অকাল প্রয়াত সাংবাদিক-মানবাধিকার সংঘটক আহমদ ফয়সল আজাদ : যে ফুল না ফুটিতে
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ আসমানী কিতাব আল কোরআনে আল্লাহ পাক স্বয়ং ঘোষনা করেন- “কুল্লুন নাফসীন জ্যায়িকাতুল মউত” জগতের সকল প্রাণীকেই মৃত্যোর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহর এই আইনের কোন ব্যত্যয়-বেতিক্রম নেই। অসময়ের-অকাল আকস্মিক মৃত্যো মূর্দার স্বজন- সমাজ সহজ ভাবে গ্রহণ করেন না, মেনে নিতে পারেন না। আফসোস-আহাজারি-করেন। আকুল কান্নায় ব্যাকুল হন।
ইতিহাস-ঐতিহ্য-রাজনীতি-সংস্কৃতি-সাহিত্য সাংবাদিকতায় গৌরবময় অতীত ঐতিহ্যের অধিকারী ঐতিহ্যবাহী রাজনগরের সাংবাদিকতা ও মানবাধিকার সংঘটক অকাল প্রয়াত আহমদ ফয়সল আজাদ এমনি একটি না ফোঁটা ফুল- যে ফুল না ফুটতেই ঝরে গেল। মাত্র চল্লিশের কোঠায় এসে তার স্বজনদেরকে কাঁদিয়ে চীরতরে না ফেরার দেশে চলে গেল স্নেহভাজন আহমদ ফয়সল আজাদ। সাড়ে তিন- চার দশকের গোটা মানব জীবনের মধ্যে দেড়-দুই দশক বাল্য-কৈশোর-শৈশব বাদ দিলে অকাল প্রয়াত আহমদ ফয়সল আজাদ এর মাত্র দুই দশকের সমাজ-কর্ম জীবন। একজন তরুন রাজনৈতিক কর্মি-কিংবা নেতা এবং সরকার দলের কর্মি হয়েও নিজের আখের গোছানোর জন্য আজাদ চান্দাবাজি-ধান্দাবাজি করে কালো পথে কালো টাকা কামাই করেনি, তার খন্ড কালীন ক্ষুদ্র মানব জীবনকে উৎসর্গ করেছিল দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও কল্যানে। একজন সাংবাদিক কবি লেখক-মানবধিকার সংঘটক হিসাবে তরুন আহমদ ফয়সল আজাদ বঙ্গঁবন্ধু লেখক পরিষদের জেলা সেক্রেটারি, জাতীয় কবিতা পরিষদ এর রাজনগর শাখা সম্পাদক, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন রাজনগর শাখা সম্পাদক, রাজনগর কাগজের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং মনু কুলের কাগজের সহ-সম্পাদক হিসাবে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেছে। জেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি কবি ও আইনজীবী কিশোরী পদ দেব শ্যামল জানালেন গরিব দূঃখীদের মানবাধিকার সংরক্ষন ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রাপ্তিতে মানবাধিকার সংঘটক আহমদ ফয়সল আজাদের বলিষ্ট ভূমিকা ও মানবিক অবদান ছিল। মনুকুলের কাগজের সম্পাদক-অনুসন্ধানী পরিশ্রমী সাংবাদিক মুশতাক চৌধুরী ও জানালেন আহমদ ফয়সল আজাদ একজন প্রকৃত প্রকৃতি প্রেমী ছিলেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপরূপ লীলা ভূমি হাওর-নদী-বন বনানীর অপূর্ব সমাহার ঐতিহ্যবাহী রাজনগর উপজেলায় তাঁর জন্মও বেড়ে উঠা। জীবনের শেষ দিন গুলিতে অসুস্থবস্থায় রাজনগরÑশ্রীমঙ্গলের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য হৃদয়-মন দিয়ে উপভোগ করতেন আহমদ ফয়সল আজাদ। তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলিতে তাকে সঙ্গঁ দিয়েছেন কবি ও সাংবাদিক মুশতাক চৌধুরী।
ষাটের দশক থেকে লিখছি। সংকলন সাময়িকী পত্র পত্রিকা সম্পাদনা করেছি অনেক। মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের ভবন নির্ম্মাণে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছি। প্রেসক্লাবের সম্পাদক-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি দীর্ঘদিন। পত্র পত্রিকা সম্পাদনা-প্রকাশনা কঠিন, জটিল কাজ। বিব্রতকরও বটে। একজন কলম সৈনিক হিসাবে সাংবাদিক আহমদ ফয়সল আজাদ এর সঙ্গেঁ পরিচয়-সম্পর্ক ও সখ্যতা। আমার বাসায়-অফিসে তার আসা যাওয়া ছিল। হালকা পাতলা গড়ন, শ্যামলা চেহারা, ছোট চুল সমেত সাধারন পোষাকের একটি অসাধারন যুবক আহমদ ফয়সল আজাদ। বয়সে আমার চাইতে প্রায় অর্ধেক। অসম্ভব রকমের বিনয়ী ভদ্র। কথা বলত অবনত মস্তকে নীচুলয়ে। আধুনিক জমানার কিছু বেআদব-বেদতমিজ, বেহায়া, বেশরম, বেলেহাজী, কাউয়া কালচারের বাজারে সমাজ কর্মি আহমদ ফয়সল আজাদ ছিল একটি ব্যতিক্রম। এমন দূঃসময়ে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিকতার ক্রমোবনতির মাঝে একজন আহমদ ফয়সল আজাদ বেঁচে থাকলে সমাজ, দেশ ও জাতি উপকৃত হতেন। সাংবাদিক মুশতাক চৌধুরীর আহমদ ফয়সল আজাদ এর সম্মান ও স্মরনে স্মারক গ্রহ্ণ প্রকাশের মহতি উদ্যোগকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানাই। তাঁর দাবীতেই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
সন্তান তুল্য-অকাল প্রয়াত প্রিয় ভাজন আহমদ ফয়সল আজাদ এর উজ্জল স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। মহান মালিক তার বেহেশত নবীব করুন-এই মোনাজাত করছি। তাঁর পরিবার বর্গকেও গভীর সমবেদনা ও সহানুভূতি জানাই।
[লেখক পরিচিতিঃ ষাটের দশকের সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, সিনিয়র এডভোকেট হাইকোর্ট, সাবেক সভাপতি, প্রেসক্লাব।]
মন্তব্য করুন