ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত : লাউয়াছড়া, মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাতসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলো
প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ পবিত্র ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে প্রকৃতির সৌন্দর্য্যের অপার লীলা নিকেতন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পদ্মকন্যার নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ‘ঝর্ণা সুন্দরী’র হামহাম জলপ্রপাতসহ পর্যটনকেন্দ্রগুলো ভ্রমণ পিপাসু ও প্রকৃতি উপভোগকারী দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। কমলগঞ্জের নৈসর্গের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসবেন ভ্রমণ পিপাসু বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার মানুষ।
কমলগঞ্জ উপজেলার শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের মধ্যখানে অবস্থিত রেইন ফরেস্ট লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। বিনোদনের অন্যতম এ স্পটটি দেশের বনাঞ্চলের মধ্যে নান্দনিক ও আকর্ষণীয়। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর লাউয়াছড়া উদ্যানে দেখা মিলবে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির প্রাণীর। ১২৫০ হেক্টর জায়গা জুড়ে তৈরি করা প্লান্টেশনই এখনকার গহীন অরণ্যের রূপ নিয়েছে। ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের একটি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশে অবশিষ্ট চিরহরিৎ বনের একটি হিসেবে টিকে আছে।
১৯৯৬ সালে এই বনকে ‘জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। পর্যটকদের সবচেয়ে বেশী আকৃষ্ট করে বিলুপ্ত বন্য প্রাণী উল্লুকের ডাক। এ ছাড়া হনুমান,লজ্জাবতী বানর,চশমাপরা হনুমান,মায়া হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতীর প্রাণী। রয়েছে বিরল প্রজাতির বৃহৎ আকারের আফ্রিকান টিকওক, সারি সারি সেগুন, আগর, জারুল, চাপালিশ, ডুমুর, লকটন, আমলকি, জলপাইসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ। এ ছাড়া পাহাড়ী ময়না, ধনেশ, মথুরা, বন মোরগ,সবুজ ঘুঘুসহ ২৪৭ প্রজাতির পাখী রয়েছে। রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির পাহাড়ী পোকামাকড়। পাহাড়ের উঁচু নিচু টিলায় ২টি খাসিয়া আদিবাসী পল্লী। নিরক্ষীয় অঞ্চলের চিরহরিৎ বর্ষাবন বা রেইন ফরেস্টের মতো এখানেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ঈদের ছুটিতে যেন মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হবে প্রকৃতির সৌন্দর্য্যের অপার লীলা নিকেতন সবুজ বনের লাউয়াছড়া উদ্যান আর পদ্মকন্যার মাধবপুর লেকটি। উদ্যাণে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সামাল দিতে সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশাশি পর্যটন পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। অপরদিকে কমলগঞ্জের মাধবপুর চা বাগানে অবস্থিত মাধবপুর লেইক। লেকের চারপাশে বিশাল টিলায় সারিবদ্ধ ছোট-বড় গাছ আর সবুজ চা গালিচার টিলার মাঝখানে জলরাশি। টলটলে রূপালী জলের সঙ্গে দিবা-নিশির মিতালি করছে নীল পদ্মফুল।
জলের আলো ছায়ার নীল পদ্মের লুকোচুরি খেলা মনমুগ্ধ করবে আগত পর্যটকদের। প্রকৃতি অপরূপ সাজে সেজে নিজের রূপ দিয়েই আকর্ষণীয় হয়ে উঠায় জলের পদ্ম কন্যার মায়ায় অ্াঁকড়ে ধরবে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের। অপরদিকে কমলগঞ্জের সীমান্তবর্তী কুরমা সীমান্তের গহীন অরণ্যে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম হামহাম জলপ্রপাত। প্রায় ১৬০ ফুট পাহাড়ের ওপর হতে স্পটির স্বচ্ছ পানি আচড়ে পড়ছে বড় বড় পাথরের গায়ে। রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টের কুরমা বনবিটের প্রায় ৯ কি.মি. অভ্যন্তরে দৃষ্টিনন্দন এই হামহাম জলপ্রপাত। প্রায় ১০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পায়ে হেটে পৌঁছাতে হয় এই ‘ঝরনা সুন্দরী’র আঙিনায়। রোমাঞ্চকর দৃষ্টিনন্দন হামহাম জলপ্রপাত গহীন বনের ওই ঝর্ণা ধারা। এছাড়া কমলগঞ্জের বীরশ্রেষ্ট হামিদুর রহমান স্মৃতিস্তম্ভ, শমশেরনগর স্যুইচ ভ্যালী, উচু-নিচু টিলায় সবুজ গালিচার বিভিন্ন চা বাগান, ডবলছড়া ও মাগুরছড়া খাসিয়া পল্লীদের জীবন ধারা পর্যটকদের আকর্ষন করবে।
মন্তব্য করুন