আধুনিক সমলয় চাষাবাদে কমবে সময়, শ্রম ও খরচ
উত্তম কুমার পাল হিমেল॥ কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে নবীগঞ্জ উপজেলায় আধুনিক ‘সমলয় চাষাবাদ’ পদ্ধতিতে বোরো ধানের চারা রোপন শুরু করেছেন কৃষকরা। নতুন এ চাষাবাদ পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। বৃহস্পতিবার ১৯ জানুয়ারি সকালে নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি বকের জোয়ালভাঙ্গার হাওর এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতিতে বোরো রোপণ উদ্বোধন করা হয়।
কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উপজেলা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সমলয় চাষাবাদে সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি না করে প্লাস্টিকের ট্রেতে বীজ বপন করা হয়েছে। এতে ৩:২ অনুপাতে মাটি ও গোবরের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। এরপর বীজ ছিটিয়ে পুনরায় অর্ধেক মাটি ও গোবর মিশ্রণ দিয়ে সমতল জায়গায় রেখে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। বীজতলা তৈরির ৩ দিনের মধ্যে অঙ্কুর বের হয়ে যায়। ২২-২৫ দিনের মধ্যে চারা উৎপাদন করা যায়। পরবর্তীতে রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ শুরু হয়।
নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমের সভাপতিত্বে ও উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অজিত রঞ্জন দাশের সঞ্চালনায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারনের পরিচালক নুরে আলম সিদ্দিকী, উপস্থিত ছিলেন নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের নব নির্বাচিত সভাপতি এম এ আহমদ আজাদ, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শৈলেন কুমার পালসহ বিভিন্ন বকের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণ ও আউশকান্দিসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার কৃষকগণ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপপরিচালক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, মানুষ বাড়লেও বাড়ছে না কৃষি জমি। তাই স্বল্প জমিতে অধিক ধান উৎপাদন করে মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এমন উদ্যোগে নবীগঞ্জ উপজেলায় প্রথমবারের মতো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষাবাদ শুরু করা হয়েছে। তিনি আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষিতে বিপ্লব ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা বজায় রাখতে সকলকে আহবান জানান।
গত ডিসেম্বরে কৃষকরা ট্রেতে বীজতলা তৈরি শুরু করছিলেন। তারা মেশিন দিয়ে ট্রেতে বপন করছিল এসএলএইট-এইচ হাইব্রিড জাতের ধানবীজ। সেই বীজের চারা দিয়ে রোপন করা হচ্ছে সমলয়ে চাষাবাদের ১৫০ বিঘা জমিতে।
আউশকান্দি গ্রামের কৃষক কাজী সেলিম জানান, সমলয়ে চাষাবাদে আগে কখনও বোরো ধান করা হয়নি। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় এই প্রথমে রোপন করা হচ্ছে। উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা জাবের আহমেদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে কাজ করে আশাকরি ভালো ফলন পাওয়া যাবে। কৃষি অফিসের সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়ে আমাদের দলের সকল কৃষক আনন্দিত।
নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মাকসুদুল আলম বলেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে একযোগে মাঠভিত্তিক সকল কৃষকের ফসল উৎপাদন করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে নবীগঞ্জ উপজেলায় ৫০ একর জমিতে এ পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ করা হচ্ছে। আশা করছি ভালো ফল পাওয়া যাবে। এ প্রযুক্তি দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে নবীগঞ্জের আরও ৩ টি ইউনিয়নে কৃষকরা মেশিনের রোপণের জন্য চারা তৈরি করছে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও নবীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান মোঃ ফজলুল হক চৌধুরী বলেন, সঠিক ও সময়োপযোগী পরিকল্পনার কারনেই অনেক দেশ থেকে আমরা কৃষিতে এগিয়ে রয়েছি। গত এক যুগে কৃষি পরিবর্তন তুলে ধরে এ ধরনের নতুন উদ্যোগ হাতে নেয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এবং আবাদযোগ্য পতিত জমি আবাদের আওতায় আনতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
মন্তব্য করুন