“আমি সিরাজুল আলম খাঁন; একটি রাজনৈতিক জীবনা লেখ্যঃ একটি রাজনৈতিক মহাকাব্যঃ একখানি নান্দনিক-প্রাসঙ্গিঁক প্রকাশনা ॥
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ “ইকরা” পাঠ কর, ইকরা বিসমি রাব্বুকাল লাজি খালাক্ক- খালাকাল ইনছানা মিন আলাক”- আমাদের মহান স্রষ্টাও প্রতি পালক সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ) মারফত ইসলাম ধর্মের প্রচারক রাসূলে খোদা হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সঃ)-র নিকট প্রথম যে বানী প্রেরণ করেছিলেন তা ছিল “ইকরা” পড়। পড় তোমার প্রভূর নামে যিনি তোমাকে রক্তপিন্ড থেকে সৃষ্টি করেছেন। ইসলামী আইনের প্রথম উৎস আসমানী কিতাব মহাপবিত্র আল কোরআনের প্রথম আয়াত ছিল- ইকরা। পবিত্র আল কোরআনে শিক্ষা ও জ্ঞানার্জন এর উপরে ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ইসলামী আইনের দ্বিতীয় উৎস হাদীসে রসুল (সঃ)। জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়োজনে সুদূর চীনে যাও মহানবীর এই মহা মূল্যবান ও অমর বানী সকলেরই জানা আছে। এই ভাবে সকল ধর্মও ধর্মগ্রহ্ণে শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্টজীব-আশরাফুল মকলুখাত। সনাতনী শাস্ত্রানুসারে-মানুষ নর রূপী নারায়ন। মানুষের শিক্ষা ও জ্ঞান মেধা ও মনন-প্রজ্ঞা ও পন্ডিত্য মানুষকে এই শ্রেষ্টত্বের মর্য্যাদা দিয়েছে।
গ্রহ্ণ-ই-সকল জ্ঞান ও উৎসের আধার। বই-পুস্তকে-ই লিপিব্ধ আছে ধর্ম-বিজ্ঞান-শিল্প-সংস্কৃতি-ইতিহাস-ঐতিহ্যের গৌরবময় অধ্যায়। দূঃখ ও দূর্ভাগ্য জনক ভাবে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প মুখ থুবড়ে পড়ে না থাকলেও পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে নি। আমাদের দেশীয় পুস্তক প্রকাশ মূলতঃ একুশের বই মেলা কেন্দ্রীক। অমর একুশের বইমেলা বাংলা ও বাঙ্গাঁলির জাতীয় মেলা প্রানের মিলন মেলায় পরিনত হলেও অমর একুশ উপলক্ষ্যে প্রকাশিত গ্রহ্ণের সংখ্যা হতাশা ব্যাঞ্জক না হলেও আশানুরূপ নয়। ষোল কোটি মানুষের দেশে এবার একুশের বিগত বই মেলায় মোট বই বেরিয়েছে মাত্র চার হাজার আটশত চৌত্রিশ খানা তম্মধ্যে মাত্র এগারো শত একান্ন খানি বই মানসম্মত। প্রকাশিত পুস্তকের মধ্যে প্রবন্ধের বই মাত্র দুইশত বাহাত্তর, গবেষনা সংক্রান্ত আশি, জীবনী একশত সাতষট্টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একশত দশ, ইতিহাস সাতাত্তোর রাজনীতি বিষয়ক মাত্র তেত্রিশ, কম্পিউটার বিষয়ক মাত্র পাঁচ খানা, অনুবাদ আটত্রিশ খানা এবং অভিধান মাত্র ছয়টি- যা নিতান্তই হতাশা ব্যাঞ্জক। ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ বিনিম্মার্নে জ্ঞানচর্চা-জ্ঞানার্জন-পঠন-পাঠন-গতিশীল পাঠাগার আন্দোলনের বিকল্প নেই। একজন শ্রদ্বেয় আব্দুল্লা আবু সাঈদ এবং একটি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ও কেন্দ্রের ভ্রাম্যমান পাঠাগার যথেষ্ট নয়, আব্দুল্লা আবু সাঈদ এর অনুসরণ অনুকরনে-আরো বহুবিধ বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র এবং ভ্রাম্যমান পাঠাগার প্রয়োজন।
“বুক রিভিউ” গ্রহ্ণ সমালোচনা কিংবা গ্রহ্ণালোচনা আমার খুবই প্রিয় বিষয়। এর প্রয়োজন ও উছিলায় একখানি গ্রহ্ণ আদ্য পান্তপাঠ করতে হয়, শানেনযুল মর্মাথ-ভাবার্ত বুঝতে হয়, গ্রহ্ণকারের মতামতের সঙ্গেঁ দ্বিমত পোষন করতঃ অভিমত প্রকাশ করতে হলে প্রাসঙ্গিঁক পঠন-পাঠন-গবেষনা-পর্য্যালোচনা করতে হয়। গত দশকে মৎ সম্পাদিত রাজনীতি ও রম্য পত্র মৌলভীবাজার দর্পনে আমি বিদগ্ধ পাঠক/পাঠিকাকে বিশ্ব সাহিত্যের ক্লাসিক-গ্রহ্ণ লিও টলষ্টয়ের-ওয়ার এন্ড পিস-এর কিঞ্চিত রসাস্বাধনের সুযোগ দিয়েছিলাম-রিভিউর নামে। সাবেক সচিব ও সাবেক হাই কমিশনার কবি ও কলামিষ্ট এ.এইচ.মোফাজ্জল করিম পরম শ্রদ্ধাস্পদেষু দেশের প্রথম কাতারের প্রভাবশালী কবি হয়েও আত্বজৈবনিক মহাকাব্য- সোনালী সকাল দূরন্ত দূপুর- দিয়ে গদ্য সাহিত্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেন এবং এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন। আমাদের কালে-পঞ্চাশ-ষাটের দশকে গুরু মারা বিদ্যা ছিল না, আমরা শিখিনি বরং আমরা ছাত্ররা ক্লাস ও পড়া ফাঁকি দিলে গরুপিটার মত পিটুনী খেতাম। জনাব করিম ষাটের দশকে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এম.সি কলেজে আমার সরাসরি শিক্ষা গুরু এবং সৌভাগ্যক্রমে এখনও আমি তাঁর ¯েœহ ধন্য। সেই বিদগ্ধ-বিজ্ঞ জনের গ্রহ্ণ ও আমি রিভিউর নামে নাড়া চাড়া করেছি। বৃহত্তর সিলেটের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মদন মোহন কলেজের প্রয়াত প্রিন্সিপাল শ্রদ্বেয় কে.কে. পাল চৌধুরী ফাংশনেল ইংলিশ গ্রহ্ণের প্রনেতা এবং একজন বিশিষ্ট লেখক-সম্পাদক ছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর এক খানি গ্রহ্ণ, সমালোচনার জন্য গ্রহ্ণ সুহৃদ অসিত কুমার রায় ¯েœহ ভাজনেষু মারফত আমার কাছে পাঠিয়ে ছিলেন। স্বর্গীয় চৌধুরীর পরিণত বয়সের লেখা বলে গ্রহ্ণখানিতে ধারাবাহিকতা বজায় ছিল না এবং কিছু তথ্য গত বিভ্রান্তি ছিল, সবকিছু উল্লেখ করেই আমি দায়িত্ব পালন করেছিলাম- বিব্রত বোধও করেছিলাম। সম্প্রতি কবি ও প্রকাশক প্রিয় পুলক কান্তি ধর ঢাকা থেকে নিয়ে এল সাম্প্রতিক কালের এক খানি আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রহ্ণ-শামসুদ্দীন পেয়ারা,-অনুলিখিত- “আমি সিরাজুল আলম খাঁন; একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য”- গ্রহ্ণ খানি। আমাদের প্রজন্মের ছাত্র রাজনীতির গুরু ও ওস্তাদ সিরাজুল আলম খাঁন স্বয়ং স্বহস্থে লিখেছেন- “সহযোদ্ধা মুজিব-কে। আমাদের ভূবনের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও সর্বপ্রিয় দাদা সিরাজুল আলম খাঁন আমাকে অনুগ্রহ পূর্বক সহযোদ্ধা সম্বোধন করায় বিব্রতবোধ করলাম- লজ্জা পেলাম কারণ আমাদের প্রজন্ম দাদার সহ যোদ্ধা কিংবা সহকর্মি ছিলাম না, কেউ কোনদিন দাবীও করেনি- আমরা ছিলাম তাঁর কর্মি মাত্র। ষাটের দশকে-সে আমলে ক্যেডার-গড ফাদার-প্রথা চালু ছিল না, তিনি ছিলেন আমাদের লিডার, আমরা ছিলাম তাঁর ওয়ার্কার। সেকাল থেকে একাল পর্য্যন্ত রাষ্ট্রচিন্তক-তাত্বিক সিরাজুল আলম খাঁন তার কর্মি, ভক্ত, গুণগ্রাহীদের নিকট গড ফাদার নন, লাইক ফাদার। তাঁর মায়া-মমতা-কর্মি বাৎসল্য ও আন্তরিক অভিবাভকত্বে তিনি সকলের কাছে দাদা নামেই অভিহিত। খ্যাত। রাজনীতির রহস্য পুরুষ- বলে তাঁর