অকৃতজ্ঞ সন্তান ও পিতা-মাতার ভরণপোষন আইন প্রসঙ্গে
মোহাম্মদ আবু তাহের॥ হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে মহানবী (সা:) বলেছেন, মানুষের মৃত্যুর পরে তিন ধরনের আমল ব্যতিত সকল আমল বা কাজ এর পূণ্য অর্জনের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে এক ধরনের পূণ্যের বিষয় হলো আদর্শ সন্তান, যাকে পিতা মাতা শিশুকাল থেকেই সুশিক্ষা দান করেছেন এবং এই সন্তান খোদাভীরু ও আদর্শ সন্তান হতে পেরেছে। যতদিন পর্যন্ত এমন সন্তান পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে, ততদিন তার সব ভাল কাজের পূণ্য পিতামাতা পেতে থাকবে।
বর্তমান সময়ে কিছু কিছু ঘটনা আমাদের ভাবিয়ে তুলে। হতাশায় নিমজ্জিত করে দেশ, জাতি ও সমাজকে। আমরা যেন এক ধরনের ব্যর্থতায় পর্যবসিত। সবাই যেন ছুটছে মরিচিকার পেছনে, কিছু কিছু মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ একেবারেই যেন নি:শেষ হয়ে যাচ্ছে। দেশ জাতি ও সমাজকে নৈতিকতায় সমৃদ্ধ করতে হলে প্রত্যেকেই তাদের পারিবারিক অবস্থানের দিকে নজর দিতে হবে। পরিবারের লোকজন কে কি করছে, কে কার, দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে এ বিষয়গুলো দেখতে হবে। প্রত্যেকে যদি প্রত্যেকের সন্তানকে সঠিকভাবে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝিয়ে দিতে না পারে, তবে তারা বড় হয়ে কিভাবে পরিবার ও সমাজের কাজে লাগবে। এ ব্যাপারে মা বাবার ভূমিকাই সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির এই সময়ে ও একটা চূড়ান্ত অবক্ষয়ের ভেতর দিয়ে চলছি আমরা। সামাজিক মূল্যবোধগুলো যেন এক এক করে ক্ষয়ে যাচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি যেন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ইং সিলেটের দৈনিক শুভ প্রতিদিন ও ২০ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আমাদের সামাজিক অক্ষয়ের চূড়ান্ত রূপটিই যেন প্রকাশ করে। দৈনিক শুভ প্রতিদিন এর ১৯ সেপ্টেম্বর এর প্রকাশিত একটি সংবাদ শিরোনাম হলো “তিন ছেলে পুলিশ অফিসার মা করেন ভিক্ষা” এখানেই শেষ নয় মেয়েও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। অথচ তাদের গর্ভধারিনী মা দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করছেন। প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় বর্তমানে তিনি এতোটাই মানবেতন জীবন যাপন করছেন যে দিনের একবেলা ভাত জুটছেনা তার ভাগ্যে। ঘটনাটি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের মৃত আইয়ূব আলী সরদারের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম এর। তার বয়স ৭০ বছর। আইয়ূব আলী মনোয়ারা দম্পত্তির ছয় সন্তানের মধ্যে তিন ছেলে ফারুক হোসেন, নেছার এবং জসিম উদ্দিন পুলিশে কর্মরত আছেন। মেয়ে মরিয়ম সুলতানা শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। অন্য দুই সন্তান শাহাব উদ্দিন ব্যবসা এবং গিয়াস উদ্দিন নিজের ব্যবহৃত ইজি বাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে এতগুলো উপযুক্ত সন্তানের গর্ভধারিনী মা’কে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম বয়সের ভারে স্বাভাবিকভাবে হাটাচলা করতে পারেন না। গত ৪-৫ মাস আগে ভিক্ষা করতে যেয়ে পড়ে গিয়ে কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে গিয়েছে। সেই থেকে বাবু গঞ্জের ষ্টীল মিলের পাশে একটি খুপড়ি ঘরে বিনা চিকিৎসায় দিনাতিপাত করছেন। মনোয়ারা বেগম এর ছেলে ইজি বাইক চালক গিয়াস উদ্দিন জানান আমার সাধ্যমত আমার মা’কে চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করছি। আমি অসহায় সম্বলহীন, তাই