উৎসবমুখর পরিবেবশে কানাডার টরন্টোয় বঙ্গবন্ধুর ৯৮তম জন্মদিবস উদযাপন
সিবিএনএ কানাডা থেকে॥ বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কানাডার বৃহত্তম শহর টরন্টোয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিবস উদযাপন করলো বাংলাদেশ হাই কমিশন। এ উপলক্ষে হাই কমিশনের পক্ষ থেকে টরন্টোর বাংলাদেশী অধ্যুষিত ড্যানফোর্থ এভিনিউয়ের বাংলাদেশ সেন্টারে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ বছর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিষয় ছিলো – “বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, বাংলাদেশের খুশির দিন” (‘ক’ গ্রুপ – ৪ হতে ৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য) এবং “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু” (‘খ’ গ্রুপ – ৯ হতে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য)। রচনা প্রতিযোগিতার বিষয় ছিলো – “মহান নেতা বঙ্গন্ধু” (১৮ বছর পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত)।
গ্রেটার টরন্টোর বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫ জন শিশু টরন্টোয় অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতাটিতে অংশগ্রহণ করে। রঙের তুলিতে তারা অঙ্কিত করে প্রিয় নেতা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মিজানুর রহমান।
অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ আর্ট সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকার সদস্যবৃন্দ। বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রথম সচিব (পাসপোর্ট ও ভিসা) সাখাওয়াত হোসেন, প্রথম সচিব (কন্সুলার) অপর্ণা রাণী পাল এবং কানাডা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান প্রিন্সসহ কানাডা আওয়ামী লীগ ও অন্টারিও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ আর্ট সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মাজহারুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নীল উৎপল দেবনাথসহ সোসাইটির সদস্যবৃন্দ এবং শিশুদের অভিভাবকরা এ সময় উস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সমন্বয় করেন বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রথম সচিব অপর্ণা রাণী পাল।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধনী বক্তব্যে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, “বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতির পিতা এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ও তাঁর নির্দেশিত পথেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে পৃথিবীর মানচিত্রে। তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পানে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন সূত্রে গাঁথা। এ মহান নেতার জন্মদিনে কানাডাপ্রবাসী শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ হাই কমিশন, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শের সাথে এ প্রজন্মের প্রবাসী শিশুদের পরিচয় করিয়ে দেয়া এবং তাঁর মতো দেশপ্রেমিক মনন দিয়ে শিশুদের গড়ে তোলা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে যেমন আমরা সকলে আজ আনন্দিত, ঠিক তেমনি আমরা বেদনায় আক্রান্ত ও ক্ষুব্ধ এই কারণে যে কানাডাতেই তাঁর হত্যাকারী, খুনী নুর চৌধুরী অবস্থান করছে। জাতির পিতার হত্যাকারী নুর চৌধুরীর জন্য কানাডা কোান সেফ হেভেন হতে পারে না। তিনি বলেন, যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে বিচারের রায় কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস কানাডায় কাজ করে চলেছে। সেই সাথে ভয়ঙ্কর এ খুনীকে দেশে ফেরত পাঠাতে কানাডার আইন প্রণেতাদের চাপ প্রয়োগ করার জন্য বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত কানাডীয় নাগরিকদের জনমত গড়ে তুলবার আহবান জানান তিনি। সম্প্রতি সাস্কাচুয়ান প্রদেশে সফরকালে সেখানকার প্রিমিয়ার (মুখ্যমন্ত্রী) ব্রাড ওয়ালের সাথে এ বিষয়ে তাঁর ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে জানিয়ে হাই কমিশনার বলেন, সাস্কাচুয়ানের প্রিমিয়ার ব্যাড ওয়াল এ খুনীকে বাংলাদেশে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তাঁর অনুরোধ কানাডার ফেডারেল সরকারের কাছে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরবেন বলে তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনারা টরন্টোবাসী হাজার হাজার বাঙালীরা এ খুনীর বিরূদ্ধে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে স্ব-স্ব রাইডিংয়ে (নির্বাচনী এলাকায়) এমপিদের বরাবর লিখিত আবেদন পেশ করুন, যেন তারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে কানাডার পার্লামেন্টে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী নিয়ে আসে। জাতির পিতার হত্যাকারীকে ফেরত পাঠাতে দেশপ্রেমী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাওয়ার আহ্ববান জানান হাই কমিশনার মিজানুর রহমান।
বক্তব্যের পর শিশু-কিশোরদের সাথে কেক কেটে ও শিশুদের কেক খাইয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সকলকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের হাই কমিশনার এবং অতিথিবৃন্দ। উৎসবমুখর পরিবেশে কেক খেয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকে টরন্টোর শিশুরা।
মন্তব্য করুন