প্রতি অবিচার করা হয়, কারণ তিনি প্রকৃত ও সত্যিকার অর্থে রাজনীতির একজন পরিচ্ছন্ন পুরুষ। তাঁর রাজনীতিতে কোন রহস্য নেই, রহস্য করেন ও না বলেনও না, যা বলার শিখার পরিষ্কার বলেন। তিনি সত্যিকার অর্থেই একজন রাজনৈতিক তাত্বিক; তবে আত্ব প্রচার বিমুখ ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব। আত্ব প্রচার বিমুখ সিরাজুল আলম খাঁন সস্তা প্রচারনা এবং হালকা বাক্য বাগিশীর চাইতে কাজে বিশ্বাসী। মিডিয়া দেখলেই অনেকে বাকবাকুম পায়রার মত প্রসঙ্গেঁ-অপ্রসঙ্গেঁ-কারনে অকারনে অতি কথনে মেতে উঠেন- যা কর্মবীর সিরাজুল আলম খাঁন এর পসন্দ নয়। কোন রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তা নেতা না হয়ে তিনি বিগত ছয় দশক যাবত সার্বক্ষনিক ভাবে রাজনৈতিক চিন্তাবিদ-তাত্বিক-দার্শনিক হিসাবে দেশ ও জাতির সেবায় নিবেদিত আছেন। অকৃতদার সিরাজুল আলম খাঁন এর ঘর-সংসার, ব্যবসা-বানিজ্য, শেয়ার বাজারের ফটকাবাজি কায়কার বার কিছুই নেই। সত্যিকার অর্থেই তিনি একজন সর্বহারা। তাঁরগুণগ্রাহী-সহকর্মীগণ-কে তিনি সহোদরের মত- সন্তানের মত ¯েœহ মমতা করেন- ভালোবাসেন।
তারাই তাঁর ঘর-সংসার। তাঁর সমগ্র মানব জীবন দেশ ও জাতির জন্য উৎসর্গী কৃত। দূবৃত্তায়ন-বানিজ্যায়ন-নৈতিকতার ক্রমোবনতি, রুচির নিদারন দূভিক্ষ এবং ভ্রষ্টাচারের এই জোয়ারের মাঝে তিনি একজন মিঃ ক্লিন। দূর্নীতির কলংক ও কালিমা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি।
আমি সিরাজুল আলম খান: একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য রাজনীতিবিদ-তাত্বিক-স্বাধীনতা সংগ্রামী সিরাজুল আলম খাঁন এর কর্ম ও জীবন দর্শন সংক্রান্ত কোন জীবনী গ্রহ্ণ নয়। সাংবাদিক-লেখক- মুজিব বাহিনীর বীরযোদ্ধা শামসুদ্দিন পেয়ারার অনুলিখনে একটি বিশেষ সময়ের খন্ড চিত্র মাত্র। গ্রহ্ণের ভূমিকায় সামসুদ্দীন পেয়ারা যথার্যই বলেছেন এই বই সিরাজুল আলম খাঁনর এর আত্বজীবনী নয়। বাংলাদেশের একটি বিশেষ সময়ের (১৯৬২-১৯৭৫) রাজনীতিকে তিনি কি ভাবে নিয়ন্ত্রন করেছিলেন তাঁর ধারা বর্ণনা। যারা সে সময়ের রাজনীতি সম্পর্কে জানতে চান, তাঁদের জন্য সিরাজুল আলম খানের এই রাজনৈতিক আত্বকথন ইতিহাসের এক বদ্ধ দুয়ার উন্মুক্ত করে দেবে, যা দিয়ে এমন সব বিচিত্র বর্ণচ্ছটা দৃশ্যমান হবে যা এর আগে কখনও হয় নি। আজকের তরুনদের জন্য এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে সঠিক ও বস্তুনিষ্ট তথ্য বহুল রাজনৈতিক ইতিহাস। এ বই আমাদের অতীত পর্য্যবেক্ষনের দূরবীন। পাঠক এ বইয়ের পাতায় পাতায় বাংলাদেশের অঙ্কুরোদম দেখতে পাবেন।
স্বাধীনতার সংঘটক মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়ক, রাজনৈতিক তাত্বিক, প্রশাসনিক সংসার মূলক চৌদ্দ দফা কর্মসূচীর প্রণেতা সিরাজুল আলম খাঁন আজীবনই আত্ব প্রচার বিমুখ। তিনি অতি কথনও আত্ব প্রচারের চাইতে কাজেই বিশ্বাসী।
অতি সাধারণ পোষাক-সাধারণ খাবার দাবারে আজীবন অভ্যস্থ সিরাজুল আলম খাঁন নোয়াখালির একটি অভিজাত শিক্ষিত সম্ভান্ত সচ্ছল পরিবারের সন্তান হলেও বরাবরই তিনি নিরহংকারি-নির্লোভ-সহজ সরল সাদা মনের মানুষ। তাঁর আজীবনের আচার আচরনে কোনদিন কোন অহংকার কিংবা অহংবোধ দৃশ্যমান হয়নি, তাঁর মধ্যে কোন দিনই-কি হনুরে ভাব ছিল না। বরং তাঁর শিষ্টাচার-সৌজন্যবোধ বিনয়াচরন সর্বত্র প্রশংসিত। এই ক্ষেত্রে এই গ্রহ্ণে তিনি তাঁর আমিত্ত বড়ত্ব প্রকাশ করেছেন এমনটি বলা সঠিক হবে না। দুইশত বত্রিশ পৃষ্টার এই গ্রহ্ণে কোথাও তা দৃশ্যমান হয় না। তিনি তাঁর কোন আত্ব জীবনী লিখতে কিংবা নিজেকে জাতির সম্মুখে জাহির করতে কোন দিনই উৎসাহী ছিলেন না নহেন-ও। এই গ্রহ্ণকারও কোন গ্রহ্ণ প্রকাশে তাঁর ইচ্ছা যে নেই তা গ্রহ্ণের অনুলিখক প্রিয় পেয়ারা ভাই ভূমিকায় বলে দিয়েছেন। শামসুদ্দীন পেয়ারা গ্রহ্ণর ভূমিকায় যথার্যই বলেন “বরাবর প্রচার বিমুখ ও মঞ্চের আড়ালে থেকে ঘটনা নিয়ন্ত্রনে দক্ষ সিরাজুল আলম খাঁন নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে আগ্রহী নন। পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে সেটাই দেখে আসছি। ১৯৮২ সালের শেষের দিকে প্রধানতঃ আমার উদ্যোগে আফতাব উদ্দিন আহমদ, বদিউল আলম, মিয়া মুশতাক সহ আমরা কয়েক জন সিরাজ ভাইয়ের কাছে যাই, একটি আত্ব জীবনী লেখার ব্যাপারে তাঁকে রাজি করাতে। ঠিক করলাম তিনি বলবেন আমি লিখব। তিনি রাজি হলেন না, বললেন সব কথা বলার এখনও সময় আসেনি। ২০১৭ সালে তিনি হিপ-বন রিপ্লেসমেন্ট করিয়ে দেশে ফেরার পর আবারও তাঁর কাছে গেলাম। বল্লাম এখন কি সময় হয়েছে? দয়া করে বইটি কি লিখবেন? তিনি হেসে উত্তর দিলেন, লিখবো। কোনদিন আসবে বল? আমি বল্লাম, এক্ষুনি। এই মুহুর্ত থেকে। ৬ এপ্রিল ২০১৮ থেকে আমি তাঁর বক্তব্যের নোট নিতে শুরু করলাম। প্রতিদিন পাঁচ ঘন্টা করে। ২১ দিনপর ২৬শে এপ্রিল ২০১৮ইং তারিখে নোট নেয়া শেষ হল।”
এভাবে দেখা যায় এই গ্রহ্ণের অনুলিখক শামসুদ্দিন পেয়ারা ও তাঁর সহযোগি সহযোদ্ধা বন্ধুগণ দাদাকে বার বার বলে কয়ে এই গ্রহ্ণ লেখায় রাজি করিয়েছিলেন তার কোন ইচ্ছাই ছিলনা, এমন কোন গ্রহ্ণ লেখার। এই গ্রহ্ণে অনুলিখন ছাড়াও পরিশিষ্ট পর্য্যায়ে ১৮৫ পৃষ্ঠা থেকে ১৯৭ পৃষ্ঠা ব্যাপী সাক্ষাতকার পর্বে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতা, ডাকসুর ভি,পি, স্বাধীনতা সংগ্রামী আসম আব্দুর রব নিজ জেলা বাসি দাদার সঙ্গেঁ তাঁর পরিচয় সম্পর্ক সখ্যতা এবং গোপন সংঘটন নিউক্লিয়ার্স এর সঙ্গেঁ তাঁর সম্পৃক্ততার কথা বিষদ ভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সাক্ষাতকারে আশম রব বলেন “সিরাজুল আলম খানের সঙ্গে আমার পরিচয়া ১৯৬২ সালে। তাঁর বাবার মৃত্যের পর জেল থেকে সাত দিনের প্যারলে বেরিয়ে আসা জনাব খাঁনের সঙ্গেঁ আমার দেখা হয় নোয়াখালি বেগম গঞ্জের আলিপুর গ্রামে। আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন খালেদ মোহাম্মদ আলী। খালেদ ভাই তাকে বললেন “আপনি যাদের খুঁজছেন তাঁদের দু’জনকে আমি নিয়ে এসেছি। সিরাজুল আলম খাঁন সম্পর্কে খালেদ ভাই পূর্বেই আমাকে ব্রিফ করেছিলেন। জানিয়ে ছিলেন বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য তিনি একটি গোপন সংঘটন গড়ে তুলেছেন। বলেছিলেন তোমরা এটির সদস্য হবে। কাজ করবে। তোমরা দু’জন ছাড়া আর কেউ যেন না জানে। সংগঠনের নিময় হল যে যার মাধ্যমে রিক্রুট সেও রিক্রুটার- এই দু’জন ছাড়া আর কেউ এ ব্যাপারে কিছু জানতে পারবে না।” আমি তখন চৌমুহনী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বেলায়েত ও তাই (মাহমুদুর রহমান-বেলায়েত-মুজিব বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধা)। এরপর জেলা পর্য্যায়ে আমরা নোয়াখালীতে এবং থানা পর্য্যায়ে ফেনীও লক্ষীপুরে রিক্রুটের কাজ শুরু করি। শর্ত ছিল
