আর কথা বলতে পারলেন না শিশুর মত হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলেন। আমিও আমার পরম শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় ফারুক ভাইর আকস্মিক মৃত্যোতে হতবম্ব হয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে শুধু উচ্চারন করলাম-“ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাহি রাজিউন”। শোক সংবাদ শুনা-জানানো খুবই কষ্টকর- বেদনা দায়ক। তবুও আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু মহলে শোকাবহ শোক সংবাদটি জানিয়ে তার জন্য দোয়া চাইলাম। তাৎক্ষনিক ভাবে আমাদের জেলা বারের মসজিদে তাঁর জন্য দোয়া করালাম। স্বজনদের মৃত্যো হলে, তাঁদের উপযুক্ত কেউ না থাকলে আমি দোয়া-দূরুদ-মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে থাকি। কাজি ফারুক ভাই আমাকে তাঁদের পাঁচ নম্বর ভাই বলে ডাকতেন, সহোদরের মত সৌহার্দ সম্প্রীতি দেখাতেন-স্নেহ মমতা করতেন। তাঁর প্রয়াত পিতা মরহুম মৌলানা কাজি মোফাজ্জল হোসেন ষাটের দশকে মৌলভীবাজার কলেজে আমাদের অধ্যাপক এবং আমার নিকট প্রতিবেশি ছিলেন। সুফী সদৃশ মৌলানা স্যার আমাকে পুত্র বৎ স্নেহ মমতা করতেন। চার পুত্র এক কন্যা সন্তানের গর্বিত জনক ছিলেন মৌলানা কাজি মোফাজ্জল হোসেন। তাঁর সহ ধর্মিনী সৈয়দা ছহিফা খাতুন এবং মৌলানা কাজি মোফাজ্জল হোসেন পরিনত বয়সেই মৃত্যো বরন করেন। মৃত্যোবার্ষিকী এলে ঢাকা প্রবাসী কাজি ফারুক ভাই মোবাইলে বলতেন পাঁচ নম্বর ভাই ওফাত বার্ষিকীর এন্তেজাম করো, দোয়া দূরুদ মিলাদ পড়াও, একজন গুরুপুত্র অগ্রজের এমন ঈমানী দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে গৌরবান্বিত বোধ করতাম। এসব ধর্মীয় এন্তেজামে আমাকে বেগ পেতে হত না দীর্ঘদিন যাবত জেলা জামে মসজিদ এর সেক্রেটারির দায়িত্বে আছি। মিলাদের ব্যাপারে আমাদের আহলে সুন্নাতি ঈমাম-মোয়াজ্জিন সাহেবানগণ খুবই আন্তরিক। আমাদের মসজিদ সংলগ্ন-কমিটি পরিচালিত শাহ জালাল এবতেদায়ী-হাফিজিয়া মাদ্রাসাও রয়েছে। ফারুক ভাইর মৃত্যো পরবর্তী বাদ জুম্মা আমাদের জেলা জামে মসজিদে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া হল-আমাদের মসজিদেত সাপ্তাহিক মিলাদ আছেই। করনাও লকডাউনের কারনে সেলফ কোয়ারেন্টাইন-স্বেচ্ছাগৃহ বন্দী আছি। হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা দরগা শরীফ এর মোতাওয়াল্লী ভ্রাতৃপ্রতীম আলহাজ্ব সৈয়দ খলিলুল্লাহ ছালিক জুনেদ ছাহিবকে মোবাইল মারফত ফারুক ভাইর মৃত্যো সংবাদ জানিয়ে দরগা মসজিদে বাদ জুম্মা দোয়ার দাবী জানালে তিনি সানন্দে সে দায়িত্বভার নেন। কাজি ফারুক ভাইর শ্বশুড় বাড়ির নিকটস্থ মসজিদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় জামে মসজিদে দেয়ার দায়িত্ব আমি নিজেই নিলাম। শহরস্থ বর্শিজুড়া মাইজপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট ব্যাংকার ও কলামিষ্ট ডক্টর আবু তাহির এডভোকেট প্রিয় ভাজনেষুকে ফোন মারফত মৃত্যো সংবাদ জানিয়ে তাঁকেও দোয়ার অনুরোধ জানালে তিনিও স্বেচ্ছায় দায়িত্বভার নেন। আমি নিজে তাঁর মৃত্যোর পর থেকে পাঁচ ওয়াকত নামাজ, নফল, তারাবি, তাহজুদ আদায় করে নিয়মিত তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করছি। তাঁর সুচিকিৎসা এবং তাঁর মৃত্যোর পর তাঁর, অগ্রজ ডক্টর কাজি খলীকুজ্জামান আহমদ তাঁদের পিতা মাতার অবর্তমানে অপুত্রক সহোদর কাজি ফারুকের জন্য যা করণীয় তাই করেছেন, পিতা-মাতার দায়িত্ব পালন করছেন। কাজি ফারুকের একমাত্র কন্যা বিবাহিতা স্বামীর সংসারে। স্ত্রী নাজু চৌধূরী প্রবাসে। মোহাম্মদপুর, চাঁদ আবাসিক এলাকায় ভাড়া বাসায় একাই থাকতেন সহজ সরল সাদা মনের ছবরগার মানুষ কাজি ফারুকুজ্জামান আহমদ। বিরইন চাউল, জারা লেবু তাঁর খুব প্রিয় ছিল-টুনি মান কুনির পাতা তাঁর খুব প্রয়োজন ছিল, এই তিন পদ ঢাকায় সহজ লভ্য ছিল না ঢাকাই-থানকুনি-পাতায় গাঁও গেরামের টুনিমানকুনি পাতার ঘ্রান ও ফ্লেবার নেই। আমি ঢাকায় গেলে এই তিন পদ নিয়ে তাঁর বাসায় যেতাম। তিনি খুবই খুশী হতেন। তাঁর চোখে মুখে খুশিও তৃপ্তির ঝিলিক দেখা যেত- যা আমি আর কোন দিন দেখতে পাব না। আমি পিতা-মাতার প্রথম পুত্র সন্তান-এখন সত্তরোর্ধ। আমাকে নাম ধরে ডাকার, মাথায় হাত দিয়ে দোয়া দেয়ার মত ঘনিষ্ট গুরুজন আর খুব একটা রইলেন না। অগ্রজদের মধ্যে সৈয়দ মোহাম্মদ আবু শাহ জাহান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম.আজিজুর রহমান, সাংবাদিক শফকতুল ওয়াহেদ রা ইতিপূর্বেই গত হয়েছেন। সাধারন পোষাকি অসাধারন মানুষ কাজি ফারুক ভাইর মৃত্যোতে মানসিক ভাবে আরো ভেঙ্গেঁ পড়লাম।
বৃটিশ ভারতের শেষ ভাগে অভিবক্ত ভারত বর্ষের করিমগঞ্জে শিক্ষিত সম্ভান্ত কাজি বংশে কাজি ফারুকের জন্ম। তিনি পিতা-মাতার দ্বিতীয় সন্তান। কাজি বাড়ির মৌলানা সাহেবের প্রথম পুত্র উপ মহাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডক্টর কাজি খলীকুজ্জামান। পেশাগত ভাবে প্রফেসার এবং রাজনীতিগত ভাবে আসাম আইন সভার সদস্য-মৌলানা কাজি মোফাজ্জল হোসেন এম.এল.এ. ছিলেন। তাঁর অপর দুই পুত্র কাজি ফয়সলুজ্জামান আহমদ এবং কাজি আতিকুজ্জামান আহমদ জীবন ঘনিষ্ট শক্তিমান লেখক। কাজি ফয়সল প্রবাসে অবস্থান কালে অকাল প্রয়াত। সত্তোর-আশির দশকের শক্তিমান আধুনিক কবি কাজি আতীক লন্ডন প্রবাসী।
একমাত্র কন্যা সন্তান কাজি জবা ভালো ঘরে ভালো বরে পাত্রস্থ। সাত চল্লিশে পাক ভারত বিভক্তির পর পঞ্চাশের দশকে মৌলানা কাজি মোফাজ্জল হোসেন রাজনৈতিক অনুসারি-বিত্ত বেসাত পদ-মর্য্যাদা সব পিছনে ফেলে বাড়ি বিনিময় এর মাধ্যমে রাজনগর থানাধীন রাজখলা গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। পেশাদার আদর্শ শিক্ষাবিদ মৌলানা মোফাজ্জল হোসেন প্রথমে স্কুল শিক্ষকতা অতঃপর মৌলভীবাজার কলেজে অধ্যাপনায় যোগ দিয়ে এখান থেকেই সসম্মানে অবসর গ্রহন করেন। ষাটের দশক থেকে কাজি ফারুক ভাইর সকল পরিবার সদস্য বর্গের সঙ্গেঁ আমার পরিচয় সম্পর্ক ও সখ্যতা। সে সম্পর্ক এখনও বহাল আছে। আমার বয়ো ঃ বৃদ্ধিও ধর্মানুরাগের সাথে সাথে এই সু সম্পর্ক অধিকতর মজবুত হয়েছে। আমার বয়োঃ কনিষ্ট কাজি ফয়সল ও কাজি আতিক ছাত্র রাজনীতি ও লেখা লেখির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, আমি ও বিভিন্ন দায়িত্বেও নেতৃত্বে ছিলাম। ষাটের দশকের শেষ ভাগে কাজি ফারুক ভাইর পরিবার আমাদের মহল্লা মুসলিম