উদ্যোক্তা ঃ দক্ষতা ও সফলতা
মোহাম্মদ আবু তাহের॥ ৩ অক্টোবর ২০১৯ আমার স্মরণীয় দিনগুলির একটি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পে মৌলভীবাজারের উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ গ্রহন করে অভিভূত হয়েছি। অত্যন্ত দক্ষ ও পরিশীলিত মাস্টার ট্রেইনার মো: নিয়াজ মোর্শেদের আমন্ত্রনে প্রশিক্ষক হিসেবে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী ও ব্যাংক ঋণ গ্রহণে উপস্থাপন কৌশল এবং ঋণ ও বীমা বিষয়ে বক্তব্য রেখেছি। অংশগ্রহনকারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহ, আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা ছিল অনেক বেশী, যে কারনে জীবনে প্রথম বিরতিহীনভাবে সাড়ে তিন ঘন্টা দাঁড়িয়ে কথা বলা সম্ভব হয়েছে। তাদের সাথে কথা বলে বক্তব্য দিয়ে এই কবিতার লাইন গুলো মনে পড়ছিল বারবার “আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাইরে, কর্মী হবার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাইরে”। শিক্ষিত ও সম্ভাবনাময় তরুণ উদ্যোক্তাদের উৎসাহ, উদ্দীপনা এবং সরকারের অসাধারণ উদ্যোগ আয়োজনই আমাকে আজকের এই নিবন্ধ লিখতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। সারাদেশে ২০২১ সালের মধ্যে ২৪,০০০ উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বিনিয়োগ বিকাশ করে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত করার সাহসী পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই। বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা শুরুর প্রক্রিয়া আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। ব্যবসা সহজ করার সূচকে ৮ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের ‘ইজি অব ডোয়িং বিজনেস’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর ১৯০ টি দেশের মধ্যে ১৭৬ তম স্থান থেকে এবার ১৬৮ তম স্থানে উঠে এসেছে সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে ব্যবসা সহজ করার সূচকে সবচেয়ে বেশী উন্নতি করা ২০টি দেশের নাম প্রকাশ করেছিল ওয়াশিংটনভিত্তিক দাতা সংস্থাটি। সেখানেও জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগও বাড়ছে। বিনিয়োগ পরিস্থিতির উপর আস্থা রেখে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ছুটছেন দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে। যার ফলে বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের ইতিবাচক প্রবাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনা। বাংলাদেশের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মনোভাব অক্ষুন্ন থাকলে অচিরেই এ দেশ হয়ে উঠবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র। বেশ কয়েক বছর ধরে সামাজিক সূচকে সাফল্যের শিখরে থাকা বাংলাদেশ এবার চমক দেখাচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্যের আন্তর্জাতিক সূচকে। চলতি অর্থবছরের (২০১৯) বিশ্ব অর্থনীতির বড় সূচকগুলোতে একে একে প্রশংসনীয় অবস্থানে চলে এসেছে বাংলাদেশ। বাণিজ্য বিনিয়োগের বাধা কাটাতে গত এক দশকে বাংলাদেশের দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলেই এই অগ্রগতি। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর ২০১৯ ডেভেলপমেন্ট আউটলুক অনুসারে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৪৫টি দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হতে পারে বলে এডিপি জানিয়েছে। এর পরের অবস্থানে ভারত। ভারতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাংক বলছে বিশ্বের দ্রুত বেড়ে উঠা অর্থনীতির শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন সূচক অনুসারে দ্রুততম সময়ে দারিদ্র হ্রাসকারী দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশে দারিদ্রের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে হ্রাস পেয়ে হয়েছে ২১ শতাংশ। অতি দারিদ্রের হার ২৪ শতাংশ হ্রাস পেয়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। এশিয়ার অন্যান্য দেশকে পিছনে ফেলে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪তম। বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখায় চীন, জাপান, সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও ইউরোপের নামিদামি বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে প্রচুর বিনিয়োগ হতে হবে। প্রয়োজনীয় জনবল থাকতে হবে এবং আর্থিক খাত, ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রন ও অবকাঠামো শূণ্যতা পূরনের মতো খাতগুলো সংস্কার করতে হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সে জন্যই সরকারের এ ধরনের উদ্যোগ আয়োজন।