সাহসী, ভালোবক্তা, শ্লোগান দিতে পারে, পুলিশের সঙ্গেঁ হাতাহাতি করতে পারবে, দীর্ঘদিন আত্বগোপনে থাকার মনোবল আছে, জেল ঝুলুম সহ সবধরনের অত্যাচার সয়ে দেশ স্বাধীন করার কাজে লিপ্ত থাকার মানুষিকতা সম্পন্ন এমন নিবেদিত প্রাণ কর্মী হতে হবে।”
দাদার নির্দেশে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ২ মার্চ কলা আমি স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করি। এই পতাকাই ২৩ শে মার্চ পাকিস্তান দিবসে (আমরা যে দিনটি প্রতিরোধদিবস হিসাবে পালন করি) সারা দেশে পাকিস্তানী পতাকার পরিবর্তে স্বাধীন বাংলার পতাকা হিসাবে উত্তোলিত হয়।”
ঐ সময় আমি ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ফাইন্যাল ইয়ার এর ছাত্র ছিলাম। ৬৮ সালে মৌলভীবাজার কলেজ থেকে হায়ার সেকেন্ড ক্লাশ নিয়ে বি.এ.পাশ করে পিতা-মাতার নির্দেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্ত্তি হই। অগ্রজ প্রতিম গিয়াস উদ্দিন মনির ইকবাল হলে (বর্ত্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে) ১৬২ নং কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। আমি ষাটের দশকের শুরু থেকেই দাদার ত্যাগ তিতিক্ষা দেখে আশম রব এর অনু প্রেরনায় ছাত্র লীগের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত হই।
পারিবারিক ভাবে স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান এবং পিতা-মাতার প্রথম পুত্র হিসাবে পরিবার ও স্বজনদের প্রিয় পাত্র ছিলাম-কোন পিছুটান কিংবা পারিবারিক দায় দায়িত্ব না থাকায় সার্বক্ষনিক ভাবে ছাত্র রাজনীতিতে লেখা-লেখি ও সাংস্কৃতিক কর্ম কান্ডে জড়িয়ে পড়ি। ঐ সময় প্রথমে মৌলভীবাজার কলেজ শাখা ছাত্র লীগ এবং অতঃপর মহকুমা শাখা ছাত্র লীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। কেন্দ্রের সম্মেলনে এবং অমাাদের সাংঘটনিক কাজে ঢাকায় আসা যাওয়া ছিল। ফলত: ছাত্র লীগের সকল কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গেঁ আমার সু-সম্পর্ক ছিল। আমার সাংঘটনিক দক্ষতা দূঃ সাহস ও বক্তৃতার কারনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমাকে খুবই ¯েœহ করতেন, অনেকেই এখনও করেন। আমি দাদার ভক্ত এবং স্বাধীন বাংলা পহ্ণী নিউক্লিয়ার্স গ্রুপের সদস্য-কর্মি ছিলাম। উচ্চ কন্ঠে শ্লোগান দিতে পারতাম। আমার প্রায় ছু-ফুটি দীর্ঘ দেহের কারনে আমার-স্বাধীন কর স্বাধীন কর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর, বীর বাঙ্গাঁলি অস্ত্রধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর দুই চারটা মাড়ূয়া ধর সকাল বিকাল নাস্তা কর, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা শ্লোগান সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করত। তখন এসব শ্লোগানই খুব জনপ্রিয় ছিল। আমি প্রথমে ইকবাল হলে মনির ভাইর ঠিকানায় উঠলেও আমার হাজি মোহাম্মদ মহসিন হলে সিটের ব্যবস্থা হয়। মহসিন হলে নিউক্লিয়ার্স পহ্ণী কর্মির সংখ্যা কম ছিল বলে হাজি মোহাম্মদ মহসিন হলের আবাসিক ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মি হিসাবে বসবাস ও অধ্যয়ন শুরু করি। এই হলে ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মনিরুল হক চৌধুরী (বি.এন.পি. নেতা সাবেক সাংসদ, কুমিল্লা এলাকা।) মিয়া মুশতাক আহমদ প্রমুখ। (পরে সরকারের মাননীয় সচিব। অবসরে) দাদার কর্মি হিসাবে মার্চের শুরুতে বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছি। পাকফৌজি প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়া খাঁনের সরকার জাতির নির্বাচিত নেতা বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবের নিকট ক্ষমতা হস্থান্তরে টাল বাহানা করতঃ গনহত্যা ঝুলুম নির্য্যাতন এবং সান্ধ্য আইন জারী করলে সমগ্র ঢাকা নগরে উত্তাল হয়ে উঠে। সন্ধ্যানামার সাথে সাথে আমরা হলে হলে ছাত্র লীগ-নিউক্লিয়ার্স-কর্মি সমর্থক গণ ইয়াহিয়ার ঘোষনা-মানি না-মানব না, সান্ধ্য আইন সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার কর, প্রত্যাহার কর, শ্লোগান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়- নীল ক্ষেত এলাকা-সোহরাওয়াদী উদ্যান পর্য্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করতাম। আমাদের এসব জঙ্গীঁ মিছিলে স্বত: স্ফূর্ত ভাবে হলের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী, সাধারণ মানুষ ও অংশ গ্রহন করতেন। সান্ধ্য আইন বিরোধী এসব মিছিলে প্রায়ই পাক সেনাবাহিনী বেপরোওয়া গুলি বর্ষন করত: একদিন আমাদের মিছিলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় গুলি বর্ষন হলে ফাড়ি পথে দৌড়ে মহসিন হলে চলে আসি। পরে দেখা গেল সেনাদের গুলিতে আহত ছাত্র আমাদের হলেরই আবাসিক ছাত্র। রক্তপাত দেখে আমার আত্মীয় ভাষানী পহ্ণী ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আব্দুল মজিদ খসরু (সোনালী ব্যাংক এর অবসর প্রাপ্ত ব্যাবস্থাপক) আমাকে জড়িয়ে কান্নাকটি শুরু করলেন। সম্পর্কে আমার চাচা হওয়ার সুবাদে তিনি বল্লেন আমার একটা কিছু হয়ে গেলে তিনি আমার পিতা মাতার কাছে কি জবাব দিবেন। এখনও বিয়ে শাদী সামাজিক অনুষ্ঠানাদি ও জানাজায় দেখা হলে তাঁর কান্নাকাটির কথা বল্লে, তিনি শরমপান। দাদার কর্মি হিসাবে তাঁর নির্দেশে আরেকটি কাজ করেছি তেইশে মার্চ একাত্তোরে। পাক প্রজাতন্ত্র দিবসে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক প্রতিরোধ দিবস হিসাবে ঘোষনা করা হয়। ঐ দিন বিকালে আমি আমার জীবনের ঝুকি নিয়ে মৌলভীবাজার চৌমুহনা চত্বরে ছাত্র লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি ছাত্র নেতা দেওয়ান আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রতিরোধ সভায় ঐ সভার প্রধান অতিথি হিসাবে বঙ্গঁবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি উড়াই, পাকিস্তানী জাতির জনক জিন্নাহ সাহেবের ছবি পুড়াই, পাকিস্তানী পতাকা পুড়াই, লাল সবুজের স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়াই। এই পুড়ানো-উড়ানোর ছবি উঠিয়ে ছিলেন নিকটস্থ মুক্তা ফটো ষ্টুডিও এর ফটোগ্রাফার। এর দুইদিন পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে খাঁন সেনারা আমার ছবি দেখিয়ে গুন্ডা মুজিব কাহা হ্যায় বাতাও বলে অনেককে ঝুলুম নির্য্যাতন করেছেন। আমার মুসলিম কোয়ার্টারস্থ পৈত্রিক বাসগৃহ ঘেরাও দিয়ে আমাকে না পেয়ে তছনছ করেছে।
অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। আমাকে পেলে খাঁন সেনারা আমাকে নৃশংস ভাবে গুলি করত। স্বাধীন বাংলাদেশে না হলে রাষ্ট্র দ্রোহিতার অপরাধে আমার ফাসি হত। আমরা আমাদের রাজনৈতিক আনুগত্য, দেশপ্রেমের কারনে নেতার নির্দেশে জীবন বাজি রেখে কাজ করেছি। ভয় করি নাই। ভীত হই নাই। যখন যে দায়িত্ব পেয়েছি নির্ভয়ে নিঃশস্ক চিত্তে সে দায়িত্ব পালন করেছি।
আমি সিরাজুল আলম খাঁন একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য গ্রহ্ণে বিভিন্ন তথ্য ও বক্তব্যের পরিলক্ষিত হয়েছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে মত পার্থক্য ছিল-দলের অভ্যন্তরে দ্বি-ধারা বিদ্যমান ছিল এমনটি থাকা কিংবা দেখা কোন ত্রুুটি যুক্ত কাজ নয়। আওয়ামী লীগ একটি মাল্টি প্লাশ পেটি বুর্জোয়া রাজনৈতিক সংগঠন, মুক্ত বাজার অর্থনীতির সমর্থক, সি.পি.বি-জামাত এর মত ক্লাশিক্যাল ওর্গেনাইজেশন নয় বিধায় একটি দলের অভ্যন্তরে ফলগু ধারার মত ভিন্ন ধারা থাকতে পারে। রাজনৈতিক চিন্তাবিদ সিরাজুল আলম খাঁন কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রাবস্থায় তৎকালীন পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক সামাজিক প্রশাসনিক বৈসম্য-শোসন নিপীড়িন দৃষ্টে মরমে মরমে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের উপর বিরূপ মনোভাব পোষন করতে থাকেন, মনে করেন স্বায়ত্ত শাসন নয় স্বাধীনতা ছাড়া বাংলা ও বাঙ্গাঁলির মুক্তি নাই। তাছাড়া ষাটের দশক ছিল বিশ্বব্যাপী জাতীয় জাগরনের যুগ। আমি সিরাজুল আলম খাঁন গ্রহ্ণে আমার সীমাবদ্ধতা বিভাগে স্বয়ং সিরাজুল আলম খাঁন বলেন-
“চিন্তার জগতে আমাকে স্বাধীনতা বিষয়টি বুঝতে সাহায্য করেছিল তৎকালীন আলজিরিয়ার মুক্তি সংগ্রাম, কিউবার বিপ্লবী আন্দোলন, ভিয়েতনামে আমেরিকার বিরুদ্ধে কমিউনিষ্টদের লড়াই এবং ইন্দোনেশিয়া সহ পৃথিবীর নানা দেশে নিপিড়ন, নির্য্যাতন এর বিরুদ্দে জনগনের আন্দোলন সংগ্রাম। নিউক্লিয়াস (স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ) নাম একটি সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। সে সময় আমার, রাজ্জাকেরও আরেফের বয়স ছিল যথাক্রমে ২১, ২০, ১৯। নিউক্লিয়াসের রাজনৈতিক উইং হিসাবে আমরা বি.এল.এফ (বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট) গঠন করি, পরবর্তীতে শেখ ফজলুল হক মনি ও তোফায়েল আহমদ বি.এল.এফ-এ-যুক্ত হন। ”
ষাটের দশকে পাকিস্তানী ফৌজি প্রেসিডেন্ট স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আয়ূব খাঁন দেশব্যাপী সামরীক আইন জারী করে এবডো, প্রডো, ডি.পি. আর জাতীয় নিবর্তন মূলক কালাকানুন জারী করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেন। বাঙ্গাঁলি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জনক শেখ মুজিবুর রহমান সহ সকল আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ কারাগারে। শুধুমাত্র মিসেস আমিনা বেগম আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি হিসাবে দলের অফিসে বাতি জালিয়ে রেখে ছিলেন। দেশব্যাপী দলের শাখা সংগঠন-সাংঘটনিক কার্য্যক্রম ছিল না। তখন আওয়ামী লীগের অন্য কোন সহযোগী কিংবা অঙ্গঁ সংগঠন ছিল না। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের অনুমতি নিয়ে সিরাজুল আলম খাঁনই জাতীয় শ্রমিক লীগ গঠন করেছিলেন। নোয়াখালী জেলার আদি অধিবাসী হিসাবে শ্রমিক নেতা আব্দুল মান্নান এবং শ্রমিক নেতা রুহল আমীন ভূইঞা তাকে সাহায্য করেছিলেন।
শক্তিমান সংঘটক সিরাজুল আলম খাঁন তাঁর অপূর্ব সাংঘটনিক দক্ষতা ও ক্ষমতাবলে ছাত্র লীগকে একটি শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। এ সময় সমগ্র বাংলাদেশের কলেজ ছাত্র সংসদের মধ্যে ১৪২টি কলেজের মধ্যে ১৩২টি কলেজ ছাত্র সংসদ ছিল ছাত্রলীগের। সত্তোর সালের সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগের একটি বর্দ্ধিত সভা ছিল খুবই জরুরী। ৪২, বলাকা ভবন, নিউ মার্কেট এলাকায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় অফিসে অনুষ্টিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে আবার মত পার্থক্য দেখা দেয়। আমি তখন আমার মহকুমা শাখার সভাপতি, এ.কে সুজাউল করিম সম্পাদক। সিলেটের সভাপতি সম্পাদক ছিলেন আমার প্রিয় দুই বন্ধু সদর উদ্দিন চৌধুরী এবং মকসুদ ইবনে আজিজ লামা। দূজনেই অনলরর্ষী বক্তা। দাদাও নিউক্লিয়াস সমর্থকদের দাবী ছিল স্বাধীন সমাজ তান্ত্রীক বাংলাদেশ গঠনের প্রস্তাব পাশ করানো। কেন্দ্রে এই গ্রুপে ছিলেন আসম আব্দুর রব এবং শাহ জাহান সিরাজ প্রমুখ। সদর-লামা-আমি স্বাধীন বাংলাদেশ এর পক্ষে জোরালো ভাষন দেই। একটি ক্ষুদ্র গ্রুপ এর বিরোধিতা করলেন। আমার যত দূর মনে পড়ে মফস্বলের শতকরা প্রায় পচান্নব্বই ভাগ কমিটির সভাপতি/সম্পাদক স্বাধীনতার পক্ষে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সভায় বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টি হল। তখন জগন্নাথ কলেজ ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন দীর্ঘদেহী এম.এ. রেজা। ঢাকার রাজনীতিতে ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ কলেজ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশাল দেহী এম.এ.রেজা এবং তাঁর বাহিনী ছিল স্বাধীনতা ও নিউক্লিয়াস পহ্ণীদের বিরুদ্ধ বাদি। রেজা বাহিনীর সঙ্গেঁ সংঘাত না গিয়ে সভামূলতবি ঘোষনা করে চূড়ান্ত মতামতের জন্য বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুরের ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়িতে যাওয়া হল। এ সময় ছাত্র লীগ নেতা আশম রব এর ভূমিকা ছিল খুবই জোরালো। তিনি প্রস্তাব পাশের পক্ষ পাতি ছিলেন। এমন ঐতিহাসিক ঘটনা স্বচক্ষে দেখার লোভ সামলাতে পারিনি, শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ বঙ্গঁবন্ধুর সঙ্গে দেখা করা এবং মতামত নেবার কথা থাকলেও আমিও পিছু পিছু ছুটলাম। তখন এত ডর ভয় ছিল না। রেজা বাহিনীকে ভয় পাইনি। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেঁ বিশেষত: রব ভাই, শাহজাহান সিরাজ ভাইর সঙ্গে সু-সম্পর্ক থাকার সুবাদে (এবং এখনও সে সু-সম্পর্ক বিদমান আছে। দুই নেতাই আমাকে ¯েœহ করেন) বত্রিশ নম্বরে বঙ্গঁবন্ধুর বাড়িতে ঢুকলাম। প্রায় পঞ্চাশ বৎসর পরও সেই উজ্জল স্মৃতি আমার স্মৃতিতে সমুজ্জল।
