আওয়ামীলীগ মানেই বাংলাদেশ, বাঙালি জাতির ইতিহাস ; আর ইতিহাসের মহানায়ক হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু
মকিস মনসুর॥ ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার লালসূর্য অস্তমিত হয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িকও অবৈজ্ঞানিক দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত পৃথক দুটি ভূ-খন্ড নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয়।
ইতিহাসের ধারাবাহিকতার আলোকে বাংলার স্বাধীনতার হারানো লালসূর্যকে ফিরে আনার দূঢ়প্রত্যয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাগণ দলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের দিন হিসেবে এই ২৩ জুন তারিখটিই বেছে নিয়েছিলেন। ঢাকার টিকাটুলি এলাকার কে এম দাস লেনের নান্দনিক সৌন্দর্যে অতুলনীয় উন্নত রুচি ও অভিজাত দৃষ্টিভঙ্গিতে নির্মিত এক আলোজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনেই ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক এ দলটির জন্ম হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৫ সালে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর দলটি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নাম ধারণ করে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে দশমবারের মতো দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ১৭ মে ২০২১-এ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার চার দশক পূরণ হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্টাবার্ষিকী,বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল সহ বাংলাদেশ তথা এ উপমহাদেশের রাজনীতিতে এ দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, জননেতা শামছুল হককে সাধারণ সম্পাদক, এবং জেলে থাকা অবস্থায় তথকালীন তেজোদ্দীপ্ত তরুণ সংগ্রামী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করে নতুন এ দলটির জন্মের খবরে চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠি। তারা গণতন্ত্রের মানস পুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে ভারতীয় চর বলে আখ্যায়িত করে। ৪০ সদস্যের ঘোষিত ওয়ার্কিং কমিটি পাকিস্তানের শাসকদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে তীব্র গতিতে দলটিকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানের প্রকৃত অর্থেই প্রথম বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী মুসলিমলীগ ছাড়া কার্যত আর কোন দলের অস্তিত্ব ছিলো না। পরবর্তী কালে এর নাম ছিল নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। এর পর ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য ও দলীয় মূলনীতিতে ধর্ম নিরপেক্ষতা গ্রহণের মাধ্যমে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগ, নামকরন করা হয়।
১৯৭০ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক ঐতিহাসিক নৌকা হিসাবে টিক করা হয়।
বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর থেকে প্রবাসী সরকারের সব কাগজপত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নাম ব্যবহার শুরু হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর এই সংগঠনটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে পরিচিতি লাভ করে।
পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যতম প্রাচীন এবং জনসাধারণের আস্থার ঠিকানা এ সংগঠনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে এবং প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এদেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ইতিহাস একই সূত্রে গাঁথা। এই দলের জন্মলাভের মধ্য দিয়েই রোপিত হয়েছিল বাঙালীর হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ। জন্মলগ্ন থেকেই দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি দলটির নেতাকর্মীদের অঙ্গীকার ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামে ও স্বাধীনতা অর্জনে আওয়ামী লীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিশ্বের ইতিহাসে একমাত্র রাজনৈতিক দল, যে দল একটি জাতির ভাষা, স্বাধীনতা এবং পতাকার জন্যে সংগ্রাম করেছে।
আওয়ামীলীগের নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভ করে বাংলাদেশ নামক শব্দটি বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্টা লাভ করেছে.। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আজও দলটি দেশের জনগণের পছন্দের শীর্ষে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং মানবাধিকারের সবচেয়ে বড়ো ধারক ও বাহক। এই দলটির স্বপ্ন অতীতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাত ধরে বাস্তবায়িত হয়ে চলেছে। আমাদের জন্যে বাংলাদেশ শুধুই একটি মানচিত্র নয় বরং ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং তিন লক্ষ বীরাঙ্গনার সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া এক সম্পদ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।প্রত্যেকটি যুদ্ধেরই একটি পটভূমি থাকে। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধও ১৯৬৬ এ বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা, ৬৯ এর গণ আন্দোলন. ১৯৭০ এ আওয়ামীলীগের নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করা সহ কয়েকটি ঘটনার পর্যায়ক্রমিক রূপান্তর। । ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন যেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেয়, সেই আন্দোলনও এই যুদ্ধের পটভূমি রচনায় সহায়তা করে। ৭৫ বছরের দীর্ঘ যাত্রায়, এই দলটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সকল সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বিরাট এক কালো মেঘ ঢেকে দেয় স্বাধীনতার আলো। বাঙালীর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা, বাঙালীর আত্মনিয়ন্ত্রণ, স্বায়ত্তশাসন সর্বশেষ স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগ তার আদর্শ এবং উদ্দেশ্যে অটল থেকেও সময়ের বিবর্তনে একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আজ প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগ শুধু দেশের পুরনো ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলই নয়, এটি হচ্ছে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শের মূলধারাও। প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত নানা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আমাদের সমাজ-রাজনীতির এ ধারাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে নিচ্ছে।