একই সময়ে ¯স্নাতক পাস ও ¯স্নাতক সম্মান দুটি সনদ! চাকরীচ্যুত হয়ে প্রধান শিক্ষকের উপরে ক্ষোভ প্রকাশ
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ শ্রীমঙ্গল মোহাজেরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদ থেকে অব্যাহতি পেয়ে বিক্ষুদ্ধ হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ তুলেছেন ওই লাইব্রেরিয়ান। এদিকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করায় ক্ষুব্দ হয়ে উঠেছেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিংকমিটি, ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকাবাসী।
এছাড়াও ৫ আগষ্ট শনিবার দুপুরে ওই লাইব্রেরিয়ান ও তার পিতা অভিযোগকারী মোঃ আব্দুল হান্নান মিয়া শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে একই অভিযোগ করেন।
জানাযায়, অবৈধ ঘোষিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের কারনে মোহাজেরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী লাইব্রেরিয়ান মো: সরওয়ার হোসেন সম্প্রতি চাকুরীচ্যুত হন। এরই প্রেক্ষিতে তার পিতা আব্দুল হান্নান মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি দাবী করেন নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির জন্য তিন ধাপে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা প্রদান করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মোহাজেরাবাদ গ্রামের আব্দুল হান্নানের পুত্র মো: সরওয়ার হোসেন ২০১০ইং সালে শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজ থেকে ৩য় বিভাগে ¯œাতক পাস করেন। তবে চাকুরীর জন্য ৩য় বিভাগ গ্রহনযোগ্য না হওয়ায় তিনি একই সময়ে চাকুরীর জন্য অবৈধ ঘোষিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ¯œাতক সম্মান এর আরও একটি সনদ নিয়ে আবেদন করে চাকুরী প্রাপ্ত হন। হাইকোর্টের নির্দেশে ২০০৬ সালের পর থেকে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সনদ অবৈধ ঘোষিত হলে তাকে বিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
এদিকে তিনি একই সাথে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে যথাক্রমে ¯œাতক পাস ও ¯œাতক সম্মান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সনদপত্র গ্রহন নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে একটি সনদ টাকা দিয়ে কিনে আনার। কোনটি জাল, কোনটি বৈধ।
জানাযায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর ও অবৈধ ঘোষিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, ৬/ক, ১/২১( ৩য় তলা), মিরপুর -১০, ঢাকা – ১২১৬ থেকে সনদ গ্রহণের খবর পাওয়া গেছে এবং দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা ইন লাইব্রেরী এন্ড ইনফরমেশন সাইন্স কোর্স সম্পন্ন দেখিয়ে শ্রীমঙ্গলের মোহাজেরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৩ সালের ২৫ মার্চ ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক’ পদে নিয়োগ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত এবং পরবর্তীতে এমপিওভুক্ত করার জন্য কাগজপত্র প্রেরণ করা হয়। সে ২০০৬-০৭ সেসনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের বি.এ. কোর্সের নিয়মিত ছাত্র হিসেবে ২০১০ সালের ডিগ্রী পাস কোর্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৩য় স্থান অর্জন করে। তার রেজিঃ নং – ৬৬৭০০৯৭ ও রোল নং ঃ ১৪৩৯৬০।