নেতা নিচ তলার ড্রয়িং রুমে নেমে এলেন। পরিধানে চেক লুঙ্গিঁ গায়ে হাফ হাতা ফ্লাইং সার্ট। হাতে তাঁর ঐতিহ্যবাহী পাইপ। ঘুম চোখে উজ্জল ফর্সা চেহারার সুপুরুষ-সুদর্শন শেখ মুজিবের চোখে মুখে কোন বিরক্তির চাপ ছিল না, অসীম ধৈর্য্য সহকারে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের কথা শুনলেন শেখ মুজিব। জাতির দূর্দিনে দূরদর্শী নেতা শেখ মুজিব নীতিগত ভাবে ছাত্রলীগের সংখ্যাগরিষ্টদের মতামত স্বাধীনতা পহ্ণীদের সমর্থন দিলেন-তবে এই মূহুর্তে নয়, তিনি নির্বাচন গণরায় এবং ম্যেনডেট এর পক্ষে মতামত দিলেন। তাঁর জোরালো যুক্তি এবং দূরদর্শী আলোচনায় ছাত্র লীগের উভয় গ্রুপই সন্তুষ্ট হলেন, ছাত্র লীগের সভাটি মূলতবি হয়ে গেলে মূলতবি সভা আর হওয়ার অবকাশ ছিল না, স্বাধীনতা উত্তরকালে মূলতবি সভার আর প্রয়োজন ছিল না, কারণ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। ছাত্র লীগের মধ্যে ভিন্ন মতাবলম্বীদের অস্থিত্ত এবং নিউক্লিয়াস সমর্থকদের স্বাধীনতার স্বপক্ষের বিভিন্ন কার্য্যক্রমের একজন নিরব স্বাক্ষী আমি নিজেও। আমিও একজন ষাটের প্রজন্ম। ১৯৬২ সালে ম্যেট্রিক কেন্ডিডেট ছিলাম। আমরাই ছিলাম ম্যেট্রিক এর শেষ ব্যাচ। এরপর থেকে শুরু হয় এস.এস.সি- সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট। বাষট্টি সালে হামদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিলের দাবীতে ছাত্র হত্যার বিচার চাই-বলে শ্লোগান দিয়ে সেই যে রাস্তায় নেমেছিলাম এখনও রাস্তায় না থাকলেও শ্লোগানের মায়া ত্যাগ করতে পারিনি। তখন শিক্ষা কমিশন সম্পর্কে ধারনা না থাকলেও ছাত্র হত্যার প্রতিবাদী হয়ে ছিলাম।
মুজিব বাহিনীর বীর যোদ্ধা শামসুদ্দিন পেয়ারা দীর্ঘদিন দাদার সংস্পর্শে থেকে মুজিব বাহিনীর অন্যান্য অধিনায়ক-সংঘটক সহ তাত্বিক সিরাজুল আলম খাঁনকে অনুরোধ ও চাপাচাপির প্রেক্ষিতে তাঁকে রাজি করিয়ে দৈনিক পাঁচ ঘন্টা করে একুশ দিন নোট নিয়ে অনুলিখন এর পর তাঁর মেধা ও শ্রমের ফল ও ফসল এই গ্রহ্ণ। এক্ষেত্রে অনুলিখক শামসুদ্দিন পেয়ারা যে ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়েছেন তা নিঃ সন্দেহে প্রশংসনীয়। সাদা অফসেট কাগজে ডিমাই ওয়ান এইট সাইজে দুইশত বত্রিশ পৃষ্টার ইতিহাস ভিত্তিক এই প্রয়াস একটি ঐতিহাসিক গ্রহ্ণ সাদা অফসেট কাগজে নির্ভূল ছাপা। ভাষাও সহজ সরল। সুখ পাঠ্য। বাড়তি পাওনা কতেক ঐতিহাসিক আলোক চিত্র। বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিব, মাওলানা ভাষানী থেকে জাতীয় নেতৃবৃন্দ, মুজিব বাহিনীর চার আঞ্চলিক অধিনায়ক, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর নেতা চতুষ্টয়, মুজিব বাহিনীর চার নেতার সঙ্গেঁ বঙ্গঁবন্ধু এবং আরেকটি চিত্রে বঙ্গঁবন্ধুর কাছে মুজিব বাহিনীর আত্মসমর্পনের ছবি এবং মুজিব বাহিনীর চার আঞ্চলিক অধিনায়ক এর সঙ্গেঁ ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল সুজন সিং উবান, বীর মুক্তিযোদ্ধা লেঃ কঃ আবু তাহের, লেখকের সঙ্গেঁ দাদা এবং অনুলিখক এর ছবি আগামী প্রজন্মের ইতিহাস গবেষকদের কাজে লাগবে। গ্রহ্ণখানার প্রচ্ছদ একেছেন দেশের খ্যাতিমান অংকন শিল্পী ব্রুব এশ, সিরাজুল আলম খাঁন এর মুখমন্ডলের আলোক চিত্র সহ আকর্ষনীয় নীল রং এর পচ্ছদটি আকর্ষনীয় ও রুচিশীল। প্রচ্ছদ চিত্র রফিকুর রহমান, মুদ্রনে এম.বি.পৃন্টার্স, ২৮, টিপু সুলতান রোড, ওয়ারী, ঢাকা, প্রকাশ করেছেন দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা প্রতিষ্টান মাওলা ব্রাদার্স। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পুস্তক প্রকাশ করে আহমেদ মাহমুদুল হক দেশবাসীর প্রশংসা প্রাপ্ত হলেন। সাদা অফসেট কাগজ সমেত আকর্ষনীয় বোর্ড বাঁধাই গ্রহ্ণখানির মূল্য তিনশত আশি টাকা খুব বেশি নয়। রাজনীতি ও প্রবন্ধের পাঠক/ক্রেতা নাই বলে যে বদনাম ছিল তা এই গ্রহ্ণ গুচিয়ে দিয়েছে। বিশেষতঃ গদ্য সাাহিত্যের যাদুকর কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমদের মৃত্যের পর প্রকাশনা শিল্প যে হুচট খেয়েছিল তা কিছুটা কাটিয়ে উঠবে বলে বোদ্ধামহল আশা প্রকাশ করেন। এই গ্রহ্ণ প্রকাশের পরই পাঠক মহল বিশেষতঃ রাজনীতি সচেতন তরুন সমাজের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে, পাঠক প্রিয়তার মধ্যে এ বছর বিগত মার্চ মাসে গ্রহ্ণখানির দ্বিতীয় সংস্করন প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ প্রতিদিন দেশের বহুল প্রচারিত একটি জাতীয় দৈনিক। সাংবাদিক-কলামিষ্ট পীর হাবিবুর রহমান দৈনিকটির নির্বাহী সম্পাদক। একজন মেধাবী ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসাবে তিনি খ্যাত-স্বীকৃত। আমি সিরাজুল আলম খাঁন: একটি রাজনৈতিক জীর্বনালেখ্য শামসুদ্দীন পেয়ারা অনুলিখিত গ্রহ্ণ প্রসঙ্গেঁ কতেক জাতীয় নেতৃবৃন্দের সিরিজ সাক্ষাতকার টক অবদি কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে-আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আমি নিজে জাতীয় দৈনিকটির একজন শুধু পাঠক নই একজন গ্রাহক ও বটে। সংবাদ পত্র শিল্পের সঙ্গেঁ সম্পৃক্ত আছি সেই ষাটের দশক থেকেই। সিরিজ সাক্ষাতকার সমূহে স্বস্ব রাজনৈতিক অবস্থান থেকে জাতীয় নেতৃবৃন্দ নিজস্ব অভিমত মতামত প্রকাশ করতেই পারেন-দিতেই পারেন। এটা তাঁদের অভিরুচিও গণতান্ত্রীক অধিকার। তারা রাজধানী ঢাকাবাসী জ্ঞানী-গুনী বিদগ্ধ-বিজ্ঞ ও আমার গুরুজন। গুরু মারা বিদ্যা আমি জানি না, তাছাড়া তাঁদের বক্তব্যের খন্ডন-প্রতিবাদ ও পাল্টা তথ্য ও যুক্তি প্রদর্শনের যোগ্যতাও আমার নেই, তা করার কৌসিশ করাও আমার জন্য বে-আদবী ও ধৃষ্টতার সমতুল্য। তাছাড়া তাঁদের কাটগড়ার আসামী সর্বহারা সিরাজুল আলম খাঁন আমাকে একজন পেশাদার আইনজীবী হিসাবে উকিল নিযুক্ত ও করেন না নি, তাছাড়া আইনজীবী হবার কিঞ্চিত যোগ্যতা থাকলেও সে দুঃসাহস ও ধৃষ্টতা আমার নাই। অধম-লাচার আমি একজন সচেতন নাগরিক-স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং বিগত সাড়ে পাঁচ দশকের একজন সমাজ ও রাজনৈতিক চিন্তক হিসাবে আমার ভাবনানুভূতি ও চিন্তার প্রকাশ করতে পারি। এটাও আমার গণতান্ত্রীক সাংবিধানিক অধিকার। তাছাড়া মানুষের কোন কথাই শেষ কথা নয়। কথার শেষে কথা আসে, কথার শেষে কথা থাকে।
