ইসলাম ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে অন্ধত্ব ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সমাজ, সাংবিধানিক অধিকার এবং আমাদের নৈতিকতাবোধ
সৈয়দ খলিলুল্লাহ ছালিক জুনেদ॥ মহান স্রষ্টা, আল্লাহ সুবহানল্লাহূতালা এরশাদ করেন, “যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর তোমাকে সুঠাম করেছেন অতঃপর সুসামঞ্জস্য করেছেন, যে আকৃতিতেই চেয়েছেন, তোমাকে গঠন করেছেন”। (পারা-৩০ সুরা ৮২ ইনফিতর, আয়াত-৭ ও ৮) এবং অনুরূপভাবে মানুষ সৃষ্টি ও জন্ম প্রক্রিয়া এবং তাবৎ জীব জগতের মধ্যে মানুষ্য আকৃতির উৎকৃষ্ঠতা সম্বন্ধে পবিত্র কোরআন মজিদে পারা- ৩০, সুরা ৮৭-আলা, আয়াত ১ ও ২, সুরা ৮০-আব্বাস, পারা -১৯, আয়াত-২৯, ৭৭, মুরসালাত, আয়াত-২০, ৭৫ ক্বিয়ামাত, আয়াত-৩৮, ৬৭, তাগ¦াবুন, আয়াত-৩, পারা-২৪, ৪০, মুমীন, আয়াত-৭২, পারা-২১, ৩২, সাজদাহ-৭-৯, পারা-১৭, ২২, হাজ¦ পারা ৩, ইমরান-৬, বিস্তারিতভাবে উল্লেখিত হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতো পিতা মাতার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা যৌন অজ্ঞানতা ও যথেচ্ছাচার, গর্ভ ও প্রসূতির অসাবধানতা ও সুষম খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে গাফলতি ইত্যাদি কারণে অথবা প্রকৃতিগত বিপর্যয়ের দরুণ অনেক সময় মানুষের জন্মগতভাবে অথবা জন্ম পরবর্তীতে অঙ্গজনিত ত্রুটি বা মানসিক অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়। সার্বিক সুস্থতা সম্পন্ন একজন মানুষের প্রতিবন্ধীদের প্রতি কি করণীয় অথবা নৈতিকতাবোধ আদৌ আমাদের স্পর্শ করার প্রশ্ন জড়িত আছে কি? এ প্রসঙ্গে দয়াময় আল্লাহপাক এরশাদ করেন আমি আপনাকে নবী (স.) সৃষ্টি জগতের রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি, (পারা-১৭, ২১) আম্বিয়া, আয়াত-১০৭) অনুরূপভাবে, “কিন্তু আপনার প্রতিপালকের রহমত। নিশ্চয়ই আপনার উপর তার মহা অনুগ্রহ রয়েছে” (পারা-১৫, ১৭নং ছুরা বনী ইসরাইলর আয়াত নং-৮৭)। হাদিসে এসেছে প্রতিবেশীর প্রতি যে দায়িত্বশীল, সেবা করে সেই প্রকৃত মুসলমান। রাসূল করীম (স.) এর প্রতি সত্যায়নকারী প্রত্যেক নবী, {(ক) পারা-৩, ৩-আল ইমরান, আয়াত নং-৮১ এবং (খ) পারা-২১, আহযাব, আয়াত নং-৭)} এবং ফিতরত শ্রেণীভূক্তসহ তাদের উত্তরসূরী নায়বে রাসূল, মহামানব, ওলি-দরবেশ, সূফিকুলের সহজাত চারিত্রিক মাধুর্যই হল মজুরীবিহীনভাবে সৃষ্টির প্রতি, মানব সমাজের প্রতি নিবেদিত বৈশিষ্ট্য (০১, ০২-বাকারা-৪১-১২,১১-হুদ-৫১, ১৩, ১২-ইউসুফ-১০৪, ১৮, ২৩-মু’মিনুন-৭২, ১৯, ২৬-শু’আরা ১০৭-১১০, ১২৫-১২৭, ১৪৩-১৪৫, ১৬২-১৬৮, ১৭৮-১৮০, ২০, ২৮-কাছাছ-২৫, ২৩, ৩৮ সোয়াদ-৮৬, ২৪, ৩৯-যুমার-৩৪)। আল্লাহপাক এরশাদ করেন, “তারা আপনাকে নবী (স.) জিজ্ঞাসা করেন কিভাবে ব্যয় করবেন, আপনি বলুন তারা যেন তাদের ধন-সম্পত্তিসমূহ মাতা-পিতা, নিকট আত্মীয়-স্বজন, এতিম ও অসহায় এবং মুসাফিরদের জন্য ব্যয় করেন। আর তারা যে সমস্ত ভাল কাজ করেন নিশ্চয়ই আল্লাহ সে সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন” (পারা-২, বাকারা, আয়াত-২১৫)। এখানে অসহায় বলতে অবশ্যই প্রতিবন্ধীদেরও বোঝানো হয়েছে। তদরূপভাবে বাকারায়, পারা-১, আয়াত-৮০ এবং পারা-২, আয়াত-১৭৭, পারা-৪, নিসা-৮, পারা-১০-৮, আনফল-৪১, পারা-১৪, ১৬ নাহুল-৯০, পারা ১৫,১৭ বনি ইসরাইল-২৬, পারা-২১, রুম-৩৮ পারা ২৮, ২১, রুম-৩৮, পারা-২৮, ২৯, হাশর-৭, পবিত্র কোরআন মজিদে এমনি ধরণের অসংখ্য স্থানে অসহায় তথা প্রতিবন্ধী সমাজের প্রতি সাহাযার্থ্যে এগিয়ে আসার তাগিদা দেয়া হয়েছে, যাতে করে সামগ্রিক মানবতা সমুন্নত হয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তথা অন্ধ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী বা পংগুরা সাধারণ (সক্ষম) লোকদের সাথে সর্বদা সমমর্যাদায় এবং সংকুচবিহীনভাবে খাওয়া দাওয়া এবং চলা ফেরা করতে প্ররোচিত করে পবিত্র কোরআন মজিদে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে “না অন্ধের জন্য বাঁধা বিপত্তি আছে এবং না খোড়ার জন্য বাঁধা বিপত্তি আছে। না রুগ্নের জন্য বাঁধা বিপত্তি আছে। তোমাদের নিজেদের জন্য দোষ নেই যে, তোমরা আহার করবে তোমাদের গৃহে অথবা..” (পারা-১৮, ২৪ নূর-৬১ প্রারম্ভ)। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বা অন্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে কতুম (রা.) সম্বন্ধে পবিত্র কোরআন মজিদে এরশাদ হয়েছে, “(তিনি) ভ্রুকুণ্ঠিত করলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন এ কারণে যে, তাঁর নিকট সেই অন্ধ ব্যক্তি উপস্থিত হয়েছেন এবং আপনি কি জানেন? হয়ত সে পবিত্র হতো কিংবা সে উপদেশ গ্রহণ করতো অতঃপর তাকে উপদেশ উপকৃত করতো, ঐ ব্যক্তি যে বে-পরোয়া হয়ে যায়, আপনি তারই পিছনে লেগে আছেন। এবং সে পবিত্র না হলে তাতে আপনার কোন ক্ষতি নেই। এবং ঐ ব্যক্তি যে আপনার দরবারে দৌঁড়ে এসেছে এবং সে ভয় করছে, অতঃপর আপনি তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে মনোনিবেশ করেছেন; এরূপ হতে পারে না। এটাতো বুঝানো (বা উপদেশ দেয়া) মাত্র…” আয়াত-১-১০, পারা-৩০, সুরা-৮০, আব্বাস নাযিল হয়েছে শুধুমাত্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অন্ধ সাহাবী (রা.) আন্তরিকতা সম্বন্ধে গুরুত্ব দিয়ে এবং তদস্থলে মক্কার বিত্তবান কাফির সর্দারদের যারা কখনও হেদায়েত হবে না বরং তাদের দ্বারা মানবতা কখনও উপকৃততো হবেই না বরং সর্বদা ক্ষতিগ্রস্থই হবে তাদের