“উন্নত নৈতিকতা সম্পন্ন শক্তিশালী জাতি-জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠনে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ মিডিয়ার ভূমিকাও অবদানঃ সংবাদপত্র শিল্পের সেকাল থেকে একালের কথা ও কাহিনী॥
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়া আধুনিক কল্যান কামি রাষ্ট্রের-চতুর্থ স্তম্ভ-হিসাবে খ্যাত ও স্বীকৃত। প্রসঙ্গঁত উল্লেখ্যঃ রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ হল ক. লেজিসলেছার, খ. জুডিশিয়ারি ও গ. এগজিকিউটিভ। সংবাদ পত্র দেশ ও জাতির দর্পন। হাল আমলে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার আবিষ্কার ও অভ্যোদ্যয় মিডিয়া ভূবনে সৌকর্য্য, সৌন্দর্য্য ও পূর্ণতা এসেছে। সুষমা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংবাদপত্র শিল্পের আদি কাল থেকেই বৃহত্তর সিলেট বাসির গৌরবোজ্জল ভূমিকা ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
সাত শতাধিক বৎসরের গৌরবোজ্জল ইতিহাস-ঐতিহ্যের অধিকারি বৃহত্তর সিলেট। প্রাচীন কালে সমগ্র বৃহত্তর সিলেট ১. লাউড়, ২. গৌড়. ৩. জৈন্তা, ৪. তরফ ও ৫. ইটা এই বৃহৎ পাঁচটি সামন্ত রাজ্যে বিভক্ত ছিল। সামন্ত রাজ্য গুলির শুধুমাত্র রাজধানী ও রাজরানী ছিল না, সভ্য সমাজ, শিক্ষিত জনপদ, শিল্প সাহিত্য সাংস্কৃতিক কার্য্যক্রমও ছিল।
বৃহত্তর সিলেটের দক্ষিন পূর্বাঞ্চল নিয়ে আধুনিক মৌলভীবাজার জেলার অবস্থান। ১৮৮২ সালে তৎকালীন বৃটিশ সরকার তাদের প্রশাসনিক প্রয়োজনে সিলেটের দক্ষিনাঞ্চল নিয়ে “সাউথ সিলেট সাবডিভিশন”- নামে একটি মহকুমা গঠন করেন। ১৯৬০ সালে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক আব্দুছ ছাত্তার (পরে ডক্টর। সচিব। পরলোকে।) এর কার্য্য কালে দক্ষিন শ্রীহট মহকুমা, মৌলভীবাজার মহকুমা নামধারন করে। বৃটিশ ভারতে সংবাদপত্র শিল্পের প্রাথমিক যুগে তৎকালীন দক্ষিন শ্রীহট্রের কৃতি সন্তানগন সংবাদ পত্র সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে সংবাদপত্র প্রকাশের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। এদের মধ্যে গৌরি শংকর তর্ক বাগীশ, আলতাফ হোসেন এবং অগ্নি যুগের অগ্নিকন্যা লীলা নাগ এর কথা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। রাজনগর পাঁচ গায়ের কৃতি কন্যা লিলা নাগ ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় এর প্রথম ব্যাচ এর ইংরেজী বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। বৃটিশ ভারতের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট গিরিশ চন্দ্র নাগ এর কন্যা লীলা নাগ কৃতিত্বের সাথে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে সরকারি উচ্চ পদের লোভনীয় চাকরিতে যোগ না দিয়ে ভারত মাতার মুক্তি আন্দোলনে যোগদেন। বিপ্লবি অনিল রায় এর সঙ্গেঁ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মিসেস