আধাঁর রাতের সাথী
ফাতিহা কামাল॥ আমার বড় বোন তন্বী। তার জোঁনাকি পোকা খুবই পছন্দ। যেদিন বিকালে বৃষ্টি হয় সেদিন সন্ধ্যার পরই সে বাহিরে বের হয় জোঁনাকি পোকা ধরতে। মাঝে মাঝে আমিও যাই তার সাথে। সবদিন যে জোঁনাকির দেখা মিলে তাও নয়। আমার একটি কাঁচের বয়াম আছে। সেটির মুখটিতে অনেকগুলো ছিদ্র করে নিয়েছি যাতে এর মধ্যে জোঁনাকিদেরকে বন্দী করে রাখলে তারা বেঁচে থাকতে পারে। কারণ অক্সিজেন না পেলে জোঁনাকিরা নিঃশ্বাস নিতে পারবে না।
সন্ধ্যার পর বাসার বাইরে বের হলেই কাঁচের বয়ামটি সাথে নিয়ে যাই। জোঁনাকি পোকা ধরতে থাকি। তারপর সেগুলোকে বয়ামের মধ্যে ভরে বাসায় নিয়ে আসি। ঘরে এনে বাতি নিভিয়ে দেই। দেখা যায় সেগুলো ঘরের মধ্যে রাতের আকাশের তারাগুলোর মত মিটমিট করে জ্বলে আর নেভে। মনে হয় আমাদের ঘরটাই যেন রাতের আকাশ হয়ে গেছে।
আমি আমার বড় বোনের সাথে রাতে ঘুমাই। ঘরের লাইট নিভিয়ে ফেললে জোনাকিরা ডিমলাইটের মতো কাজ করে। অনেক সময় আমার বোন ঘুমিয়ে গেলেও আমার ঘুম আসেনা। তখন ওরা হয়ে যায় আমার সঙ্গী। জোঁনাকিকে নিয়ে আমি তখন গান করি,-
‘টিপ টিপ আলো ছড়াও নীরবে,
তুমি কি আমার বন্ধু হবে?
দেখ আমি কেমন করে,
আঁকি তোমায় রঙিন করে।
যদি চাও যেতে আকাশ পানে,
চুপটি করে বল আমার কানে।
দেব তোমায় আমি ছেড়ে,
তন্বী আপুর অগোচরে।’
একদিন আমার আব্বু বন্দী জোনাকীদেরকে দেখতে পেয়ে বললেন, ‘মা, এগুলোকে ছেড়ে দাও। এরা কষ্ট পাচ্ছে। তোমার একটু আনন্দের জন্য ওদের জীবনটাই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তোমাকে কিছুক্ষণ আনন্দ বিলিয়ে ওরা মারা যাবে। প্রাণ নেয়া যায় সহজে, কিন্তু প্রাণ তৈরি করা যায় না। তাছাড়া প্রতিটি জোনাকীর ছেলেমেয়ে মা-বাবা রয়েছে। ওদেরকে ছেড়ে দাও। তারা রাতের আঁধারে আলো বিলিয়ে তাদের খাদ্য খুঁজে নিক।’
আমি আব্বুর কথায় জোনাকীদেরকে ছেড়ে দিলাম। এখন থেকে আমি জোনাকীদের তারাদের মত মিটমিট করে আলো দেয়ার দৃশ্যটি উপভোগ করি। তবে তাদেরকে বন্দী করে নয়। তারা আঁধার রাতে গাছে গাছে উড়ে বেড়ায়। আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি। ওরাই আমার আঁধার রাতের সাথী।
(ফাতিহা কামাল, দ্বিতীয় শ্রেণি, বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়।)
মন্তব্য করুন