অভিমান আর কষ্ট নিয়ে চলে গেলেন দীনবন্ধু সেন 

November 22, 2022,

হারিস মোহাম্মদ॥ নিজের জমিতে মোরগের লেয়ার খামার করেছিলেন দীনবন্ধু সেন। ব্যবসা বাড়াতে কৃষি ব্যাংক ব্যাংক থেকে ২০ লাখ টাকা ঋণও নেন। সর্বমোট ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে খামারটি প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যবসা ভালোই চলছিল। একপর্যায়ে ওই খামার অপসারণ করা নিয়ে এলাকায় দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে খামারে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

পরে আগুন লাগিয়ে আড়াই হাজার  মুরগি সহ খামারটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে থানায় মামলাও হয়। সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেন দীনবন্ধু। এরই মধ্যে শরীরে বাসা বাঁধে ক্যানসার রোগ। এ অবস্থায় গত (১৪ নভেম্বর) সকালে ৬০ বছর বয়সে তিনি মারা যান। দীনবন্ধু সেনের বাড়ি  জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম আমতৈল গ্রামে।

সরেজমিনে মঙ্গলবার ২২ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের বারান্দায় দীনবন্ধুর পরিবারের লোকজন বসে আছে। স্বজনেরা পাশে বসে বিলাপ করছেন। প্রতিবেশীরা তাঁদের সান্তনা দিচ্ছেন। পরিবারে দীনবন্ধুর স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছেন। কয়েক বছর আগে বড় দুই মেয়ের বিয়ে দেন।

দীনবন্ধুর বড় ছেলে বলাই সেন বলেন, খামার পোড়ানোর পর থেকে তার বাবা মানসিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়েন। আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময় আত্মীয়স্বজনের  ও বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে  তিনি কিছু টাকা ধারও করেন। প্রায় ছয় মাস আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শরীরে ক্যানসার রোগ ধরা পড়ে। চিকিৎসা চলছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

বলাই কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘আমরার সব শেষ হই গেল। আগুন খালি খামারটা পুড়াইছে না, আমরার সংসারটাও পুড়াই দিছে। বাবারে তো আর পাইতাম নায়। খামারটার যারা সর্বনাশ করল, তারার যেন কঠিন শাস্তি হয়।’

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) মৌলভীবাজার কার্যালয় ও জুড়ী থানার পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের দিকে বাড়ির সামনে নিজেদের জমিতে ‘বন্ধু পোলট্রি ফার্ম’ নামের মুরগির খামার স্থাপন করেন দীনবন্ধু। এ সময় স্থানীয় একটি ব্যাংক থেকে ২০ লাখ টাকা ঋণ নেন। খামারে প্রায় আড়াই হাজার ‘লেয়ার’ জাতের মুরগি ছিল। খামারের মুরগির ডিম পাইকারদের কাছে বিক্রি হতো। ২০১৯ সালের খামারের দুর্গন্ধে এলাকায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে স্থানীয় কিছু লোক অভিযোগ তুলেন।

এ দিকে চাঁদা না দেওয়ায় স্থানীয় কিছু লোক ব্যবসা বন্ধের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে পাল্টা অভিযোগ তুলেন দীনবন্ধু। এ ব্যাপারে তিনি আদালতে মামলা করেন। এ পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের ১ মে রাতে খামারে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। এ ব্যাপারে  দীনবন্ধু বাদী হয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোঈদসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনের বিরুদ্ধে জুড়ী থানায় মামলা করেন। ওই বছরের ৩১ মে রাতে খামারটি আগুনে পুড়িয়ে যায়। এ ব্যাপারে দীনবন্ধু অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে আরেকটি মামলা করেন।

পরবর্তীতে পুলিশ দুটি মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিশেননের (পিবিআই) মৌলভীবাজার কার্যালয়ে স্থানান্তর করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত বছরের ২৯ জুলাই পিবিআই প্রথম ঘটনায় করা মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে আসামিরা জামিন নেন।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী গৌছ উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, দীনবন্ধু সেনের খামারে হামলা-ভাঙচুরের মামলাটি বিচারাধীন। আর খামার পোড়ানোর ঘটনাটি অধিকতর তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এ দিকে মামলার পর উপজেলা চেয়ারম্যান এম মোঈদ সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com