ঈদের ছুটিতে প্রকৃতি কন্যা মাধবকুন্ড জলপ্রপাত ও ইকোপার্কে পর্যটকদের ঢল
হারিস মোহাম্মদ॥ ঈদুল ফিতরের ছুটিতে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত এলাকা ভরে উঠেছে পর্যটকের পদচারণায়। ফলে এখানকার ব্যবসায়ী, ইজারাদারসহ সবার মুখে ফিরেছে তৃপ্তির হাসি।
শনিবার ২২ এপ্রিল সরেজমিন মাধবকুন্ড ইকোপার্কে প্রবেশের আগে সড়কে প্রায় এক কিলোমিটার যানজটের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। সেখানে যানজট নিরসনে কাজ করছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। মাধবকুন্ড, ইকোপার্ক এলাকায় পৌঁছার পর বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। বিভিন্ন পণ্যের দোকান, খাবার হোটেলগুলোতেও ভিড় জমে।
জলপ্রপাত এলাকায় প্রবেশের পর দেখা গেছে মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাস। দল বেঁধে মাধবকুন্ডের জলে নেমে হইহুল্লোড় আর আনন্দ-উল্লাসে মেতেছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। কেউ কেউ ঝরনার জলে সাঁতার কাটায় আবার অনেকে পাশে দাঁড়িয়ে প্রায় ২৫০ ফুট ওপর থেকে অবিরাম ঝর্নার জলপতনের দৃশ্য ও আশপাশের সবুজ প্রকৃতি উপভোগে ব্যস্ত থাকেন। স্মৃতি ধরে রাখতে এসব দৃশ্য তারা ক্যামেরা বন্দি করেন।
স্বজনদের নিয়ে মাধবকু-ে এসেছেন মৌলভীবাজার জজ কোর্টের এপিপি এডভোকেট মোঃ আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, মাধবকুন্ড জলপ্রভাতে সবসময় আসা হয় না। ঈদ উপলক্ষে দেখতে আসলাম, অনেক ভালো লাগছে। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসেছেন। সবাই আনন্দ উপভোগ করছেন।
আমাদেরও ভালো লাগছে। এখন বৃষ্টিপাত কম তাই ঝরনার মূল ধারায় পানির প্রবাহ কিছুটা কম। তারপরও জলপ্রপাত ও আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য, খাসিয়াপুঞ্জি এবং চা বাগান মানুষকে আকৃষ্ট করছে।
পর্যটক শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা ৭০ জন যুবক একই কালারের পাঞ্জাবি পরে ঈদে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে ঘুরতে এসেছি। ভালো লাগছে। তবে পর্যটকদের জন্য এখানকার ব্যবস্থাপনাটা আরও উন্নত করা জরুরি। তাহলে পর্যটক সংখ্যা আরও বাড়বে।
পর্যটক সবুজ রায় বলেন, এই প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে মাধবকুন্ড বেড়াতে এসেছি এখানকার পরিবেশ খুবই ভালো লেগেছে। আলোকচিত্রী মো. রহিম উদ্দিন বলেন, করোনাকালীন প্রায় আড়াই বছর মাধবকুন্ড পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় খুব কষ্ট হয়েছিল। এবারের ঈদে কোনো বাধা নিষেধ নেই। তাই লোকজন আসছেন। এরকম লোকজন আসা অব্যাহত থাকলে আমরা ছবি তুলে রোজগার করতে পারব।
ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের ভিড়ে মাধবকুন্ড মুখরিত। আমাদের ব্যবসা ভালই হচ্ছে। মাধবকুন্ডে ট্যুরিস্ট পুলিশের দায়িত্বে থাকা ইনচার্জ আতিকুর রহমান বলেন, ঈদের দিন পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় হচ্ছে। প্রায় লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে।
পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। এছাড়া আমরা মাধবকুন্ডে ভ্রমণে আসা কিশোরদের মাদক সেবন, ইভটিজিং ও অপরাধমূলক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য সচেতন করছি।
মাধবকু- ইকো পার্কের ইজারাদার মেহেদি হাসান কবির বলেন, করোনা কালীন সময় পর্যটন শিল্পের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা এখনো সম্ভব হয়নি। পর্যটকদের আগমনে মাধবকুন্ড ইকোপার্ক যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
বড়লেখা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস জানান, ঈদের দিন শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্তরা দলবেঁধে ভেতরে প্রবেশ করেছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ, বনবিভাগ ও ইজারারের লোকজন কাজ করছেন।
মন্তব্য করুন