আমাদের প্রাণের এই সংগঠন এখন ও বাংলাদেশের মানুষের অন্তরে মাতৃ-সংগঠন হিসাবে স্থান করে নিয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তথা ‘প্লাটিনাম জয়ন্তী’ পালনের প্রারম্ভে আজকের এই লেখার শুরুতেই স্রদ্ধার সাথে স্ররন করছি ঐতিহাসিক এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাকালীল সময়ের অগ্রদূত মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও জননেতা শামসুল হক. গণতন্ত্রের মানস পুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ. আবুল হাশেম. ক্ষণজন্মা পুরুষ অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান. অলি আহমদ. তাজ উদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপটেন এম মনসুর আলী, কামারুজ্জমান সহ যাদের নেতৃত্বে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠায় সুকঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নতুন প্রাণ পায় দীর্ঘদিনের পুরনো এই দলটি। এছাড়াও প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজবধি ২০টি কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ ছয় জনকে সভাপতি পদে পেয়েছে আর সাধারণ সম্পাদক পদে পেয়েছে নয় জনকে। দলের প্রথম সভাপতি ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তিনি ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত চারটি কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ওই বছর একটি বিশেষ কাউন্সিলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ। ১৯৬৪ সালে দলের পঞ্চম কাউন্সিলে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। সভাপতি পদে ছিলেন ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত। ওই বছর ষষ্ঠ কাউন্সিলে দলের সভাপতি হন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সভাপতি পদে ছিলেন। ১৯৭৪ সালে দশম কাউন্সিলে সভাপতি হন এ এইচ এম কামরুজ্জামান। ১৯৭৫ সালে ঘাতকের গুলিতে কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে ও জাতীয় চার নেতা নিহত হওয়ার পর ১৯৭৬ সালে মহিউদ্দিন আহমেদ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হন। এর পরের বছর ১৯৭৭ সালে দলের ১১তম কাউন্সিলে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে আহ্বায়ক করা হয়।
এরপর ১৯৭৮ সালে কাউন্সিলে সভাপতি হন আবদুল মালেক। তিনি ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ছিলেন। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে দলের সভাপতি পদে আছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। দলের ১৩তম কাউন্সিলে তিনি প্রথম সভাপতি হন। সর্বশেষ ২০তম কাউন্সিলেও তিনি একই পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ গঠনের পর ১৯৪৯ সালে দলের প্রথম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক। এরপর ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দলের দ্বিতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। এরপর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরপর দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক হন আবদুর রাজ্জাক। ১৯৮৭ সালে সাধারণ সম্পাদক হন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। ছিলেন ১৯৯২ সাল পর্যন্ত। এর জিল্লুর রহমান আবারও দুই মেয়াদে ২০০২ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০২ সালের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক হন আবদুল জলিল। ছিলেন ২০০৯ সাল পর্যন্ত। ওই বছর দলের ১৮তম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করেন ২০১৬ সাল পর্যন্ত। সর্বশেষ ২০তম
কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়ে নবম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জননেতা ওবায়দুল কাদের।
এখানে উল্লেখ্য যে পাকিস্তান সৃষ্টির ৪ মাস ২০ দিন পর ১৯৪৮ সালের ৪ টা জানুয়ারি তৎকালিন পূর্ব বাংলায় প্রথম সরকার বিরুধী ছাত্র সংগঠন ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’, আত্ম-প্রকাশ করে। বাংলাদেশের তৎকালীন তরুণ প্রজন্মের উদীয়মান এক উজ্জ্বল নকত্র শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রেরণায় সংগঠিত জাতীয় আন্দোলনের মূল ধারায় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালণ করে ঐতিহ্যবাহী ছাত্রলীগ।
এদিকে ১৯৫৩ সালের ১৪-১৫ নভেম্বর ময়মনসিংহ শহরে অনুষ্ঠিত দলের বিশেষ কাউন্সিলে সাধারণ নির্বাচনে জোট গঠনের সিদ্ধান্তের পর ১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৭টি আসন পায় জাতীয় তিন নেতা শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্ট। আওয়ামী মুসলিমলীগ একা পায় ১৪৩টি আসন। মাত্র ২৪ বছর বয়সে এ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচিত হন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। এ নির্বাচনে পাকিস্তানের মুসলিমলীগের শোচনীয় পরাজয় হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সব আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ গঠনে সর্বোচ্চ ভুমিকা পালন করেছে আওয়ামী লীগ।
