“একটি আহত অশ্ব, একটি থানা-পুলিশ- একজন প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কথা ও কাহিনীঃ আমার কিছু কথা”

March 14, 2022,

মুজিবুর রহমান মুজিব॥ আদি থেকে আধুনিক কাল পর্য্যন্ত মানব সভ্যতার ক্রম বিকাশের ইতিহাসে অশ্ব প্রভূ ভক্ত, পরিশ্রমী ও উপকারী প্রাণী হিসাবে খ্যাত ও স্বীকৃত। সামন্ত যুগে দেশে দেশে-রাজায় রাজায় যুদ্ধ বিগ্রহে অশ্ব ও অশ্বারোহী বাহিনীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেকালে যখন প্রয়োজনীয় রাস্তা ঘাট এবং যানবাহন ছিল না তখন যোগাযোগ ও মালামাল পরিবহনের জন্য অশ্ব-ই-ব্যবহৃত হত। প্রায় চার হাজার বছর পূর্বে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ এবং প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বের কারবালার যদ্ধে অশ্ব ও অশ্বারোহী বাহিনীই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রাচীন কালে প্রাচীন ভারতে আর্য্য জাতির আগমন-অভিযান এবং প্রাচীন দ্রাবিড় জাতির সহিত যুদ্ধ এবং আর্য্য বিজয়ের মুল কারন ছিল অশ্ব-অশ্বারোহী বাহিনী। জন্মগ্রত ভাবে জাত যোদ্ধা আর্য্য জাতি অশ্ব চালনায় অভিজ্ঞ এবং আর্য্যদের শক্তিশালী অশ্বারোহী বাহিনী ছিল। অপর পক্ষে প্রাচীন ভারতের দ্রাবিড় জাতি অশ্ব চালনায় অনভিজ্ঞ এবং ভারত বর্ষে অশ্বের চাইতে হস্থির প্রচলন ও ব্যবহার বেশি ছিল। রন ক্ষেত্রে হাতির চাইতে অশ্ব দ্ধত গ্রামী বিধায় আর্য্যদের অশ্বারোহী বাহিনীর কাছে দ্রাবিড়দের হস্থি বাহিনীর পরাজয় ঘটে। অশ্বের প্রভূ ভক্তির মানবিক বহু কথা ও কাহিনী আমাদের সমাজ জীবনে প্রচলিত আছে।
বৃটিশ ভারতে ইটার দেওয়ান কটু মিয়া হত্যার করুন কাহিনী বৃহত্তর সিলেটের একটি বিয়োগান্তক ঘটনা। ইটার দেওয়ান কটু মিয়া শুভ বিবাহের পর নিজ শ্বশুড় বাড়ি লংলায় গেলে অসতি স্ত্রী করিফুল নেছা তাঁকে প্রতারনা মূলক ভাবে বিষ খাইয়ে হত্যা করলে মৃত্যোপথ যাত্রী দেওয়ান কটু মিয়া চৌধুরী কোন মতে অশ্বারোহন করে বলেছিলেন তাঁকে তাঁর মায়ের কাছে নিয়ে যেতে। প্রভূ ভক্ত অশ্ব অসুস্থ দেওয়ান সাহেবকে নিয়ে রাজনগর উপজেলাধীন ইটার দেওয়ান বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। ততক্ষনে বিষ ক্রিয়ায় তিনি না ফেরার দেশে- পরলোকে। এখনও মৌলভীবাজার-বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে “কান্দে, কটু মিয়ার মায়- রে কান্দে জারে জার- বলে করুন ভাবে কটু মিয়ার জারীগান গীত হয়। গরীরেব ঘোড়া রুগ-বলে বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় একটি কথা প্রচলিত আছে। রাজা-বাদশাহী বাহন এই ঘোড়া গরীবের প্রিয় বন্ধু ও বাহন বটে। ঢাকায়-বিশেষতঃ পুরাতন ঢাকায় এক কালে ঘোড়ার গাড়ির ব্যাপক প্রচলন ছিল। গ্রামাঞ্চলে যেখানে যোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট নেই সেখানে মালামাল পরিবহনের জন্য ঘোড়ার গাড়ি নয় শুধু ঘোড়াই ব্যবহৃত হয়। একটি ঘোড়ার পিঠে কয়েক মন ধান চাল বস্তা বন্দি করে চাপিয়ে দিয়ে সহিস ঘোড়ার অগ্রভাগে পদ ব্রজেই হেটে হেটে চলেন। ঘোড়াকে আহ, উহ্, হিস্, জাতীয় ইশারায় বিভিন্ন শব্দ উচ্চারন করেন। মালে ভারাক্রান্ত প্রভূ ভক্ত অশ্ব কোন অসহিষ্ণু মনোভাব প্রদর্শন না