কে উদ্যোক্তা : ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা এমন একজন ব্যক্তি যিনি কর্মী হিসেবে কাজ করার বদলে একটি ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে পারেন। এক্ষেত্রে তাকে ব্যবসায়িক ঝুঁকি ও সফলতার বিষয়ে খুব ভালভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। উদ্যোগ নিয়ে কাজটি শুরু করার জন্য শুধু প্রয়োজন মুলধন আর একটু জ্ঞান। তবে সফল উদ্যোক্তা হতে হলে আরেকটি খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান দরকার আর তা হলো উচ্চাকাংখা। যে কোনো উদ্যোক্তার সাফল্যের জন্য এই উচ্চাকাংখা দরকার। উদ্যোক্তা যে কোন মানুষই হতে পারে কিন্তু উচ্চাকাংখা না থাকলে আইকনিক উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। উদ্যোক্তা কয়েক ধরনের হতে পারে যেমন- সারভাইভাল এন্টারপ্রিনিয়ারশীপ ( টিকে থাকার জন্য উদ্যোগ), এ ধরনের উদ্যোক্তার উদ্যোগ নেয়ার পেছনে থাকে প্রয়োজন। আর্থিক বা অন্য কোন প্রয়োজন থেকে শুরু হতে পারে এই উদ্যোগ। এ ধরনের উদ্যোক্তাদের আকাংখার ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। জীবন ধারা পরিবর্তনের লক্ষ্যে উদ্যোগ- (লাইফ স্টাইল এন্টারপ্রেনিয়ারশীপ), কোন ব্যক্তি যদি কোন একটি নির্দিষ্ট কমিউনিটির সদস্য হতে চান বা সামাজিক ভাবে একটি স্থানে পৌছাতে চান তখন এই উদ্যোগ গ্রহন করেন। এই উদ্যোক্তার আকাংখার যোগান থাকে ঠিক সেই পর্যন্ত যতক্ষণ না তিনি সেই জায়গায় পৌছাচ্ছেন। তারপর থেকেই সাধারণত আকাংখার ঘাটতি দেখা যায়।
উচ্চাকাংখী উদ্যোক্তা (এমভিসাছ এন্টারপ্রেনিয়ারশীপ) : এ ধরনের উদ্যোগের লক্ষ্যই থাকে উন্নতি। তাদের মধ্যে প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওযার প্রবনতা পরিলক্ষিত হয়। এ ধরনের উদ্যোক্তার আকাংখা থাকে বেশী। বিচক্ষণতা, শিক্ষা ও জ্ঞানের ঘাটতি থাকলে উচ্চাকাংখী উদ্যোক্তা হওয়া যায় না। এই ঘাটতি পূরণ করে নিজেকে শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে সবচেয়ে ফলপ্রসু বিনিয়োগ হলো নিজের উপর বিনিয়োগ। নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জনে বিনিয়োগ। আতœবিশ্বাস: একজন উদ্যোক্তা হতে হলে আতœবিশ্বাস থাকা খুবই জরুরী। সফল উদ্যোক্তা হতে হলে কোন চ্যালেঞ্জের কাছে হার মানা যাবে না। ভেঙ্গে পড়া যাবে না কখনো, যে কোনো সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হতে হবে। সত্যিকারের উদ্যোক্তা হতে হলে ভূল থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে হবে, দ্বিতীয়বার যাতে ভূল না হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। উচ্চাকাংখী উদ্যোক্তাদের লক্ষ্য কেন্দ্রিক মানসিকতা থাকতে হবে। লক্ষ্য অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। ধৈর্য্যরে কোন বিকল্প নেই। অনেক সময় দেখা যাবে পরিশ্রম ও বিনিয়োগ করার পরও আশানুরূপ ফল পেতে দেরী হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ধৈর্য্য ধরা প্রয়োজন। এছাড়াও নেতৃত্বগুণে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিয়ে যায়। যথাযথ প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে নেতৃত্বগুন অর্জন করা যায়।
টেকসই অর্থনীতিতে উদ্যোক্তাদের ভূমিকা: আমাদের দেশের জনসংখ্যার অধিকাংশই তরুণ। আমরা যদি এই তরুণ সমাজকে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরী করতে পারি তাহলে দেশের অর্থনীতির চেহারাই বদলে যাবে। উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা যে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি উন্নত দেশের সফলতার ইতিহাস মূলত সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তাদের সক্রিয় ও গঠনমূলক ভূমিকারই ইতিহাস।
সফল উদ্যোক্তা হওয়ার মূল মন্ত্রগুলো নিম্নরূপ:
১. সব সময় ইতিবাচক থাকতে হবে।
২. লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে
৩. স্বাধীন ও মুক্তভাবে চিন্তা করতে হবে।
৪. লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
৫. কেন কি করছি সেই উদ্দেশ্য ঠিক থাকতে হবে।
