অর্ধলক্ষাধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারির সঙ্কট উত্তরণে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হোক
এহসান বিন মুজাহির: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি এখনো চলমান রয়েছে। করোনা মহামারির ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে এখন ‘লকডাউন’ চলছে। অফিস, আদালত, সরকারি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবকিছুর ছুটির মেয়াদ তৃতীয় বারের মতো বৃদ্ধি করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী গত ১৭ মার্চ থেকে বাংলাদেশের অর্ধলক্ষাধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোও বন্ধ রয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতেও। আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। করোনা মহামারিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সামাজিক বিপর্যয় বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো অর্থনৈতিক মহাসংকটে পড়েছে বাংলাদেশের অর্ধলক্ষাধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুল। সরকারি কোনো সাহায্যা ছাড়া ছাত্র-ছাত্রীর মাসিক ফি থেকে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো পরিচালিত হচ্ছে। ৯৯ শতাংশ ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত স্কুলগুলোর মাসিক সম্পূর্ণ আয়ের ৪০ শতাংশ ঘর ভাড়া, ৪০ শতাংশ সম্মানিত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ভাতা, বাকি ২০ শতাংশ বা তারও বেশি গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়ে যায়। অনেক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ভর্তুকি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। স্কুল বন্ধ থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎস ছাত্র-ছাত্রী থেকে মাসিক ফি আদায় করতে পারছে না। যার দরুণ স্কুল কর্তৃপক্ষরা শিক্ষকদের মাসিক বেতনও দিতে পারেনি। বেতন না পেয়ে শিক্ষকরা আজ দুর্দশায়। অর্থনৈতিক মহা সঙ্কটে শিক্ষকরা আজ দিশেহারা!
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি বিদ্যালয়ের পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশের কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো শিক্ষা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখছে। সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে সরকারের। সময়োপযোগী ও মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণে ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। দেশে বর্তমানে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সংখ্যা সরকার গঠিত টাস্কফোর্সের আনুমানিক পরিসংখ্যান ৬৫ হাজার। বাস্তবে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশিও হতে পারে। কিন্ডারগার্টেন স্কুল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদের তথ্যমতে, দেশে অর্ধ লক্ষাধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষাগ্রহণ করছে দেড় কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী। সেই সাথে নিজ উদ্যোগে বিশ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। যেমন কর্মসংস্থান হয়েছে আবার ১ কোটিরও বেশি শিশু-কিশোররা শিক্ষার আওতায় এসেছে।কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে সরকার বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তকও প্রদান করে আসছে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) সরকারি বিদ্যালয়ের পাশাপাশি কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা জিপিএ-ফাইভ, ট্যালেন্টপুল বৃত্তিসহ কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে। কিন্ডারগার্টেন স্কুল গুলো মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে মেধাবী, কর্মঠ ও আত্মবিশ্বাসী শিক্ষকদের নিয়েস্বল্প বেতনে পাঠদান অব্যাহত রেখে চলেছে। শিক্ষা সেক্টরে কিন্ডারগার্টেনগুলো স্ব উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এবং সরকারের নির্দেশ মতো পরিচালিত।
এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ২০ লাখ শিক্ষক-কর্মচারিরা পরিবার-পরিজন নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা আজ বর্ণনাতীত উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে ফুটে উঠেছে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকদের দুর্দশার করুণ চিত্র। জাতীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে বাংলাদেশের কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ২০ লাখ শিক্ষক-স্টাফ এখন ঘরবন্দি। ১৭ মার্চ স্কুল বন্ধ হওয়ার কারণে না পাচ্ছেন স্কুল থেকে বেতন, না পারছেন পারছেন প্রাইভেট টিউশনি বা কোচিং করাতে। টিউশনি করাতে পারলে হয়তো এখান থেকে কিছুই সম্মানি পেতেন তারা। কিন্তু এটাও বন্ধ! কঠিন দুর্দশায় পড়েছেন বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা। অনেক শিক্ষকের বাসা-বাড়িতে অল্প স্বল্প খাবার যা ছিলো তা ফুরিয়ে গেছে বহু আগেই। এ পর্যন্ত অনেকেই ঋণের বোঝা নিয়ে কোনো রকম সংসার চালাচ্ছেন। খাদ্য সংকট ও অর্থকষ্টে ভুগলেও সামাজিক মান সম্মানের বিষয় চিন্তা করে ও লোকলজ্জার ভয়ে মুখ খুলে কিছু বলতেও পারছেন না তারা। তাঁদের চাপা কান্না ঘরের ভেতরেই। নিদারুণ কষ্ট ও দুঃসহ যন্ত্রণায় তাঁরা আজ কাতর!
