(অডিও সহ) আলোচিত সেই সজিব! নারীরা দোকানে গেলে ফার্নিচার চলে যায় বাসায়! পরে ব্ল্যাকমেইলিং
স্টাফ রিপোর্টার॥ নানা অপকর্মের হোতা, যৌন নিপিরণকারী, নারী লোভী, প্রতারক ও মামলাবাজ সাইফুল ইসলাম সজিবের প্রতিদিন প্রতারনার নতুন নতুন তথ্য বের হচ্ছে। তার দায়ের করা ফার্নিচার ক্রয়ের পরিকল্পিত মামলা আদাললেতে মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় সজিবের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ২১১ ধারায় মামলা হয়েছে। মানুষকে নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখতে কখনও সাবেক আইজিপি মোদাব্বির হোসেনের বোনের ছেলে, জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সদস্য পরিচয়ে, কখনও র্যাবের অফিসার সহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং করে আসছে।
সজীবের লালসার শিকার মহিলাদের বেশিরভাগই বিবাহিত নারী যার মধ্যে চিকিৎসক, এডভোকেট, গৃহীনি, গৃহশিক্ষিকা, সাংবাদিক, স্কুল কলেজের ছাত্রী থেকে শুরু করে গৃহকর্মীও বাদ যায়নি। এসব মহিলাদের শুধু লালসার শিকার বানিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি সজীব। অন্তরঙ্গ মিলনদৃশ্য ধারন করে ভূক্তভোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল অর্থও।
ফার্নিচার ব্যবসার সুবাদে তার দোকানে ফার্নিচার ক্রয় করতে আসা মহিলারা ফার্নিচার মূল্য জানার পর টাকা না নিয়ে ফার্নিচার বাসায় পৌছে দিয়ে ফাঁদ তৈরী কার তার কাজ। প্রাপ্য টাকা আদায়ের নামে মোবাইল ফোনে কথাবার্তা ও বাসায় আসা যাওয়া শুরু করে সজিব। ওই সব মহিলাদের সঙ্গে নানা কৌশলে সখ্যতা তৈরীর পর তার দোকানের নিজের বসার চেম্বারের পিছনের একটি কক্ষে, মৌলভীবাজার শহরে ও ঢাকায় ভাড়া করা বাসায়, পরিবারের সদস্যদের অনুপস্থিতে নিজের বাসায়, কখনো ভূক্তভোগীর বাসায় গিয়ে অবৈধ মেলামেশার দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ধারন করে। বিশেষ করে বিবাহিত প্রবাসীর সুন্দরী নারী তার টার্গেট। পরে ওইসব অশ্লীল ছবি দেখিয়ে দিনের পর দিন মহিলাদের যৌন নিপীড়নে বাধ্য ও প্রতারনার মাধ্যমে বড় অংকের অর্থ আদায় করে। তার এ ধরনের যৌন নিপিরণের স্বীকার হয়েছেন অনেক নারী। ওইসব অশ্লীল দৃশ্য পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দিবে ও ফেইসবুক, ইউটিবে ছেড়ে দিবে এই ভয় দেখিয়ে প্রতিনিয়ত বড় অংকের টাকা আদায় করাই তার কাজ। তার এ অপকর্মের সহযোগীতায় রয়েছেন কিছু সংখ্যক নারী লোভী সরকারী কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, সমাজসেবী ও সাংবাদিক। তবে এরাও রø্যাকমেলিং এর স্বীকার হয়ে সজিবের বিরুদ্ধে মুখ খোলতে পারছেনা বলে একটি সুত্র জানায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৌলভীবাজার শহরের এক ব্যবসায়ী ও প্রবাসী জানান, প্রায় ১ বছর পূর্বে তারা স্বামী-স্ত্রী গিয়ে ছিলে জেপিএল ডোর এন্ড ফার্ণিচার দোকানে ফার্ণিচার দেখতে। পরে টাকা ছাড়াই একসেট সোফা তার বাসায় পাঠিয়ে দেয় সজিব। এ নিয়ে অনেক বাক-বিতন্ডার পর বাসা থেকে সোফা ফেরত পাঠিয়ে দেন ওই প্রবাসী।
একই ভাবে সজিব জেলে থাকা অবস্থায় মৌলভীবাজার শহরের এক সাংবাদিকের বাসায় তার প্রতিষ্ঠানের লোক দিয়ে ফার্ণিচার পাঠায়। সজিব একটি ঘটনা থেকে উদ্ধার হওয়ার পর ফার্ণিচারের টাকা চাইলে সজিবের সাথে সাংবাদিক ও তার স্ত্রীর বাক-বিতন্ডার পর বাসা থেকে ফার্ণিচার ফেরত নিয়ে আসে সজিব।
