আধুনিকায়ন ও প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বর্তমান সরকারের অর্জন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই দেশের প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের ধারার শুভ সূচনা হয়।
তিনি ১৯৭৩ সালে ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে এক যুগান্তকারী দু:সাহসী পদেক্ষেপ গ্রহণ করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার স্বপ্ন “সোনার বাংলাদেশ” গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন।
২০১৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদ ৩য় শ্রেণি থেকে ২য় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। একই সাথে সহকারী শিক্ষকগণের বেতন স্কেল এক ধাপ উন্নীত করা হয়।
৩৪ তম বিসিএসের চুড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যারা ক্যাডার পাননি ২০১৬ খ্রি. ১০ আগস্ট তাদের মধ্য হতে ৮৯৮ জনকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দ্বিতীয় শ্রেণির নন-ক্যডার পদমর্যদায় নিয়োগের সুপারিশ করেছিল বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন। শিক্ষকের মনোন্নয়ন ও গুনগত শিক্ষার ধারা নিশ্চিত করতে এটি এশটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
পূর্বে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি ছিল না। ২০১০ খ্রি. জাতীয় শিক্ষা নীতির আলোকে বর্তমানে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৫+ বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি কক্ষ চালু করা হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে পাঠদানের জন্য শিক্ষক পদ সৃষ্টি ও নিয়োগ করা হয়েছে।
২০২৩খ্রি. পাইলটিং হিসেবে প্রতিটি উপজেলায় ক্লাস্টার পর্যায়ে ১টি করে বিদ্যালয়ে ৪+ বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা করে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি কক্ষ চালু করা হয়েছে।
প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে পাঠদানের জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকগণকে শিশু মনোবিজ্ঞান সহপ্রাক- প্রাথমিক শ্রেণিতে পাঠদানেরজন্য নিধারিত বিষয় সমূয়ের উপর উন্নত প্রশিক্ষণেরব্যবস্থা করা হয়েছে।
১৯৯৬ খ্রি. বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার প্রথম বার ক্ষমতা গ্রহণের পর শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করেন। ২০০৯ খ্রি. ২য় বার ক্ষমতায় এসে সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন করেন।
তার আলোকে ২০১১খ্রি. প্রাথমিক শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষাকে অধিকতর যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ২০২১ খ্রি. ঈুনরায় শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করাহয়েছে।
সরকারের রূপকল্প ২০৪১ খ্রি. সম্মুখে রেখে নতুন শিক্ষাক্রমের রূপকল্প ঠিক করা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমের রূপকল্প হলো- “মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত, দেশপ্রেমিক, উৎপাদানমুখী, অভিযোজনে সক্ষম সুখী ও বৈশি^ক নাগরিক গড়ে তোলা।
এ রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৫টি অভিলক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। ১০টি মূল যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে, সোনার বাংলা তৈরীতে কাংখিত যোগ্যতা সম্পন্ন নাগরিক তৈরী করা সম্ভব হয়।
নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ২০২৩খ্রি. হতে ১ম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান কার্যক্রম ও ধারাবাহিক মূল্যায়ন চলমান।
২০২৪খ্রি. হতে ২য় ও ৩য় শ্রেণিতে এবং ২০২৫খ্রি. হতে ৫ম শ্রেণি তথা সম্পূর্ণ প্রাথমিক স্তওে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হবে।
এ লক্ষ্যে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। ২০১১ খ্রি.হতে প্রতি বছর প্রায় দুই কোটি শিক্ষার্থীও হাতে চার রঙের আকর্ষণীয় সম্পূূর্ণ নতুন পাঠ্য পুস্তক বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষা বছরের প্রথম দিনই “বই উৎসব” পালন করা হচ্ছে। বিদ্যালয় সমূহে নতুন ভবণ নির্মাণ,পূণ:নির্মাণ,সংস্কার, স্যানিটেশন, ওয়াশব্লক তৈরী, নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টন ীইত্যাদিও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের পাশাপাশি তাদের শারীরিক, মানসিক ও নেতৃত্বের বিকাশের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
তাদেরকে শতভাগ উপবৃত্তি প্রদান, মিড ডে মিলের ব্যবস্থা, Student Council গঠন,কাব-স্কাউট দল গঠন, ক্ষুদে ডাক্তারের দল গঠন, ২০১১খ্রি. হতে নিয়মিতভাবে প্রতিবছর বিদ্যালয় পর্যায়ে থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে “বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্ণামেন্ট” জাতীয় পর্যায়ে আন্তপ্রাথমিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন অন্যতম।
শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষায় দক্ষ কওে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষকগণকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হচ্ছে।
শিক্ষকগণকে উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, জেলা পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট (পিটিআই) ও জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমী (নেপ) কর্তৃক বিভিন্ন উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
বর্তমানে প্রথিমিক স্তরের শিক্ষাক্রম বিস্তরণের জন্য দেশের ৫০৫টি থানা / উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে ১০,৩৫০টি ব্যাচে ৩,১০,৫০০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদানের আয়োজন করা হয়েছে। গত ২০/০৯/২০২৩ খ্রি. হতে এ প্রশিক্ষণ শুরুহয়েছে।
এ প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষক হিসেবে এনসিটিবি কর্তৃক ১৮৫ জন কী ট্রেইনারএবং ১০২১জন মাস্টার ট্রেইনার তৈরী করা হয়েছিল।
এছাড়া জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাএকাডেমী (নেপ) ও প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট(পিটিআই) সমুহেও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ চলমান আছে।
শিক্ষকগণ নিজেরাই ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরী করে শ্রেণিতে পাঠদান করছেন। বিদ্যালয়গুলোতে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া, সাউন্ডসিস্টেম, স্মাট বোর্ড ও ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়েছে।
ফলে শিক্ষার্থীরা আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভও শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বিশ^ প্রতিযোগিতার বাজাওে নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারবে।
সর্বশেষ প্রাথমিক শিক্ষার কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষকদের চাকুরীতে গতিশীলতা আনয়নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ”প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা ২০২৩” প্রণয়ন করা হয়। যা গত ১৩/০৯/২০২৩ খ্রি. গেজেট আকাওে প্রকাশিত হয়েছে।
যেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে পর্যায়ক্রমে পরিচালক পদ পর্যন্ত পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
এর ফলে সংশ্লিøষ্ট সকলে নিজ নিজ কাজে উদ্দীপনা পাবেন। যোগ্যতা সম্পন্ন নাগরিকগণ প্রাথমিক শিক্ষ অধিদপ্তরাধীন বিভিন্ন পদে ও শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হবেন।
একদল যোগ্যতাসম্পন্ন দক্ষ শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর সমন্বয়ে প্রাথমিক শিক্ষাকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে নিতে সক্ষম হবো।
দেশ মাতৃকাকে উপহার দিতে পারবো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের “সোনার বাংলাদেশ” তৈরীর জন্য একদল সুযোগ্য নাগরিক।
লেখক : মহিব উল্যাহ, ইন্সট্রাক্টর উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার। ইমেইল: mohibinsurcdpe@gmail.com
মন্তব্য করুন