একজন করোনাজয়ী প্রধান শিক্ষকের কাহিনী
সায়েক আহমদ॥ কভিড-১৯ আক্রান্তের হিসেবে একলাফে চীনকে টপকে গেল বাংলাদেশ। কিন্তু চীনে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার তিন মাস পর বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম রোগী ধরা পড়েছিল। সে হিসেবে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই চীনকে টেক্কা দিয়ে ফেলল বাংলাদেশ। চীনে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৪ হাজার ২২৮ জন। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪ হাজার ৩৭৯ জন। এ হিসেবে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। সংক্রমণের দিক থেকে শীর্ষ ১০ এ পৌঁছে যাওয়ায় পরবর্তী হিসাব-নিকাশ কী হবে তা ভয়াবহই বলা যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮৫৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই সময়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৪ জন। সর্বমোট মৃত্যুবরণ করেছেন ১১৩৯ জন। টেস্ট বাড়লে বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা নিঃসন্দেহে আরও বাড়বে। বর্তমান হিসেব অনুযায়ী প্রতি দশ লাখে মাত্র তিন হাজার মানুষের টেস্ট হচ্ছে। ওদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজন চিকিৎসক মারা গেছেন। সবমিলিয়ে ৩১ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হলো করোনা ভাইরাসে।
গতমাসের শেষদিকে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। শ্যামলীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এর কয়েকদিন পর তিনি অনেকটা সুস্থ হয়ে গেলেও ৫ই জুন শুক্রবার ব্রেইন স্ট্রোক হলে তার অবস্থার অবনতি হয়। তারপর থেকে তার শারীরিক পরিস্থিতি সঙ্কটজনক ছিল। কয়েকদিন আগে তার করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করলে টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল। তারপরও না ফেরার দেশে চলে যেতে হল দেশের বরেণ্য এ রাজনীতিবিদকে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে। একই সঙ্গে তার স্ত্রী ও একান্ত সচিব আক্রান্ত হয়েছেন। যেখানে মন্ত্রী-এমপি-ডাক্তার-শিল্পপতি থেকে শুরু করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য/কর্মকর্তারা, গণমাধ্যমকর্মী কিংবা ত্রাণ বিতরণকারী/সমাজসেবীরা অহরহ মৃত্যুবরণ করছে সেখানে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের খবর কেই বা রাখে?
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সারাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের তালিকা চেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একইসঙ্গে করোনা আক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের তথ্য এ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এ ধরণের কোন নেয়া হয়েছে কি না এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে, সারাদেশে আক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষকের সংখ্যা শতাধিক। এরই মধ্যে কয়েকজন শিক্ষকের মৃত্যুর খবরও প্রকাশিত হয়েছে। আক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে অন্তত ১৫জনের অবস্থা মুমূর্ষু। নিজ উদ্যোগেই নানাভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। নিম্ন বেতনের প্রাথমিক শিক্ষকরা করোনা আক্রান্ত হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বড় ধরণের সংকটে পড়েছেন। পরিবারের সদস্যরাও কেউ কেউ আক্রান্ত হয়েছেন। এর বাইরে মাঠ পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং শিক্ষার্থীদেরও আক্রান্ত হবার খবর মিলেছে। অধিকাংশ শিক্ষক মাঠ প্রশাসনের কাজ, সরকার ঘোষিত মানবিক সহায়তার কাজ এবং বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি ও ডিআরসহ বিভিন্ন তথ্য হালনাগাদ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে সরকার ঘোষিত প্রনোদনা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে শিক্ষকরা বঞ্চিত। অথচ সরকারিভাবে মাঠ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মচারীর মত শিক্ষকদেরও প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত করোনাকালীন সুযোগ সুবিধা দেয়া যেতে পারত।
প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের মত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষকবৃন্দও দিন দিন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এমপিওবিহীন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকবৃন্দ অসহায় অবস্থায় নিপতিত হয়েছেন। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ছাত্রবেতনও বন্ধ। কাজেই দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওবিহীন শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে কারো পক্ষেই কোন ধরণের সমাধান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ প্রতিষ্ঠানের তহবিল শূন্য থাকলে বেতন দেয়া হবে কীভাবে। শুধু এমপিওবিহীন নন, বরং এমপিওভুক্ত শিক্ষকবৃন্দও খুব খারাপ অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। কারণ এমপিও হিসেবে আংশিক বেতন আসলেও বেতনের বাকী অংশটুকু প্রদান করা হত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের তহবিল সংকটের কারণে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকবৃন্দ বিদ্যালয় প্রদত্ত বেতনের অংশ হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। বলা যায় দেশের ৯৫ ভাগ জনগণই আজ কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। কবে যে এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে তা বলা অসম্ভব!