তাই স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ইতিহাস একই সূত্রে গাঁথা। আওয়ামী লীগ মানেই বাংলাদেশ! আওয়ামীলীগ মানেই বঙ্গবন্ধু আর বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলার মানচিত্র.; জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শুধু একটি নামই নয়, একটি মুক্তির পথ, একটি বিশ্বাসের নাম। তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির পথ প্রদর্শক ও জাতির মুক্তির নায়ক। যতকাল ধরে পদ্মা-মেঘনা-গৌরী যমুনা মনু বহমান থাকবে, ততকাল বঙ্গবন্ধুর নাম বাঙালি জাতির অন্তরে লালিত হয়ে থাকবে চির অম্লান হয়ে। আওয়ামীলীগের ইতিহাস বাংগালী জাতির ইতিহাস. আর এই ইতিহাসের মহানায়ক হচ্ছেন,সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান.।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদল সেনা অফিসারের হাতে নির্মমভাবে খুন হবার পর একই বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর গুলি করে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট চার সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে।
১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে এদেশের গণতন্ত্র নস্যাৎ ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ ভূলুণ্ঠিত করা হয়।
বঙ্গবন্ধু ও জাতীর চার নেতাকে হত্যার পর সামরিক সরকারের শাসনামলে দমনপীড়নের মুখে ও মতের ভিন্নতায় বিভক্ত হয়ে পড়ে সংগঠনটি।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর যারা ছিল অবহেলিত ও নির্যাতিত জনগণ শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনে ও তাঁর নেতৃত্বের পরশে তারা আবারো জেগে ওঠার সাহস ও প্রেরণা পেয়েছিলো। ১৯৮১ সালের ১৭ মে রাজনীতিবিদ হিসাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আবার ও দেশে স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে এবং এদিন শেখ হাসিনার নামে যথার্থই জেগে উঠে বাংলাদেশ। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের দ্বিতীয় জন্মগ্রহণ! ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয়!
৬ বছর পর, ভয়াল ঘাতকের হুমকি-ধমকি আর রক্তচক্ষু উপেক্ষা ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়েই ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মানের মৃতপ্রায় স্বপ্ন যেন পুণর্জন্ম লাভ করে।
ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন দীর্ঘ সংগ্রাম শুরু হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তাঁর একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনোকিছুই তাঁকে তাঁর পথ থেকে টলাতে পারেনি এক বিন্দু, শত প্রতিকুলতাতেও হতোদ্যম হননি কখনো। বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনরুদ্ধার করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বারবার স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছেন, আবির্ভুত হয়েছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা রূপে। জনগণের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে দেশে ফেরার ১৫ বছরের মাথায় আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে এই ৪০টি বছরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনি ও একাত্তরের নরঘাতক মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন এবং রায় কার্যকর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, যোগ্যতা, নিষ্ঠা, মেধা-মনন, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এক সময় দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করতো সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ।
জিডিপির প্রবৃদ্ধি এবং আর্থ-সামাজিক সূচকে ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ হিসেবে সত্যিকারার্থেই উত্থান ঘটেছে বাংলাদেশের। যে কারণে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে আন্তর্জাতিক বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সততা, মেধা, দক্ষতা ও গুণাবলিতে সমসাময়িক বিশ্বের অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। আপন কর্মমহিমায় হয়ে উঠেছেন- নব পর্যায়ের বাংলাদেশের শিখরনের কা-ারি। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার, বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার বিশ্বস্ত ঠিকানা, বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্ন-সারথী। বিশ্বরাজনীতির উজ্জ্বলতম প্রভা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পিছিয়ে পড়া দেশ-জাতি জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র হিসেবে বিশ্বনন্দিত নেতা। বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা ‘নীলকণ্ঠ পাখি’, মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্তমানবী। তিমির হননের অভিযাত্রী, মানবতার জননী, আত্মশক্তি-সমৃদ্ধ সত্য-সাধক। প্রগতি-উন্নয়ন শান্তি ও সমৃদ্ধির সুনির্মল-মোহনা। এক কথায় বলতে গেলে সাগর সমান অর্জনে সমৃদ্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কর্মময় জীবন।
জননেত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ ৩৯ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের এ পথচলা কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, ছিল কন্টকাকীর্ণ ও বিপদসংকুল। গণমানুষের মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রাম করার অপরাধে তাঁকে বারবার ঘাতকদের হামলার শিকার ও কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে ছিলেন পিতার মতোই অবিচল, দৃঢ় ও সাহসী।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যা তনয়া পিতার প্রতিচ্ছবি হয়ে তাঁর অসমাপ্ত কাজ, ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে নিজের সব চাওয়া-পাওয়া, সাধ-আহলাদ জলাঞ্জলি দিয়ে অহর্নিশ ছুটে চলেছেন, অক্লান্ত শ্রম দিচ্ছেন। নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে পিতার মতোই অবিচল, দৃঢ় ও সাহসী। তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন। ‘রূপকল্প ২০২১’ এর মধ্যম আয়ের বাংলাদেশকে ‘রূপকল্প ২০৪১’ এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলার আলোর মিছিলকে এগিয়ে নিতে একটি উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যারতœ শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ.
দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উতরাই ও প্রাসাদসম ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দলটি আজ এ দেশের গণমানুষের ভাব-ভাবনার ধারক-বাহকে পরিণত হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক ভাবধারার আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে দলটি। আবেগ , সংগ্রাম , জাতিসত্তা , দেশপ্রেম, মানবিকতা আর অসাম্প্রদায়িক প্রগতির মিলনে এক স্বতন্ত্র অনুভূতির নাম আওয়ামীলীগ । অনেক অমানিশা , কণ্টকাপূর্ণ অসমতল পথ আর হাজারো রক্ত নদী উজানে রেখে আসা আমাদের সম্মুখ যাত্রার অবিনশ্বর সারথি এই আওয়ামীলীগের একজন কর্মী হতে পেরে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করছি।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস সংগ্রাম, সৃষ্টি, অর্জন ও উন্নয়নের ইতিহাস। আওয়ামীলীগ মানেই বাংলাদেশ ; আওয়ামী লীগ মানেই বাঙালি জাতির ইতিহাস ; আর ইতিহাসের মহানায়ক হচ্ছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
২০০১ এবং ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর আর এক দফা বিপর্যয় কাটিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় এই দলটি।
২০০৮ সালে পুনরায় সরকার গঠন করে ‘ভিশন ২০২১’-এর আলোকে মধ্যম আয়ের সুখী-সমৃদ্ধশালী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখান এবং ২০১৪ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ‘ভিশন ২০৪১’-এর আলোকে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জনের ধারাবাহিকতায় বাংলার জনগণ বিশ্বাস করে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
এ দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে সফলতার নতুন পথ দেখিয়েছেন,দেশের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ। মেট্রোরেল,কর্ণফুলী টানেল, পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সহ অসংখ্য মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৩.২%। ২০৩২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের বড় ২৫টি অর্থনীতির দেশের একটি হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১৪৫টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। ২০০৯ সালে রপ্তানি আয় ছিল ১.২৬ বিলিয়ন ডলার, আর ২০১৮ সালে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৪১.১ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধির হার ২০০৯ সালে ছিল ৫.৭৪, তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮ সালে হয় ৭.৮৬। বৈদেশিক বিনিয়োগ ২০০৯ সালে যেখানে ছিল ৯৬.১ কোটি ডলার, ২০২০ সালে এসে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩৭২.৮০ কোটি ডলারে। ২০০৯ সালে খাদ্য উৎপাদন ছিল ৩৪৭ লক্ষ মেট্রিক টন, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০০ লক্ষ মেট্রিক টন। বিদ্যুৎ আওতাধীন জনগোষ্ঠী ২০০৯ সালে ছিল ৪৭%, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৯৭%। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালে যেখানে ছিল ৪,৯৪২ মেগাওয়াট, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২৩,৫৪৮ মেগাওয়াটে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০০৯ সালে ছিল ১ বিলিয়ন ডলার, আর ২০২০ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩৯ বিলিয়ন ডলারে। মাথাপিছু আয় ২০০৯ সালে ছিল ৭১০ ডলার, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২,০৬৪ ডলার। রেমিটেন্স আয় ২০০৯ সালে ছিল ৯.৭ কোটি ডলার, বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে তা ১৮.০৩ কোটি ডলার। গড়আয়ু ২০০৯ সালে ছিল ৬৬.৮ বছর, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৭২.৬ বছর হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে অবস্থান ২০০৯ সালে ছিল ৯৩তম, বর্তমানে তা ৫০তম। দারিদ্র্যের হার ২০০৯ সালে যেখানে ছিল ৩৪%, হ্রাস পেয়ে তা ২০২০ সালে হয় ২০.৫%। করোনা ভাইরাসের মহামারীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর পক্ষ থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ ৮ হাজার ৮১ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা এবং ১০ কোটি ৫২ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি,জীবনমানের উন্নয়ন,দারিদ্র্য হ্রাস, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন,সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ,আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ প্রভৃতি কারণেই বাংলাদেশ বিশ্ব পরিম-লে স্বাতন্ত্র্য অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর এবং আন্তর্জাতিক নানা সূচকে সুদৃঢ় অবস্থান আমাদেরকে মর্যাদাপূর্ণ জাতিতে পরিণত করেছে।
তরুণ প্রজন্মের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যত বিনির্মাণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল দেশ।
আমাদের তরুণ প্রজন্ম অত্যন্ত মেধাবী। তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সর্বদা এই তারুণ্যকে ধারণ করে।
