উৎপাদন বাড়াতে ১৮ টন পোনা মাছ অবমুক্ত করা হবে হাকালুকির পানি পুরোপুরি স্বাভাবিক, বুধবার থেকে মাছ ধরা যাবে : জেলেদের মধ্যে স্বস্তি
আবদুর রব॥ হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন বিলের পানি এখন পুরোপুরো স্বাভাবিক।
২৬ এপ্রিল বুধবার থেকে হাওরপারের জেলেরা মাছ ধরতে পারবে বলে প্রশাসন গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে। তবে মৎস্য আইন অনুযায়ী বৈধ পন্থায় মাছ ধরতে বলা হয়েছে। বুধবার থেকে মাছ ধরা যাবে এমন খবরে হাকালুকির পারের ১০ হাজার জেলেদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এসেছে।
এদিকে হাওরে মরে যাওয়া ২৫ টন মাছের ঘাটতি পূরণে ১৮ লাখ পোনা অবমুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা। এরমধ্যে হাওরের বড়লেখা অংশে প্রায় ৬ টন মাছ অবমুক্ত করা হবে।
চলতি মাসে অকাল বন্যায় ধান পচে পানিতে অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের সৃষ্টি হওয়ায় পানি দূষণের কারণে নানা জাতের ২৫ টনেরও বেশি মাছ মারা যায়। এরমধ্যে হাওরের বড়লেখা অংশে মারা যায় প্রায় ১০ টন মাছ।
ধান পচে মাছের মড়কের কারণে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেরা মানবেতর জীবন যাপন করে। আয়ের একমাত্র উৎস মাছ ধরা বন্ধ থাকায় হাওরপারের অধিকাংশ জেলে পরিবারকে না খেয়ে থাকতে হয়েছে। তবে বুধবার থেকে মাছ ধরতে পারবেন এ খবরে তাদের মধ্যে কিছুটাও হলে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে অকাল বন্যায় তলিয়ে যাওয়া আধাপাকা ধান ও ধানগাছ পচে পানিতে অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের সৃষ্টি হওয়ায় পানি দূষণের কারণে হাওরে আইড়, বোয়াল, রুই, কাতলা, কাল বাউস, সরপুঁটি, পাবদা, ঘুলশা, টেংরা, পুঁটি, বাইমসহ নানা জাতের প্রায় ২৫ টনের মাছ মারা গেছে। ধান ও মাছ পচে হাওরের পানি দূষিত হয়ে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
বড়লেখা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার হাকালুকিপারে হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাকালুকি হাওর অংশের ৩৬০০ হেক্টর ধান ২/৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে বর্ণি, সুজানগর ও তালিমপুর ইউনিয়নের ৪১২০ কৃষক পরিবার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ‘অকাল বন্যায় তলিয়ে যাওয়া এইসব আধাপাকা ধান ও ধানগাছ পচে পানির গুণাগুণ নষ্ট করেছে। এছাড়া ধানগাছ এবং ঘাসে নিধনের বিষের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবে হঠাৎ পানির (পিএইচ) কমে যাওয়ায় (বর্তমান পিএইচ-৫.৮) অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি এবং দ্রবিভূত অক্সিজেন হ্রাস (৫ পিপিএম) হওয়ায় ধান ও মাছ পচে হাওরের পানি দূষিত হয়ে পড়ে। এরপর পানি দূষণমুক্ত ও মাছ মড়করোধে গত ১৬ এপ্রিল থেকে হাকালুকি হাওরে বিভিন্ন বিলে মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে চুন ছিটানো হয়। এদিন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপর থেকে পানির গুনাগুণ বাড়তে থাকে। তাছাড় গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়েছে। ফলে অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. আবু ইউসুফ বলেন, হাওরের পানি এখন দূষণমুক্ত। চুন ও ঔষধ প্রয়োগে পানি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়েছে। তাছাড়া মাছ এখন আর মরছে না। জেলেরাও মাছ ধরতে পারবেন। এখন থেকে মাছ খাওয়াও যাবে। এছাড়া মাছের ঘাটতি পূরণে হাওরে ১৮ টন পোনা অবমুক্ত করা হবে।
মন্তব্য করুন