কিছুদিন আগেও বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস আক্রমণ করবে কি না এ নিয়ে জনমনে সন্দেহ-অবিশ্বাস ছিল। কিন্তু এখন সংক্রমণের সংখ্যা দিন দিন জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় করোনা সংক্রমণে সবাইকে ভীত না হওয়ার ব্যাপারে সাহস প্রদান করা অত্যাবশ্যক। পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে এমন দিকে ধাবিত হচ্ছে যে, ধরেই নিতে হবে যে কেউ, যে কোন মুহূর্তে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন। কাজেই যারা ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন এবং করোনাযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন, তাদের কাহিনীগুলো বেশি বেশি করে প্রচার হওয়া দরকার। আমাদেরও সে কাহিনীগুলো পড়ে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।
কভিড-১৯ ভয়াবহ রোগ হলেও করোনা ভাইরাসের সাথে কঠিন যুদ্ধ করে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন অনেকেই। এবার একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের তেমনই একটি করোনাযুদ্ধে বিজয়ী হবার কাহিনী শোনা যাক।
গত ২১.০৫.২০২০ ইং তারিখে ফেসবুকে একটি খবর দেখে চমকে উঠলাম। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয়েছেন শান্তকুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিমুল কান্তি পাল। শিমুল আমার ছাত্র। যখন শান্তকুল উচ্চ বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তখন বিদ্যালয়টির হাল ধরার জন্য শিমুল সহ আমার প্রাক্তন কিছু ছাত্রকে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম। বিনা বেতনে বিদ্যালয়ে সবার সাথে হাল ধরেছিল শিমুল সহ আরো কয়েকজন সাহসী শিক্ষক। এ কারণে তাদের প্রতি আমার প্রচণ্ড ভালবাসা ছিল।
ফেসবুকেই সবাই তাকে প্রচণ্ড সাহস যুগিয়েছে। আমিও তাকে ধৈর্য্য, সাহস, আত্মবিশ্বাস ও নিয়নামুবর্তী হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম সে অবশ্যই করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে সবার মাঝে ফিরে আসবে। বলেছিলাম যেদিন সে বিজয়ী হবে সেদিনই আমি তাকে নিয়ে একটা উদ্বুদ্ধমূলক লেখা তৈরি করব। আজ সেই সুসংবাদটি পেলাম। তাই দেরি না করেই লিখতে বসলাম।
লকডাউনের কারণে ভার্চুয়াল যোগাযোগ ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। তাই অনলাইনেই তার সাথে আলাপ আলোচনা করার প্রেক্ষিতে সে করোনা জয়ের কাহিনীটি সবার সামনে তুলে ধরেছে।
শিমুল ১৬.০৫.২০২০ ইং তারিখে প্রথমবার করোনা টেস্ট করিয়েছিলেন। ৬ দিন পর আমি করোনা প্রজেটিভ রিপোর্ট এসেছিল। তবে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসলেও শিমুল সেটা বুঝতে পারেননি। প্রথমদিকে শুকনো কাশি ছিল। কাজেই তিনি প্রথম টেস্টটা উপজেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করিয়েছিলেন। পজিটিভ রিপোর্ট আসলেও প্রথমে ভেবেছিলেন হয়ত রিপোর্টে কোন ভুল আছে। কারণ শুকনো কাশি ছাড়া আর তেমন কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। প্রথমে তিনি খুব নার্ভাস হয়েছিলেন। পরবর্তীতে মনোবল চাঙ্গা রেখে প্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন করেছেন। ঘরোয়া ভাবে গরম পানি ও গরম লিকার চা পান করেছেন। গরম পানির ভাপ নিয়েছেন।