বৃদ্ধা মা আজ বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু পথযাত্রী। আমার ভাইরা পুলিশ বিভাগে চাকুরী করেন। তারা তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অন্যত্র থাকে, মায়ের কোন খোঁজ-খবর নেয় না। বেশ কিছুদিন পূর্বে মোহাম্মদ শাহেদ নামে একজন ব্যবসায়ীর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে এক হতভাগ্য পিতার কথাও জানা গিয়েছিল। ভদ্রলোক ছিলেন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। পুত্র-কন্যাদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছিলেন। ঢাকার উত্তরায় ছিল তার পাঁচ তলা বাড়ি। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে সে বাড়িতে তার ঠাই হয়নি। অসুস্থ এই বৃদ্ধ মানুষটি কখনো ফুটপাতে, কখনো মসজিদের বারান্দায় রাত কাটাতেন। অসুস্থ এই বৃদ্ধকে এনে ভর্তি করালেন উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে, ঐ হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ শাহেদ। বৃদ্ধের কাছ থেকে জেনে নিলেন তার পরিচয়। ছেলেমেয়েদের ঠিকানা। শাহেদ সাহেব তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। কিন্তু বৃদ্ধের প্রতিষ্ঠিত অকৃতজ্ঞ সন্তান সাড়া দিলনা। কিছুদিন পরে বৃদ্ধ মানুষটি মারা গেলেন। শাহেদ সাহেব আবারও যোগাযোগ করলেন বৃদ্ধের পুত্রের সঙ্গে। জানালেন পিতার মৃত্যুর সংবাদ, বললেন পিতার লাশ দাফনের ব্যবস্থা করতে, ব্যবসায়ের কাজে অতি ব্যস্ত পুত্র জানালো, আসা সম্ভব নয়। তাহলে পিতার লাশের কি হবে জানতে চাইলে বললো লাশটা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে দিয়ে দিতে। শাহেদ লাশটি আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের কাছে না দিয়ে পরম মমতায় নিজেই দাফনের ব্যবস্থা করেছিলেন। শাহেদ এর মতো মানুষ এ সমাজে যত বেশী হবে, এ সমাজ ও দেশ ততই এগিয়ে যাবে। একটি মানবিক সমাজ গঠনের জন্য শাহেদ এর মতো সুসন্তান দরকার। পিতামাতাকে ভরন পোষন না করা তাদেরকে নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। যেহেতু পিতা মাতার ভরন-পোষনের জন্য দেশে আইন আছে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে অন্য কেউ এ ধরনের অপরাধ করতে সাহস না পায়। তাছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক নীতি নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। ধর্মীয় বিধি নিষেধ ও আচরণ মেনে চলতে প্রত্যেককে উৎসাহী করে তুলতে হবে। পাঠ্য পুস্তকে ও নীতি নৈতিকতার বিষয়গুলোর উপরে আরও বেশী জোর দিতে হবে।
প্রকাশিত এই অবিশ^াস্য সংবাদগুলো মানবিক মূল্যবোধের চূড়ান্ত অভাবের বিষয়টিই জানিয়ে দেয়। সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি যেন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। লেখাপড়া করেও সন্তান মানুষের মত মানুষ হয় না, মা-বাবাও সমাজের কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারে না। এ অবস্থা থেকে পরিত্রানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। সুসন্তানই হতে পারে মা-বাবা ও সমাজের শ্রেষ্ট সম্পদ। আমরা সকলেই বিশ^াস করি শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। কিন্তু কোন শিক্ষা? যে শিক্ষা মানুষকে ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য নিরুপন করতে শেখায়। যে শিক্ষা দেশ ও জাতিকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যায়। এটাকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলে ছেলেবেলা থেকেই নিজ সন্তানের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শিক্ষা শুধুমাত্র কাজের জন্য একটি যন্ত্র হওয়া