বাংলাদেশের বিগত সাড়ে পাঁচ দশকের সমাজ ও রাজনীতির একজন সরব দর্শক সৈনিক আমি। বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সিরাজুল আলম খাঁন, শেখ ফজলুল হক মনি-কে আমি কাছে থেকে দেখেছি। তাঁদের নেতৃত্বে কিঞ্চিত কাজ করার সুযোগ ও পেয়েছি। ষাটের দশকে সমগ্র বৃহত্তর সিলেটে দেওয়ান ফরিদ গাজি সাহেব ছাড়া যখন তেমন কোন নেতা ছিলেন না তখন বৃহত্তর সিলেটের ছাত্রলীগ কেই সাংঘটনিক কার্য্যক্রম চালাতে হত। আমিও তাই করেছি। ঐ দশকে আমি ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মনি ভাইকে আমি কাছে থেকে দেখার- তাঁর সঙ্গেঁ কাজ করার সুযোগ পেয়েছি একজন নবীন সাংবাদিক হিসাবে। আমি বাল্যকাল থেকেই সাহিত্য, সাংবাদিকতা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলাম। ছাত্র লীগ প্রভাবিত জাতীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংঘটন পূর্ব পাকিস্তান শিল্প ও সাহিত্য সংঘ, মৌলভীবাজার মহকুমা শাখার সভাপতি ছিলাম। শেখ ফজলুল হক মনি সম্পাদিত সাপ্তাহিক বাংলার বানীর মহকুমা সংবাদ দাতা ছিলাম আমি। বাংলার বানীর অফিস তখন পুরানা পাল্টনে আওয়ামী লীগ অফিসের নীচ তলার একটি কক্ষে। মনি ভাই অত্যন্ত সুদর্শন সুবেশী সূপুরুষ ছিলেন। ফর্সা চেহারায় ব্যাক ব্রাশ করা চুলে সাদা সার্ট লালটাই পরিহিত শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন একজন আকর্ষনীয় ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব। বাংলার বানী দৈনিক হয়ে জাতীয় দৈনিকে পরিণত হয়। ৮৮, মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকায় মনি ভাইর চেম্বারে তাঁকে দেখতে গিয়েছি। কোনদিন তিনি সিরাজুল আলম খাঁন প্রসঙ্গেঁ কোন বিরূপ মন্তব্য করেন নি, তারা পরষ্পরের বন্ধু ছিলেন। ঠিক তেমনি সিরাজুল আলম খাঁন স্বাধীনতা উত্তরকালে জাসদের জন্ম এবং দৈনিক গণকন্ঠ প্রকাশিত হলে দাদা পুরান ঢাকার গণকন্ঠ অফিসে বসতেন, তিনি শেখ মনি প্রসঙ্গে কোন নেতিবাচক মন্তব্য করেন নি। তারা দুজনেই ছিলেন ছাত্র লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সম্পাদক। দুজনের মধ্যে কোন ব্যবসা বানিজ্য পদ পদবীর প্রতিযোগিতা ছিল না, অথছ অনেকেই মনে করেন, বলেন এই দুই নেতার দ্বন্দের কারনে ছাত্র লীগে বিভক্তি ও জাসদের জন্ম।
স্বাধীনতা উত্তরকালে সরকারের সঙ্গেঁ রাজনৈতিক মত পার্থক্য পোষন করে সিরাজুল আলম খাঁনের প্রচেষ্টা অনুপ্রেরনায় জাসদের জন্ম হলেও বঙ্গঁবন্ধুর সঙ্গেঁ ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল সিরাজুল আলম খাঁনের। পঁচাত্তোর সালে দেশীয় সমাজ ও রাজনীতিতে উত্তেজনা, অস্থিরতা ও সংকট দেখা দিলে বঙ্গঁবন্ধু দাদাকে আপত্য ¯েœহে বলেছেন, সিরাজ দেশের অবস্থা ভালো নয়, তুই দেশ ছেড়ে চলে যা। দাদা পনেরোই আগষ্টের আগে ভারত চলে যান। পঁচাত্তোরের পনেরোই আগষ্টে শোকাবহ দূঃখজনক দূর্ঘটনা বঙ্গঁবন্ধুর আজীবনের বন্ধু খুনী খন্দকার মুশতাক মন্ত্রী সভার একজন সামান্য সদস্য হয়ে, তাঁর ভাষায় দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে পনেরোই আগষ্টের সারথী হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হন। একমাত্র কর্নেল জামিল দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে রক্ষা করতে এসে বীরের মত প্রাণ দিলেন। মুজিব হত্যার প্রতিবাদে বঙ্গঁবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম এবং সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ (ডাকসুর সাকে ভি.পি- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি। মাননীয় সাংসদ) ছাড়া আর কাউকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। সেই দুঃসময়েও কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। আমি সিরাজুল আলম খাঁন গ্রহ্ণে এই প্রথম স্বাধীনতার সংগঠক ও নিউক্লিয়াস আলোচিত হয়নি, ইতিপূর্বেও নিউক্লিয়াস মুজিব বাহিনী এবং দাদা প্রসঙ্গেঁ বিভিন্ন গ্রহ্ণে পত্রে আলোচিত হয়েছে। দুই হাজার পনেরো সালে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা ঐতিহ্য-থেকে বের-করেন বিশাল ছয়শত পৃষ্টার গবেষনা গ্রহ্ণঃ মুজিব বাহিনী থেকে গনবাহিনীঃ ইতিহাসের পূনর্পাঠ। সাংবাদিক-গবেষক আলতাফ পারভেজ এর এই সুবিশাল গ্রহ্ণ স্বাধীনতা সংগ্রাম, নিউক্লিয়াস, মুজিব বাহিনীগণ বাহিনী সহ বিভিন্ন প্রাসঙ্গিঁক তথ্যে ঠাসা। এই গবেষনা গ্রহ্ণ খানি পাঠক প্রিয়তা পায়। গবেষক আলতাফ পারভেজ উক্ত গ্রহ্ণেরঃ উত্থাল মার্চের ছাত্র লীগের নিউক্লিয়াস: যুদ্ধ যে ভাবে পূর্ব বাংলার নিয়তি হয়ে উঠল: অধ্যায়ে বলেন- একাত্তোরের মার্চে এসে ছাত্র লীগের কথিত নিউক্লিয়াসের রাজনৈতিক তৎপরতা এক চূড়ান্ত ও সিদ্ধান্ত সূচক রূপনেয়। আলতাফ পারভেজ আরো বলেন মুজিব বাহিনী ও বি.এল.এফ সম্পর্কিত কাজি আরিফ আহমদের বক্তব্য এবং তাঁর বক্তব্যের সমর্থন সূচক অন্যান্য (আব্দুর রাজ্জাক তোফায়েল আহমদ, আশম আব্দুর রব, আফতাব আহমদ, মাহবুবুর রব ছাদী প্রমুখের।) যেসব বক্তব্য উল্লেখ করা হল তাঁর সার সংকলন থেকে নি¤েœাক্ত দাবী সমূহ উত্থাপিত হয়। প্রথমত আরো ষ্পষ্টভাবে বল্লে এ হল ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীন নিউক্লিয়াস নামক গোষ্টিরই ধারাবাহিক বিকাশ এবং সম্ভাব্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ভার মুখ্য নেতা শেখ মুজিব নিজেই এ বাহিনীর ওপর অর্পন করেছিলেন। দ্বিতীয়ত মুজিব বাহিনীর কার্য্য ক্রমের সূচনাতেই সিরাজুল আলম খাঁনদের নিউক্লিয়াসের পাশাপাশি তাতে ছাত্র লীগের মনি তোফায়েল, মাখনদের নিয়ন্ত্রননাধীন অংশের সমন্ধয় ঘটেছিল। তৃতীয়ত নিউক্লিয়াস একটি সমাজতান্ত্রীক বাংলাদেশ এর স্বপ্ন দেখতেন। চতুর্থতঃ বি.এল.