নিজের আত্মবিশ্বাসের বর্ণনা দিয়ে শিমুল বলেন, ‘সবাই আমাকে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও সাহস দেয়ায় কঠোর পণ করলাম, ভয়কে জয় করতে হবে। মনকে শক্ত করলাম। চিকিৎকের পরামর্শ নিলাম। শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজের ফার্মেসীতে কিছুটা সময় দেয়ায় এবং চিকিৎসা শাস্ত্রের দুয়েকটি কোর্স সম্পন্ন করায় নিজেরও কিছুটা ধারণা ছিল। যেহেতু আমার তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়নি তাই চিকিৎসকেরা ভিটামিন খাওয়ার উপর গুরুত্ব প্রদান করেন এবং গরম পানি পান ও গরম পানির ভাপ ব্যবহারে উৎসাহিত করেন। ঔষধ হিসেবে তিনি ঙফধুুঃু -৫০০, স-শধংঃ-১০, ঋবহধফরহ-১২০, ুরহপ-ই ও পরাবঃ খেয়েছিলেন। গরম পানি ও গরম লিকার চা পান করেছি, গরম পানি ও লবন দ্বারা গার্গল করেছি, গরম পানির ভাপ গ্রহণ করেছি।’
পরিবারের প্রতিক্রিয়া কি ছিল জানতে চাওয়ায় শিমুল বলেন, ‘পরিবারের সবাই আমাকে খুব সাপোর্ট দিয়েছেন।’ প্রতিবেশিদের আচরণ কেমন ছিল প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, ‘প্রতিবেশী কিছু মানুষ অনেক আজে বাজে কথা বলেছেন আবার অনেকে আমাকে সাহস যুগিয়েছেন।’
শিমুল দুঃখ প্রকাশ করে জানালেন, ‘এই ভয়াবহ মানসিক অবস্থার মধ্যেও অনেকে বিরুপ করেছেন।’ মন্তব্যকারীরা কেমন মন্তব্য করেছিল জানতে চাইলে শিমুল জানালেন, ‘মন্তব্যকরীরা যে আচরণ করেছেন তা মুখে বলতে পারব না। তবে মাঝে মাঝে তাদের কথায় নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়েছে।’
করোনা পজিটিভ হওয়ার পর শিমুলকে সর্বপ্রথম আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছেন শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ সহ অনেক শিক্ষক, অনেক বন্ধু-বান্ধব, বড় ভাই ও ছোট ভাইয়েরা, প্রিয় শিক্ষার্থীরাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। তাদের অবিরাম সাহসে শিমুলেরও মনোবল চাঙা হয়ে উঠে। তিনি সবসময় হাসিখুশি থাকারও চেষ্টা করেছেন। চিকিৎসাকালীন সময়টা একটা রুমে আইশোলেসনে থাকতে কষ্ট হলেও পরিবরের অন্য সদস্যদের স্বার্থে কঠোরভাবে নিয়ম মেনে চলেছেন। শিমুলের স্ত্রীরও করেনা প্রজেটিভ ছিল। তবে শিমুল তাকেও সাহস দিয়েছেন। তার স্ত্রীও শিমুলের পাশাপাশি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে ভাগ্য ভাল, ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের কোন ঘটনা ঘটেনি। অভিজ্ঞতার আলোকে শিমুল সবাইকে সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। শিমুল বলেছেন, ‘করোনা প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বার বার হাত ধৌত করতে হবে। মুখে মাস্ক ব্যবহার করা তো অবশ্যই বাধ্যতামালক। এরপরও যদি কেউ দুর্ভাগ্যবশত করোনায় আক্রান্ত হয়ে যান, তবে মনে সাহস নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। এককথায় মনোবল চাঙা রাখতে হবে।’
এ ভয়াবহ বিপদের সময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, কাতার ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট, নবধারা শমশেরনগর, শান্তকুল উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ, শিমুলের বন্ধু-বান্ধবসহ অনেকেই সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দেয়ায় শিমুল সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কি ধরণের সহযোগিতা পেয়েছেন জানতে চাইলে শিমুল বলেন উপজেলা পরিষদ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহযোগিতা পেয়েছেন। করোনাযুদ্ধে বিজয়ী হিসেবে সরকারীভাবে পরবর্তীতে কি আর কোন সহযোগিতা পাওয়া যাবে প্রশ্নের উত্তরে শিমুল বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই।’ শিমুল আরও জানান, ‘ইমার্জেসী করেনা পজিটিভ রোগী থাকলে আমি প্লাজমা দিতেও প্রস্তুত আছি। আমার রক্তের গ্রুপ এবি(পজিটিভ)।’