নয়, শিক্ষার সাথে মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ না ঘটলে মা-বাবা ও সমাজের কোন উপকারে আসবে না। সংবাদ পত্রে প্রকাশিত অসাধারন মানবিক মূল্যবোধের অধিকারী নৈতিকতা সমৃদ্ধ আর এক আদর্শ সন্তানের খবর পড়ে রীতিমত আশ্চর্য হয়েছি। তাজ্জব বনে যাওয়ার মতো ঘটনা, শান্তিতে নোবেল পাওয়া বর্তমানে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টিকারী সূচীর দেশ মিয়ানমারে দানবীয় নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সেলিম নামক এক রোহিঙ্গা তার মাকে ১৮ দিন পিঠে বয়ে বাংলাদেশে এসেছে। একেই বলে সু-সন্তান, একেই বলে মাতৃভক্তি। ইহাই হলো মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেস্তের নমুনা। একেই বলে মানবতা, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। রোহিঙ্গা এই অসহায় নাগরিক মাতৃঋণ শোধ করে এক নুমনা পৃথিবী বাসীকে দেখিয়ে দিল। কে না জানে বায়েজীদ বোস্তমীর ঘটনা। একদিন বায়েজিদ বোস্তমীর মা গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে পানি খেতে চাইলেন। বালক বায়েজিদ পানি আনতে গিয়ে দেখলেন কলসিতে পানি নেই। তিনি গভীর রাতে ঝর্ণা থেকে পানি নিয়ে এসে দেখলেন মা আবারো ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু তিনি মায়ের ঘুম না ভাঙ্গিয়ে সারা রাত পানির গ্লাস হাতে মায়ের কাছে দাঁড়িয়ে প্রতিক্ষায় রইলেন, মায়ের ঘুম ভাঙ্গবে। এক সময় রাত কেটে সকাল হলো, মা জেগে দেখলেন বালক বায়েজিদ তখনো দাঁড়িয়ে আছেন গ্লাসে পানি নিয়ে। মায়ের প্রতি এই ভক্তি দেখে মা আবেগ তাড়িত হয়ে কেঁদে ফেলেন। এ ঘটনার পরে মা সেদিন কান্নাভেজা চোখে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন এবং মায়ের দোয়ায় বায়েজিদ হয়ে গেলেন বিশ^ বিখ্যাত আউলিয়াদের একজন। শুধুমাত্র আলোচ্য তিন পুলিশ অফিসারের নয়, সকল সন্তানদেরই এ সমস্ত ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। সর্বাবস্থায় পিতা মাতার প্রতি সদাচরণ করা সন্তানের জন্য অবশ্যই পালনীয় বা ফরজ করা হয়েছে পবিত্র ইসলাম ধর্মে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন সূরায় মা-বাবার প্রতি সুন্দর আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের কিছু আয়াতের বাংলা অর্থ নি¤েœ উদ্ধৃত করা হলোঃ-
* তোমরা এক আল্লাহর এবাদত করো, অন্য কোন কিছুতেই তার সাথে অংশীদার বানিয়োনা এবং পিতা-মাতার সাথে ভাল ব্যবহার করো, যারা তোমাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, এতিম, মিছকিন, আত্মীয়-প্রতিবেশী, কাছের প্রতিবেশী, পাশের লোক, পথচারী ও তোমার অধিকারভূক্ত দাস-দাসী তাদের সবার সাথেও ভালো ব্যবহার করো। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা এমন মানুষকে কখনো পছন্দ করেন না, যে অহংকারী ও দাম্ভিক। সূরা:- নেসা, আয়াত:- ৩৬
* আমি মানুষকে তাদের পিতামাতার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছি যেন তারা তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করে। কেননা তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারন করেছে এবং দু’বছর পরেই সে বুকের দুধ খাওয়া ছেড়েছে। তুমি আমার শোকর আদায় করো এবং তোমার পিতামাতারও কৃতজ্ঞতা আদায় করো, তোমাদের সবাইকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। সূরা:- লুকমান, আয়াত:- ১৪।
বর্তমান সরকার পিতামাতার ভরন-পোষন আইন ২০১১ প্রণয়ন করেছে। এ আইন প্রায়ন সরকারের নি:সন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মনে করি। “ভরন-পোষন” অর্থ খাওয়া-দাওয়া, বস্ত্র, চিকিৎসা, ও বাসস্থানের সুবিধা এবং আইন অনুযায়ী বিধানবলী নি¤œরূপঃ-