লীলা রায় হন। দেশ ও নারী মুক্তি আন্দোলনের অগ্র নায়িকা লীলা নাগ পুরাতন ঢাকায় নারী শিক্ষা মন্দির এবং মাসিক জয়শ্রী পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৩০ সালের দিকে প্রকাশিত মাসিক জয়শ্রী উপমহাদেশের প্রাচীন সংবাদপত্র এবং লীলা নাগ প্রথম কাতারের নারী সম্পাদিকা ছিলেন। ডেইলি ডন উপমহাদেশের প্রথম কাতারের প্রাচীনতম খান্দানি বনেদি দৈনিক। বৃটিশ ভারতের শেষ ভাগে পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এই জাতীয়, দৈনিকটির খ্যাতিমান সম্পাদক ছিলেন কুলাউড়ার কৃতি সন্তান আলতাফ হোসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচ এর কৃতি ছাত্র। ইংরেজী বিভাগের প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের অসম্ভব রকমের মেধাবী ছাত্র আলতাফ হোসেন দেশবাসির মুখ উজ্জল করেছিলেন। ইংরেজী ভাষাও সাহিত্যে প্রজ্ঞা ও পান্ডিত্যের অধিকারী আলতাফ হোসেন বিশ্ববিখ্যাত ইংরেজী দৈনিক-ডন-এর সম্পাদক হিসাবে যোগ দিয়ে পত্রিকাটির মান মর্য্যাদা পাঠক প্রিয়তার চূড়ান্ত পর্য্যায়ে নিয়ে গিয়ে ছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে ডেইলি ডন ও আলতাফ হোসেন একাকার হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন সততা সুনাম কৃতিত্ব ও সাফল্যের সাথে ডেইলি ডন এর সম্পাদকের গুরুদায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই সময়ের আরো দুইজন কৃতি সাংবাদিক হলেন নিকুঞ্জ বিহারি গোস্বামী এবং মৌলভী সনাওর আলী। শ্রীমঙ্গঁলের বিখ্যাত কালাপুরি গোসাই বাবু নিকুঞ্জ বিহারি গোস্বামী স্থায়ী ভাবে সিলেটে বসবাস করতেন। ইটা উলুয়াইলের মৌলভী ছনাওর আলী ১৯৩৭ সালে কুলাউড়া থেকে বের করেছিলেন সাপ্তাহিক নকীব। ছনাওর আলী একজন কবি, পেশাদার শিক্ষক ও পরে আসাম বাংলার বিখ্যাত চুক্তিকারক-ব্যবসায়ী হয়েছিলেন। যুগভেরী-উপমহাদেশের আরেকটি প্রাচীনতম সংবাদ পত্র। ১৯৩০ সালে সিলেট সদর থেকে পত্রিকাটি প্রকাশ করেন ঐতিহ্যবাহী রশিদ পরিবারের কৃতি সন্তান, বলিষ্ট ব্যক্তিত্ব আব্দুর রশীদ চৌধুরী। অনেক ঘাত প্রতিঘাত-চড়াই উৎরাই পেরিয়ে যুগভেরী দৈনিক হয়ে এখন ও নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। মায়ের মমতা দিয়ে পত্রিকাটিকে টিকিয়ে রেখেছিলেন সিলেটের বড় আম্মা-রত্ন গর্ভা রমনী বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী। তিনি রাজনগর দেওয়ান বাড়ির কৃতি কন্যা। যুগভেরী বৃটিশ ভারতে আসাম বাংলা, পাকিস্তানী ও বাংলাদেশ আমলে সমগ্র বৃহত্তর সিলেটে লেখক-সাংবাদিক সৃষ্টি সংবাদপত্র শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। প্রাপ্তি যোগের প্রত্যাশা কিংবা কোন বানিজ্যিক মনোবৃত্তি নয় শুধু ঐতিহ্যকে ধারন-লালন করার জন্য আর্থীক ক্ষতির মুখেও পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছেন আব্দুর রশীদ চৌধুরী-আমিনুর রশীদ চৌধুরীর সুযোগ উত্তরসূরীগণ। বর্ত্তমানে দৈনিক যুগভেরীর নির্বাহী সম্পাদক এর গুরু দায়িত্ব পালন করছেন এই মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গলের সু-সন্তান অনুসন্ধানী সাংবাদিক-লেখক অপূর্ব শর্ম্মা।