এছাড়া,হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বিগত ২০০৬ সাল থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া অবৈধ দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি থেকে সে ২০১০ সালে ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিষয়ে ¯œাতক (সম্মান) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সিজিপিএ ৩.৪৩ পেয়ে উর্ত্তীর্ণ হয়। তার সনদের সিরিয়েল নং – ০০৫৪৩৩ এবং ফল প্রকাশের তারিখ ১০ জানুয়ারী ২০১১, রেজিঃ নং -০৭১০০৮২৬১৮ রোল নং – ২৬১৮, পিরিয়ড – স্প্রিং ২০০৭- ফল্ – ২০১০। তাছাড়া সে ২০১২ সালের ডিপ্লোমা ইন লাইব্রেরী এন্ড ইনফরমেশন সাইন্স কোর্স সিজিপিএ ৩.৫( এভারেজ গ্রেড -‘এ’) পেয়ে উর্ত্তীর্ণ হয় যার রেজিঃ নং – ১১১২১০৮৫০৩০, রোল নং – ৫০৩০, সনদ নং – ০০৩০২১, শিক্ষাবর্ষ- সামার-২০১১ – স্প্রিং – ২০১২,প্রোগ্রাম সম্পাদনের তাং-৩০ এপ্রিল ২০১২।
উক্ত বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো: সেলিম আহমেদ জানান, হাইকোর্ট বিতর্কিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৬ সালের পর থেকে সকল সনদ বাতিল করে। এবিষয়ে হাইকোর্টেও আপিল থাকায় আমরা ২০১৭ সালের ফেব্ররুয়ারী পর্যন্ত তাকে স্বপদে বহাল রাখি। কিন্ত আপিল খারিজ হয়ে যাওয়া আমরা বিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি দেই ।
এদিকে ৫ আগষ্ট শনিবার দুপুরে বিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত সহকারী লাইব্রেরিয়ান মো: সরওয়ার হোসেন ও তার পিতা মো: আব্দুল হান্নান শ্রীমঙ্গল প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে। মো: আব্দুল হান্নান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ ও এমপিভুক্ত করার কথা বলে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে জানান। সংবাদ সম্মেলনে হান্নান মিয়া জানান, তারা স্কুল প্রতিষ্টার সাথে জড়িত ছিলেন এবং বর্তমান ম্যানেজিং কমিটিতে তাদের প্রতিপক্ষের লোক থাকায় এই প্রতি হিং¯্রায় এসব কাজ করছেন। সাংবাাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আব্দুল হান্নান জানান, ওই স্কুলের এমন কোন শিক্ষক নেই যে টাকা ছাড়া নিয়োগ পেয়েছেন। এসময় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য মোঃ আবু ছাইদ উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল হাসান জানান, ২০১৩ইং সালে শ্রীমঙ্গল মোহাজেরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ সহকারী শিক্ষক ,এক লাইব্রেরিয়ান এবং ১ জন ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে নিয়ম অনুসারে তারা নিয়োগ প্রাপ্ত হন। সরওয়ার হোসেন’র কাগজপত্র কয়েকবার এমপিও ভুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়। কিন্ত তার ডিগ্রীর সনদ দারুল ইহসান ইউনির্ভাসিটি হওয়ায় এবং ইউজিসি কর্তৃক স্বীকৃত না হওয়ায় তার আবেদন পত্রটি প্রত্যাখান হয়। তাকে অব্যাহতি প্রদানের ফলে ক্ষুদ্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে তার পিতা আব্দুল হান্নান উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিয়োগকালে ঘুষ লেনদেনের মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে।
দুটি সনদ সম্পর্কে শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের ভাইস্ প্রিন্সিপাল আবুল কালাম আজাদ বলেন‘একই ব্যক্তি একই সাথে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ গ্রহণ করা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি নীতিমালার পরিপন্থি ও অপরাধ। যদি ঐ ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণিত হয় তাহলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার সনদ বাতিল সহ আইনানুগ যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
এদিকে অব্যাহতি প্রাপ্ত সহকারী লাইব্রেরিয়ান মো:সরওয়ার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হাইকোটের নির্দশনা অনুযায়ী এখন কোন পরিপত্র জারি হয়নি। তাই বিদ্যালয়ে তাকে আরোও ছয় মাসের সময় দেওয়ার জন্য কতিৃপক্ষকে আহবান জানান। এই সময়ের মধ্যে কোন সমাধান না বলে তিনি সেচ্ছায় অব্যহতি নিবেন। তবে তিনি জানান টাকার বিষয়টি তার পিতা জানেন।
মন্তব্য করুন