প্রতি অবজ্ঞাক্রমে গুরুত্ব না দিয়ে। দৃষ্টি, শারীরিক প্রতিবন্ধী অসহায়দের বিষয়ে এত আন্তরিক অনুভূতি ও হৃদয়তার সাথে সূক্ষ¥তি সূক্ষ¥ভাবে বিবেক জাগ্রত করতে অন্য কোন ধর্মই এত বাস্তবমুখী, পরিপূর্ণভাবে চর্চা করতে সক্ষম হয়নি শুধুমাত্র ইসলাম ধর্ম ছাড়া। সায়্যিদ আমীর আলীর দি স্পিরিট অব ইসলাম গ্রন্থে ১৫৯ নং পাতায় উল্লেখিত হয়েছে, ‘রসূল পাক (স.) জীবনে শুধুমাত্র একবারই অতি সাধারণ অন্ধ সত্য-সন্ধিৎসু সাহাবী উক্ত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) প্রতি ক্ষণিক অমনোযোগী হয়েছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে সর্বদা রসূল (স.) অনুতাপ সহকারে এই ঘটনার কথা উল্লেখ করতেন। আর আল্লাহপাক অনুরূপ ক্ষেত্রে সক্ষমদের অক্ষমদের প্রতি রুঢ়, কর্কশ ব্যবহার কখনও অনুমোদন করেন না বলে ঘোষণা করতেন। আর যখনই উক্ত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী (রা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হত হযরত রসূল (সা.) তার দিকে এগিয়ে গিয়ে সম্মান দেখাতেন এবং মানবতার মূর্ত প্রতীক সদাশয় মহান রসূল (সা.) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাকতুম (রা.) কে দুইবার মদীনা মনওয়ারার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
পৃথিবীতে নানান শ্রেণীর মানুষ রয়েছে এবং বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে প্রতিবন্ধীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জাতিসংঘ, বিশ^সংস্থা, ইউ,এন,ডি,পি ও ইউনিসেফ-এর রির্পোট অনুযায়ী বর্তমান বিশে^ এক দশমাংশ অর্থাৎ ৬০ কোটি লোক প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠি এবং তৃতীয় বিশে^ এই হারও প্রতিবন্ধীদের চাপ অপেক্ষাকৃতভাবে একটু বেশী এবং বাংলাদেশ প্রায় এক কোটি বিশ লক্ষ লোক বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধীত্বে আক্রান্ত। স্থানীয়, জাতীয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিবন্ধী বিষয়ে কার্যক্রম বহুলভাবে গ্রহণ ও প্রচার করার পরও সমাজের সচেতন জনসাধারণের বিরাট একটি অংশ এখনও প্রতিবন্ধী শব্দ ও প্রতিবন্ধীদের সম্পর্কে অজ্ঞাত রয়েছেন। এই বিশাল প্রতিবন্ধী সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এরা সর্বদা সমাজের বহুমাত্রিক দিক থেকে বিভিন্নভাবে ভিন্ন ভিন্ন আকার, প্রকার ও ধরণের সমস্যার সম্মুখীন প্রতিনিয়ত হতে হচ্ছে। দেশের জনসংখ্যার এক দশমাংশ এই বিশাল অংশটিকে জাতীয় উৎপাদনমুখী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া অবকাঠামোর অংশগ্রহণ থেকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে এবং সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। তদুপরি অবহেলিত এই জনগোষ্ঠির মেধা, মননশীলতা প্রতিভা, জ্ঞান, বিজ্ঞতা ও সামর্থ্য এবং দক্ষতা থাকতে পারে যা আমাদের সার্বজনীন সহনশীলতায় অতি সহজেই দেশকে বিরাট উৎপাদনশীলতায় রূপান্তর করতে পারে। এদেশের একটি বিশাল অংশ এই প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠিকে জাতীয় উন্নয়ন অবকাঠামোয় সম্পৃক্ত করতে না পারলে, তাদের অনুৎপাদনশীল খাতে রেখে তা উন্নত বিশ^ হোক কিংবা উন্নয়নশীল বিশ^ হোক কখনই সার্বিক উন্নয়নে অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছানো অসম্ভব। প্রকৃতপক্ষে প্রতিবন্ধী শব্দটি সংজ্ঞায়িত করা একটি দুরুহ বিষয়। প্রতিবন্ধী বলতে বুঝানো হচ্ছে এমনই একটি অবস্থা, যা মানব দেহের যে কোন অঙ্গের অথবা অঙ্গের কার্যকারিতা আংশিক অথবা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত অথবা অস্বাভাবিকতার কারণে সৃষ্টি হয় ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিটির শারীরিক বা মানসিক সীমাবদ্ধতা বা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। বিগত ০৯ এপ্রিল ২০০১ ইং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহিত মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করার পর “বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন ২০০১ ইং ১২ নং আইন” রূপে অভিহিত ৩নং দফায় প্রতিবন্ধীর সংজ্ঞায় প্রতিবন্ধী চিহ্নিতকরণে বলা হয়েছে (১) “প্রতিবন্ধী” অর্থ এমন ব্যক্তি যিনি (ক) জন্মগতভাবে বা রোগাক্রান্ত হইয়া দূর্ঘটনায় আহত হইয়া অপচিকিৎসায় বা অন্য কোন কারণে দৈহিকভাবে বিকলাংগ বা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হইয়া; এবং (খ) উক্তরূপ বৈকল্য বা ভারসাম্যহীনতার ফলে…. (অ) স্থায়ীভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতাহীন; এবং (আ) স্বাভাবিক জীবন যাপনে অক্ষম, উল্লেখ করা হয়েছে উক্ত দফায় “প্রতিবন্ধী” মূলতঃ ৬ (ছয়) ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাক্রমে; (ক) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী (খ) শারীরিক প্রতিবন্ধী (গ) শ্রবণ প্রতিবন্ধী (ঘ) বাক প্রতিবন্ধী (ঙ) মানসিক প্রতিবন্ধী এবং (চ) বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী (ছ) সমন্বয় কমিটি কর্তৃক ঘোষিত অন্য কোন প্রতিবন্ধী। উল্লেখিত ৬ (ছয়) ধরণের প্রতিবন্ধী তাদের বর্তমান অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই তিন ভাগে সনাক্ত করা হয়ে থাকে। এছাড়াও উল্লেখিত ১২নং আইনের তিন দফায় (২) উপ ধারার (১) এ বর্ণিত (ছ) এর আওতায় সমন্বয় কমিটি কর্তৃক ঘোষিত অন্য কোন প্রতিবন্ধী অন্তর্ভূক্ত অথবা বহির্ভূতভাবেও আমরা আর এক ধরণের প্রতিবন্ধীদের