ঈদের টানা ছুটিতে মাধবপুর লেইক সহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ঢল
প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ঢল নেমে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেইক, দুর্গম পাহাড়ি হাম হাম জলপ্রপাত, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভ, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, মণিপুরী ললিতকলা একাডেমি ও শমশেরনগর গলফ মাঠে পর্যটকদের ভিড় ছিল।
নিরাপত্তার কথা ভেবে এবার বিদেশী পর্যটকদের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। তবে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ছিল পর্যটক পুলিশ ছাড়াও থানা পুলিশের সার্বক্ষণিক মনিটরিং ছিল।
এদিকে গুলশান, শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় যাতে পর্যটকরা কোন ধরনের আতঙ্কিত না হন, সেজন্য কমলগঞ্জ উপজেলার পর্যটন এলাকাগুলোতে পুলিশ এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এছাড়া বিশেষ বিশেষ স্থানগুলোতে বাড়তি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। ঈদের ছুটিতে পর্যটনমুখর এখন কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্পট। বিনোদনকেন্দ্রগুলো যেনো প্রাণ ফিরে পেয়েছে বিভিন্ন বয়েসী পর্যটকদের আনাগোনায়। বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও উপযুক্ত পরিবেশ বহাল থাকায় এসব স্পটে ঈদ আনন্দ উপভোগ করছেন লক্ষাধিক মানুষ। পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দে ঘোরাফেরাসহ ঈদের আনন্দ উপভোগ করছেন। কারো কোন অভিযোগ নেই তবে পর্যটন এসব এলাকাকে আরো আধুনিকসহ আরো আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার ৭ জুলাই ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্য্যরে অপরুপ লীলা নিকেতন কমলগঞ্জ উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন বয়সী পর্যটকদের ঢল নেমে। বিশেষ করে তরুল-তরুণীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
ঈদের পরদিন শুক্রবার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বেড়াতে আসা জাতীয় দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার শিল্প বিষয়ক সম্পাদক রাজিব রায়, ঢাকার শিক্ষিকা সুমনা পাল চৌধুরী জানান, শহরের জীবনে কর্ম ব্যস্থতায় ভাল করে কোথাও বেড়ানো যায় না। তাই ঈদের ছুটিতে এখানকার বাগানগুলো ও একটু বনাঞ্চলে নিবিড় শান্ত সবুজ প্রকৃতির মাঝে সবাইকে নিয়ে বেড়াতে ভাল লাগছে। বেড়ানোর পাশাপাশি লাউয়াছড়ায় সবচেয়ে বেশী আকৃষ্ট করেছে বিলুপ্ত বন্য প্রাণী উল্লুকের ডাক। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতীর পশু পাখি দেখার আগ্রহটা আলাদা অনুভূতির। এর পাশাপাশি বিরল প্রজাতির বৃহৎ আকারের আফ্রিকান টিকওক, মেহগনি, লোহা কাঠ, আগরের সারি নানা প্রজাতির বৃক্ষ দেখে খুব ভাল লাগছে। তবে এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হওয়া দরকার বলেও তারা মন্তব্য করেন।
লাউয়াছড়ার বনে তিনটি প্রাকৃতিক পায়ে হাঁটা পথ পর্যটকদের পদ চারনায় মুখরিত ছিল। পর্যটকরা ইকো-ট্যুর গাইডের সাহায্য নিয়ে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে উদ্যানটি ঘুরে দেখছেন। আবার অনেকেই কোন ট্যুর গাইড ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পাহাড়ের উঁচু নিচু টিলায় মাগুরছড়া ও লাউয়াছড়া নামের ২টি খাসিয়া আদিবাসী পল্লী যেন পর্যটকের আনাগোনায় মুখরিত ছিল। তবে ছোট পিক আপ, মাইক্রোবাস এমনকি সিএনজি অটো রিক্সায় মাইক ও সাউন্ড বক্স লাগিয়ে উচ্চ স্বরে বাজানো গানের শব্দ পর্যটকদের কাছে এক বিড়ম্বনা ছিল। শুক্রবার দুপুরে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে মাত্র দুইজন বিদেশী পর্যটককে একজন ট্যুর গাইডের সাথে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।
পর্যটকদের ভিড় সামাল দিকে জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সকল সদস্যরা ব্যস্ত ছিলেন। লাউয়াছড়া বনবিট কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী) রেজাউল করিম জানান, সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা ছাড়াও পর্যটকদের নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থায় টহলে ছিল পর্যটক সহায়ক পুলিশ সদস্যরা। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এম, মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক বলেন, ঈদের ছুটির সময় পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে বলে তাদের নিরাপত্তা সদা সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।
নয়নাভিরাম মাধবপুর লেইকে সবার আকর্ষণ ছিল উঁচু টিলার উপর উঠে নিচের অপরুপ হ্রদ অবলোকন করা। এখানেও সন্ধ্যা পর্যন্ত নারী-পুরুষ ও শিশু পর্যটকদের ভিড় ছিল। অপূর্ব সুন্দর হামহাম জলপ্রপাত দেখতেও পর্যটকরা সেখানে গেছেন। তবে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা বলে শক্ত সামর্থ কম বয়সী পর্যটক ছাড়াও কেই সেখানে যেতে দেখা যায়নি। ধলই বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ এলাকায়ও পর্যটকদের ভিড় দেখা গেছে। এবার শমশেরনগর চা বাগানের ভিতরের গলফ মাঠেও প্রচুর পরিমানে পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া কমলগঞ্জের সবগুলো চা বাগানের প্লান্টেশন এলাকায় শিশু কিশোর নারী পুরুষ পর্যটকরা প্রবেশ করে ছবি তুলো ভ্রমনকে স্মৃতিময় করে রাখার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
বি-বাড়িয়া থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসা পর্যটক রাশেদুল হাসান, হবিগঞ্জের কলেজ ছাত্রী মুন্না বেগম জানান, এবার মাধবপুর লেইকে ঘুরতে এসেছি। যা দেখলাম সত্যিই অপূর্ব। এখানে না আসলে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্যরে লীলানিকেতন দেখতে পারতাম না। চা বাগানসহ এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক।
কমলগঞ্জ থানার ওসি বদরুল হাসান জানান, এবারের ঈদ উল ফিতরের টানা ছুটিতে কমলগঞ্জের নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বরাবরের মতো এবারও ঈদে পর্যটকদের প্রচুর ভিড় বাড়ছে। সবকিছু মিলিয়ে পর্যটকরা আনন্দিত।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানান, কমলগঞ্জের পর্যটন স্পটগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যটন ষ্পটগুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
মন্তব্য করুন