এফ বা মুজিব বাহিনীর সঙ্গেঁ মুজিবের সম্পর্ক বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ এন্ড এনালাইসিস উইং (জবপযধৎপয ধহফ ধহধষরংরং রিহম জঅড) এর সৃষ্টি এতথ্য সঠিক নং- যদিও শেখ মুজিবুর রহমান একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা দিয়ে ছাত্র নেতাদের সেখানে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতে বলেছেন এবং এক্ষেত্রে দু’জন মধ্যবর্তী ব্যক্তি ছিলেন চিত্ররঞ্জন সুতার ও ডাঃ আবু হেনা। পঞ্চম: মুজিব বাহিনীর সঙ্গেঁ প্রবাসী সরকারের মুখ্য ব্যক্তিদের বৈরিতার বিষয়টি একেবারেই ঠিক নয় বরং তারা এই সংস্থাটি সম্পর্কে পূর্বাপর অবহিত ছিলেন।” সুবিশাল গবেষনা গ্রহ্ণ সাংবাদিক গবেষক আলতাফ পারভেজ এর মুজিব বাহিনী থেকে গণ বাহিনী মূল্যবান তথ্য, তত্ব, উপাত্তের একটি রাজনৈতিক দলিল। গ্রহ্ণটি ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা পেয়েছিল। নিউক্লিয়াস-মুজিব বাহিনী প্রসঙ্গেঁ প্রতিক্রিয়া ব্যাপক কোন পাঠ প্রতিক্রিয়া-ভিন্নমত-অভিযোগ উত্থাপিত হয় নি। প্রসঙ্গঁত উল্লেখ্য, নিউক্লিয়াস- গঠন কালে তাত্বিক সিরাজুল আলম খাঁনের সঙ্গেঁ দুই জন সহযোগী ছিলেন, তারা হলেন আব্দুর রাজ্জাক এবং কাজি আরিফ আহমদ। বলিষ্ট সংঘটকদ্বয় আব্দুর রাজ্জাক এবং কাজি আরিফ আহমদ স্বনামেই পরিচিত। কাজি আরিফ আহমদ ঢাকায় অজানা-অচেনা নহেন। পুরাতন ঢাকার অভয় দাস লেনের ১৪/৩- নম্বর বাড়িটি তাঁর পৈত্রিক। নয়া ঢাকাইয়া কিংবা নব্য বাড়িওয়ালা নহেন। কে.এম.ওবায়দুর রহমান এবং সিরাজুল আলম খাঁন যখন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যথাক্রমে সভাপতি সম্পাদক তখন কাজি আরিফ আহমদ ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সংগ্রামী সভাপতি। আন্দোলনে সংগ্রামে সবসময় সব সংগঠনের ঢাকা কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।
নিউক্লিয়াস- পরবর্তী মুজিব বাহিনীর চারজন আঞ্চলিক অধিনায়ক চতুষ্টয় সিরাজুল আলম খাঁন, শেখ ফজলুলকে মনি, আব্দুর রাজ্জাক এবং তোফায়েল আহমদ এর একাধিক সহকারী আঞ্চলিক অধিনায়ক ছিলেন। মুজিব বাহিনীর বীর যোদ্ধাগণ ছিলেন শিক্ষিত রাজনীতি সচেতন, অত্যাধুনিক প্রশিক্ষন প্রাপ্ত।
আমি সিরাজুল আলম খাঁন- গ্রহ্ণে স্বাধীনতা সংগ্রামী সিরাজুল আলম খাঁন কোথাও আমিত্ব কিংবা তাঁর ব্যক্তিগত বাহাদুরি জাহির করেন নি। বরং তিনি চরম আর্থীক সংকট অধ্যায়ে তিনি ও তাঁর সহকর্মিগণের চরম আর্থীক সংকট-দূঃখ দুর্দশার কথাও কাহিনী সহজ সরল ভাবে প্রকাশ করেছেন। আজকাল আধুনিক সমাজে অনেক ফটকাবাজ-ফেরেব্বাজ-ধান্দাখোর এর দল পিয়াজ-পান্তা খেয়ে পাস্থা- পোলাও কাচ্চির টেকুর তুলেন। ব্যাংক ঋণ এর নামে জনগণের শতশত কোটি টাকা আত্বসাত করে খেলাফি কালচারের জোয়ারে-গাভাসিয়ে মিডিয়ার সামনে নির্লজের মত মুচকি হাসেন, বেহুদা-বেআক্কলের মত-ভি-চিহ্ন দেখান। পক্ষান্তরে সিরাজুল আলম খাঁন বলেন- “১৯৬৮ থেকে ১৯৭০ এর মাঝামাঝি পর্য্যন্ত আড়াই বছর আমরা চরম অভাব-অনটনের ভিতর দিয়ে কাটাই। বড় কষ্টে এ দিনগুলো অতিবাহিত করেছি। ঢাকা ভিত্তিক বি.এল.এফ. সংগঠকদের প্রতিদিন যাতায়াত ও খাওয়া দাওয়া বাবদ যে অর্থের প্রয়োজন, তাঁর ব্যবস্থা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। সারাদিন এক বেলা খেয়ে সপ্তাহের পর সপ্তাহ কাটাতে হত। রাত জেগে থাকাটাও নিউক্লিয়াস ও বি.এল.এফ. ট্রেনিং এর অংশ ছিল। এমনও দিন গিয়েছে দুই আনাচার আনা করে মোট দেড় টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছি, পায়ে হেটে মীরপুর, সেখান থেকে দশ বারো আন দিয়ে বিরাট একটি কাঁঠাল কিনে মাথায় করে নিয়ে আসা, তারপর আট আনার মুড়ি কিনে তাদিয়েই দশ বারো জনের রাতের খাবারের প্রয়োজন মেটাতে হত।” মাঝে মাঝে আমিনুল হক বাদসা ও আবু বক্র সিদ্দিক হলের খাবার তাঁদের রুমে আনিয়ে রাখত। গভীর রাতে ফিরে আমি তাঁর অর্ধেক খেতাম সে খাবার খেয়েই পরের দিন রাত পর্য্যন্ত থাকতে হত।”
মেট্রকুলেশনে ষ্ট্যান্ড করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র, শিক্ষিত সম্ভান্ত পরিবারের সু-সন্তান সিরাজুল আলম খাঁন ও তাঁর সহকর্মিগণ দল ও দেশের জন্য যে কষ্ট করেছেন, দেশের জন্য অতুলনীয় ত্যাগ স্বীকার অমানুষিক কষ্ট করেছেন তা আমাদের জাতীয় জীবনের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনুকরণীয় ও গৌরবোজ্জল অধ্যায়। এমন ত্যাগ এমন কষ্ট এখন কল্পনাই করা যায় না। চলা ফেরায় এখন পাজেরা- প্রাডো-এয়ার-হেলিকাপ্টারের যুগ, খাবার দাবারে এখন কাঁঠাল মুড়ি, নীল ক্ষেতের আনোয়ারা হোটেলের চার ছ’আনায় গোশত-ভাতের পূর্ণ ডিনার এর যুগ নয়, এখন শেরা-টন-সোনার গাঁও-পাঁচ তারা হোটেলে পাঁচ হাজার টেকি প্যেকেট ডিনার এর যুগ। সিরাজুল আলম খাঁন উচ্চ শিক্ষিত, সম্ভান্ত, স্বচ্ছল-পদস্থ সরকারি চাকুরিজীবী পরিবারের সু-সন্তান, গনমুখী রাজনীতির কারণে তিনি অনেকটা শ্রেনীচ্যুত বুর্জোয়ার-(ডি-ক্লাশড বুর্জোয়া) মত উপরে থেকে নীচে নেমে এসেছেন। অথছ আজ কাল অনেকেই অসৎ রাজনীতি দূর্নীতি স্বজনপ্রীতি ও ধান্দাবাজি করে ফকির থেকে আমীর হয়েছেন, এফিডেভিট মারফত অনেক কেরামত উল্লাহ ক্র্যেমেটএ্যালি হয়ে চৌধুরী-তালুকদার সহ- বিভিন্ন পদপদবী ধারন করেছেন। ব্রাহ্মন বাড়িয়ার জনৈক কালু মিয়া ভাঙ্গাঁরীর পুত্র তানভির মাহমুদ ও বধু জেসমিন ইসলাম জনগনের চার হাজার কোটি টাকা, হলমার্ক কেলেংকারীর নামে আত্বসাত করেছেন। এমনি ভাবে ডেসটিনী দুই হাজার, ইউনিপেইড-টু-’ বিস্মিল্লা গ্রুফ জাতীয় ফটকাবাজ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এন.জি.অ.হয়ত বিনা বিসমিল্লায়ই জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্বসাত করে বসে আছেন, দেশে বর্তমানে খেলাপী ঋণের পরিমান এক লক্ষ কোটি টাকারও উপরে, এত সব ঋণ আদায়, শিক্ষা খাত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি, নন এম.পি.ও. ভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্টান এম.পি.ভূক্ত করা এবং উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়ন ও গবেষনা খাতে অর্থ বরাদ্দ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করতে জাতীয় পর্য্যায়ে যে জোরালো আওয়াজ উঠার কথা, দেশ ও জাতি তা দেখছেন না।