সাথে পরিচিত, এদের সামাজিক প্রতিবন্ধী বলে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশে^র দেশ সমূহে এদের অভিহিত করা হয়ে থাকে। এই সামাজিক প্রতিবন্ধীরা অনেক সময় শারীরিক যথেষ্ট সুস্থতা থাকা সত্বেও পরজীবীর মতই সমাজের উন্নয়ন কর্মকান্ডে সর্বদা নিজেদের সম্পৃক্ত রাখে না বরং বিরত থাকে এবং সময় সময় এদের দ্বারা গণস্বাস্থ্য সভ্যতা ও দেশ এবং জাতি অনেক সময় হুমকীর সম্মুখীন হয়। যেমন- পতিতা ও ভিক্ষাবৃত্তি, ভাসমান, চুর, ডাকাত, সন্ত্রাসী ও বেকার এবং নিরক্ষর জনগোষ্ঠি ইত্যাদি। প্রতিবন্ধীদের তথা মানবতার সেবায় পৃথিবীর কোন ধর্মেই নিরুৎসাহিত করা হয়নি। বুদ্ধ ধর্মে চোখ দানের নির্দেশ আছে এবং ত্রিপিটক গ্রন্থ তথা বুদ্ধ ধর্মে প্রতিবন্ধীদের সেবায়-মানবতা ও সর্বজীবের সেবায় উৎসাহ দেয়া হয়েছে। বেদ, রামায়ন, গীতা, পুরাণ, উদবায়েনবেদের তথা হিন্দু ধর্মে এবং স্বর্গীয় গ্রন্থ জবুর ওল্ড টেষ্টমেন্ট, তৌরাত বা ইহুদি ধর্মে, নিউ টেষ্টমেন্ট, গোসপেল অব সেন্ট মেতিউস, মার্ক, লুক, ইউহোন্না, ডেট্রমনি সার্বিকভাবে বাইবেল গ্রন্থে এবং সামগ্রিকভাবে খ্রীষ্ট ধর্মে মানবতা ও প্রতিবন্ধীদের সেবায় উৎসাহ দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন “এবং আমি (হযরত ঈসা (আ.) নিরাময় করি জন্মান্ধ ও সাদা দাগ সম্পন্ন (কুষ্ঠরোগী)কে আর আমি মৃতকে জীবিত করি আল্লাহর নির্দেশে …..” (পারা-৩, সুরা-৩, আল-ইমরান, আয়াত-৪৯ এবং পারা-৭ সুরা-৫, মায়দাহ, আয়াত-১১০)। মুসলমান হিসাবে আমরা কালেমা ঈমানে মুফাসসালে সর্বদা পড়ি এবং বিশ^াস করি, “আল্লাহ, তাঁহার ফেরেশতাগণ, কেতাব সকল, প্রেরিত রসুলগণ, কিয়ামত, তকদির এবং মৃত্যুর পর পূনরুজ্জীবন লাভ- এই সকলের উপর আমি ঈমান আনিলাম অর্থাৎ বিশ^াস করিলাম”। আল্লাহপাক এরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই ঈসা (আ.) ক্বিয়ামতের সংবাদ, সুতরাং কখনো ক্বিয়ামত সম্বন্ধে সন্দেহ করোনা এবং আমার অনুসারী হও। এটায় সোজা পথ” (পারা-২৫, সুরা-৪৩- যুখরুফ, আয়াত-৬১ এবং অন্যত্র পারা-৩, ৩ ইমরান-৫৫)। মানবজাতির উত্থান, ধারাবাহিক ক্রমবিকাশে ধর্ম নির্বিশেষে এই যে সম্পর্কযুক্ততা মানব সভ্যতাকে মানবতার দিকে গৌরবোজ্জল গতিমান করেছে এবং ইসলাম ধর্মকে তার স্বকীয়তার জন্য করেছে মহিয়ান। একইভাবে আরও সার্বজনিনভাবে পবিত্র কোরআন শরীফে উল্লেখিত হয়েছে, “নিশ্চয়ই ঈমানদার (অনুরূপভাবে) ইহুদী, খৃষ্টান ও তারকা পূজারীদের (তফছিরকারকগণ এ প্রসঙ্গে অগ্নি ও প্রতিমা পূজারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ব্যক্ত করেছেন) মধ্যে যারা সত্য অন্তরে আল্লাহ ও শেষ বিচারের দিনে, পুনরুত্থান দিবসের উপর ঈমান এনেছে আর সৎকাজ করে, তাদের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে এবং তাদের জন্য না কোন ভয় ভীতি আছে, না কোন প্রকার দুঃখ” (পারা-১ সুরা-২ বাকারা, আয়াত-৬২ এবং একইভাবে পারা-৬, সুরা-৫ মায়দাহ, আয়াত ৬৯ একই অর্থে উল্লেখিত হয়েছে)। অথচ ধ্বংশাত্মক শয়তানী শক্তি যখন আমাদের মাঝে মাথা ছড়া দিয়ে উঠে, যখন বিবেকবর্জিত পেশী শক্তি প্রাধান্য পায়, মানবতা, সম্প্রীতি, স্বর্গীয় ভালবাসা পদদলিত হয়, তখন রক্ত পিপাসু নর ঘাতকদের দরুণ ধর্মের নামে চলে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, যুদ্ধ আর প্রচন্ড ধ্বংসযজ্ঞ। প্রকৃতি, পরিবেশ ও সমাজ তখন হয় ধ্বংসের সম্মুখীন আর অসহায়দের তখন দেখার কেউ থাকে না এবং প্রতিবন্ধীদের হার অতি দ্রুত হয় উর্দ্ধমুখী। যুদ্ধ পরবর্তী সামাজিক, রাষ্ট্রিয় অস্থিরতা ও অভ্যন্তরীণ এবং বিশ^ অর্থনৈতিক মন্দা সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলে। ১ম ও ২য় বিশ^যুদ্ধ পরবর্তী ও তৎপরবর্তী আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণ, সম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র কর্তৃক সংঘটিত যুদ্ধগুলিতে অতি ভয়াবহ আকারে আবহাওয়া পরিবেশ দূষণ করে এমনই ধরণের রাসায়নিক, জীবানু ও স্থল মাইন, গুচ্ছ (ক্লাষ্টার) বোমা, এটম এবং কম্পিউটার সুপার ডিভাউস, তারকাযুদ্ধ, নিউক্লিয়ার সমরাস্ত্রের ব্যবহার মানুষের অসহায়ত্বকে আরও প্রকট করেছে ভারসাম্যহীন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, টর্নেডো, হারিকেনসহ প্লাবন, জলোচ্ছাস, এত প্রকট হয়েছে যে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে মোট পানির পরিমাণ অতিদ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির উচ্ছতা স্ফীত হয়েছে ফলে অতি শীঘ্রই সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতায় সমপরিমাণে অবস্থিত দেশগুলোর মধ্যে মালদ্বীপ, বাংলাদেশ সহ আরো কয়েকটি দেশ সমুদ্রবক্ষে অতিশীঘ্র তলিয়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে পশ্চিমা বিশ^সহ সমগ্র বিশে^ অতিমাত্রায় ভারী কারখানা স্থাপন, শিল্পোন্নয়ন, তেজস্ক্রিয়তা বর্জ, ত্রুটিপূর্ণ পয়ঃপ্রণালী ও নগরায়ন, যানবাহন নির্গত শব্দযুক্ত ধোয়ায় পরিপূর্ণ বিষাক্ত সীসা এবং বনাঞ্চল উজাড় হওয়ার ফলে নতুন নতুন মরুভূমি সৃষ্টি এবং বায়ু স্তরে অতি বিষাক্ত ক্লোরোকার্বন গ্যাসের আধিক্যতা হেতু ওজনস্তরে যে বিশাল গর্ত (ছেদা) হয়েছে যদদরুন মরু অঞ্চলে সূর্যের অতি ক্ষতিকারক বেগুনি রশ্মির প্রাধান্যতার কারণে শুধু মাত্র প্রতিবন্ধীত্বের বিস্তার নয় বরং প্রকৃতি এখন ধ্বংসের প্রান্তরে এসে উপনীত হয়েছে। অথচ দেড় হাজার বছর আগেই আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন, “এবং যখন আসমানে ছিদ্রের সৃষ্টি হবে” (পারা-২৯, সুরা-৭৭, সুরা মুরসালাত, আয়াত-৯)।
