আমিরাতে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে বৈধ হয়েছে ৫০ হাজার বাংলাদেশি
তোফায়েল পাপ্পু (দুবাই): সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে বৈধ হয়েছে ৫০ হাজার বাংলাদেশি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, আমিরাতে তৃতীয় বৃহত্তম অভিবাসী জনগোষ্ঠী বাংলাদেশিদের মধ্যে অবৈধ থাকার হার বেশি। দেশটির সরকার জানিয়েছে, সাধারণ ক্ষমার সময় যারা নিজেদের অবস্থান বৈধ করেননি, তাদের বিরুদ্ধে জানুয়ারি থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিদিনের জন্য ৫০ দিরহাম জরিমানা আরোপসহ অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া দুই মাসের সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ পরে আরও দুই মাস বাড়ানো হয়। এ চার মাসে মাত্র ৫০ হাজার বাংলাদেশি এ সুযোগ নিয়েছেন।
আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাসপোর্ট ও ভিসা উইং-এর প্রধান কাউন্সেলর সাইফুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
সাইফুল ইসলাম জানান, সাধারণ ক্ষমার পুরো সময়ে দূতাবাস মোট ১৩ হাজার ৯৩১টি ই-পাসপোর্ট ইস্যু করেছে, পাঁচ হাজার ৮১৫টি এমআরপি, ৮১৭টি ট্রাভেল পারমিট ইস্যু এবং এক বছরের জন্য দুই হাজার তিনটি পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়েছে।
আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর হাজরা সাব্বির হোসেন বলেন, “এবারের সাধারণ ক্ষমায় প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি নিয়মিত হয়েছেন। পাশাপাশি আবুধাবি ও দুবাই থেকে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসী নিয়মিত হয়ে ট্রাভেল পারমিট বা আউট পাস নিয়ে দেশে ফিরে গেছেন, যাদের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা পড়েনি।”
বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল দুবাইয়ের তথ্য মতে, “গত চার মাসে দুবাই কনস্যুলেট চার হাজার ৮৪০টি ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছে। এ সময় ই-পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে ৪৭ হাজার ৬০৯টি, এমআরপি পাসপোর্ট সাত হাজার ১৭৫টি এবং পাসপোর্ট সেবা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার প্রবাসীকে।”
সাধারণ ক্ষমার আওতায় কতজন প্রবাসী দুবাই কনস্যুলেটের অধীনে নিয়মিত হয়েছেন এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, “এখন পর্যন্ত স্থানীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।”
তবে আবুধাবির ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেন্টিটি, সিটিজেনশিপ, কাস্টমস অ্যান্ড পোর্ট সিকিউরিটির মহাপরিচালক সুহেইল আল খাইলি জানান, সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ তাদের অবস্থান বৈধ করে আমিরাতে থেকে যাচ্ছেন এবং ১২ শতাং তাদের অবস্থান বৈধ করে কোনোরকম নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই দেশে ফিরে গেছেন।
আমিরাতের মোট জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশই অভিবাসী। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে আইনশৃঙ্খলার আওতায় রেখে দেশের উন্নয়নে অন্তর্ভুক্ত করাই সাধারণ ক্ষমার মূল উদ্দেশ্য। গত দুই দশকে এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এর আগে ২০০৩ সালে তিন লাখ, ২০০৭ সালে দুই লাখ ৭৮ হাজার, ২০১৩ সালে ৬১ হাজার ৮২৬ এবং ২০১৮ সালে এক লাখ পাঁচ হাজার অভিবাসী তাদের অবস্থান বৈধ করেছিলেন।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, আমিরাতে তৃতীয় বৃহত্তম অভিবাসী জনগোষ্ঠী বাংলাদেশিদের মধ্যেই অবৈধ থাকার হার বেশি। এবার মাত্র ৫০ হাজার বাংলাদেশি তাদের অবস্থান বৈধ করেছেন। এর পাশাপাশি প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি ট্রাভেল পারমিট নিয়ে দেশে ফিরে গেছেন।
এবারের সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ বাড়ানো, আউট পাসের মেয়াদ সাধারণ ক্ষমার সময় পর্যন্ত বৃদ্ধি এবং ভ্রমণ ভিসায় থাকা ব্যক্তিদের সুযোগ দেওয়ার মতো উদার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এমনকি অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের রেসিডেন্সি নিশ্চিত করার সুযোগও দেওয়া হয়।
সাধারণ ক্ষমার সময় যারা নিজেদের অবস্থান বৈধ করেননি, তাদের জন্য জানুয়ারি থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আমিরাত সরকার। প্রতিদিনের জন্য ৫০ দিরহাম জরিমানা আরোপসহ অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে।
এদিকে আমিরাতে ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশিদের জন্য কর্মী ভিসা স্থগিত রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশি থাকলেও ভিসা জটিলতার কোনো সমাধান মেলেনি । তবে ২০২৫ সালের শুরুতে এই জটিলতা দূর হতে পারে বলে আশা করছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্ট ও প্রবাসীরা।
মন্তব্য করুন