আমার গৌরব ফাউন্ডেশন জেলা শাখার উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সম্মানে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
স্টাফ রিপোর্টার॥ বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির বর্ধিত সভা থেকে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্দ্ধগতি রোধ, বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ বাঁচার মতো মজুরি, সর্বজনীন রেশনিং চালু, শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত ধর্মঘট করার অধিকার হরণের পাঁয়তারা বন্ধ, শ্রমআইন ও শ্রম বিধিমালার শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী ধারা ও বিধি সমূহ বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন ও শ্রমবিধি প্রণয়ন, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রদানের দাবি জানানো হয়।
১২ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সহ-সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া। জেলা ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্টিত সভায় বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশ, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল মিয়া, চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক হরিনারায়ন হাজরা, শ্রীমঙ্গল উপজেলা স’মিল শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, বড়লেখা উপজেলা স’মিল শ্রমিক সংঘের সভাপতি মোঃ ফারুক মিয়া, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জুড়ী আঞ্চলিক কমিটির সভাাপতি আব্দুল করিম, জুড়ী উপজেলা ডেকোরেটার্স শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমেদ, কুলাউড়া উপজেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন কালেঙ্গা আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ গিয়াস মিয়া, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, সদস্য মোঃ জসিমউদ্দিন ও কিসমত মিয়া প্রমূখ।
সভায় বক্তারা বলেন দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্দ্ধগতিতে জনজীবন জর্জরিত। অব্যাহত মুদ্রাষ্ফীতি-মূল্যস্ফীতি এবং সরকারের মদতে মুৎসুদ্দি পুঁজিপতিরা অস্বাভাবিকভাবে চাল-ডাল, তেল-লবন-চিনি, আলু-পিয়াজ, তরিতরকারি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির কারণে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে জীবন-জীবিকা আরো সংকটগ্রস্থ ও অনিশ্চিত করে তুলেছে; তার বিপরীতে সরকারি মদতে লুটপাটের মাধ্যমে মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক লোকের সীমাহীন সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে সাবেক আইজিপি বেনজির, রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর, অতিরিক্ত সচিব ফয়সাল, কাস্টমস কর্মকর্তা এনামূল, পিএসসির সাবেক গাড়ি চালক আবেদ আলীসহ গুটি কয়েকের লুটপাটের পাহাড়সহ চিত্র সামনে আনা হচ্ছে। এর আগেও ক্যাসিনো কান্ডে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের লুটপাটের সাম্রাজ্য দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে, পিকে হালদারের অর্থ পাচার, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বাংলাদেশের ব্যাংকের অর্থ পাচার নিয়ে কত হইচই; কিন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সাম্রাজ্যবাদীদের ঋণে ও তাদের স্বার্থে অবকাঠামোগত কার্যক্রমের তথাকথিত উন্নয়নের চাপে দেশ আজ দেউলিয়াত্বে মুখোমুখি। ইতোমধ্যে দেশের ব্যাংক, বীমাসহ সকল আর্থিক খাতের সংকট ঘনীভূত হওয়ার চাপ পড়ছে অর্থনীতিতে। ডলারের বিপরীতে টাকার অব্যাহত দরপতন, ডলারের তীব্র সংকটের পাশাপাশি ব্যাংকের নদগ অর্থের সংকটের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে সংকট তীব্র হচ্ছে। অথচ অর্থনীতির এমন সংকটজনক পরিস্থিতিতেও খেলালি ঋণ আদায় তো হচ্ছেই উপরন্তু চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল-মে তিন মাসে তা আরও বেড়েছে ৩৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমান রেকর্ড উচ্চতায় পৌছে ১ লাখ ৮২ কোটি টাকায় দাড়িয়েছে, যদিও প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমান আরও অনেক বেশি। অথচ খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে সরকার সম্প্রতি ৪টি কোম্পানির ৬,৪৯৭ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করেছে। ২০২৪-২০২৫ বছরের বাজেটে বৈধ আয়ে সর্বোচ্চ কর ৩০ শতাংশ ধার্য করলেও কালোটাকার মালিকদের ১৫ শতাংশ কর দিয়ে টাকা বৈধ করার সুযোগ দিয়ে লুটপাটের অর্থ জায়েজ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। সরকার ধনিক গোষ্টির সুযোগ দিতে প্রত্যক্ষ আয়কর বাড়ানোর পরিবর্তে পরোক্ষ আয়কর বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটার ব্যবস্থা করেছে। সরকার আইএমএফের ঋণচুক্তির শর্ত পুরণে গ্যাস-বিদ্যুত-জ্বালানি, কৃষিসহ বিভিন্ন খাত থেকে ভতুর্কি প্রত্যাহারের নীতি গ্রহণ করে বছরে কমপক্ষে ৪ বার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, প্রতিমাসে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়নের নামে জনগণের ঘাড়ে মূল্য বৃদ্ধির চাপ বাড়াচ্ছে। এই দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে জনগণ মুক্তি পেতে চায়। নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্ততান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় এ যাবত অধিষ্টিত সকল সরকারই হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের দালাল সামন্ত আমলা মুৎসুদ্দি শ্রেণির স্বার্থরক্ষাকারী সরকার। তারা কখনোই জনগণের কথা ভাববে নাÑএটাই স্বাভাবিক। তাই জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, আমলা দালাল পুঁজি বিরোধী শ্রমিক-কৃষক জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে বিকল্প নেই।
বর্ধিত সভা থেকে বর্তমান বাজারদের সাথে সংগতিপূর্ণভাবে মজুরি ঘোষণা, অত্যাবশকীয় পরিষেবা বিল বাতিল, গণতান্ত্রিক শ্রমআইন ও শ্রমবিধি প্রণয়ন, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার বাস্তবায়ন, ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ইজিবাইক উচ্ছেদ বন্ধ করে নিবন্ধন প্রদান, চা-শ্রমিকদের পূর্ণ বকেয়া প্রদানসহ ন্যায়সঙ্গত বাচাঁর মত মজুরিনির্ধারণ, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, নৌযানসহ সকল ধরনের পরিরহন, স’মিল, হকার, দিনমজুর, দর্জি, নির্মাণসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সকল শ্রমিকদের কাজ, খাদ্য, চিকিৎসার নিশ্চয়তা ও পূর্ণাঙ্গ রেশনিং চালুর দাবি জানান।
মন্তব্য করুন