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে থেকে উত্তরণের জন্য নিম্ন আয়ের মানুষ ও হতদরিদ্রের মাঝে সাহায্যের হাত প্রসারিত করছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। অনেক জেলা-উপজেলায় ইউএনও এবং পুলিশ দ্রুত সেবা প্রদানের জন্য ‘হটলাইন’ চালু করেছেন। যা অবশ্যই প্রশংসনীয়। ঘরে ঘরেও প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং সদস্যরা খাবার নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কিন্ডারগার্টেন স্কুল, বেসরকারি কলেজ, কওমি মাদরাসা, ইমাম-খতিব, মুয়াজ্জিন, আলেম পরিবারের ঘরে ঘরে সরকার, প্রশাসন বা কোনো সংস্থা কি খাবার নিয়ে যাচ্ছেন? কর্তারা খোঁজখবর রাখেছেন এসব মধ্যবিত্ত পরিবার কিভাবে চলছে? তাদের দুঃখ-কষ্ট দেখার যেনো কেউ নেই! নিম্নে ৩টি ঘটনা উল্লেখ করা হলো।
ঘটনা–১. কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক সকাল ও দুপুরে ভাত খেতে পারেননি। পেটে দেওয়ার মতো কোনো খাবার তাঁর ঘরে নেই। ২ এপ্রিল সকাল ও দুপুরে ভাত খেতে পারেননি। ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। বেতনের টাকাও শেষ হয়ে গেছে। আবার বাইরের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোও বন্ধ। শেষ পর্যন্ত ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে তিনি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে ফোন দিয়ে শিক্ষক পরিচয় দিয়ে বিষয়টি জানালেন। ফোন পেয়ে ইউএনও ওইদিন রাত আটটার দিকে ওই শিক্ষকের বাড়িতে রান্না করা খাবার ও খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়ে দেন। (দৈনিক প্রথম আলো, ৩ এপ্রিল ২০২০)।
ঘটনা ২ : অর্থকষ্টেএই দুর্যোগ সময়ে পাঠাও চালানো শুরু করেছেন বেসরকারি শিক্ষক খোরশেদ আলম। করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য সবাইকে নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করার কড়ার নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে নেমেছেন একজন সেরকারি শিক্ষক। তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চলের কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। টাকার অভাবে পুরনো বাইক দিয়ে ৩ এপ্রিল থেকে রাইড শেয়ারিং শুরু করেছেন তিনি।
বেসরকারি শিক্ষকদের একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি শেয়ার করেছেন শিক্ষক মো. খোরশেদ আলম নিজেই। পোস্টে তিনি জানান, দোকান থেকে বাকি না দেয়ায় লজ্জিত শিক্ষক অঘোষিত লকডাউনের মধ্যেই রাইড শেয়ার করছেন। ফেসবুক পোস্টে শিক্ষক মো. খোরশেদ আলম বলেন,‘শিক্ষক হিসেবে আমি খুবই অসহায়, তাই এই পথ অবলম্বন করলাম। সারা দেশে চলছে লকডাউন। মাসিক বাজেট যেটা ছিল, দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধিতে সেটা মাস শেষ না হতে অনেক আগেশেষ। দোকানে আর বাকি দিচ্ছে না। আমি টাকা পরিশোধ করতে পারব কিনা বিশ্বাস করতে পারছে না। আসলে আমি শিক্ষক হিসাবে খুবই লজ্জিত। তখন নিজেকে খুবই ছোট মনে হচ্ছিল। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের পুরাতন বাইক নিয়ে আজ ‘পাঠাও’ কোম্পানির ভাড়া মারব। রাস্তায় গাড়ি না থাকাতে প্রায় যাত্রী বাইকের ওপর নির্ভরশীল। তাই সকাল সকাল নিজের বাইক নিয়ে বাহির হলাম। পোস্টে শিক্ষক আরও বলেন, ‘আমি জানি আমার এই পোস্টে অনেকে খারাপ কমেন্টস করবেন। বড় বড় কথা বলবেন। বড় বড় বাণী না শুনিয়ে পারলে, পরিবার নিয়ে বাঁচার জন্য সহযোগিতা করুন। তখনতো আর পারবেন না। শিক্ষক হিসেবে জীবনে শুধু মান-সম্মান পেলাম। এখন সেটুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছি। (দৈনিক শিক্ষা বার্তা ডটকম, এপ্রিল ২০২০)।
ঘটনা–৩. দুই বছরের শিশু সন্তানের দুধ কেনার অর্থ পকেটে না থাকায় ডিসির কাছে ফোন করে সাহায্য চাইলেন এক মাদরাসা শিক্ষক। বরগুনার ডিকেপি রোডের বাবে জান্নাত মাদ্রাসার একজন শিক্ষক মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি প্রাইভেট পড়িয়ে স্ত্রী ও শিশু সন্তান নিয়ে সুখে-শান্তিতে জীবন যাপন করে আসছিলেন। হঠাৎ করেই বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রকোপে চলছে অঘোষিত লকডাউন। বরগুনায় বন্ধ রয়েছে সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রাইভেট টিউটর। জেলাজুড়ে অঘোষিত লকডাউন চলার কয়েকদিনের মধ্যেই শিক্ষকের ঘরের খাদ্যদ্রব্য শেষ হয়ে যায় এবং অসহায় হয়ে যান ২বছরের শিশু সন্তানের দুধ কেনার অর্থ পকেটে না থাকায়। নিরুপায় হয়ে শিক্ষক জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহর সরকারি নম্বরে অসহায়ত্বের কথা লিখে একটি বার্তা মোবাইলে প্রেরণকরেন। জেলা প্রশাসক শিক্ষকের অসহায়ত্বের বার্তা বৃহস্পতিবার বিকেলে শিশু সন্তনের দুধ কেনার জন্য নগদ অর্থসহ খাদ্য সামগ্রী পাঠিয়ে দেন শিক্ষকের ডিকেপি রোডের বাসায়। (দৈনিক যুগান্তর, ৩ এপ্রিল ২০২০)।
আমার খুব কাছের এক ভাই চাকুরি করেন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে। উনাকে কল দিলাম কি অবস্থায় আছেন জানার জন্য। তিনি বললেন গত ৩ মাসের বেতন পাননি। প্রতিষ্ঠান যেহেতেু জুন পর্যন্ত বন্ধ আরও তিন মাস যোগ হবে। এখন কিভাবে চলবেন বুঝতে পারছেন না। অনেক দুঃখ-কষ্টে আছেন তিনি। খোঁজখবর নেওয়ার জন্য ফোন দিলাম একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষককে। তিনি জানালেন-ভাই কর্মজীবনে এই প্রথম আমার পরিবারে দুঃসময় যাচ্ছে। গত মার্চ মাস থেকে স্কুল বন্ধ, খোলবে জুনের শেষ দিকে। টিউশনি, প্রাইভেট, কোচিং করে কোনো রকম সংসার চালাতে পারতাম। কিন্তু সরকার সব বন্ধ ঘোষণা করার কারণে কর্মহীন হয়ে এখন ঘরবন্দি। স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারির কয়েক মাসের বেতন আটকা। বাসার মালিক ভাড়া দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন, এমতাবস্থায় কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। আশার আলা দেখতে পাচ্ছি না। আপনারা সাংবাদিক, লেখক মানুষ সরকারের কাছে আমাদের পক্ষ থেকে কিছু দাবি জানান। প্রকৃত সত্য হলো মধ্যবিত্তরা এখন চরম সংকটে ভুগছেন। মধ্যবিত্তের কান্না ঘরেই, সরকার তাদের কান্না শুনতে পাচ্ছেন না!