সাত চল্লিশে ভারত বিভক্তি, বৃটিশ বিদায় এবং পাকিস্তানী স্বাধীনতার পর ও বাংলাও বাঙ্গাঁলীর ভাগ্য উন্নয়ন হয়নি। বরং ক্ষমতাসীন ক্ষমতালিপ্সু লীগ সরকার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত ও চীর স্থায়ী করার হীন মানসে ডিপিআর, এবডো, প্রডো জাতীয় কালা কানুন চালু করে বাংলা ও বাঙ্গাঁলরি মৌলিক অধিকার, জীবনবিকাশ ও জীবনচর্চা ব্যাহৃত বিঘ্নিত করেছে।
ফলতঃ এই মফস্বল শহরে সংবাদ পত্র প্রকাশ ছিল অচিন্তনীয়, জাতীয় পত্রিকার হাতে গোনা স্থায়ী প্রতিনিধি মারফত সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা সংক্রান্ত কার্য্যক্রম টিমটিম হাটি হাটি পা পা করে করে চর্চাও চালু ছিল।
বর্ত্তমান পাবলিক লাইব্রেরীর লগ্ন দক্ষিনাংশে পাকা দেয়ালে ঘেরা চারচালা একটি মাজারি সাইজের ঘর ছিল- যা ছিল প্রেসক্লাব। জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ভূমিতে অবস্থিত প্রেসক্লাবটি ছিল মফস্বল এলাকায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র প্রেসক্লাব। বিভিন্ন কারন ও ঘাত প্রতিঘাতে জেলা পরিষদের পক্ষে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসন গৃহ ও ভূমির মালিকানা দখল করেন। তখন প্রেস ম্যানদের স্বল্পতা, প্রেসক্লাবের সাংঘটনিক দূর্বলতার কারনে প্রেসক্লাবটি রক্ষা করা যায় নি। স্বাধীনতা উত্তর কালে পৌরসভা থেকে ভূমি বরাদ্দ নিয়ে বর্ত্তমান প্রেসক্লাব ভবন নির্মিত হয়। আমার সাংবাদিকতা, লেখালেখি ও সমাজ কর্মজীবনের সৌভাগ্য এই যে, আমার হাত দিয়েই এমন মহৎ কর্ম শুরু হয়েছিল, প্রেসক্লাবের নির্মান কাজের সঙ্গেঁ সম্পৃক্ত ছিলাম। প্রসঙ্গঁত উল্লেখ যোগ্য যে, এখানে প্রেসক্লাব নির্মাণের পূর্বে কোন কমিটি ছিল না। তখন সাংবাদিক সমিতির ব্যানার এ- সাংবাদিকতা সংক্রান্ত কার্য্যক্রম চলত। এখানে সাংবাদিক সমিতির নেতা ও সভাপতি ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক সর্বজন শ্রদ্বেয় বাবু রাধিকা মোহন গোস্বামী। তাঁর বাসা রোহিনী ভবন এবং তাঁর চৌমুহনাস্থ চেম্বার, রোহিনী হোমিও হল- কেন্দ্রীক এ সব কার্য্যক্রম চলত।
বিশেষতঃ তাঁর সেন্ট্রাল রোডস্থ বিশাল বাসভবন রোহিনী ভবন ছিল সাংবাদিক শিল্পী সাহিত্যকদের মিলন কেন্দ্র। রাজনীতি গত ভাবে তিনি বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-ন্যাপ এর কেন্দ্রীয় কর্মকর্তা ছিলেন। আমার বয়োঃ জ্যৈষ্ট হলেও আমাকে সহোদরের মত স্নেহমমতা করতেন, সম্মান ও দিতেন। তাঁর সুযোগ্য সন্তান অধ্যাপক রজতকান্তি গোস্বামী আমাকে সসম্মানে কাকাই ডাকেন, তিনি ও সাংবাদিকতায় সম্পৃক্ত আছেন। আমার বন্ধু বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট সাংবাদিক হারুনুর রশীদ এডভোকেট দীর্ঘদিন মহুকুমা সাংবাদিক সমিতির সেক্রেটারী ছিলেন। আমাদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন শফিউদ্দিন আহমদ শফি ভাই। স্বাধীনতা উত্তর কালে পত্র পত্রিকা ও সংবাদ কর্মির সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে আমরা প্রেসক্লাবের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। বাবু রাধিকা মোহন গোস্বামীর বাস গৃহ রোহিনী ভবনের সাংবাদিকদের একটি সভায় প্রেসক্লাবের কমিটি গঠনের লক্ষে আমাকে আহ্বায়ক নির্বাচিত করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। মেয়াদ মধ্যেই একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। সর্ব সম্মতিক্রমে প্রেসক্লাবের প্রথম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন দৈনিক ওবজার্ভর প্রতিনিধি বিশিষ্ট সাংবাদিক-ষাটের দশকের বাম প্রগতিশীল আন্দোলনের বলিষ্ট নেতা জনাব শফকতুল ওয়াহেদ, সেক্রেটারি নির্বাচিত করা হয় আমাকে। আমি ষাটের দশক থেকে আমার ঘনিষ্ট বন্ধু আজিজুল হক ইকবাল-কে নিয়ে সাংবাদিকতা ও লেখা লেখিতে জড়িত হই। সাংবাদিক হিসাবে আমি দৈনিক গনকন্ঠ, দৈনিক বাংলা, বি.টি.ভি. বি.এস.এস. বি.পি.আই-এ- কাজ করেছি। কলামিষ্ট হিসাবে এখনও এই পড়ন্ত বেলায় সংবাদ পত্রের সেবায় অনিয়মিত ভাবে হলেও গ্রহ্ন প্রকাশ করছি। ষাটের দশক থেকে প্রকাশনা- সম্পাদনায় ও ছিলাম। আশির দশক থেকে অনিয়মিত ভাবে হলেও মৎ সম্পাদিত ও প্রকাশিত রাজনীতি ও রম্য সাপ্তাহিক মৌলভীবাজার দর্পন বের করেছি। ফখর উদ্দীন মঈনুদ্দীনের দীর্ঘ মেয়াদী তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পত্রিকাটির ডিকলারেশন বাতিল করে দেয়। এই পরিণত বয়সে আমার পক্ষে আর ডিকলারেশন নেয়া-দর্পন বের করা সম্ভব হয় নি। এখন পরিশ্রমী ও অনু- সন্ধানী সাংবাদিক শেখ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ-দের-ই-সময়। অভিজ্ঞতা ও উচ্ছল তারুন্যের দিপ্তীতে ভরপুর শেখ সিরাজ পেশার প্রতি আনুগত্য, নিখাদ দেশ প্রেম, পাঠকদের বিম্বাস ও ভালোবাসায় বলিয়ান হয়ে সেই যে শুরু করেছিল মৌমাছি কন্ঠ বন্ধুর পথপেরিয়ে পত্রিকাটি সাপ্তাহিক থেকে দৈনিক হয়ে এখন নিয়মিত বের হচ্ছে। মফস্বলে একটি দৈনিকের নিয়মিত প্রকাশ কঠিন, জটিল ও দুঃ সাহসী কাজ। দৈনিক মৌমাছি কন্ঠের বর্ষপূর্তিতে অনুষ্ঠানাদির আয়োজন এবং ক্রোড় পত্র প্রকাশ ও একটি আনন্দ সংবাদ-শুভ সংবাদ। এই শুভ কর্মের জন্য পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক শেখ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ এবং তাঁর সহযোদ্ধা-সহকর্মিগণকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। এই শুভানুষ্ঠানের আয়োজনে পত্রিকাটির সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি, বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা আমার প্রিয় মকিছ মনসুর স্নেহভাজনেষুর বলিষ্ট উদ্যোগ মানব প্রেমও পত্রিকা প্রীতি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