ধারা:- ০৩ পিতা-মাতার ভরন-পোষন ঃ
(১) প্রত্যেক সন্তানকে তাহার পিতামাতার ভরন-পোষন নিশ্চিত করিতে হইবে।
(২) কোন পিতামাতার একাধিক সন্তান থাকিলে সেইক্ষেত্রে সন্তানগণ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা
করিয়া তাহাদের পিতা-মাতার ভরন-পোষন নিশ্চিত করিবে।
(৩) কোন সন্তান তাহার পিতা বা মাতাকে বা উভয়কে তাহার বা ক্ষেত্রমত তাহাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন
বৃদ্ধনিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদা আলাদাভাবে বসবাস করিতে বাধ্য করিবে না।
(৪) প্রত্যেক সন্তান তাহার পিতা এবং মাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখিবে, প্রয়োজনীয়
চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করিবে।
(৫) প্রত্যেক সন্তান তাহার পিতা এবং মাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখিবে, প্রয়োজনীয়
চিকিৎসা করিবে, সেবা ও পরিচর্যা করিবে।
(৬) পিতা বা মাতা কিংবা উভয়ে সন্তান হইতে পৃথকভাবে বসবাস করিলে, সেইক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে
নিয়মিতভাবে তাহার বা ক্ষেত্রমত তাহাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে হইবে।
(৭) কোন পিতা বা মাতা কিংবা উভয়ে সন্তানদের সহিত বসবাস না করিয়া পৃথকভাবে বসবাস করিলে,
সেইক্ষেত্রে উক্ত পিতা বা মাতার প্রত্যেক সন্তান তাহার দৈনন্দিন আয়-রোজগার বা ক্ষেত্রমত মাসিক
আয় বা বাৎসরিক আয়ের কমপক্ষে ১০% আয় পিতা বা মাতাকে নিয়মিত প্রদান করিবে।
ধারা:- ০৪ পিতা-মাতার ভরনপোষণ ঃ
(১) পিতামাতার অবর্তমানে দাদা-দাদী, নানা-নানীর ভরণ-পোষন প্রত্যেক সন্তান তাহার
(ক) পিতার অবর্তমানে দাদা-দাদীকে এবং
(খ) মাতার অবর্তমানে নানা-নানীকে, ধারা ০৩ এ বর্ণিত ভরণ-পোষণে বাধ্য থাকিবে এবং ভরণপোষণ
পিতামাতার ভরণ-পোষণ হিসাবে গণ্য হইবে।
ধারা:- ০৫ পিতা-মাতার ভরন-পোষন না করিবার দন্ড ঃ
কোন সন্তান কর্তৃক ধারা ০৩ এর যেকোন উপধারার বিধান কিংবা ধারা ৪ এর বিধান লংঘন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য অনুর্ধ ০৫ (পাঁচ লক্ষ) টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবে, বা উক্ত অর্থদন্ড অনাদায়ের ক্ষেত্রে অনুর্ধ ছয় মাস কারাদন্ডে দন্ডিত হইবে।
(২) কোন সন্তানের স্ত্রী বা ক্ষেত্রমত স্বামী কিংবা পুত্র-কন্যা বা অন্য কোন নিকট আত্মীয় ব্যক্তি
(ক) পিতা-মাতার ভরন-পোষনে বাধা প্রদান করিলে বা
(খ) পিতা-মাতার ভরন-পোষনে অসহযোগিতা করিলে, তিনি এই আইনের অধীনে অপরাধ সংঘটনে সহায়তা
করিয়াছে গণ্যে উপধারা (১) এ উল্লিখিত দন্ডে দন্ডিত হইবে।
নিজের সন্তান যাতে তৈরী না হয়, সন্তান যাতে দুনিয়া আখেরাতের সম্পদ হিসেবে পরিণত হয়, সেজন্য শিশুকাল থেকে সন্তানরা যাতে নি¤œলিখিত গুণগুলো অর্জন করতে পারে সেজন্য মা-বাবাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। গুণগুলো হলো ঃ-
(১) সততা ও সত্যবাদিতা
(২) ধৈর্য্য ও সহনশীলতা
(৩) লজ্জাশীলতা
(৪) আমানতদারী বা বিশ্বস্ততা
(৫) সহমর্মিতা
(৬) দানশীলতা
(৭) হাসিমুখে কথা বলা
(৮) বিনয়ী হওয়া
(৯) বড়কে সম্মান ও ছোটকে ¯েœহ করা
(১০) মহামানবদের জীবনী পড়া বা গঠনমূলক বই পড়া এবং
(১১) প্রতিবেশীর প্রতি সদাচরণ।
বর্ণিত গুণাবলী শিশুকাল থেকে অর্জন করতে পারলে সন্তান কূ-সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। আদর্শ সন্তানই একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। কোন মানুষকেই যেন অকৃতজ্ঞ সন্তানের পিতামাতা না হতে হয় সেজন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। লেখক-ব্যাংকার ও কলামিষ্ট এবং সভাপতি লখক ফোরাম, মৌলভীবাজার।
মন্তব্য করুন