৬. ধৈর্য্য ধরতে হবে এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শেখার চেষ্টা করতে হবে।
৭. টাকা পয়সা নয় মানুষই সবচেয়ে বড় সম্পদ, কাজেই মানুষের উপর আস্থা রাখতে হবে এবং মানুষকে সম্মান দিতে হবে।
বৃটিশ পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং এর মতে, জীবন যতই কঠিন মনে হোক না কেন, সবসময় তোমার নিশ্চয়ই কিছুনা কিছু করার এবং সফল হওয়ার সুযোগ আছে। শিক্ষাজীবন শেষ করার পর যুবসমাজের একটি চাকুরী খোঁজার জন্য এখানে-ওখানে ধরনা দেওয়া একজন শিক্ষিত যুবকের জন্য রীতিমত অপমানজনক। চাকুরী না করে উদ্যোক্তা হতে পারলে নিজের পায়ে যেমন দাড়ানো যায় অন্যদেরও কর্মসংস্থান করা যায়। দেশকেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
সফল হওয়ার জন্য লক্ষ্য অটুট থাকা চাই: সফল হওয়ার স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি। বর্তমান বিশ্বে সফল মানুষ বললেই বিল গেট্স/মার্ক জাকারবার্গ/ স্টিভ জবসের নাম সবার আগে উঠে আসে। আমরা বিনিয়োগকারী/আমরা উদ্যোক্তা/আমরা ব্যবসায়ী/আমরাও সফল হতে চাই, কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগে এই পৃথিবীতে আমাকে দিয়ে কি হবে ? আমার অনেক সীমাবদ্ধতা/ আমার যোগ্যতা অনেক কম। আমি অযোগ্য আমার টাকা নেই, ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ধরনের প্রশ্নের জবাব পেতে পারেন, পৃথিবীতে যারা সফল হয়েছেন তারাও একদিন আপনার আমার মতোই ছিলেন। তাদের অনেকেই দারিদ্র কিংবা মেধাহীনতার কারণে একাডেমিক ক্যারিয়ার পর্যন্ত তৈরী করতে পারেননি। শুধু তাই নয় কেউ শারীরীক প্রতিবন্ধী হয়েও বিশ্বসেরা হয়েছেন।
প্রথমেই অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের গল্প বলি:- অর্থাভাবে স্টিভ জবসকে দত্তক দিয়েছিলেন তার মা। টাকার অভাবে ১৭ বছর বয়সে কলেজ ছাড়তে হয় তাকে। এক বেলা ভাল খাবারের আশায় প্রতি রোববার সাত মাইল হেঁটে হাজির হতেন উপাসনালয়ে। সেই জবসই আজকের স্টিভ জবস। বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান প্রথম জীবনে মুম্বাই এসে পার্কের বেঞ্চিতে ঘুমাতেন। খেতেন বন্ধুদের কাছে ধারকর্য করে। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী এ.পি.জে আব্দুল কালাম তখন ১০ বছরের শিশু, ভোর সাড়ে চারটায় ঘুম থেকে উঠে যেতেন ফ্রি প্রাইভেট পড়তে। পড়া শেষ করে খবরের কাগজ বিক্রি করতেন। তারপর স্কুল, বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে এসে হেঁটে শহরে যেতেন পাওনা টাকা আদায় করার জন্য। এভাবেই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি বেড়ে ওঠেন। বাংলাদেশের তরুণ আশিক আহমেদ অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন ১৭ বছর বয়সে, এখন তার বয়স ৩৮। ডেপুটি নামে একটি সফটওয়্যার তৈরী করেছেন তিনি। আশিক এখন অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ ধনীর তালিকায়। ১১ বছরে আশিক বাংলাদেশী মুদ্রায় ১ হাজার ১৮৫ কোটি ৭৮ লাখেরও বেশী টাকার মালিক হয়েছেন। শীর্ষ ধনী তরুনদের তালিকায় থাকার প্রতিক্রিয়ায় আশিক বলেন অর্থবিত্ত অর্জনের জন্য আমি সফটওয়্যারটি তৈরী করিনি। সমস্যা সমাধান করতে কাজটা করেছি। অন্য মানুষের জীবন সমৃদ্ধ করার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা। কাজেই আমি ধনীর তালিকায় থাকলাম কি থাকলাম না, তা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। প্রতিদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে আমি যে কাজে বের হই, তাতে কোনো পরিবর্তন আনবেনা এই তালিকা।
ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়ার উপায়:- চাকুরীর বাজারে চরম প্রতিযোগতিার কারণে বাংলাদেশে অনেক শিক্ষিত বেকার রয়েছেন। অনেকেই ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা হতে চান। যে কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসাসহ অনেক ব্যবসারই প্রসার ঘটছে। যে কোন মানুষের ব্যবসায় সফল হতে হলে ব্যবসা সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা থাকতে হবে। চিন্তা করতে হবে কোন ব্যবসা বর্তমান প্রেক্ষাপটে এগিয়ে রয়েছে। ভোক্তাদের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গ্রাহকরাই একজন ব্যবসায়ীর মূল ভরসা বলা যায়, গ্রাহকরাই সম্পদ। গ্রাহক সন্তুষ্টি দেখতে হবে সবার আগে। সততা হলো একজন সফল ব্যবসায়ীর বড় গুণ। ব্যবসায়ীর যদি সততা থাকে তাহলে ভোক্তাগণ তার