আমিরাতে ব্যবসায় সাফল্য পাচ্ছেন প্রবাসীরা
তোফায়েল আহমেদ পাপ্পু, দুবাই॥ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দেশটি। বিশ্ববাণিজ্যের চাহিদা পূরণের অন্যতম স্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা থাকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বৃত্তশালীরা বিনিয়োগ করছেন এখানে। দেশটিতে ব্যবসায়ে বিনিয়োগে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশীরাও।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের আনাগোনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেশটিতে বড় একটি অংশ বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত।
মেধা ও শ্রম দিয়ে দেশে বিনিয়োগের পাশাপাশি আমিরাতেও গড়ে তুলেছেন হাইপার মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরা,স্বর্ণের দোকান, মোবাইল দোকান, সেলুন, সুপারমার্কেট, পারফিউমস ফ্যাক্টরি, রিয়েল এস্টেট, মুদি দোকান, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, রেডিমেড গার্মেন্টস ট্রেডিং, বোরকার দোকান, এমব্রয়ডারি, স্টিল ওয়ার্কশপ, গ্যারেজ, প্রিন্টিং প্রেসসহ ছাট-বড় নানা রকম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এগুলো কর্মদক্ষতা ও সততায় বেশ সুনাম ও সাফল্যের সাথে তারা পরিচালনা করে যাচ্ছেন। তবে গিফট আইটেম, স্যুভেনির, কর্পোরেট গিফট, এওয়ার্ড, ই-কমার্স ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসায় কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা।
আমদানি-রপ্তানি ছাড়াও দ্রুত অগ্রগামী অর্থনীতির এই দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন আরব আমিরাতে বসবাসরত বহু অভিবাসী। ভারত, চীন, মিশর, পাকিস্তান, ইরানের নাগরিকদের পাশাপাশি এই তালিকায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশিরাও।
আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, প্রায় ৩০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি সেখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা করছেন। আবার তাদের এসব প্রতিষ্ঠানে আরো প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।
এক বা একাধিক ব্যক্তি মিলে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন প্রবাসীরা। চাকুরির পাশাপাশি একাধিক প্রবাসী মিলে একটি কোম্পানি লাইসেন্স করে গড়ে তুলছেন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান।
সামর্থ থাকলে কেউ কেউ আবার নিজেরাই গড়ে তুলছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একদিকে যেমন ব্যবসায়ে বিনিয়োগ বাড়ছে অন্যদিকে বাংলাদেশী প্রবাসীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।
চট্টগ্রামের সামসুদোহা মজুমদার একজন সফল ব্যবসায়ী। আমিরাতের দুবাইতে ট্যাক্সি কোম্পানিতে চাকুরি করতেন।
২০১৮ সালে চাকুরি ছেড়ে তিনি এবং বন্ধু মিলে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায় শুরু করেন। বর্তমানে তার ৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশীসহ শ্রীলংকা, পাকিস্তানি ৭ থেকে ৮ জন কাজ করছেন।
হবিগঞ্জের মাওলানা শেখ ফজলুর রহমান গড়ে তুলেছেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ৩০হাজার দিরহাম বিনিয়োগে শুর করেন বোরকার ব্যবসা।
বর্তমানেতার বোরকার গার্মেন্টস রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশী ৮ জন লোক কাজ করেন। মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশ থেকে এখন তার প্রতিষ্ঠানে ক্রেতা আসেন।
তাদের মতো অনেকেই জীবিকার সন্ধানে প্রবাসে এসে কেউ সরাসরি বিনিয়োগ করেন কেউ বা কয়েক বছর চাকুরি করার পর পেশা পরিবর্তন করে ব্যবসা শুরু করেন।
যেমন নিজেদের ব্যবসায়িক সাফল্য আনার পাশপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। অন্যদিকে এসব প্রতিষ্ঠানে দেশীয় শ্রমিকের চাহিদা থাকায় নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর কামরুল হাসান বলেন, প্রবাসে অনেকে চাকরি করতে এলেও পরে নিজেদেরকে ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত করছেন।
গড়ে তুলছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান। এসব ব্যবসা যখন বৃহৎ আকার ধারণ করবে, তখন নিজেদের আত্মসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ করেও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর বলেন, আমিরাতে প্রায় ১০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির মধ্যে ব্যবসায়ী রয়েছেন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজারের মতো।
শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নয়; ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা আরও অন্তত লক্ষাধিক প্রবাসী বাংলাদেশীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন।
ক্রমান্বয়ে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশী নিয়োগ করেছেন তারা। প্রবাসীরা ব্যবসায়-বাণিজ্যের পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে আগামীতে বড় ধরনের বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের রেমিটেন্স-প্রবাহ অব্যাহত রাখতে ভিসা জটিলতার বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে মনোযোগী হওয়ারও আহ্বান সংশ্লিষ্টদের।
মন্তব্য করুন