আল্লাহর সন্তুুষ্টির জন্যই হোক কোরবানি
এহসান বিন মুজাহির॥ কোরবানি শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ হলো নৈকট্য, সান্নিধ্য, আত্মত্যাগ, জবেহ, রক্তপাত ইত্যাদি। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় কোরবানি বলা হয়, মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও সন্তুুষ লাভের আশায় নির্ধারিত তারিখের মধ্যে হালাল কোন পশু আল্লাহর নামে জবেহ করা। কোরবানি নতুন কোনো প্রথা নয়, বরং এটা আদিকাল থেকে চলে আসছে। হজরত আদম (আ.) এর যুগে কোরবানির সুচনা হয়েছিল। আদম (আ.) এর সন্তান হাবিল কাবিলের মধ্যে বিবাহ-শাদী নিয়ে যখন মতানৈক্য দেখা দিল তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ইখলাসের সঙ্গে হালাল পশু কোরবানি করার নির্দেশ দিলেন। তিনি বললেন তোমাদের মধ্যে যার কোরবানি আমার নিকট কবুল হবে তার নিকট মেয়ে বিবাহ দেয়া হবে। হাবিল এবং কাবিল কোরবানির নির্দেশ পেয়ে কোরবানি করল। হাবিলের কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হল, কাবিলের হলো না। কাবিলের কোরবানি কবুল না হওয়ার কারণে সে ক্ষিপ্ত হয়ে হাবিলকে বলল আমি তোমাকে হত্যা করে ফেলব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-‘হে নবী আপনি তাদের নিকট যথাযথভাবে আদম (আ.) এর পুত্রদ্বয়ের কথা আলোচনা করেন, যখন তারা মহান রবের নিকট তাদের কোরবানিকে পেশ করল, তখন একজনের কবুল হল অন্যজনের হলো না। যার কোরবানি কবুল হলো না সে ক্ষিপ্ত হয়ে অন্যজনকে বলল আমি তোমাকে খুন তথা হত্যা করে ফেলবো। পালনকর্তা একমাত্র মুত্তাকীদের কুরবানি কবুল করেন। (সূরা মায়িদা : ২৭)।
কোরবানি গুরুত্বপুর্ণ একটি ইবাদত। সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর কোরবানি ওয়াজিব। কোরআনর কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে অনেক আয়াত ও হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে। কোরবানির গুরুত্ব প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিন কুরআন কারিমে এরশাদ করেন-‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানি নির্ধারণ করেছি যাতে তাঁরা হালাল পশু জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারন করে। (সূরা হজ : ৩৪)। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে আর বলেছেন-‘নিশ্চই আমার নিকট কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত কিছুই কবুল হয় না, তবে আমার নিকট পৌছে একমাত্র তাকওয়া। (সূরা হজ : ৩৭)। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন,‘কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই কোরবানিদাতার কোরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায় এবং তাঁর অতীতের সকল গুনাহ মোচন করে দেয়া হয়। (তিরমিজি ; ১/১৮০)। মহানবী (সা.) আরও এরশাদ করেন, ‘তোমরা মোটা তাজা পশু দেখে কোরবানি কর, কারণ এ পশুই পুলসিরাতের বাহক হবে। (মুসলিম : ২৬৩৯)। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল (সা.) পবিত্র মদিনায় দশ বৎসর জীবন-যাপন করেছেন প্রত্যেক বছরই তিনি পশু কোরবানি করেছেন। (তিরমিজি : ১/১৮৯)। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘কোরবানির দিন আল্লাহর নিকট কোরবানি অপেক্ষা উত্তম কোন আমল আর নেই। (মেশকাত : ১৯৩৭)। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানির দিন কোরবানি করে না সে যেন ঈদুল আজহার দিন ঈদগাহের ময়দানের কাছে না যায়। (ইবনে মাজাহ : ১৭২১)। একদিন হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) (রাসূলুল্লাহর সা.) নিকট জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসুল! কোরবানি কি? তখন উত্তরে রাসুল (সা.) এরশাদ করলেন কোরবানি হচ্ছে ‘তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.) এর ‘জীবনাদর্শ’, সাহাবি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন কোরবানির ফজিলত কি? রাসুল (সা.)Ñবললেন-পশুর পশমের পরিবর্তে একেকটি করে নেকি দেয়া হয়’। (মেশকাত : ১/১২৯)।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মন্তব্য করুন