ইউপি নির্বাচন-২০১৬ (৫ম দফা) জমে উঠেছে শেষ মুহুর্ত্তের প্রচারনা কমলগঞ্জে ৩৭ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী সহ ৪৫২ জন প্রার্থীর প্রচারনা চলছে জোরেশোরে
প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ আগামী ২৮ মে ৫ম দফায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। বাঘা বাঘা প্রার্থীদের এ ভোটযুদ্ধে নিস্তব্ধ সাধারণ ভোটারগণ। ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই বাড়ছে প্রচারের উত্তাপ। মাঠে-ঘাটে, হোটেল-রেস্তোরাঁয় থেকে পথের ধারের চায়ের দোকানেও প্রার্থীদের ভাল-মন্দের দিক নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লে¬ষণ। ভোটাররা নিজের পছন্দের প্রার্থী বেছে নিলেও মুখ খুলছেন না। নির্বাচনে সব ইউনিয়নেই পাল্ল¬া দিয়ে চলছে আচরন বিধি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা। বেশ ক’টি ইউনিয়নে চলছে কালো টাকার ছড়াছড়ি। প্রার্থীরা নানা কৌশলে নিজেদের যোগ্যতা তুলে ধরার পাশাপাশি উন্নয়নে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। আরামের ঘুম হারাম করে কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চালাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণা। কমলগঞ্জের ৯ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদন্ধিতা করছেন ৩৭ প্রার্থী। ৮১টি ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩২৮ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৮৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। কমলগঞ্জ উপজেলায় ৯টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯৭০ জন। রিটার্নিং অফিসার ৫ জন, মোট ভোটকেন্দ্র ৯৪টি, মোট কক্ষ (বুথ) ৪২৫টি। মোট ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ১৩৬৯ জন।
১ নং রহিমপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপির ছোট ভাই কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ইফতেখার আহমেদ বদরুল নৌকা) এর সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দিতায় রয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাজিম আহমদ তরফদার (ধানের শীষ)। এই ইউনিয়নে মাত্র দুইজন প্রার্থীই প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। উভয় প্রার্থীর সুর সমান তালে চলছে। গোটা কমলগঞ্জ তথা মৌলভীবাজার জেলার মানুষজন এই ইউনিয়নের দিকে চেয়ে আছেন। উভয় প্রার্থীরা দেওরাছড়া চা বাগান, মিরতিংগা চাবাগান ও কালেঙ্গায় ভোট সেন্টারের দিকে নজর দিচ্ছেন। কারণ তিনটি সেন্টারেই হিসাব নিকাশে বোঝা যাবে কে হচ্ছেন চেয়ারম্যান ? সাধারণ মানুষের ধারনা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
২ নং পতনউষার ইউনিয়নে মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। তবে মুল লড়াই হবে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার তওফিক আহমদ বাবু (নৌকা) ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অলি আহমদ খান (ধানের শীষ) এর মধ্যে। এছাড়া জাতীয় পার্টির মনোনীত জরিফ হোসেন জাহিদ (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুর রহমান বাদশা মোটর সাইকেল), বদরুজ্জামান চৌধুরী (চশমা), শেখ আসাদুজ্জামান চৌধুরী (আনারস) ও আজিজ চৌধুরী (ঘোড়া)। এই ইউনিয়নে লাঘাটা নদীর এপার ওপার নিয়ে কিছু আঞ্চলিক ভোট ফ্যাক্টর হলেও তৃতীয় বারের মতো প্রতিদ্বন্দিতাকারী সর্বমহলের কাছে সুপরিচিত ইঞ্জিনিয়ার তওফিক আহমদ বাবুর পাল্লা ভারী রয়েছে বলে ভোটারদের অভিমত।
৩ নং মুন্সীবাজার ইউনিয়নে মোট ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালিব তরফদার (নৌকা) এর সাথে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সফিকুর রহমান চৌধুরী (ধানের শীষ) এর সঙ্গে লড়াই হবে। অন্য প্রার্থীরা হলেন বিদ্রোহী আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজেদা কোরেশী (আনারস) ও বিদ্রোহী বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: রফিকুল হক (মোটর সাইকেল)। এখানে লড়াই হবে দ্বিমুখী। আব্দুল মোতালিব তরফদারের সুর অনেক এগিয়ে রয়েছে তবে সফিকুর রহমান চৌধুরীর ভোট নিরব ভূমিকা পালন করছে।
