অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ ও ব্যবস্থাপককে অপসারণের দাবিতে কমলগঞ্জের মদনমোহনপুর চা বাগানে সাত ঘন্টার কর্মবিরতি
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ন্যাশনাল টি কোম্পানী (এনটিসি)র মালিকানাধীন মদমোহনপুর চা বাগানে অস্থায়ী চা শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ ও ব্যবস্থাপকসহ এক কর্মচারীকে অপসারণের দাবিতে চা শ্রমিকরা সাত ঘন্টা কর্মবিরতি পালন করে।
২১ জানুয়ারি শনিবার সকাল সাতটা থেকে মদনমোহনপুর চা বাগানের সাড়ে চার ’শ চা শ্রমিক কাজে যোগ না দিয়ে বেলা দুইটা পর্যন্ত কমবিরতি পালন করে।
মদনমোহনপুর চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি উমা শঙ্কর গোয়ালা, সাধারন সম্পাদক আদিত্য চাষা ও ইউপি সদস্য চা শ্রমিক সাবিদ আলীসহ সাধারন চা শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, গত ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে এ চা বাগানে বেশ কিছু চা শ্রমিক দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে অস্থায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করছে। তাদেরকে এখন পর্যন্ত চা বাগানের মাসিক মজুরী অর্থাৎ স্থায়ী শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় নাই। অথচ চা বাগান ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান ও প্রধান টিলা বাবু (প্লান্টেশন এলাকার প্রধান কর্মচারী) জয় প্রকাশ কৈরী মিলে তাদের পছন্দের অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ করেছেন। তাছাড়া চা বাগান কর্তপক্ষের গাফিলতিতে শুক্রবার এক নারী শ্রমিকের গর্ভজাত সন্তান মারা গেছে। তাই বাধ্য হয়ে প্রধান ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান ও প্রধান টিলা বাবু জয় প্রকাশ কৈরীর অপসারণ দাবি করে শনিবার সকাল থেকে মদনমোহনপুর চা বাগানের সাড়ে চার ’শ চা শ্রমিক কাজে যোগ না দিয়ে কারখানা ও অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি পালন করে। এক সময় আন্দোলনকারী চা শ্রমিকরা চা বাগান ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান ও প্রধান টিলা বাবু জয় প্রকাশ কৈরীকে মদনমোহনপুর চা বাগানে থেকে বের করে দেয়।
এ ঘটনার খবর পেয়ে এনটিসির মালিকানাধীন পার্শ্ববর্তী পাত্রখোলা, মাধবপুর, কুরমা ও চাম্পারায় চা বাগান ব্যবস্থাপকরা ও কোম্পানীর ডিজিএম মোহাম্মদ শাহজাহান ঘটনাস্থলে আন্দোলনকারী চা শ্রমিকদের সাথে আলোচনায় বসেন। তাছাড়া কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের নির্দেশে মাধবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু চা বাগান কর্তৃপক্ষকে নিয়ে আন্দোলনকারী চা শ্রমিকদের সাথে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় মদনমোহনপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান, প্রধান টিলা বাবুকে দ্রুত অন্য চা বাগানে বদলি করে নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করলে সাত ঘন্টা পর বেলা দুইটায় আন্দোলনকারী চা শ্রমিকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহর করে।
মদনমোহনপুর চা বাগানের পঞ্চায়েত সাধারন সম্পাদক আদিত্য চাষা কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানও চা বাগান ব্যবস্থাপনা পর্ষদ ব্যবস্থাপক ও টিলা বাবুকে বদলী করে নিবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আগামী বুধবারের মধ্যে ব্যবস্থাপকসহ কর্মচারী এই চা বাগান থেকে তাদের ব্যবহারী মালামাল নিয়ে অন্যত্র চলে যাবেন।
তবে মদনমোহনপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান শ্রমিকদের কর্মবিরতি পালনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চা বাগানের বিধি মোতাবেক কাজের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে অস্থায়ী চা শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ করা হয়। তাও আবার ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয় এসব বিষয় দেখে অস্থায়ী চা শ্রমিকদের স্থায়ী করণ করে। এখানে তার বা প্রধান টিলা বাবুর করার কিছু নেই। শনিবার আন্দোলনকারী চা শ্রমিকরা তাকে এ চা বাগানে না থাকতে বলায় তিনি নিজেই অন্যত্র সরে গেছেন। তিনি আরও বলেন, শুক্রবার মদনমোহনপুর চা বাগানের এক নারী চা শ্রমিককে চা বাগানের গাড়ি দিয়ে চিকিৎসা ব্যয় ১৫ হাজার টাকাসহ প্রথমে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। এই নারী শ্রমিদের শারীরিক জটিলতায় গর্ভের শিশু মারা গেছে। যাহা সদর হাসপাতালের রেকর্ড বলবে। এখানে চা বাগান ব্যবস্থাপকের কোন গাফিলতি ছিল না। তিনি আরও বলেন, এভাবে অন্যায়ভাবে অহেতুক আন্দোলন শুরু করলে চা শিল্পের ক্ষতি ছাড়া কিছুই হবে না।
মন্তব্য করুন