কোয়ার্টারে ভাড়া বাসায় থাকতেন। আমি প্রথমে মৌলভীবাজার কলেজ শাখা ও অতঃপর মহকুমা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। তখন এখানে আওয়ামী লীগ সংঘটিত ও সাংঘটনিক কার্য্যক্রম ছিল না। ফলতঃ ছাত্র লীগকেই বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আদর্শের সৈনিক হিসাবে আন্দোলনে সংগ্রামে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হত। সত্তোর সালের সাধারন নির্বাচনে আওয়ামী লীগে প্রার্থী সংকট দেখা দিলে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা, বঙ্গঁবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর দেওয়ান ফরিদ গাজি আমাদেরকে যোগ্য প্রার্থী অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেন। বিশেষতঃ রাজনগর নির্বাচনী এলাকায় এম.পি.এ.পদে আওয়ামী লীগের কোন উপযুক্ত প্রার্থী ছিলেন না, তখন রাজনগর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি/সম্পাদক এর দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ জাফর এবং আব্দুল বারী সাহেব। অপর পক্ষে এখানে-ন্যাপ-এর শক্ত ও যোগ্য প্রার্থী ছিলেন সিলেট জেলা ন্যাপ এর বিশিষ্ট নেতা কমরেড তারা মিয়া যদিও তখন দেশ ব্যাপী বঙ্গঁবন্ধু আওয়ামী লীগ ও ছয়দফার জয় জয়কার। দেশব্যাপী বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাঙ্গাঁলি জাতীয়তাবাদি আন্দোলন তখন তুঙ্গেঁ। শ্রদ্ধেয় দেওয়ান ফরিদ গাজির অনুমতি সহ আমরা একদিন মৌলানা কাজি মোফাজ্জল হোসেন এর মুসলিম কোয়ার্টারস্থ বাসগৃহে গিয়ে দেওয়ান ফরিদ গাজি সাহেব এর সালাম জানিয়ে তাঁকে রাজনগর নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হতে প্রস্তাব করি। আরো বলি তাঁর কোন টাকা পয়সা লাগবে না, শুধুমাত্র মনোনয়ন পত্রে স্বাক্ষর করবেন, বাদ বাকি সব দায় দায়িত্ব আমাদের। তখন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে কত দৌড় ঝাপ। কারন বঙ্গঁবন্ধু আর. নৌকা মানেই বিপুল ভোটে পাশ। নির্লোভ বয়োঃ বৃদ্ধ মৌলানা সাহেব বিনয়ের সাথে আমাদের প্রস্তাব নাকচ করে বল্লেন, তাঁর শরীর খারাপ, ধর্ম কর্ম নিয়েই আছেন, দুনিয়া দারিতে তাঁর আর সম্পৃক্ত হওয়ার ইচ্ছা নেই, তবে আমাদের প্রতি তাঁর পূর্ন নীতি গত সমর্থন আছে দোয়া আছে। প্রকৃত পক্ষেই তাঁর সম্পূর্ণ পরিবারই ছিলেন বঙ্গঁবন্ধু ও বাঙ্গালি জাতীয়তা বাদি আন্দোলনের সমর্থক-এখনও আছেন। আমাদের প্রস্তাবে সম্মত না হলেও আমরা তাঁর বিনয়াচরন, মায়া মমতা, নির্লোভী মনো বৃত্তির কারনে বিমুগ্ধ হয়ে চলে আসি।
স্বাধীনতা উত্তর কালে কাজি ফারুক পারিবারিক ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শহরস্থ হাসপাতাল সড়ক নিবাসী করিমগঞ্জি হাফিজ সাহেবের কন্যা নাজু চৌধুরীর সঙ্গেঁ। এই দম্পতি কাজি সামিয়া-এক কন্যা সন্তানের জনক। বর্নাঢ্য কর্ম জীবন কাজি ফারুকুজ্জামানের। স্বাধীনতা উত্তর কালে নবীন রাষ্ট্রের অর্থনীতির ভিতকে মজবুত করার জন্য অনেককেই কর্ম সংস্থান ও ব্যবসা বানিজ্যে সহযোগিতা প্রদান করেন। ব্যবসা বানিজ্য সম্বন্ধে তাঁর খুব স্বচ্ছ ধারনা ছিল। বৃহত্তর সিলেটের অভিজাত-সম্ভান্ত-খান্দানী ও কৃতি পরিবার সমূহের সাথে তাঁদের পারিবারিক আত্মীয়তা ও সু-সম্পর্কের সুবাদে অপিস আদালত-উচ্চ মহলে তাঁর যাতায়াত ও যোগাযোগ থাকার কারনে ব্যবসা বানিজ্যের দাপ্তরিক কাজ স্বল্প সময়ে করিয়ে দিয়ে তিনি তাঁর স্বজনগণকে সহযোগিতা করতেন।