৪ নং শমশেরনগর ইউনিয়নে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নির্ভর করছে চা শ্রমিকদের ওপর। এখানে মূল প্রতিদ্বন্দিতা হবে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জুয়েল আহমদ (নৌকা) এর সাথে বিদ্রোহী আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল গফুর (আনারস)। অন্য প্রার্থীরা হলেন- বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মোহিত (ধানের শীষ), বিদ্রোহী বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: আহমদুর রহমান (মোটর সাইকেল) ও বিদ্রোহী বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক শামীম (চশমা)। এ ইউনিয়নের তিনটি চা বাগানের ভোটে প্রত্যেকেই ভাগ বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এখানে দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা থাকলেও বিদ্রোহী আওয়ামীলীগের আব্দুল গফুরের সুর বেশি রয়েছে।
৫ নং কমলগঞ্জ ইউনিয়নে লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে। এখানে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করলেও মূলত লড়াই হবে বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি মনোনীত প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া শফি (ধানের শীষ) এর সাথে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী মো. আব্দুল হান্নান (নৌকা) এর প্রতিদ্বন্দিতা হবে। অন্য প্রার্থীরা হলেন-জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী আব্দুল আজিজ (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী সফিকুল ইসলাম সফি (আনারস) ও বিদ্রোহী আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী রহিম হোসেন (মোটর সাইকেল)। বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া শফির সুর বেশি রয়েছে বলে মাঠ পর্যায়ে জানা যায়।
৬ নং আলীনগর ইউনিয়নে মোট ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ফজলুল হক হক বাদশা (নৌকা) এর সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব সম্পাদক সাংবাদিক শাহীন মিয়া (আনারস) ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট আব্দুল আহাদ (ধানের শীষ) এর লড়াই হবে। এছাড়া প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী আব্দুস সালাম (লাঙ্গল)। এ ইউনিয়নে এবার পরিবর্তনের সুর উঠেছে। এবার প্রথম বারের মতো উদীয়মান সাংবাদিক শাহীন মিয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনের সুর ওঠে আলীনগর ইউনিয়ন জুড়ে।
৭ নং আদমপুর ইউনিয়নে মোট ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতায় রয়েছেন। তবে মুল প্রতিদ্বন্দিতা হবে বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী সাব্বির আহমদ ভূঁইয়া (নৌকা) এর সাথে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদাল হোসেন (ধানের শীষ) এর সাথে। অন্য প্রার্থীরা হলেন- বিদ্রোহী আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজির বক্স (ঘোড়া) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হাই (আনারস)। এ ইউনিয়নে মূল লড়াই হবে আবদাল হোসেন ও সাব্বির আহমদ ভূঁইয়ার মধ্যে।
৮ নং মাধবপুর ইউনিয়নে মোট ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। চা বাগান অধ্যুষিত এ ইউনিয়নে মূলত লড়াই হবে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আসিদ আলী (নৌকা) এর সাথে বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা পুষ্প কুমার কানু (সিএনজি) এর সাথে। কৌশলগত কারণে বর্তমান চেয়ারম্যান চা শ্রমিক সন্তান পুষ্প কুমার কানু এবার বিএনপির মনোনয়ন নেননি। এখানে অন্য প্রার্থীরা হলেন- বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এম এম হারুনুর রশীদ (ধানের শীষ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কমলা বাবু সিংহ (আনারস)। এখানে প্রার্থীদের ভাল-মন্দ সবকিছুই ভোটাররা ওয়াকিবহাল। তাই নেই কোন নির্বাচনী উত্তাপ। তবে ভয় কাজ করছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। চা বাগান ও মণিপুরী অধ্যুষিত থাকায় উভয় প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে না। ভোটারা জানান, মন্তব্য করবো না। সময় মত জেনে নেবেন। তবে বর্তমান চেয়ারম্যানের অবস্থান ভালো রয়েছে বলে মাঠ পর্যায়ে বোঝা যাচ্ছে।
৯ নং ইসলামপুর হচ্ছে কমলগঞ্জ উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন। সবুজ আর পাহাড় ঘেরা চা বাগান অধ্যুষিত এ ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দিতায় রয়েছেন আপন দুই ভাই। বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মো. সুলেমান মিয়া (নৌকা) এর সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দিতা হবে বড় ভাই স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হান্নান (আনারস) এর মধ্যে। এ অঞ্চলে কার অবস্থান কেমন হবে সাধারণ ভোটারাই বলতে অক্ষম। সমান তালে চলছে প্রচারণা। ভাই ভাই যুদ্ধে কে জয়ী হবে, কে হবে এই ইউনিয়নের পিতা দেখার বিষয়। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা ?
মন্তব্য করুন