এই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছে এ দলটি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের জনসাধারণের আস্থার শিকড় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলটি ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে তাঁর অঙ্গ সংগঠন নিয়ে দেশের মানুষদের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং রক্ষার জন্য সর্বত্র বৃক্ষরোপণ করেছে। এছাড়াও দলটি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, দল গঠন করেছে এবং সফলতা ও দক্ষতার সহিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিক্ষাবান্ধব, জনবান্ধব এবং সময়োপযোগী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে ৭,৯৭,০০০ কোটি টাকা পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেট পেশ করেছেন। যাহা সকল মহলেই প্রশংসনীয় হয়েছে।
‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’ তথা প্লাটিনাম জয়ন্তী উপলক্ষ্যে ২২ শে জুন মানণীয় প্রধানমন্ত্রী ম্যাদার অব ইউম্যানিটি দেশরতœ শেখ হাসিনা এক বাণীতে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছে সরকার বলে দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেছেন। আমার লেখার সাথে মানণীয় প্রধানমন্ত্রীর পুরো বাণী তুলে ধরছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে ‘ডেল্টা পরিকল্পনা’ বিনির্মাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক বাণীতে আজ এ কথা বলেন।
এই উপলক্ষ্যে তিনি দলের সকল নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক সামসুল হকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী, জাতীয় চার নেতা, স্বাধিকার আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদগণসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহিদ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের-যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি এবং আওয়ামী লীগ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের গণমানুষের প্রাণের সর্ববৃহৎ সংগঠন।
তিনি বলেন, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালি জাতির মুক্তি এবং ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকার রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ থেকে ২৪ জুন এক সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল অসাম্প্রদায়িকতা ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন, রাষ্ট্র পরিচালনায় জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করা ও বিশ্বশান্তির পথকে প্রশস্ত করা।
তিনি বলেন, কারাবন্দি অবস্থায় তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান নবগঠিত সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং সাংগঠনিক তৎপরতার জন্য ১৯৫৩ সালের নভেম্বরে দ্বিতীয় সম্মেলনেই তাঁকে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এরপর শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর প্রজ্ঞা, শ্রম, নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও অবিচল আদর্শকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের প্রশ্নে হয়ে উঠেন একজন অবিসংবাদিত নেতা।
সরকার প্রধান বলেন, হাজার বছরের শাসন-শোষণের ইতিহাস মুছে ফেলে বাঙালি জাতির চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগঠনটিকে প্রস্তুত করতে শেখ মুজিবকে যেমন অসংখ্য চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিতে হয়েছে, তেমনি তাঁর ব্যক্তি-জীবনকেও বিসর্জন দিতে হয়েছে। কালের পরিক্রমায় তিনি হয়ে উঠেন- সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালির জাতির পিতা।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ভূখন্ডে প্রতিটি প্রাপ্তি ও অর্জন সবই জাতির পিতা ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাঙালির অর্জন এবং বাংলাদেশের সকল উন্নয়নের মূলেই রয়েছে আওয়ামী লীগ।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। জন্মলগ্ন থেকেই সংগঠনটি ভাষা-শিক্ষা’র অধিকার, বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’- দাবিতে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সচিবালয়ের ১নং গেইট থেকে পিকেটিং করার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গ্রেফতার হন। তাঁর পরামর্শে ’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি ‘ভাষা দিবস’ সমর্থনে ধর্মঘট আহ্বান ও ১৪৪-ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত এবং কারান্তরীণ অবস্থায় অনশন ঘোষণা ভাষা আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জনকে ত্বরান্বিত করে।
তিনি বলেন, ১৯৫৪ সালের ৮ মার্চ ২১-দফা ইশতাহারের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে এবং মন্ত্রিসভা গঠন করে। পাকিস্তানের গভর্নর সে মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় মন্ত্রিসভা গঠন করে। সেসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সারাদেশ ঘুরে মহকুমা ও থানা পর্যায়ে দলীয় কর্মীবাহিনীকে নিয়োজিত করে পূর্ব-বাংলায় বিরাজমান তীব্র খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করেন। মাত্র দু’বছরের কম সময়েই জনকল্যাণকর বিভিন্ন কর্মকান্ড গ্রহণ করে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয় এবং পূর্ব-বাংলার স্বায়ত্তশাসনসহ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে।
