অন্ধকার থেকে আলোয় এসেছে মৌলভীবাজার জেলা
চৌধুরী ভাস্কর হোম॥ মৌলভীবাজার জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কাল বৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় মৌলভীবাজারের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার। অন্ধকার হয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকা। স্বল্প জনবল নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই শতকরা ৮০ ভাগ অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকায় আলো দিয়েছে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
গত ২৮ এপ্রিল কাল বৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় মৌলভীবাজার জেলার তিন উপজেলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। বলা চলে স্বল্প জনবল নিয়ে সর্বোচ্চ সেবা দিয়েছে মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি।
মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহা-ব্যবস্থাপক এ বি এম মিজানুর রহমান জানান, এ কাল বৈশাখী ঝড়ে মৌলভীবাজার জেলার ১১৯৭টি স্পটে তার ছিড়েছে। খুঁটি ভেঙ্গেছে ৩৫টি এবং হেলে পড়েছে ১০৫টি খুটি। তারের উপর গাছ পড়ে ঝুলে ছিল আরো ৩৬৭ টি স্পটে। এছাড়াও ক্রস আর্ম ভেংগেছে ৩৫টি, ইনসুলেটর ক্র্যাক হয়েছে ৫২টি, জাম্পারিং আউট হয়েছে ৪৩টি স্পটে, আর মিটার পুঁড়েছে /ভেংগেছে ৫১২টি। পাশাপাশি নষ্ট হয়েছে বেশ অনেকগুলো ট্রান্সফরমার।
তিনি জানান, স্বল্প সময়ের মধ্যে এই কাজগুলো দ্রুত করা কষ্টসাধ্য ছিল। তদুপরি বিভিন্ন চা বাগান থেকে গাছ কাটা শ্রমিক সংগ্রহ করে এবং ঠিকাদারদের সহযোগিতায় অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ করিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছেন এবং ৩৬ ঘন্টার মধ্যে ৯৫ ভাগ কাজ শেষ করেছেন । তিনি বলেন, মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির নিয়ন্ত্রনে প্রায় ৪ লক্ষ ৬০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ লক্ষ ৫৭ হাজার গ্রাহককে বর্তমানে বিদ্যুতের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ আছে মিটার পুড়ে যাওয়া, ট্রান্সফরমার ফিউজ পড়ে যাওয়া, যার আওতায় প্রায় ৩ হাজারের মতো গ্রাহক হবেন। এই অভিযোগ গুলোও মঙ্গলবার রাতের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।
এই দূর্যোগ পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি সারাতে ঠিকাদারদের সাথে মাঠে শুধু লাইনম্যানরাই ছিলেন না তাদের সাথে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ও এজিএমরাও ছিলেন। জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম জানান, মাত্র ৩০ মিনিটের ঝড় কিন্তু এর ক্ষতির পরিমান বিশাল। ঝড়ের পর দুই রাত তিনিসহ অনান্য প্রকৌশলীরা ঘুমান নি। টানা কাজ করে গ্রাহক সেবা তারা নিশ্চিত রেখেছেন।
সার্বক্ষনিক মাঠে ছিলেন ডিজিএম নজরুল ইসলাম মোল্লা, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার অপু কুমার নাথ ও আব্দুল লতিফ। তারা জানান, এই ঝড়ের পর কেউই ঘরে বসে ছিলেন না। সবাই মাঠে গিয়ে কাজ উঠিয়েছেন।
এজিএম আশরাফ হায়দার জানান, হাজারের উপরে লাইন ছিড়েছে, অনেক খুটি ভেঙ্গেছে, শতশত স্পটে তারের উপর গাছ ঝুলে আছে এই অবস্থায় আমাদের অফিসে বসে থাকার সুযোগ নেই। আমরা ঠিকাদারদের সাথে মাঠে ছিলাম।
আর এজিএম ক্লিনটন তালুকদার জানান, তিনি মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির প্রশাসনিক দায়িত্বে আছেন। দুই দিন প্রশাসনিক কাজ রেখে তিনিও বিভিন্ন স্পটে গিয়েছেন। তিনি জানান, তাদের মহা ব্যবস্থাপক এ বি এম মিজানুর রহমানও বিভিন্ন স্পটে সরজমিনে থেকে কাজে উৎসাহ দিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে এতো তাড়াতাড়ি বিশাল কাজ আয়ত্বে আনা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন এই ঝড়ে মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
মৌলভীবাবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক আব্দুর রহিম জানান, মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির লাইন ম্যান থেকে শুরু করে জেনারেল ম্যানেজার তাঁর চোখের সামনেই তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা সুলতান মাহমুদ জানান, ঝড়ে তাদের এলাকায় বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিড়ে পড়েছে। তারে ঝুলে ছিল গাছ। পল্লীবিদ্যুতের লোকজন সারা রাত কাজ করে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন। এ জন্য তিনি পল্লীবিদ্যুতের এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে তারা ধন্যবাদ জানান।
মন্তব্য করুন