(ভিডিওসহ) “আসো বধ্যভুমিকে জানি” কমলগঞ্জে দেওড়াছড়া বধ্যভূমিতে শিশু কিশোরদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক

April 21, 2018,

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবহনকরা অনেকগুলো বধ্যভূমি। যার অধিকাংশই রয়েছে সংরক্ষণের বাহিরে। অন্যদিকে যে কয়টাই সংরক্ষণ হয়েছে সেগুলোও রয়েছে অযতœ আর অবহেলায়। এইসব বধ্যভূমির ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং তার ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানান দিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের দেওড়াছড়া বধ্যভুমিতে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক সাংবাদিক বিকুল চক্রবর্তী শিশু কিশোরদের নিয়ে আয়োজন করেন “আসো বধ্যভুমিকে জানি” শীর্ষক অবহিতকরণ বৈঠক। 

২০ এপ্রিল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় দেওড়াছড়া চা বাগানের ভিতরে সংরক্ষতি বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভে বধ্যভূমি এলাকার আশপাশের নতুন প্রজন্ম শিশু কিশোরদের নিয়ে  আয়োজিত এ বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বধ্যভুমি কি এবং এই বধ্যভূমির ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেন মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক সাংবাদিক বিকুল চক্রবর্তী, সাংবাদিক সঞ্জয় কুমার দে ও রাসেল আহমদ প্রমূখ।

উল্লেখ্য, সাংবাদিক বিকুল চক্রবর্তী এ কর্মসূচীর পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করেন মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র ও স্মারক প্রদর্শণী।

বিকুল চক্রবর্তী জানান, যত সময় যাচ্ছে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস, গণহত্যা এসব সামনে আসুক একটা শ্রেণী এখনও তা পছন্দ করেনা। ফলে স্বাধীনতার ৪৭ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতিময় স্থান ও ইতিহাস এখনও সংরক্ষণ সম্ভব হয়নি। আমাদের প্রবীণ মানুুষেরা ও মুক্তিযোদ্ধারা জীবিত থাকাবস্থায়ই এই সংরক্ষণ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। তাই যার যার অবস্থান থেকেই এখনই তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। এই উদ্যোগীদের জানান দিতেই তিনি এ কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে জানান।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল দেওড়াছড়া বাগানে প্রবেশ করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সদস্যরা। সে সময় স্থানীয় মুসলিম লীগ নেতার শাসানী আর বাগানে মিলিটারী জিপের প্রবেশে অসহায় সাধারন চা শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিলেন। অনেকেই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেন। বাগানে ঢুকেই পাকিস্তানী সেনা সদস্যরা অসহায় গরীব চা শ্রমিকদেরকে রেশন দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সবাইকে জমা করে। পরে সাথে করে নিয়ে আসা একটি বেসামরিক বাসে শ্রমিকদের উঠতে নির্দেশ দেয়া হয়। প্রায় ৭০ জন শ্রমিককে বাসে ভর্তি করে বাস রওয়ানা দেয় মৌলভীবাজার শহরের দিকে। তবে একটু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরই বাস একটি খাদে পড়ে যায়। শ্রমিকদের তখন বাধ্য করা হয় বাসটি টেনে তুলতে। ঘটনাস্থলেই আরেক পাকিস্তানী মেজররের  নির্দেশে সবাইকে একটি নালার পাশে নিয়ে বিবস্ত্র করে তাদের পরিধেয় বস্ত্র দিয়ে হাত পা বেঁধে ফেলা হয়। তারপর শুরু করে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ। মোহিনী গোয়ালা, রবি গোয়ালা, মহেশ কানু, নারাইল কুর্মী সহ ১২ জন সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। আহত অবস্থায় ভারতে গিয়ে এই ১২ জন চিকিৎসা করান। তাদের মাধ্যমেই জানা যায় এই নির্মম হত্যকান্ডের খবর।

আর এদের মধ্যে ত্রিশ লক্ষ শহীদেও সাথে যারা খাতায় নাম লিখিয়েছেন তারা হলেন-উমেশ সবর, হেমলাল কর্মকার, লক্ষনমূড়া, বিজয় ভূমিক, আকুল রায় ঘাটুয়ার, মাহীলাল রায় ঘাটুয়ার, বিনোদ নায়েক, সুনারাম গোয়ালা, প্রহল্লাদ নায়েক, মংরু বড়াইক, বিশ্বনাথ ভুঁইয়া, শাহজাহান ভুইয়া, ভাদো ভুইয়া, আগুন ভুইয়া, জহন গোয়ালাসহ আরো অনেকেই। স্থানীয় দালালরা সক্রিয় ছিল এসব হত্যাকান্ডে। তারাই পরে শ্রমিক ঝুপড়ি (কাঁচা বসগ ঘরে) গুলোতে লুটপাট চালায়। নারী নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে এই বাগানে।

এই স্থানটি সরকার কিংবা চা বাগান কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘদিনেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় স্থানটি বিরানভুমিতে পরিণত হয়ছিল। এনিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় অসংখ্য লেখালেখি হওয়ার পর অবশেষে ২০১৪ সালে ডিসেম্বর মাসে ১নং রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমদ বদরুলের হস্তক্ষেপে ও দেওড়াছড়া চা বাগান কর্তৃপক্ষের সহযোগীতায় দেওড়াছড়া চা বাগানের বধ্যভূমির স্থান চিহ্নিত করে চা শ্রমিকদের গৌরবগাথা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে।

 

 

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com