তিনি বলেন, ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে সামরিক শাসন জারির ফলে বাংলার মুক্তিকামী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়। দৃঢ়-প্রত্যয়ী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তৃণমূল পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করতে মনোনিবেশ করেন ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। জনগণই আওয়ামী লীগের মূলশক্তি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই ’৬২-এর ছাত্র আন্দোলন, ’৬৪-এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধ, ’৬৬-এর ছয়-দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি মুক্তির সনদ রচনা এবং ’৬৯-এর গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরশাসন অবসানের প্রতিশ্রুতি অর্জন দলটিকে মুক্তিকামী মানুষের আশ্রয়স্থলে পরিণত করে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বের জন্যই আওয়ামী লীগকে ’৭০-এর নির্বাচনে পূর্ব-বাংলার মানুষ তাদের মুক্তির ম্যান্ডেট দিয়েছিল। জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদে দলটি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা জনগণের এ রায়কে উপেক্ষা করে, শুরু করে প্রহসন। ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সকল সংসদ সদস্য ৬-দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের শপথ গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, এর পরপরই পশ্চিম পাকিস্তানি জান্তা সরকার জাতির পিতাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের নির্জন কারাগারে প্রেরণ করে। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণশক্তি। তাঁর অবিচল নেতৃত্বে বাঙালি জাতি মরণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গণপরিষদ গঠন করে বাংলাদেশের প্রথম সরকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করে। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে এবং সেদিন এ স্থানটির নাম মুজিবনগর রাখা হয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত সফল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেন। প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল- স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী’র দায়িত্ব গ্রহণ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সংবিধানে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর করেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতার আহ্বানে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্ধু দেশসমূহ দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। মাত্র সাড়ে তিন বছরে তাঁর নেতৃত্বে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় এবং স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী চক্র আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই হত্যার মধ্য দিয়ে তারা বাঙালি জাতির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস চালায়। ঘাতকদের উদ্দেশ্যই ছিল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করা। এই জঘন্য হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত স্বাধীনতাবিরোধী চক্র হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। তারা ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করে জাতির পিতার হত্যার বিচারের পথকে বন্ধ করে দেয়। বিদেশে থাকায় আমি এবং আমার বোন শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যাই। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে; সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করে; বিদেশে দূতাবাসে চাকুরি দেয়। স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের নাগরিকত্ব দেয়; রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার করে। ব্যবসা করার সুযোগ দিয়ে তাদের বিপুল অর্থের মালিক করে দিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে পুনর্বাসিত করে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশে থাকা অবস্থায় ’৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করে। নানা বাধা উপেক্ষা করে ’৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে এসে দলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করেন।
তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এবং স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও অবৈধ সেনাশাসকদের নির্যাতন আর নিপীড়নের মাধ্যমে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয় জনগণের সংগঠন আওয়ামী লীগকে। কিন্তু আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মী, সমর্থকেরা জীবন দিয়ে সকল প্রতিকূলতা, ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দলকে টিকিয়ে রেখেছে, শক্তিশালী করেছে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তারা শুরু করেন অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন ও দেশ গড়ার নবতর সংগ্রাম। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তারা খাদ্য ঘাটতির দেশকে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত করেন। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। তারা ‘দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল আইন, ১৯৯৬’ সংসদে পাশ করে জাতির পিতার হত্যার বিচার শুরু করেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় মহান ‘২১ ফেব্রুয়ারি’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পায়। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কারও মধ্যস্থতা ছাড়াই স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি। আওয়ামী লীগ সরকারের এই পাঁচ বছরে দেশে আর্থসামাজিক উন্নয়নের এক নবদিগন্তের সূচনা হয়।