প্রতিবন্ধী প্রসারে যে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে সহযোগী হিসেবে কাজ করে তা হল খাদ্য তালিকায় পুষ্টি এবং পর্যাপ্ত আয়োডিনের অভাব, জন্ম পরবর্তী প্রসূতী মায়ের বিশেষ চিকিৎসার অভাব ও টিকা না নেয়া, প্রতিবন্ধিদের সর্বদা ও সার্বিক অবস্থায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাব, ব্যক্তি বিশেষ বা ব্যক্তিবর্গের দ্বারা বিরক্তি প্রকাশ বা উপযুক্ত সহানুভুতি সহমর্মিতা না দেখানো, ভারত কর্র্তৃক ফারাক্কা এবং সীমান্ত এলাকায় অন্যান্য নদ নদীতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহে এক তরফাভাবে নিয়ন্ত্রনের ফলে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে অত্যাধিক জনসংখ্যার চাপে ভূ-পৃষ্ঠের উপরিস্থলে পানি নিঃশেষ হওয়ায় বর্তমানে আর্সেনিক দূষনমুক্ত পানির আধিক্যতা হেতু আর্সেনিকযুক্ত পানি পান ও সরবরাহের ব্যাপক বিস্তৃতি নিশ্চিত করা সরকার এবং সকল সুনাগরিকের নিঃসন্দেহে এটি একটি পূণ্যময় ধর্মীয় কাজ। প্রবন্ধকার সিলেট অঞ্চলের একজন সমাজ কর্মী হিসেবে ও প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক “সুরমা অন্ধ কল্যাণ সমিতি (সেব)” প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ডাইরেক্টর “গ্রীণ ডিসএ্যাবল্ড ফাউন্ডেশন (জিডিএফ) ও সভাপতি, “বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতি (বি.এন.এস.বি) সিলেট জেলা শাখা এবং অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং পরিচালক “জালালাবাদ ফাউন্ডেশন” এর সাথে সম্পৃক্ততার সাথে এতদঞ্চলেদীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতার সাথে ১৯৯২ ইং হতে ১৯৯৬ ইং পর্যন্ত সিলেট শহর ও শহরতলীর “জালালাবাদ ফাউন্ডেশনের” শিশুদের দৃষ্টি শক্তির পরীক্ষা প্রকল্পের আওতায় সরকারী এবং বেসরকারী ৫০টি বিদ্যালয়ের প্রায় ৭৫০০ ছাত্র/ছাত্রীর দৃষ্টি শক্তি পরীক্ষা করে মোট ৭৫০ জন রোগাক্রান্ত অর্থাৎ শতকরা ১০ ভাগ রোগাক্রান্ত ধরা পড়ে এবং রোগাক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগের উর্দ্ধে সমাজের বিত্তবান পিতা-মাতার সন্তান এবং অপেক্ষাকৃত গরিব পিতা-মাতার সন্তান সে তুলনায় কম চক্ষু পিড়ায় ভুগছে বলে প্রমাণিত হয়। সত্যি বলতে কি উক্ত সংগঠনের আওতাধীন ১ম দৃষ্টি শক্তি পরিক্ষা প্রকল্পে স্থানীয় ব্লু-বার্ড শিশু বিদ্যালয়ের ১ম ছাত্রীটিই চক্ষু পীড়ায় আক্রান্ত বলে ধরা পরে পিতা-মাতার সন্তানেরা ভিডিও গেমস, টেলিভিশন, কমিকস ও গল্পের বই অধিক হারে দেখা ও পড়ার ফলে এবং দৈনন্দিন খাবার তালিকায় প্রাচুর্যময় মুখরোচক খাবার খেলেও তাতে শাক-সবজি, ছোট মাছ, ভিটামিন, শর্করা ফ্লোরাইড ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধমূলক খাদ্যে ক্যালরী অতি কম থাকায় এবং তাদের সর্বদা কায়িক, দৈহিক পরিশ্রম কম করায় এই বিপর্যয়ের কারণ। বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষা বোর্ডগুলির পাঠ্য বইগুলির কাগজ এবং ছাপা আরও উন্নতমানের হওয়া দরকার অন্যতায় নিম্নমানের ও ত্রুটিপূর্ণভাবে সরবরাহে করা হলে, আনুমানিক বাংলাদেশের ১২% ছাত্র/ছাত্রী চক্ষুরোগে আক্রান্ত হবে বলে বিশেষজ্ঞগণ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। বাংলাদেশ পৃথিবীর অধিক বৃষ্টিপাতপূর্ণ ও বন্যাকবলিত এলাকা হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ভূপৃষ্ট হতে আয়োডিন পলিবাহিত হয়ে সমুদ্রে পতিত হয়। তাই শাক-সবজি, ফল-ফলাদিতে আয়োডিনের পরিমান অত্যন্ত কম হওয়ায় আয়োডিনযুক্ত লবণ গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। তাছাড়া মাতা-পিতাসহ পরিবারের সকলের সংযমী চরিত্র বৈশিষ্ট্য, চিকিৎসার সহজলভ্যতা, ধুমপান ও মাদকদ্রব্য বর্জন যানবাহন ও শিল্প কারখানা দ্বারা পরিবেশ দূষণরোধ ইত্যাদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেও প্রতিবন্ধী বিস্তাররোধ সম্ভব। তাইতো বর্তমান বিশে^ অতি সংক্রামক এইডস রোগের ভয়াবহ বিস্তার রোধে পৃথিবীর তাবৎ উন্নত বিশে^র চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ, সমাজ ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানীগণ যৌনতার যথেচ্ছাচার বহুগামীতার বিপক্ষে এবং ধর্মীয় নৈতিকতার অনুশাসন ও বৈবাহিক দাম্পত্য জীবন মেনে চলার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। পৃথিবীর যে কোন জাতির উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে সে দেশের বিরাজমান বিভিন্ন শ্রেণীর জনগণের জাতীয় অবকাঠামোয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে অংশগ্রহণে নিশ্চয়তা। বাংলাদেশে এই বিশাল প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠিকে যদি এখনই গণসচেতনতাবোধ জাগ্রত করা সম্ভব না হয়, তাদের উপযুক্ত শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণ এবং সহমর্মিতা দিয়ে কর্মদক্ষ করে তোলা না যায় তবে প্রতিবন্ধীত্বের অভিশাপে জাতি ক্রমান্বয়ে অনগ্রসরতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে এবং শুধু প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠি জাতির কোন বিচ্ছিন্ন অংশ নয়। শারীরিক সুস্থ সম্পন্ন লোকদের সাথে প্রতিবন্ধীদেরও সহজাত অধিকার রয়েছে সমমর্যাদায় বসবাসের, সহাবস্থানের এবং জ্ঞানের আলো লাভ করার। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পাবার এবং আমাদের আর দশজনের মতো করে সুন্দর স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা লাভ করা। অতি গুরুত্ব সহকারে মনে রাখা দরকার যে, আমাদের একটু ইতিবাচক মানবিক সহানুভুতি প্রকাশে একজন প্রতিবন্ধীর সাময়িকতো বটেই এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে স্থায়ীভাবে প্রচুর উৎসাহ, উদ্দীপনা ও শান্তনা এবং অনুপ্রেরণার শ^াশ^ত উৎস হতে পারে। এ প্রসঙ্গে বছর কয়েক পূর্বে মৌলভীবাজারে সদরস্থ হযরত শাহ্্ মোস্তফা বোগদাদী শের সওয়ার চাবুকমার হাসানী ওয়াল হোসাইনী (র.) দরগা শরীফে আগত মৌলভীবাজার পৌরসভার একজন অধঃস্থন কর্মচারী মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী অতি করুন মানবেতর অবস্থায় দৈনন্দিন খাওয়া দাওয়া ছাড়া হাড্ডিসার মৃত প্রায়, অবস্থায় মাজারে আশ্রয় নেন। দরগা শরীফ মতোওয়াল্লী দপ্তর থেকে খাদিম, মহল্লাবাসী রোগীর স্ত্রী-পরিবারবর্গ এবং সাবেক পৌর চেয়ারম্যান সৈয়দ মহসীন আলী সাহেবের (পরবর্তীতে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়) মহৎ প্রচেষ্ঠায় অতি আন্তরিকতার সাথে দীর্ঘ সময় ধরে ধৈর্য্য সহকারে যত্ন ও সেবাদান পূর্বক এবং পরে উক্ত রোগী মানসিক এবং শারীরিক উপযুক্ত চিকিৎসায় অতি দ্রুত সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে উঠেন এবং চাকুরীতে যোগদান করতে সক্ষম হন এবং তিনি চাকুরী স্থলে অতি দক্ষতা ও কর্মক্ষমতায় জনগণের সেবাদানে নিয়োজিত আছেন। আর উদাহরণ হিসেবে ১৯৯১ ইং সনে সাউথ ইষ্ট এশিয়ায় প্রতিবন্ধীদের অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের বাংলাদেশের প্রথম স্বর্ণ জয় তৎপর ১৯৯৫ ইং সনের নর্থ কোরোলিনা যুক্তরাষ্ট্রে মানসিক প্রতিবন্ধী আয়োজিত বিশেষ অলিম্পিক এবং পরবর্তী সৎসর ১৯৯৬ ইং সনে সাংহাই প্রতিবন্ধীদের প্যারা অলিম্পিক গেমসে এবং ২০০০ ইং সনে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেইমসে ২৩টি স্বর্ণ এবং অনুরূপ রৌপ্য ও ব্রোঞ্চ পদক নিয়ে বাংলাদেশ বিশ^ চ্যাম্পিয়ান হয়ে এক বিরল রেকর্ড সৃষ্টি করে। অথচ প্রতিবন্ধীদের তুলনায় বাংলাদেশের সক্ষমরা কোনদিন সমতূল্য রেকর্ড গড়তে পারবে কিনা এটা ভবিষ্যতের দিকেই উত্তরটা নিহিত থাকুক। বেহিজং অলিম্পিকে সাউথ আফ্রিকার ডুটোইট বাম পা ছাড়া মেয়েদের ১০ মিটার ম্যারাথন সাঁতারে ১৬তম স্থান দখল করেন। যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তি জিমন্যাষ্ট জর্জ আইসার ১৯০৪ ইং সেন্ট লুইস অলিম্পিকে তিনটি সোনা সহ ছয়টি পদক জিতেছিলেন এবং এই ১০৪ বৎসরের ভিতর আইসার এরপর ২য় প্রতিযোগী ডুটোইট ছাড়া আর কোন প্রতিযোগী অলিম্পিকে অংশ নিতে পারেনি। আইসার আর ডুটোইট এর অবস্থানগত পরিস্থিতির বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে ডুটোইট এর কৃতিত্ব অনেক উপরে। কারণ আইসার জিমন্যাষ্টিকসে কৃত্রিম পা পরে অংশ নিয়েছিল বর্তমানে অলিম্পিকে আইন পরিবর্তন হওয়ায় ডুটোইটকে কৃত্রিম পা খুলেসাঁতরাতে হয়েছে। সিলেট অঞ্চলেও প্রতিবন্ধী ও চক্ষু চিকিৎসায় এক বিরাট গৌরবময় ইতিহাসের অধ্যায় আছে। ১৯৬৩-৬৪ ইং সিলেটের কৃতি সন্তান শহীদ মুক্তিযুদ্ধা ডাঃ শামছুদ্দিন আহমদ, এফ,আর,সি এস ডাঃ নাইওর উদ্দিন ও সাবেক সাংসদ খন্দকার আব্দুল মালিক, মরহুম ডাঃ শফিকুর রহমান এবং অন্যান্য সমাজ সেবীদের নিয়ে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায় খোলেন ফিল্ড ক্যাম্প চক্ষু হাসপাতাল এবং যথেষ্ট সফলতার সাথে কেটারেক্ট অপারেশন করেন এবং প্রবন্ধকার তখন ছাত্র সেচ্ছাসেবী হিসেবে সম্পৃক্ত থাকেন, যার সফলতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকায়ও অনুকরণ যোগ্য হয়। বর্তমানে মৌলভীবাজার বি.এন.এস.বি স্থায়ী চক্ষু হাসপাাল স্থাপন পূর্বক এই পদ্ধতি অনুসরণে মাঠ পর্যায়ে সিলেট বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রয়োজনীয় অপারেশনসহ চক্ষুর চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন। বি.এন.এস.বি বাংলাদেশে ৩৯টিরও অধিক শাখা খোলে দেশের সর্ববৃহৎ সংগঠন হিসেবে চক্ষু চিকিৎসা ক্ষেত্র সহ পুনর্বাসন ও সেবাদান করে যাচ্ছে। বি.এন.এস.বি পরিচালিত দেশের চক্ষু হাসপাতালের মধ্যে বৃহত্তর সিলেটের একমাত্র চক্ষু হাসপাতালটি মৌলভীবাজার সদরে অবস্থিত। হাসপাতালটি ইতি মধ্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সম্মাননা স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়েছে।
সম্প্রতি মক্কা ভিত্তিক ইসলামিক সংগঠন ফিকাহ একাডেমী মরণোত্তর অঙ্গ ব্যবচ্ছেদ বা সংস্থাপনের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। মিশরের আল-আজহার বিশ^বিদ্যালয়ের ফিকাহবিদগণ ১৯৬৫ইং মরোনত্তর অঙ্গ সংস্থাপন ব্যবচ্ছেদের পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেন। আরব সরকারের সাথে সাথে মুসলিম বিশে^র অপরাপর দেশসমূহের ধর্মীয় পন্ডিতগণ এবং ওআইসি অঙ্গ সংযোজন বা ব্যবচ্ছেদের বৈধতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে বিগত দিনে বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭৫ ইং অন্ধত্ব মোচন (চক্ষুদান) অধ্যাদেশ জারী করেন। আওয়ামীলীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৯/৭/৯৮ ইং শ্রীলঙ্কার কলম্বো শহরে ১০ম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান এবং বাংলাদেশের পক্ষে তাঁহার বিজ্ঞ প্রস্তাবে সার্ক প্রতিবন্ধী তহবিল গঠনের সিন্ধান্ত পৃথিবীর আনুমানিক একপঞ্চামাংশ লোকের অধ্যুষিত এই উপমহাদেশের জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক অবকাঠামোয় এক উজ্জল ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারত, যদি তা সাবেক সরকারের অভ্যন্তরীন বাস্তবায়নে প্রকৃত প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হত। চিকিৎসক ও সেচ্ছাসেবীদের সমন্বয়ে ১৯৮৫ ইং হতে “সন্ধানী” বাংলাদেশে মরণোত্তর চক্ষুদান সহ প্রতিবন্ধী এবং আর্থ মানবতার সেবায় এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। তাই শারীরিক, মানসিক, দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে গণসচেতনতাবোধ জাগ্রত করার লক্ষে সমান্তরালভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থারও আমূল পরিবর্তন ও আধুনিকায়ন করতে হবে। প্রতিবন্ধী উন্নয়নে এইসব কার্যক্রম সরকারী বেসরকারী উভয় নীতিমালায় সমগুরুত্বে অনুসৃত হবে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৩ ইং এসকাপ ঘোষিত প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়নের দশকে ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর করেছেন। প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে বি.এন.পি সরকার ১৯৯৫ ইং সনে দেশে প্রথম বারের মত জাতীয় প্রতিবন্ধী নীতি প্রণয়ন করেন। আমাদের সরকার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রতিবন্ধী বিষয়ক সিন্ধান্ত নং- ৪৮/৯৬ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন ২০০১ ইং ১২নং আইন জারী করেছেন এবং বিশেষ প্রজ্ঞাপন জারী করে উক্ত আইন বিগত ০১ আগষ্ট থেকে কার্যকর বলে ঘোষণা করেছেন। তা সত্ত্বেও উক্ত আইনটি প্রতিবন্ধী সমাজ কর্তৃক যথোপযুক্ত না হওয়ায় প্রচুর সমালোচিত হয়েছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠির প্রত্যাশা যে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার তাদের পূর্বের প্রণীত প্রতিবন্ধী নীতিমালার সাথে বিগত সরকারের প্রণীত উক্ত আইনের সমন্বয় সাধন পূর্বক একটি প্রশাসনিক জবাবদিহিমূলক সংশোধিত আইন প্রণয়ন ও জারী করবেন। আমাদের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের ২৯/১২/১৯৮১ ইং শ্রীলংকায় ২৫/১০/৯৬ ইং এবং ভারতে ৩১/১২/৯৬ ইং প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষার যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এইসব দেশে গৃহিত আইনগুলি বাস্তবায়ন ও আরম্ভ হয়ে গিয়েছে। যুক্তরাজ্যে যদিও কোন লিখিত সংবিধান নেই তবুও তথাকার প্রচলিত বিধি বিধান খুবই সুস্পষ্টভাবে প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও ইজ্জত সংরক্ষণ করে। প্রতিবন্ধীদের সাহায্য ও সহযোগিতা করা একজন সক্ষম লোকের পরিচ্ছন্ন, মন মানসিকতা এবং তাক্বওয়ারই পরিচয় বহন করে। প্রায়শই আমরা দেখি একজন ব্যক্তির কোন অঙ্গ বিকল কিংবা অস্বাভাবিক আচরন পরিলক্ষিত হলে তাকে পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে অবহেলা ও হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। তাকে অনেক সময় পঙ্গু, লেংরা, বোবা, কালা, বধির, পাগল ইত্যাদি নামে অভিহিত করে ডাকা হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! না পুরুষ পুরুষদেরকে বিদ্রুপ করবে; এটা বিচিত্র নয় যে, তারা ঐ বিদ্রুপকারীদের অপেক্ষা উত্তম হবে এবং তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারূপ করোনা আর একে অপরের মন্দ নাম রেখোনা। (সুস্থ লোকেরা পঙ্গু লোকদের, না দৃষ্টি সম্পন্ন লোকেরা অন্ধদের)। কতই মন্দ নাম-মুসলমান হয়ে ‘ফাসিক’ বলোনা এবং যারা তওবা করে না, তবেই তারাই যালিম”। পারা-২, ৪৯-হুজুরাত-১১) আসলে অনেক সময় শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিবন্ধীরা নিজেদের কর্মতৎপরতায় বিশেষ ক্ষেত্রে বুৎপত্তি দেখাতে সক্ষম হচ্ছেন এবং এক সময় বিশ^ রেকর্ডও সৃষ্টি করেছেন। উপরোল্লিখিত সুরা আবাসায় আমরা দেখতে পাই ঐশী মানবতার বাণী সম্বলিত মহানদৃষ্টি প্রতিবন্ধী (অন্ধ) সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) বিষয়ে নবী করীম (স.) বরকতময় খেদমতে ওহি নাযিল হওয়া, বিশ^জয়ী বীর সম্রাট তৈমুর লং খোঁড়া ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট প্রথম জীবনে সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু ছিলেন, প্রথম নোবেল সাহিত্য বিজয়ী সোলে এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ব্রেইল পদ্ধতি আবিষ্কারক ফরাসি শিক্ষাবিদ লুই ব্রেইল এবং কালজয়ী মহীয়সী নারী মেডাম হেলেন কেলার, কিউবার এবং পরে বলিভিয়ান স্বাধীনতা সংগ্রামী চেগুয়েভারা প্রচন্ড হাঁপানী রোগী ছিলেন, বর্তমান বিশে^র সব চেয়ে শীর্ষস্থানীয় বৈজ্ঞানিক জন ষ্টিপেন হকিং সম্পূর্ণরূপে প্রতিবন্ধী বিশিষ্ট তাবেয়ী হাফিজে হাদিস, ফেকাহ, ইতিহাস, ফরায়েজ এবং অংক শাস্ত্রে পারদর্শী হযরত আবু ওমর জরীর (র.) জন্মান্ধ ছিলেন এবং এমনকি অসংখ্য প্রতিবন্ধীরা জগতে নিজেদের অধ্যাবশায় দ্বারা চিরস্মরণীয় এবং মানব ইতিহাসে চির ভাস্বর হয়ে রয়েছেন। অপরদিকে সামাজিক প্রতিবন্ধীরা অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক অসুস্থতা থাকা সত্বেও নিজেদের বদ আমলের (অভ্যাসের) দরুন সমাজে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করছেন। অঙ্গহীনতা বা অঙ্গহানীর না কোন অবস্থায় পঙ্গু নয় বরং পঙ্গুত্বের ব্যাপক স্তর এবং সার্বিক ধরণের সামগ্রিক আকার ও অবস্থানকে প্রতিবন্ধী শব্দটি সর্বদা সকল মহলের কাছে পরিচ্ছন্ন ভাবধারা প্রকৃত পক্ষে মার্জিত এবং গ্রহণযোগ্যও বটে।
