অর্থ আত্মসাতের সংবাদ প্রকাশের জের বড়লেখায় যুগান্তর প্রতিনিধিকে শিক্ষকের হুমকি : হামলার চেষ্টা
আব্দুর রব॥ বড়লেখায় স্কুলের সরকারী অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের জেরে উপজেলার গজভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আপ্তাব আলী সোমবার রাতে যুগান্তর প্রতিনিধি আব্দুর রবকে হুমকি-ধমকির পর হামলার চেষ্টা চালিয়েছে।
২৮ আগষ্ট যুগান্তরের ১৭তম পৃষ্ঠায় ‘বড়লেখায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ’ শিরোনামে একটি দুর্নীতির সংবাদ ছাপা হলে অভিযুক্ত শিক্ষক যুগান্তর প্রতিনিধির ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।
জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণভাগ বাজারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বসে সাংবাদিক আব্দুর রব বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলেন। হঠাৎ আপ্তাব আলী সেখানে উপস্থিত হয়ে যুগান্তর প্রতিনিধিকে কেটে ফেলার হুমকি-ধমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ শুরু করলে ইউপি চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত লোকজন হতবিহল হয়ে পড়েন এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে রক্ষা করেন। এসময় ঘটনাকারী আপ্তাব আলীও জনতার রূষানলে পড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
হুমকি-ধমকি ও আক্রমনের শিকার সাংবাদিক আব্দুর রব জানান, গজভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অসংখ্য অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। স্কুল কমিটির সভাপতিসহ এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সত্যতা যাচাইপুর্বক একটি রিপোর্ট প্রকাশ হলে প্রধান শিক্ষক আপ্তাব আলী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। সোমবার রাতে হুমকি-ধমকির পর হামলার চেষ্টা চালান। মঙ্গলবার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লি¬ষ্টদের বিষয়টি অবহিত করেছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন জানান, একজন সাংবাদিককে হুমকি-ধমকি দেয়্ াখুবই দুঃখজনক। তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছেন। এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের অর্থ আত্মসাতসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রায়ই নানা বিতর্কিত কর্মকান্ড ঘটনাচ্ছেন। তার এসব ঘটনা নিয়ে শিক্ষা অফিস বেশ বিব্রত।
এব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আপ্তাব আলী জানান, বিষয়টা ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন রাতেই মিটমাট করে দিয়েছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন জানান, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সাংবাদিক আব্দুর রবকে দোকানে এনে আলাপ করছিলেন। এসময় আপ্তাব আলী সেখানে উপস্থিত হয়ে কেটে ফেলার হুমকিসহ অশালিন কথাবার্তা বললে প্রত্যক্ষদর্শীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। জনতার রূষানল থেকে আপ্তাব আলীকে রক্ষা করতেই তাৎক্ষণিক বিষয়টি মিটমাট করে দেই।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ বিশেষ কর্মসুচির দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে গজভাগ প্রাইমারী স্কুল সংস্কারে গত ১৪ মে ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ মিলে। প্রধান শিক্ষক আপ্তাব আলী ১৩ জুন সভাপতিসহ প্রকল্প কমিটির ৭ সদস্যের স্বাক্ষর জাল করে বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করেন।
স্কুল কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যৌথ একাউন্টে সরকারী বরাদ্দের টাকা লেনদেন করার নিয়ম থাকলেও তিনি একক একাউন্ট ব্যবহার করেন। স্কুল লেভেল ইম্প্র“ভমেন্ট পে¬নের (¯ি¬¬প) জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর ৪০ হাজার টাকা এবং প্রাক-প্রাথমিকের বরাদ্দকৃত আরো ৫ হাজার টাকা প্রধান শিক্ষক আপ্তাব আলী স্কুল কমিটিকে অবহিত না করেই উত্তোলন করে ব্যয় করেন।
স্কুল কমিটির সভাপতি আফাজ উদ্দিন বুড্ডু, সদস্য পারভিন বেগম, শিক্ষক প্রতিনিধি মনোয়ারা বেগম প্রমূখ জানান, টি.আর বরাদ্দ উত্তোলনের প্রকল্প কমিটিতে তারা স্বাক্ষর দেননি। প্রধান শিক্ষক তাদের স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন করেন। সরকারী অর্থ বরাদ্দের কিছুই তিনি কমিটিকে অবহিত করেননি।
মন্তব্য করুন