সরকার প্রধান বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ বিএনপি-জামাত জোট সরকারের দুঃশাসন, অত্যাচার নির্যাতন ও দমন নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ২০০৭ থেকে ২০০৮ অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ ‘দিন বদলের সনদ’ ঘোষণা দিয়ে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে পুনরায় নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে এবং ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ধারাবাহিক সরকারে গত সাড়ে ১৫ বছর তারা দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাঙ্খিত অগ্রগতি অর্জন করেছেন। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শেষ বছর এবং আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের শেষ বছর- ২০২৩ সালের তুলনা করলে সাফল্যের তথ্যচিত্র আমাদের সামনে ভেসে উঠবে।
তিনি বলেন, এসময়ে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ, মাথাপিছু আয় ৫ গুণ, বাজেটের আকার ১২ গুণ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ১৩ গুণ, জিডিপির আকার ১২ গুণ, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ৩৬ গুণ, রপ্তানি আয় ৫ গুণ, রেমিটেন্স ৬ গুণ, এফডিআই ৫ গুণ, কৃষি-শ্রমিকের ক্রয় ক্ষমতা ৩ গুণ, শ্রমিকদের মজুরি ৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দারিদ্র্যহার ৪১ দশমিক ৫১ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। অতিদারিদ্র্য কমেছে ৫ গুণ। মানুষের গড় আয়ু হয়েছে ৭২ দশমিক ৮ বছর। এসময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৮ গুণ এবং বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগের হার ২৮ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাক্ষরতার হার বেড়েছে ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০০৯ সালে জিডিপির পরিমাণ ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে জিডিপির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেল যোগাযোগ শুরু হয়েছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশিতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১সহ দেশব্যাপী উন্নয়ন কর্মকা-ের বাস্তবায়ন করেছি।
তিনি বলেন, তারা দেশের সকল ভূমিহীন-গৃহহীনকে বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছি। আশ্রয়ণ প্রকল্প ও অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯০৪টি পরিবারের ৪৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছেন। সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করেছে। এ হত্যাকা-ের বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে এবং রায়ও কার্যকর করা হচ্ছে। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে, ফলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার আদর্শ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে আমাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা লড়াই-সংগ্রাম ও মানুষের আস্থা অর্জন করে আওয়ামী লীগকে জনমানুষের সংগঠনে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, তাদের নেতাকর্মীদের মেধা, পরিশ্রম, ত্যাগ ও দক্ষতায় আওয়ামী লীগ আরো গতিশীল ও শক্তিশালী হবে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্র বিরোধী দেশি-বিদেশি অপশক্তি এখনও নানাভাবে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এই অপশক্তির যেকোনো অপতৎপরতা-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে তিনি দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।
৭৫ বছরে পদার্পণের শুভ মুহূর্তে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষ,সর্ব কালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
শ্রদ্ধা জানাই জাতীয় চার নেতা সহ আওয়ামী লীগের লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মীদের প্রতি যারা বাঙালীর মুক্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন ।
সংকটে, সংগ্রামে ও অর্জনে গণমানুষের পাশে থাকা আওয়ামী লীগের ৭৫ বছরের শুভ জন্মদিনে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি প্রাচীন এই দলটির নেতৃবৃন্দদের, যারা দুঃসময়ে এই দলটির হাল ধরেছিলেন, দলটির পাশে থেকেছেন।
বাংলাদেশ আজকে এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যার কর্ণধার ম্যাদার অব ইউম্যানিটি জননেত্রী শেখ হাসিনা, তারই সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থকদের প্রতি সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানানো সহ আজকের এই দিনে আসুন দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা বিনির্মাণে মানণীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ডিজিটাল বাংলার আলোর মিছিলকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবো এই হোক আমাদের দীপ্ত শপথ.যতদিন রবে চন্দ্রসূর্য ধ্রুবতারা ; ততদিন হোক আদর্শের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের।
মন্তব্য করুন