প্রতিবন্ধী সংক্রান্ত রচিত আন্তর্জাতিক সিন্ধান্ত এবং ঘোষনাসমূহ যা বাংলাদেশে সরকার গ্রহণ করেছে ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয় কর্তৃক ১৯৯৫ইং বি.এন.পি সরকারের প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা প্রণীত হয়েছে এবং বিগত সরকারের আমলে শেষের দিকে “বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন ২০০১ ইং ১২ নং আইন এবং তৎপত বিশেষ প্রজ্ঞাপন (গেজেট নোটিফিকেশন) জারি দ্বারা উক্ত ১২নং আইনটি বিগত ০১ লা আগষ্ট থেকে কার্যকর ঘোষণা করায় এবং সকল অনগ্রসর জনগোষ্ঠির পূর্ণ অংশ গ্রহণ ও সমসুযোগ নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ সংবিধানের প্রতি আলোকপাত করা যেতে পারে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে ১৪ নম্বর ধারায় সুস্পষ্টভাবে অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হতে মুক্তিদান করার বিধান উল্লেখিত হয়েছে। সুতরাং এই ধারায় অগ্রাধিকার দান পূর্বক প্রতিবন্ধী অনগ্রসর সমাজকে জাতি সংঘের সনদ এবং দেশীয় আইন অনুযায়ী সরকারী সাহায্য লাভে শতকরা ১০ ভাগ কোঠা নির্ধারণ পূর্বক যাবতীয় সেবা দান কার্যক্রম বাস্তবায়নের অঘোষিত শোষণ প্রতিবন্ধী সমাজকে মুক্তি দান করে আমাদের একান্ত আন্তরিক ও সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। সংবিধানের ১৫ ধারায় (ক) ও (খ) এবং (গ) উপধারায় প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সুনিশ্চিত করা দরকার এবং একই ধারায় (ঘ) সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতা-পিতাহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতি জনিত কারণে অভাবগ্রস্থতার ক্ষেত্রে সরকারী সাহায্য লাভের অধিকার উপধারায় ঘোষিত হয়েছে এবং সংবিধানের এই অংশে পঙ্গু বা পঙ্গুত্বজনিত শব্দটি প্রকৃতভাবে অনাকাঙ্খিত ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হবার পর ১৯৭২ ইংরেজি ডিসেম্বর মাসে ১৬ তারিখ বলবৎ হয়। আজকের দিনে বহু বছর অতিক্রান্তে সমাজ ও রাষ্ট্র চেতনায় এবং আন্তর্জাতিকাবোধে আরোও বিবেক মানবতাবোধ জাগ্রত হওয়ায় পঙ্গুত্ব শব্দটি যদিও সংবিধান রচনা কালীন সময়ে যথোপযুক্ত বিবেচিত হলেও বর্তমান সময়ে তাহা আত্মস্লাঘার কারণ। অথচ পঙ্গুর ইংরেজি শব্দ ঐধহফরপধঢ়ঢ়বফ রূঢ়, কর্কশ শব্দটি সংবিধানে ইংরেজি পাঠে ব্যবহৃত না হয়ে কিঞ্চিৎ গ্রহনীয় উরংধনষবসবহঃ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। আসলে ওসঢ়ধরৎ শব্দটি প্রকৃটি পক্ষে প্রতিবন্ধীত্বের সঠিক ইংরেজি ভাবধারা প্রকাশ বহন করে অঁষরং ষরব শব্দটিও প্রচলিত আছে। অথচ পরিতাপের বিষয় যে আমাদের রাষ্ট্রিয় ভাষা বাংলা ও ইংরেজি ভাবধারা প্রকাশ ও বহন করে। অথচ পরিতাপের বিষয় যে আমাদের রাষ্ট্রিয় ভাষা বাংলা হেতু বাংলা ভাষায় বর্ণিত পংগু শব্দটি ত্রুটিযুক্ত এবং যেহেতু সংবিধানের ১৫৩ (৩) ধারার বিধান বলে বাংলা ও ইংরেজি বর্ণনায় শব্দ পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাবে যদিও উল্লেখিত আছে তবুও উক্ত ১৫৩ ধারার (২) উপধারায় গণপরিষদের স্পীকার মহোদয় আওতাধীন ক্ষমতাবর্হিভূত বলে প্রতীয়মান না হওয়ায় এবং এ ক্ষেত্রে পঙ্গুর স্থলে প্রতিবন্ধী শব্দটি সংবিধানের উক্ত ধারায় এমনকি ১২ ধারায়ও সংশোধনযোগ্য। একটি প্রগতিশীল, উন্নয়নমূলক গণতান্ত্রিক সভ্য দেশ বাংলাদেশের সংবিধান খাপছাড়া পঙ্গু শব্দ ব্যবহার প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠির প্রতি সাহায্য লাভের অধিকার সুনিশ্চিতকরণের স্থলে দেশের আপামর জনগোষ্ঠির অনগ্রসর শতকরা ১০ হতে ২৫ ভাগ লোকের প্রতি পরিহাসমূলক, বিদ্রুপাত্মকভাবে উপস্থাপিত হওয়ায় এবং সংবিধানের ১১ ধারায় উল্লেখিত মানব সত্ত্বার মর্যাদা মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে বিধানাবলীর বিপরীতে এবং বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের শতকরা ৯৫ ভাগ লোকের ধর্মবিশ^াসের প্রতিচ্ছবির আলোকে সংবিধানের ২৬ ধারায় অসামঞ্জস্য অহঃড়হড়সু হওয়ায় সংবিধানের ১৫ (ঘ) উপধারায় বর্ণিত পঙ্গুত্বজনিত সংশোধনপূর্বক তদস্থলে প্রতিবন্ধীত্বজনিত শব্দটি প্রয়োগ করার বিষয়ে মানবিক, নৈতিক আবেদন জানানো হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের সার্বিক শিক্ষা লাভের অধিকার সুনিশ্চিতকরণে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে এবং ছাত্রদের আবাসিক ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধীদের জন্য শতকরা ১০ ভাগ আসন সংরক্ষণের জন্য সরকার এবং বিশেষ করে শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয় সংবিধানের ১৭ (ক) ও ১৭ (খ) এবং১৭ (গ) উপধারায় সামঞ্জস্য বিধানে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা নিরূপণে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিসংখ্যান হওয়া খুবই দরকারি। প্রাথমিক তথ্যাবলীতে ধারণা হয় প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠির শতকরা ৮০ ভাগই বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন এবং উক্ত ধারার আওতায় প্রতিবন্ধীদের নাগরিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা লাভের সহজলভ্যতা বিধানে সংবিধানের ১৮ (১) ধারায় প্রতিবন্ধী জনগণের পুষ্টিরস্তর উন্নয়ন ও প্রতিবন্ধী সমাজের জনস্বাস্থ্যের উন্নতি প্রকল্পে এবং সার্বিক জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে ও প্রতিবন্ধীত্বরোধক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ঐ কারণে মদ্য ও মাদক পানীয় এবং বাস্তবায়নের কড়াকরি, দৃঢ়তা গ্রহণ এবং সংবিধানের ১৮ (২) উপধারায় গণিকা বৃত্তি ও জুয়া খেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নিশ্চয়তা প্রদান করবেন। গণিকাবৃত্তির দরুণ মহিলা সমাজের প্রতি শারীরিক ঘৃণিত অত্যাচার, স্ত্রী পুরুষের নৈতিক অবক্ষয় এবং সর্বোপরি স্বাস্থ্যহানি, দুরারোগ্য সংক্রমন মরণ ব্যাধির প্রাদুর্ভাব এবং বহুল পঙ্গুত্বের উদ্ভব হওয়ার আশঙ্কা এবং জুয়া খেলা সর্বশান্ত হয়ে সামাজিক প্রতিবন্ধীত্বতার উদ্ভব অথবা কায়িক পরিশ্রম ছাড়া তাৎক্ষণিক আপাতঃকালিন লাভবান হওয়ায় নৈতিক অবক্ষয় হওয়ার আশঙ্কায় এই বিধানবলী যথোপযুক্তভাবে প্রয়োগ হওয়া দরকার। সংবিধানর ১৯ (১) সকল নাগরিকের এবং ১৯ (২) উপধারায় প্রতিবন্ধীদের বেলায়ও নাগরিক সুযোগের এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ এবং সম্পদের সুষম বণ্ঠনের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। সংবিধানের ২০ (১) সকল নাগরিকের এবং ১৯ (২) উপধারায় প্রতিবন্ধীদের বেলায়ও নাগরিক সুযোগের এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিলোপ এবং সম্পদের সুষম বন্টনের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। সংবিধানের ২০ (১) এবং ২০ (২) উপধারায় প্রতিবন্ধীদের যোগ্যতানুসারে ও প্রত্যেকের কর্মানুসারে পারিশ্রমিক লাভে নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। সংবিধানের ২১ (২) উপধারায় প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য সে সকল সময়ে প্রতিবন্ধী জনগণের সেবা করবার নিশ্চয়তা বিধান করা। সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত আইনের দৃষ্টিতে সমতা লাভে প্রতিবন্ধীদের যে মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে এবং সংবিধানের ২৮ (১) ও ২৮ (৩) অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত আইনের উপধারায় শুধুমাত্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী হিসেবে তাদের চিহ্নিত না করে প্রতিবন্ধীদের বিনোদন বা বিশ্রামের স্থান বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির বিষয়ে পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টিতে এবং ২৮ (৪) উপধারায় অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির বিষয়ে প্রতিবন্ধীদের অনুকূলে প্রয়োজনীয় আইনে প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। সংবিধানের ২৯ (১) ও ২৯ (২) এবং ২৯ (৩) এর (ক), (খ) এবং (গ) অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধীদের সরকারি নিয়োগ লাভে অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। সংবিধানের ৩৮ নং অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত আইনের আওতায় প্রতিবন্ধীদের সার্বিক উন্নয়নে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অধিকহারে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন বিষয়ক সমিতি সমূহ গঠন করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সংবিধানের ৪০নং অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত আইনের আওতায় প্রতিবন্ধীদের যে কোন আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের এবং যে কোন কায় কারবার বা ব্যবসা পরিচালনার অগ্রাধিকার দিতে হবে। পূর্বে উল্লেখিত মতে সংবিধানের ২৬নং ধারায় (১) ও (২) উপধারায় বর্ণিত কারণে সংবিধানের ১৫ (ঘ) উপধারায় বর্ণিত পঙ্গুত্ববজনিত শব্দটি যথোপযুক্ত না হওয়ায় অহঃড়হড়সু বিরোধীয় অর্থবোধক হওয়ায় তদস্থলে ইংরেজি যথাযথ শব্দ বজায় ও সঙ্গতি রেখে প্রতিবন্ধীত্বজনিত শব্দটি সংবিধান সংশোধনজনিত ধারা সম্বলিত ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত আওতায় না গিয়েও সংশোধনের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহল অভিমত পোষণ করেন।
সংবিধান হল জাতীয় রক্ষা কবচ। প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে সংবিধানের আলোকে সুস্পষ্ট জাতীয় নীতিমালা ও আইন এবং বাস্তবায়নে গৃহীত পদক্ষেপেই সার্বিক প্রতিবন্ধীত্ব বিস্তাররোধে একমাত্র কার্যকরী পদক্ষেপ। তাই বর্তমান সদাশয় সরকার, রাজনৈতিক মতভেদ, বিভেদ ভুলে গিয়ে জাতির মানবিক ও ঐকান্তিক প্রত্যাশা সংবিধানের ১৫ (ঘ) এ উল্লেখিত “পঙ্গুত্ব” শব্দটি সংশোধিত হয়ে প্রতিবন্ধী শব্দটি প্রতিস্থাপিত হবে এবং অনগ্রসর ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠিকে উপযুক্ত শিক্ষা, চিকিৎসা এবং বাসস্থানের সুযোগ দিয়ে সক্ষম করে তোলে জাতীয় উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে তাদের অংশীদারিত্বের নিশ্চয়তা বিধানে সচেষ্ট হবেন এবং আগামী প্রজন্মের গৌরবোজ্জল বাংলাদেশ গড়ে তুলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা কায়েম করবেন। আশা ও আনন্দের কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ট ও গতিশীল নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে অমিত সম্ভবনার বাংলাদেশ।
লেখক পরিচিতি ঃ মৌলভীবাজার জেলা সদরে অবস্থিত হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা বোগদাদী (রা.) মাজারের মোতাওয়াল্লী। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও সমাজসেবক। সিলেট জেলা বি.এন.এস.বি এর সংঘঠক, সু-লেখক, সাবেক সভাপতি। এই লেখাটি পূর্বের হলেও বর্তমান সময় এর সঙ্গেঁ সামঞ্জস্য এবং প্রাসঙ্গিক বিধায় পত্রস্থ হল।
মন্তব্য করুন