সংঘটক সিরাজুল আলম খাঁনকে বঙ্গঁবন্ধু সহোদরের মত ¯েœহ মমতা করতেন। শেখ মুজিবের একক নেতৃত্বের প্রতি সিরাজুল আলম খাঁনেরও ছিল প্রশ্নাতীত অসীম আনুগত্য। বাংলাদেশকে নিয়ে দাদার যত স্বপ্ন রাজনৈতিক ধ্যান ধারনা ছিল তা সর্বত্র ছিল বঙ্গঁবন্ধু কেন্দ্রীক। নিদারুন অর্থ কষ্টের দিনেও নেতা সিরাজুল আলম খাঁন ঢাকায় বসবাসও ব্যবসা বানিজ্যরত অবাঙ্গাঁলি পুঁজিপতিদের নিকট থেকে চাঁদাবাজি করেন নি, করান নি। তিনি চাঁদাবাজ ও ধান্দাবাজ নেতা ছিলেন না-নহেনও। সেই নিদারুন কষ্টের দিন নেতা বঙ্গঁবন্ধ শেখ মুজিব বট বৃক্ষের ছায়া দিয়ে মায়া-মততার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন, সাহস শক্তি যুগিয়েছেন-সহায়তা করেছেন। চরম আর্থীক সংকট-অধ্যায়ে সিরাজুল আলম খাঁন আরো বলেন- “১৯৬৮ সালের মাঝামাঝি একদিন মুজিব ভাবী একজন লোক মারফত আমাকে বাসায় ডেকে পাঠালেন। আমি যেতেই তিনি আমার হাতে একটা খাম দিলেন। খুলে দেখি ২০০ টাকা। ভাবী বললেন আপনার ভাই প্রতি মাসে আমার কাছ থেকে আপনাকে এই টাকা নিতে বলেছেন। মুজিব ভাই জেল থেকে বের হওয়া পর্য্যন্ত প্রতি মাসে (দুই একমাস বাদ গিয়েছে) ভাবী আমাকে খামটা দিতেন। এতে সিরাজুল আলম খাঁনের প্রতি বঙ্গঁবন্ধুর ¯েœহ মমতার পরিচ্ছন্ন ছবি ফুটে উঠেছে। দাদার সততাও অর্থাভাবেরও আভাস পাওয়া গেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দীন পেয়ারা অনুলিখিত আমি সিরাজুল আলম খাঁন একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য-” নামাকরন যথাযথই। রচনা প্রসঙ্গেঁ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, মননশীল লেখক শ্রদ্ধেয় আবুল ফজল যথার্থই বলেছেন “সব রচনারই উৎস দায়িত্ববোধ। নিজের দেশের প্রতি, নিজের যুগের প্রতি, সেই সঙ্গেঁ নিজের বিবেক ও লেখক সত্তার প্রতিও এ দায়িত্ব বর্তায়। এই রাজনৈতিক উপাখ্যান জীবনালখ্যে ও সিরাজুল আলম খাঁন এবং অনুলিখক শামসুদ্দীন পেয়ারা দায়িত্ববোধ, দায়িত্ব চেতনার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। বিবেক ও লেখক সত্তার ও সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন। গ্রহ্ণের ভাষাও সহজ সরল। সখপাঠ্য। ঝরঝরে নির্ভূল ছাপা। আকর্ষণীয় গ্রহ্ণ খানি পাঠাগারে সংগ্রহে সংগ্রহে রাখার মত।
মুক্তিযুদ্ধ প্রেম, ভালোবাসা ও সোনালি কাবিন এর কবি আল মাহমুদ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রসঙ্গেঁ যথার্থই বলেন- “মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একদিন কেউ না কেউ সঠিক ভাবেই লিপিবদ্ধ করবে। হয়ত শত বর্ষ পরে। তখন আজকের প্রগতিশীলরা থাকবেন না। প্রতিক্রিয়াশীল বলে ও কেউ হয়ত আর থাকবেন না শুধু থাকবে ইতিহাসের কঠোর বাস্তবতার বলি রেখা যুক্ত মুখায়ব”। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রনালয় থেকে জাতীয় প্রায় সব কবি সাহিতিক সাংবাদিকদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে কবি হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় পনোরো খন্ডে হাজার হাজার পৃষ্টার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রহ্ণ প্রকাশিত হয়েছে তাতে বলা হয়েছে এই খন্ডাবলি ইতিহাস নয়, ইতিহাসের তথ্য উপাত্ত। মাত্র দুইশত বত্রিশ পৃষ্টার এই রাজনৈতিক জীবনালেখ্য সিরাজুল আলম খাঁন এর কোন পূণাঙ্গঁ জীবনী কিংবা স্বাধীনতা যুদ্ধের খন্ডিত ইতিহাসও নয়, এই গ্রহ্ণ ইতিহাসের তথ্য উপাত্ত হিসাবে আগামী দিনের গবেষকদের কাজে লাগবে- যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কবি আল মাহমুদ।
আমাদের এই দেশ-উপমহাদেশে ও রাজনৈতিক নেতাদের আত্ব জীবনী খুব একটা নেই। রাজনৈতিক নেতা, রাষ্ট্র নায়কদের আত্বজীবনী থেকে দেশও জাতি শিক্ষনীয় অনেক কিছু জানেন, উপকৃত অনুপ্রাণিত হন। দেশ-উপমহাদেশীয় নেতাদের আত্বজীবনীর মধ্যে পন্ডিত জাওহর লাল নেহেরুর-লেটারস টু ইন্দিরা কমরেড মোজাফর আহমেদের আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টি পাকিস্তানী প্রখ্যাত রাজনীতিবিদও সু-লেখক আবুল মনসুর আহমদ এর আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, পাক ফৌজি প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আয়ূব খাঁনের-ফ্রেন্ডস-নট মাস্টার, ত্রৈলক্ষ নাথ চক্রবর্তীর জেলে ত্রিশ বৎসর ও পাক ভারতের স্বাীধনতা সংগ্রাম-গ্রহ্ণ সমূহে সময়ের ছবি পাওয়া যায়। অবশ্য-ফ্রেন্ডস-নট মাষ্টার এর ব্যতিক্রম। এখানে পাক ফৌজি প্রেসিডেন্ট তার পক্ষের সাফাই গেয়েছেন। ভাষা সৈনিক, বিশ্ব ব্যাংক এর সাবেক সভাপতি মরহুম অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.সাইফুর রহমানের আত্বজীবনী-কিছু কথা-কিছু স্মৃতি একটি উল্লেখযোগ্য আত্বজীবনী। তাঁর সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির প্রভাবশালী ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিও ব্যক্তিত্ব একজন পেশাদার পরিপক্ক লেখকের মত দেশীয় রাজনীতি অর্থনীতির বিষদ ও ব্যাপক বর্ণনা দিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আত্ব জীবনী ও রাজনৈতিক গ্রহ্ণ সমূহের মধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ট সংযোজন মহান স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “অসমাপ্ত আত্বজীবনী ও কারাগারের রোজ নামচা” রাজনীতি সচেতন পাঠক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, জাতীয় বুদ্ধিজীবী লেখক গবেষকগণ গ্রহ্ণদ্বয়ের ব্যাপক পঠন-পাঠন-পর্য্যালোচনা ও গবেষনায় নিয়োজিত আছেন।
আমাদের জাতীয় জীবনের হাজার বছরের ইতিহাসে মহান মুক্তিযুদ্ধ একটি গৌরবময় অধ্যায়। স্বাধীনতা সংগ্রামী সিরাজুল আলম খাঁনের আধা আত্বজৈবনিক-পূর্ন রাজনৈতিক মহাকাব্য একটি সময়োপযোগী প্রকাশনা।
এই মহাকাব্যের মান দন্ডে মূল্যায়ন এর ক্ষমতা আমার নাই। সর্বকালের সেরা দাশনিক ভলটেয়ার সেই কবে বলেছিলেন “আমি আপনার মতো সঙ্গেঁ একমত না হতে পারি, কিন্তু আপনার মত প্রকাশের জন্য আমার জানটা দিতে পারি”। দূর্ভাগ্য জনক ভাবে আমাদের দেশও সমাজে পরমতের প্রতি সহিষ্ণুতার চাইতে অসহিষ্ণুতার হারই অধিক। এখানে পর জনের মত প্রকাশে জান দেয়ার চাইতে জান নেয়ার নিয়মই প্রচলিত। আমি কোন দার্শনিক নই। ইন্টার মিডিয়েটে ডক্টর এম.এন. হুদার ডিডাকটিভ লজিক পড়তে-বুঝতে মাথা কুটেছি- ফল পাইন। দার্শনিকেরা ইতিবাচক ভাবে আধা গ্লাশ পানির গ্লাশকে অর্ধখালি না বলে হাফ গ্লাশ অব ওয়াটার বলেন। মর্মার্থ গ্লাশটি পূর্ন না হলেও শূন্য নয়।
মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দীন পেয়ারার অনবদ্য অবদান-নান্দনিক প্রয়াস-আমি সিরাজুল আলম খাঁন একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য” এই রাজনৈতিক মহাকাব্যের বহুল প্রচার, অনুলিখক এর সু-স্বাস্থ্য এবং আমাদের প্রজন্মের দীক্ষা গুরু স্বাধীনতা সংগ্রামী তাত্বিক সিরাজুল আলম খাঁন এর সুস্বাস্থ্য দীর্ঘায়ূ এবং সার্বিক কল্যান কামনা করি।
(লেখক: ষাটের দশকের ছাত্রলীগ নেতা নিউক্লিয়াস কর্মি ও সাংবাদিক। মুক্তিযোদ্ধা। সিনিয়র এডভোকেট হাইকোর্ট। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাব। কলামিষ্ট।)
মন্তব্য করুন