কাছে ভিড় করে। যেসব দেশ সাম্প্রতিককালে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেসব দেশের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে দেখা যায় সরকার ব্যবসায়ীবান্ধব হওয়ার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। আমাদের দেশেও এমন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু দক্ষতার প্রয়োজন হয়। যেমন উদ্ভাবনী দক্ষতা, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন হওয়ার যোগ্যতা, বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার দক্ষতা, নেতৃত্ব প্রদান, কম সময়ের মধ্যে জটিল সব সমস্যার সমাধান করার দক্ষতা, গভীরভাবে চিন্তা করার দক্ষতা। আইনস্টাইন বলেছেন :-“ইমাজিনেশন ইজ মোস্ট পাওয়ারফুল দ্যান নলেজ”।
বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। সব কিছুই প্রযুক্তি নির্ভর হতে যাচ্ছে। এই দ্রুত পরিবর্তশীল পৃথিবীর পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের সবাইকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই পরিবর্তন হতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশই হলো শিশু-কিশোর অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮ বছর হয়নি। সেই হিসেবে দেশে প্রায় ছয় কোটি শিশু রয়েছে। যারা ২০৩০ সালে চাকুরি বাজারে প্রবেশ করবে। যখন প্রযুক্তি আরো উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করবে। প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে আমাদের তরুণরা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। সরকারের উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তরুণ বেকার জনগোষ্ঠিকে উৎপাদনমুখী অর্থনীতির মূলধারায় সম্পৃক্ত করা যাবে বলে মনে করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ অক্টোবর ২০১৯ দিল্লীতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক সামিটে অংশ নিয়ে বলেছেন, বিনিয়োগের উর্বর ক্ষেত্র এখন বাংলাদেশ। তিনি বলেন প্রচলিত ক্ষেত্রগুলো ছাড়াও শিক্ষা, ইলেকট্রনিকস, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং ও গাড়ি শিল্প ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ কেন বিনিয়োগের উর্বর ক্ষেত্র, তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন ভারতের পূর্ব ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিতির কারণে বাংলাদেশকে চীন ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সিংহদুয়ার বলা যেতে পারে। এ কারণে এই উপমহাদেশের প্রকৃত অথনৈতিক ক্ষেত্র হিসাবে গড়ে ওঠার সব সুবিধা বাংলাদেশের রয়েছে। বাংলাদেশ অতিদ্রুত নগরায়ন হচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ৪৮ শতাংশ মানুষ নগরবাসী হবেন। এদের অধিকাংশই তরুণ টগবগে এবং ডিজিটাল কানেকটেড। নতুন ভাবনা, নতুন ধারণা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এই জনসমষ্টি সম্পদ আহরণে আগ্রহী। দেশের সোয়া ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে তিন কোটি মধ্যবিত্ত। ভৌগলিক উপস্থিতির দরুণ বাংলাদেশ তিনশ কোটি মানুষের কাছে যোগাযোগের সেতু হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলছে। এই দেশ তাই বিদেশী বিনিয়োগের উপযুক্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে বহুজাতিক ব্যাংক এইচ এস বিসি’র ভবিষ্যৎবাণীর কথা মনে করিয়ে দেন। ব্যাংকটি বলেছিল বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর ২৬ তম বৃহত্তম অর্থনীতি হবে। কেন সে ভবিষ্যৎবাণী সত্য হবে তা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দুটি বিষয় মনে রাখা জরুরী প্রথমত বাংলাদেশের সমাজ উন্মুক্ত, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে, মূল্যবোধ আধুনিক ও উদার এবং সংস্কৃতি ধর্মনিরপেক্ষ। দ্বিতীয় গুরত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো দেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ তরুণ। এই তরুণ সমাজ দ্রুত দক্ষ হয়ে উঠছে। প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের চটজলদি মানিয়ে নিচ্ছে এবং প্রতিযোগিতামূলক মজুরিকে মেনে নিতে প্রস্তুত। সরকারের দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের উজ্জল সম্ভাবনা আরো বেশি বেগবান হবে এই প্রত্যাশায় লেখাটি শেষ করছি। লেখক- ব্যাংকার, কলামিস্ট ও গবেষক।
মন্তব্য করুন