স্বাধীনতা উত্তর কালে স্বাধীন বাংলার এক ঝাক-উজ্জল-উচ্ছল তরুন স্বদেশ প্রেম ও স্বাদেশিকতায় উদ্ভোদ্ধ হয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্থ বাংলাদেশের পূনর্গঠনে আত্ব নিয়োগ করেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গঁন ও কবিতার ভূবনে নবজাগরন দেখা যায়, একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। রাজধানী ঢাকার মত জেলা ও মহকুমা শহর গুলিতে পত্র পত্রিকা প্রকাশ শুরু হয়। জাতীয় দৈনিক-সাপ্তাহিক সমূহের আঞ্চলিক-স্থানীয় প্রতিনিধিগণ অনুসন্ধানী ও গবেষনা মূলক সাংবাদিকতার মাধ্যমে সংবাদপত্র জগতকে সম্বৃদ্ধ করেন। আমি নিজে মাস্টার্স শেষে ঢাকায় একটি জাতীয় দৈনিকের কার্য্য নির্বাহী সম্পাদক হিসাবে কর্ম জীবন শুরু করলেও বিভিন্ন ঘটনা-দূর্ঘটনার কারনে টিকে থাকতে পারিনি আইন অধ্যয়ন শেষে আমাদের বারে যোগ দেই। পরিশ্রমী সাংবাদিক অনুজ প্রতিম মতিউর রহমান চৌধুরী অধ্যবসায়, অধ্যয়ন ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে টিকে রয়ে ছিলেন বলে আজ বাংলাদেশের মিডিয়া ভূবনের প্রিয় মুখ- বলিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
ঐতিহ্যবাহী মৌলভীবাজার এর শুধু সদর নয় উপজেলা পর্য্যায়েও পত্র পত্রিকা বের হয় বেরুচ্ছে। জেলা সদরে সৈয়দ আবু জাফর আহমদ সম্পাদিত মনু বার্তা মানসম্মত সাপ্তাহিক হিসাবে দীর্ঘদিন বের হয়েছিল। তৎপূর্বে স্বাধীনতা উত্তর কালে আমার দুই বন্ধু সতীর্থ গোলাম ছবোওয়ার হাদি গাজির সম্পাদনায় সাপ্তাহিক বিল্পবি বাংলা, হারুনুর রশীদ এর সম্পাদনায় মুক্ত কথা বের হয়েছিল। হাদি গাজি পরলোকে। হারুনুর রশীদ পরবাসে। বর্ত্তমানে মুশতাক চৌধুরীর সম্পাদনায় সাপ্তাহিক মৌলভীবাজার সমাচার, বকশি ইকবাল আহমদ এর সম্পাদনায় বাংলার দিন, সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীন এর সম্পাদনায় সাপ্তাহিক পাতাকুড়ির দেশ জসিম উদ্দিনের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক মনু বার্তা বেরুচ্ছে। এছাড়াও জেলা ও উপজেলা সদর থেকে আরো পত্র পত্রিকা অনিয়মিত আকারে বের হচ্ছে। পত্রিকা সমূহের মধ্যে সাপ্তাতিক পাতাকুড়ির দেশ বরাবরই নিয়মিত মানসম্মতও বটে। সংবাদ পত্র দেশ ও জাতির দর্পন। একজন সাংবাদিক-কলম সৈনিক-সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের নির্ভীক সৈনিক-জনগনের কাছের মানুষ-প্রিয় মানুষ। দেশ ও জাতির অতদ্র প্রহরি হিসাবে বস্তুনিষ্ট সাংবাদিক গন সময়ে সময়ে দেশ ও জনগনের পাশে এসে ঈমানী দায়িত্ব পালন করেছেন জনতার ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের সেতু বন্ধন সুদৃঢ় ও মজবুত করেছেন। উনসত্তোর এর ছাত্র গন অভোত্থান এবং মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে নির্ভীক কলম সৈনিকদের সংগ্রামী ভূমিকাও অবদান স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে গৌরবোজ্জল অধ্যায়।
