আসাম থেকে মৌলভীবাজার হয়ে ত্রিপুরায় যাবে জ্বালানি তৈল : ১৪০ কিলোমিটারে টনপ্রতি মাত্র ১৪২.৮০ টাকা বাংলাদেশ পাবে

August 22, 2016,

স্টাফ রিপোর্টার॥ আসাম থেকে মেঘালয় হয়ে ত্রিপুরায় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রতিদিন (দিনের বেলা) সর্বোচ্চ ৮০টি লরিতে জ্বালানি পরিবহন করতে পারবে ভারত। সমান সংখ্যক খালি লরি একই দিনে নির্ধারিত সড়ক ব্যবহার করে আসামে ফেরত যেতে পারবে।
ভারী বৃষ্টি, বন্যা ও ভূমিধসে ভারতের আসাম থেকে ত্রিপুরা সড়ক (এনএইচ ৪৪) যোগাযোগ অনুপযোগী হয়ে পড়ায় মানবিক কারণে প্রতিবেশী দেশের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে জ্বালানি পরিবহনে (ট্রানশিপমেন্ট) বাংলাদেশ নিজ ভূখন্ড ব্যবহারের সাময়িক ওই সুযোগ দিচ্ছে। দিল্লির অনুরোধে সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার ১৮ আগষ্ট ঢাকায় এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে  বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এবং ভারতের পক্ষে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সমঝোতা স্মারকে সই করেন। সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক মতে, মেঘালয়ের ডাউকি (তামাবিল-জাফলং) সীমান্ত চেকপোস্ট দিয়ে ডিজেল, কেরোসিন, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসসহ জ্বালানিবাহী ভারতীয় লরিগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। সিলেট শহরের পূর্ব প্রান্তের শাহপরান বাইপাস দিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ-রাজনগর সড়ক ধরে মৌলভীবাজার শহরের চৌমুহনা হয়ে লরিগুলো শমসেরনগর চাতলাপুর (কৈলাশর) সীমান্ত চেকপোস্ট দিয়ে ত্রিপুরায় পৌঁছাবে। ট্রানশিপমেন্টের জন্য নির্ধারিত প্রায় ১৪০ কিলোমিটার ওই সড়ক ব্যবহারে কিলোমিটার প্রতি/টন ১ টাকা ২ পয়সা হারে মাশুল দেবে ভারত। সই হওয়া সমঝোতার প্রাথমিক মেয়াদ চলতি বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধার্য করা হয়েছে। এটি বাড়ানোর প্রয়োজন হলে নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক সপ্তাহ আগে এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ফের আলোচনা হবে, উভয়ে সম্মত হলে মেয়াদ বাড়াতে কোনো বাধা থাকবে না। খুব শিগগিরই জ্বালানি পরিবহন শুর” হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন। তামাবিল সীমান্ত চেকপোস্ট থেকে চাতলাপুর সীমান্ত চেকপোস্ট পর্যন্ত সড়কের অবকাঠামোর বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত বলেন, জ্বালানি পরিবহনের জন্য নির্ধারিত ওই সড়কের বেশির ভাগই হাইওয়ের মধ্যে পড়েছে। সেখানে লরি বা ভারী যানচলাচলে কোনো অসুবিধা নেই। তবে মৌলভীবাজার-চৌমুহনা টু চাতলাপুর (শসসেরনগর) ৩৪ কিলোমিটার সড়ক হাইওয়ে না হলেও অবকাঠামো মজবুত রয়েছে। ওই সড়ক ব্যবহার করে চাতলাপুর চেকপোস্ট দিয়ে প্রাণসহ বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্য ভারতে এক্সপোর্ট করে। তাছাড়া, তেলের লরিতে পাথরের মতো ওজন হয় না। এরপরও লরি চলাচল শুরু পর প্রয়োজন হলে সড়ক সংস্কার করা হবে বলে জানান তিনি।
ভারতীয় জ্বালানি পরিবহনে ব্যবহৃত লরির ড্রাইভার ও সহযোগীরা পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে এবং এখানে অবস্থানকালে তারা দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন।  যাত্রার আগেই তাদের প্রত্যেকের পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ইন্স্যুরেন্সের কাগজ, র”ট পারমিট, গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজ জমা দিতে হবে। যেহেতু লরিতে জ্বালানি সরবরাহ করা হবে, ফলে এখানে বাংলাদেশের এক্সপ্লসিভ আইন প্রযোজ্য হবে। যাত্রা কিংবা ফেরার পথে লরি সংশ্লিষ্টরা সর্বোচ্চ দু’বার যে কোনো জায়গায় বিশ্রাম নিতে পারবেন। এছাড়া, জর”রি প্রয়োজনে ওয়ার্কশপে গাড়ি মেরামত করতেও পারবে। উল্লেখ্য, এর আগে কলকাতা থেকে ত্রিপুরায় ৩৫ হাজার টন চাল পাঠানোর জন্য মানবিক কারণে বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। নেপালে ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশকেও ভূখন্ড ব্যবহার করে ত্রাণ সাহায্য পাঠানোর সুযোগ দিয়েছিল ভারত।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com