এই চাই চাই খাই খাই সমাজ ব্যবস্থা ও দখল কালচারের জোয়ারে তিনিও তাঁর পরিবার বর্গ বাংলাদেশে একটি অনুকরনীয় উদাহরন স্থাপন করেছেন। তাঁর জ্যৈষ্ট ভ্রাতা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ-শিক্ষাবিদ ডক্টর কাজি খলীকুজ্জামান আহমদ বেহেশত বাসি পিতা মরহুম মৌলানা কাজি মোফাজ্জল হোসেনের নামে মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করে তাঁদের বিশাল পৈত্রিক বাড়িও ভূ-সম্পত্তি কলেজের নামে দান করে দিলে কাজি ফারুক জ্যৈষ্ট ভ্রাতাকে ছায়ার মত অনুসরন করেছেন-কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের সম্পূর্ণ পৈত্রিক ভূ-সম্পত্তি নিঃশর্ত দানের প্রেক্ষিতে আল্লাহ ও রাসুল প্রেমিক কাজি ফারুক সত্যিকার অর্থে ভূমি হীন ও সর্বহারায় পরিণত হন, কারন এই বাড়িও ভূ-সম্পত্তি ছাড়া তাঁর এই বাংলাদেশে এক ইঞ্চি ভূ-সম্পত্তি ও বিত্ত বেসাত ছিল না, তবুও তার মধ্যে কোন আফসোস-আহাজারি-হায় হুতাশ ছিল না বরং তিনি নিজেকে মহান মালিকের হাতে শফে দিয়ে নির্বিকার-নিশ্চিন্ত ছিলেন। তাঁর পকেটে টাকা না থাকলেও দু’চোখে স্বপ্ন ছিল-বুক ভরা ভালোবাসা ছিল-সীমাহীন দেশ প্রেম ছিল। এক মুখ চাপ দাড়ি, হাই পাওয়ারের চশমা সমেত সাধারন পোষাকের এক অসাধারন মানুষ কাজি ফারুকুজ্জামান আহমদ কলেজের কাজে মৌলভীবাজার এলে আমার বাসায় উঠতেন আমিও আমার পরিবার বর্গ তাঁকে মেহেমান হিসাবে পেয়ে খুবই খুশী হতেন। আমাকে বলতেন ভাইছাব এর পরই (অগ্রজ ডক্টর কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ) তুমি ও পাখি ভাই (ই-এন্ড-টি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের উপ পরিচালক এম,এ,রউফ)-ই-আমার একান্ত আপন জন। আমার কিছু হয়ে গেলে তোমরাই আমাকে “টাওয়াইও”। তাঁর আকস্মিক মৃত্যো ও করনার কারনে আমি আর পাখি ভাই কিছুই করতে পারলাম না। ভয়ানক ব্যাধি করনায় সব লন্ড ভন্ড ছিতোর ছান করে দিল তাঁর জানাজায় যোগ দান, দাফন-কাপন দোয়া দূরুদে শরীক হওয়া সম্ভব হল না, আমার আফসোস রইল তাঁর সঙ্গেঁ আমার শেষ দেখা, শেষ কথা হল না। আমি প্রায়ই ফোনে তাঁর খোঁজ খবর নিতাম। আমি ফোন না করলে তিনিই ফোন করতেন-বলতেন- “কেমন আছ ভাই মুজিব” ইহ জনমে আর কোনদিন ফারুক ভাই নাম ধরে ডাকবেন না, সহোদরের সহমর্মিতা দেখাবেন না। এই আফসোসও দূঃখবোধ আমার আজীবনই থেকে যাবে।
ইসলামী আইনের বিধান মোতাবেক একজন আদম সন্তানের মৃত্যোই শেষ নয়, বরং মৃত্যোর পর শুরু হয় অসীম মহাজীবন। আলমে আরওয়া থেকে হাসরের ময়দান পর্য্যন্ত মানবাত্বার দুনিয়াবি জীবন ক্ষনস্থায়ী-অনির্ধারিত। দুনিয়াবি-মায়াবি-জীবন শেষে ফারুক ভাইর পরকাল-পরলৌকিক জীবন কল্যান-মঙ্গঁল-সুখময়-হউক-মহান মালিক তাঁর বেহেশত নসীব করুন-এই মোনাজাত সহ আমীন। ছুম্মা আমীন।
[ষাটের দশকের সাংবাদিক। মুক্তিযোদ্ধা। সমাজ কর্মি। সেক্রেটারি জেলা জামে মসজিদ। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার জেলাবার ও প্রেসক্লাব।]
মন্তব্য করুন