ড.ফখরুদ্দীন আহমদ এর নেতৃত্বাধীন দুই বৎসর মেয়াদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারামলে দেশে নির্বাচিত সরকার, সংসদ, জনপ্রতিনিধিত্ব না থাকায় প্রেস ও মিডিয়া জাতির বিবেক হিসাবে জনতার কাতারে এসে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। বর্ত্তমানেও দেশে সত্যিকার অর্থে কার্য্যকর বিরোধীদল না থাকায় মিডিয়া, গণতন্ত্র, সুশাসন ও জন অধিকার রক্ষা ও প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত আছেন। মিডিয়া ম্যান একজন শাইখ সিরাজ বাংলাদেশের কৃষিকে ছাদ কৃষিতে পরিণত করতঃ একটি সামাজিক আন্দোলনে রুপায়িত করেছেন। অনুসন্ধানী ও মাঠ সাংবাদিকতায় খুঁজ, তালাশ, জাতীয় কর্মসূচী এবং অখিল পোদ্দার, মুন্নি সাহা, কনক ছরোওয়াদের ভূমিকা খুবই সমুজ্জল।
এ লেখা জাতীয় স্থানীয় সংবাদ পত্র ও সাংবাদিকতার কোন ইতিহাস সংক্রান্ত রচনা নয়, একটি দৈনিকের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ছয় দশকের একজন নগন্য ও সামান্য কলম সৈনিক হিসাবে অভিজ্ঞতার আলোকে স্মৃতি কথা মাত্র। জ্ঞান ভিত্তিক সুশীল সমাজ গঠনে সংবাদপত্র ও সাংবাদিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও মফস্বল পর্য্যায়ে পত্র পত্রিকা সমূহের প্রয়োজনীয় বিজ্ঞাপন ও পৃষ্ঠ পোষকতা না থাকা এবং প্রয়োজনীয় গ্রাহক-পাঠক না থাকায় মফস্বলি সংবাদ পত্র একদিন মৃত্যোবরণ করে, গবেষকদের গবেষনার বিষয় বস্তুতে পরিণত হয়। শত প্রতিকূলতার মাঝে সাংবাদিক শেখ সিরাজ তাঁর এবং আমাদের মৌমাছি কন্ঠকে টিকিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমার নিজের বাধ্যর্ক্য জনিত বহুবিধ ব্যাধি অসুস্থতা, দূর্বলতার মাঝেও নিয়মিত লিখছি, সম্পাদক শেখ সিরাজের দাবীর প্রেক্ষিতে। সহৃদয় পাঠক পাঠিকার প্রশংসা সুপারিশ ও পাচ্ছি।
“মৌমাছি মৌমাছি, কোথায় যাও নাছিনাছি একটু দাঁড়াও না ভাই”- বলে মৌমাছি-কে উদ্দেশ্য করে যে, কবিতা আছে, সেই সুর ধরেই বলি মৌমাছির মত আমাদের দৈনিক মৌমাছি কন্ঠ ও শেখ সিরাজের দাড়াবার সময় নাই কারণ দৈনিক মৌমাছি কন্ঠ শেখ সিরাজ ও তাঁর সহযোগি, গণকে যেতে হবে অনেক দূর। কাজেই দৈনিক মৌমাছি কন্ঠের এখন এগিয়ে যাবার পালা।
দৈনিক মৌমাছি কন্ঠের এই বর্ষপূর্তিতে মৌমাছির অগণিত পাঠক-পৃষ্ঠ পোষক-শুভানুধ্যায়ী গণকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা, দৈনিক মৌমাছি কন্ঠের পরিবার বর্গকেও প্রীতি রইল। পত্রিকাটির চলার পথ মসৃন হউক-কল্যানময়-হউক এই দোয়া ও শুভ কামনা।
[ষাটের দশকের সাংবাদিক-কলামিষ্ট। মুক্তিযোদ্ধা। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি ও প্রেসক্লাব।]
মন্তব্য করুন