গত ৯ এপ্রিল দৈনিক আমার বার্তাসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর থেকে জানতে পারলাম- বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদ গভঃ রেজিঃ এস-১১৭৭৬ এ সংগঠনটি গত ৯ এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছে এবং করোনায় সৃষ্ট মহাসঙ্কট কাটিয়ে উঠতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধলক্ষাধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে প্রণোদনা বা আর্থিক সহায়তার দাবি জানিয়েছেন। ওই স্মারক লিপিতে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ঈদুল ফিতরের পরে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে হয় তাহলে অর্ধলক্ষাধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুল এবং ২০ লাখ শিক্ষক-স্টাফদের কি হবে! এছাড়া মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বাসা ভাড়া, সাথে শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দের বেতন ভাতা, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য ব্যয়ভার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে বহন করবে! স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘বর্তমানে ব্যক্তিমালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও শিক্ষক শিক্ষিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকলেই দিশেহারা। তারা সবাই বর্তমানে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করছেন। একদিকে করোনা মহামারী আতঙ্ক, অন্যদিকে জীবিকা নির্বাহ। আমাদের অনেকের শেষ আশ্রয়স্থল প্রাইভেট টিউশনিও বন্ধ। আপনার মহানুভবতায় পোশাক-কর্মী, কৃষককরা ব্যাংক থেকে নানাভাবে সাহায্য পাবে। সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বেতন-ভাতাসহ সকল সুবিধা ভোগ করবে। কিন্তু আমরা ব্যক্তিমালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকবৃন্দ এই বিশাল ব্যয়ভার কিভাবে বহন করব? যেখানে কোনও বাণিজ্যিক ব্যাংক আমাদের লোন পর্যন্ত দেয় না। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক সুবিবেচনা ও বিশেষ মানবিকতা কামনা করে চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সকল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের এই বিশাল ব্যয়ভার বহনের জন্য প্রতিষ্ঠানের আনুমানিক ব্যয় অনুপাতে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করলে এই বিশাল শিক্ষক সমাজ আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে এবং আপনার কথা মনে রাখবে। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আওয়ামী লীগ সরকারই কিন্ডারগার্টেনগুলোর শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বোর্ড বই ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে।
করোনা ভাইরাস থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। যা যুগোপযোগি ও প্রশংসীয় উদ্যোগ। আশা করছি এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক গতিশীলতা অব্যাহত থাকবে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে জোর নিবেদন যে-বাংলাদেশের অর্ধলক্ষ কিন্ডারগার্টেন স্কুল ধ্বংস হওয়া থেকে বাঁচাতে ও দেড় কোটি শিক্ষার্থী শিক্ষা বঞ্চিত হওয়া থেকে এবং ২০ লাখ শিক্ষক-কর্মচারির পরিবারকে আর্থিক সংকট নিরসনে আপনি মানবিক দৃষ্টি দিয়ে কার্যকর একটি পদক্ষেপ নিবেন।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আন্তরিক হলেই ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান টিকে থাকবে এবং দেড় কোটি শিক্ষার্থীরা শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে সমাজকে উজ্জ্বল করতে পারবে। আশা করি প্রধান মন্ত্রী আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও বেসরকারি কলেজসমুহকেও আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমমে শিক্ষকদের আর্থিক সঙ্কট নিরসনে এগিয়ে আসবেন।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও প্রিন্সিপাল
শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল।
মন্তব্য করুন