সম্প্রতি সাংবাদিক ও পুলিশকে জড়িয়ে ব্ল্যাকমেইলিং এর হোতা সজিব মামলা করলে, বিভিন্ন স্থান থেকে তার প্রতারনার বেশ কয়েকটি ঘটনার খবর আসতে থাকে সংবাদিকদের কাছে।
এর মধ্যে কয়েকটি ঘটনা হলো সজিব এক ট্রাফিক পুলিশকে পরিচয় দেয় সাবেক আইজিপি মোদাব্বির হোসেনের বোনের ছেলে ও বাংলাদেশ টেলিভিশন আর্টিষ্ট এসোনিয়েশনের সেন্ট্রাল কমিটির লিডার। এক মহিলা আইনজীবীকে মৌলভীবাজার জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সদস্য বলে জানায়। হানিফ পরিবহনের সুপার ভাইজারকেও পরিচয় দিলো মৌলভীবাজারের হানিফ কাউন্টার ল্যান্ডের মালিক। তার ভারাটিয়া জামান নামের এক ব্যাক্তি। ব্যাব হেড কোয়াটার থেকে র্যাবের অফিসার সহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং করে আসছে। এ সংক্রান্ত অডিও কথোপকথন অনলাইনে শুনা যাচ্ছে।
প্রতাররক সজিবের মামলা মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ২১১ ধারায় মামলা হয়েছে। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী থেকে জানা যায়, ক্রিমিনাল সাইফুল ইসলাম সজীব ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিম দিয়ে সুপ্রীমকোর্টের মহিলা আইনজীবী উম্মে শাহিদা মাহফুজাকে অশ্লিল ও কুরুচি পূর্ণ বাক্য সহ অনৈতিক বাক্য লিখে এসএমএস পাঠাতে থাকে। শেষে রিুপায় হয়ে মাহফুজা হক এ বিষয়ে ঢাকার শাহবাগ থানায় ২৪/১২/১৫ তারিখ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ এর ২ ধারায় বাদী হয়ে সজিবকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। আইনজীবী মাহফুজার সাথে সজিবের পরিচয় হয় ডাঃ রাজিয়া সুলতানার দায়ের করা মামলা হাইকোর্টে পরিচালনার সুবাদে। রমনা জোনের ডিভি পুলিশ সজিবকে অভিযুক্ত করে গত ১৮/০৫/১৭ তারিখে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ওই মামলায় রমনা জোনের ডিবি গ্রেফতার করলে বেশ কয়েকদিন কারাগারে আটক থাকে সজিব।
অপর দিকে সাইফুল ইসলাম সজিব তার অপকর্ম ঢাকতে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী উম্মে শাহিদা মাহফুজাকে গত ২৯/১১/১৬ তারিখে অসামী করে রামপুরা থানায় মামলা করে। মামলায় উল্লেখ করা হয় ২,১৮,৫০০/=টাকার ফার্ণিচার ঢাকার একটি শোরুম থেকে বাকীতে ক্রয় করে টাকা না দেয়ার কারণ দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন। পরে বাদীর দাখিলকৃত বক্তব্যের সত্যতা না পাওয়ায় গত ৩০/০১/১৭ তারিখে দতন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজেষ্ট্রিট আদালতে চুরান্ত রিপোর্ট মিথ্যা ৪০৬/৪২০/৫০৬ ধারায় দাখিল করেন এবং পেনাল কোডের ২১১ ধারায় প্রসিকিউশনের প্রার্থনা করেন।
পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজেষ্ট্রিট মোঃ রায়হানুল ইসলাম তদন্তকারী কর্মকর্তার চুরান্ত রিপোর্ট ১৬/০৪/২০১৭ তারিখে গ্রহন করে পেনাল কোডের ২১১ ধারায় বাদী সাইফুল ইসলাম সজিবের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দাখিলের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশে আরো উল্লেখ করা হয় বাদী আদালতে তার নারাজীতে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে।
মন্তব্য করুন