আমার জানামতে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিমুল কান্তি পাল করোনা যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছেন। শিমুলের এ বিজয়ের সংবাদে অবশ্যই সবার মনে সাহস সঞ্চারিত হবে। তবে করোনা সংক্রমণের সুযোগ দেয়ার চেয়ে করোণা ভাইরাস প্রতিরোধ করাই উত্তম। এজন্য সবাইকে অবশ্যই হোম কোয়ারান্টাইনে থাকা উচিত। তবে চাকুরী কিংবা বিশেষ প্রয়োজনে যদি ঘর হতে বের হওয়া অত্যাশ্যক হয়েই পড়ে তবে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ মেনে চলা দরকার। এসব সতর্কতা অবলম্বন করলে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
১. সম্ভব হলে গণপরিবহন অর্থাৎ বাস, ট্রেন, টেম্পো কিংবা যে কোন পাবলিক সার্ভিস এড়িয়ে চলাই উচিত। তবে যে কোন পরিবহনে চলাফেরার ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা এবং সেখান থেকে নেমে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করা উচিত।
২. কর্মক্ষেত্রে একই ডেস্ক এবং কম্পিউটার ব্যবহার করলেও ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এসব ক্ষেত্রে বসার আগেই চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার, কিবোর্ড, মাউস ইত্যাদি পরিষ্কার করে নেয়া উচিত।
৩. জনসমাগমস্থল এড়িয়ে চলা উচিত। বিশেষ করে খেলাধুলার স্থান থেকে শুরু করে ধর্মীয় স্থানও বাধ্যতামূলক না হলে এড়িয়ে চলা উচিত।
৪. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গেলে অবশ্যই উপরোল্লিখিত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
৫. ভাইরাস সংক্রমণের আরেকটি ভয়াবহ জায়গা হচ্ছে লিফট। কাজেই একান্ত বাধ্য না হলে লিফট ব্যবহার না করাটাই ভাল।
৬. ভিটামিন ‘বি’ ও ‘ডি’ ক্যাপসুল এবং সিভিটসহ ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে। মাল্টা ও আপেল কিংবা লেবু বেশি করে খাওয়া যেতে পারে।
৭. বেশি করে আদা-লবঙ্গ দিয়ে লেবু-চা বানিয়ে দিনে ৩-৪ বার করে খাওয়া যেতে পারে।
৮. আদা, দারুচিনি, এলাচ, রসুন, লবঙ্গ দিয়ে পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে গরম ভাপ প্রতিদিন দুবার করে নেয়া যেতে পারে।
৯. দিনে একবার কালোজিরা এবং মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
১০. গলা ভেজা রাখতে লবন মাখানো আদা খেলে খারাপ হয় না।
১১. হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করলে নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে।
১২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া যাবে না।
১৩. প্রতিদিন স্প্রে দিয়ে ঘর জীবাণুমুক্ত রাখা উত্তম।
১৪. সর্বোপরি মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য নিজেকে বিভিন্নভাবে ব্যস্ত রাখা উচিত।
করোনা আক্রান্ত হলে ভয়ের কিছু নেই। কারণ ভীত হয়ে পড়লে ক্ষতি হবে আরও বেশি। তাই সতর্ক এবং সাহসী হতেই হবে। তাহলেই মিলবে সুস্থতা। আতঙ্কিত না হয়ে সকল করোনা রোগীকে সাহসের সাথে ‘করোনা’ জয়ের যুদ্ধ মোকাবেলা করা উচিত।
শান্তকুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজ করোনাযুদ্ধে বিজয়ী। তৃতীয়বার টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় তিনি আজ আশংকামুক্ত। তার করোনাযুদ্ধে জয়ের কাহিনী আমাদেরকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। সবচেয়ে বড় কথা করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার চেয়ে করোনা প্রতিরোধ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কাজেই আসুন সবাই সতর্ক হই। ঘরে অবস্থান করি। নিরাপদ থাকি।
[সায়েক আহমদ, প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক, শিশু সাহিত্যিক, ০১৭১২৯৬২৩৯৩]
মন্তব্য করুন