করে নীরবে নিঃশব্দে পথ প্রদর্শক প্রভূকে অনুসরন করে, মালামাল মালিকের গন্তব্য স্থানে পৌঁছে দেয়। এসব অশ্ব গ্রামীন সমাজে- “মটিয়া ঘোড়া’ হিসাবে পরিচিত। জীবদ্দশায় অশ্ব মানব জাতির সেবা দেয় প্রয়োজন মিটায়। যুদ্ধের ময়দানে অশ্বের মাংস হালাল বলে জানা যায়। একটি মৃত অশ্ব ও মানুষের প্রয়োজন মিটায়। অশ্বের খাল-কেশ-হাড়-চামড়া মানুষের কাজে লাগে- কতেকাংশে সার হয়। পৃথিবীর অশ্ব সমূহের মধ্যে “এ্যরাবিয়ান হর্স”- আরবীয় ঘোড়া, বিলেতি ঘোড়া, ইউরোপিয়ান হর্স এর নাম ডাক আছে। অশ্ব সমূহের মধ্যে কালো রং এর “আড়ূয়া ঘোড়া” একটু হিঃস্র প্রকৃতির। এদেরকে বশীভূত করা- বাগে আনা বেশ কষ্টকর। অভিজ্ঞ ঘোড় সওয়ারি ছাড়া এদেরকে চালানো ঝুকিপূর্ণ।
বিদেশে-হর্স রেইস-নামে জুয়া খেলার প্রচলন থাকলেও ঢাকার রেস কোর্স ময়দানে আর ঘোড় দৌড় হয় না, নাম পরিবর্তন হয়ে জাতীয় নেতা গনতন্ত্রের মানষ পুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামে ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান’ নামাকরণ করা হয়েছে। বহু জাত, কোম্পানীর যানবাহন -মোটর গাড়ির আবিষ্কার ও ব্যবহারের পরও গ্রামাঞ্চলে এখন ও ‘ঘোড় দৌড়’ একটি জনপ্রিয় খেলা। শুস্ক মৌসমে গ্রামে গঞ্জে মাঠে ময়দানে ঘোড় দৌড় এর আয়োজন করা হয়, আকর্ষনীয় পুরষ্কার এর ব্যবস্থা ও থাকে। এসব ঘোড় দৌড় এর বেশির ভাগ চালক-সহিস-সওয়ারী-অল্প বয়স্ক কিশোর। এসব নাবালক গণ ও অভিজ্ঞতার আলোকে শারীরিক কসরত ও ক্রীড়া নৈপূন্য প্রদর্শন করতঃ দর্শক-শ্রোতার মনোরঞ্জন করেন- প্রশংসা ও পুরস্কার প্রাপ্ত হন।
সমাজ সভ্যতার ক্রম বিকাশ-বিবর্তনের মাধ্যমে সমাজ বদলে গেছে, এগিয়ে গেছে অনেক খানি। ঘোড়ার গাড়ি ও ঘোড়ার ব্যবহার ও হ্রাস পেয়েছে। তবুও এই প্রিয় প্রাণীটি বেঁচে আছে-ঠিকে-আছে সময় ও প্রয়োজন মত মানুষের প্রয়োজন মেটায়।
বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের অশ্ব সংক্রান্ত একটি আকর্ষনীয় সংবাদ আমাদেরকে আবেগ আপ্লুত করে-জ্ঞান ও চিন্তার জগতে নাড়া দেয়। গত ছয়ই মার্চ দৈনিক যুগান্তর’ বিচার পাবার আশায় থানায় এসেছে একটি ঘোড়া-পুলিশের সেবা পেতে থানায় হাজির ঘোড়া-” শিরোনামে একটি আকর্ষনীয় সংবাদ ছেপেছেন। বাউফল থানা প্রতিনিধি প্রদত্ত সংবাদের মর্ম মতে দুপুর একটার দিকে একটি আহত অশ্ব বাউফল থানার প্রধান ফটকে এসে হাজির হয়। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাদের বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে থানায় অনু প্রবেশ করে ঘোড়াটি। থানায় কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা কর্মচারিগণ হতবাক, থানায় অশ্ব এসে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ-এজহার দায়ের এর কোন অবকাশ নেই-সুযোগও নেই। অশ্ব শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান প্রাণী হলেও কথা বলতে পারে না। লিখতে জানে না। কোন মানুষ বা প্রাণীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিতে হলে হয় লিখতে না হয় বলতে জানতে হবে। অশ্বটি সকল বাঁধা বিপত্তি উপক্ষো নিরহ শান্তি প্রিয় প্রাণীর মত থানায় প্রবেশ করে জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত আব্দুস সবুর এর সামনে এসে দাঁড়ায়। পটুয়াখালির বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্ম্মকর্তা আল মামুন থানায় অশ্ব প্রবেশের সংবাদ পেয়ে দ্রুত নিজ কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে ঘোড়াটিকে আহত ও অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পান। ওসি আল মামুন তাৎক্ষনিক ভাবে আহত অশ্বের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত আব্দুস সবুরকে নির্দেশ দিলে তিনি তাৎক্ষনিক ভাবে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার আব্দুল আজিজকে থানায় নিয়ে আসেন। প্রাণী সম্পদ কর্ম্মকর্তা থানায় এসে ঘোড়াটিকে প্রাথমিক ভাবে পরিক্ষা করে দেখতে পান প্রাণীটির পায়ে ক্ষত, কোন ধারাল অস্ত্রের আঘাতে মাংস উঠে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। পশু চিকিৎসক ডা.আব্দুল আজিজ ক্ষত স্থান ড্রেসিং করতঃ মলম লাগিয়ে ব্যথা নাষক ইনজেকশন প্রদান করেন। অশিক্ষিত ও অবুঝ পশুটি চিকিৎসকের আন্তরিক চিকিৎসার সময় নীরবতা পালন করে থানা ও চিকিৎসকের সঙ্গেঁ সহযোগিতা করেছে, কোন ডাক, চিৎকার কিংবা অসদাচরন করেনি, কোন মলমূত্র ও ত্যাগ করেনি, চিকিৎসা শেষে কিছু বিশ্রাম নিয়ে ইতিপূর্বে আহত ও অসুস্থ অশ্বটি সুস্থ হয়ে নীরবে নিঃশব্দে থানা থেকে বেরিয়ে যায়। যাবার সময় অবুঝ নির্বাক প্রাণী অশ্বটির চোখের ভাষা কেমন ছিল, নিরবে নিঃশব্দে ইশারায় ইঙ্গিঁতে বাউফল থানা কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্ম্মকর্তাকে ধন্যবাদ কিংবা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ছিল কি না সংবাদে তা উল্লেখ নেই। এমন ব্যতিক্রমি ও মানবিক সংবাদ সংগ্রহের জন্য উপজেলা সংবাদ দাতা, প্রকাশের জন্য দৈনিক যুগান্তর এবং আহত অশ্বের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার বন্দোবস্থ করার জন্য বাউফল থানা কর্তৃপক্ষ এবং তাৎক্ষনিক ভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য বাউফল উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্ম্মকর্তা ডা.আব্দুল আজিজকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
আশ্চয্য জনক ও চিন্তার ব্যাপার হল, আহত বা অসুস্থ অশ্বটি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার জন্য পশু হাসপাতাল, পশু চিকিৎসক কিংবা ফার্মেসীতে যাবার কথা, উপজেলা পর্য্যায়ে এসবের অস্থিত্ব ও কার্য্যক্রম বিদ্যমান। এছাড়া জন প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মাঠ পর্য্যায়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্ম্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউ.এন.অ. অফিস আছে-যারা স্থায়ী ভাবে স্থানীয় ভাবেই বসবাস করেন-দাপ্তরিক কার্য্যক্রম পরিচালনা করেন। কিন্তু আহত অসুস্থ অশ্বটি হয়ত মনে করেছিল আমলাতান্ত্রীক জটিলতায় তাঁর দ্রুত চিকিৎসা নাও হতে পারত, প্রাণী সম্পদ কর্ম্মকর্তা এই অসহায় প্রাণীটিকে ‘উপরি কিছু এবং স্পীড মানি’ না পাবার কারনে হয়ত আহত পশুটিকে দূর দূর করে তাঁড়িয়ে দিতেন। থানা থেকে ওসি সাহেবের বরাত দিয়ে থানা পুলিশ গিয়েছিলেন বলেই প্রাণী সম্পদ কর্ম্মকর্তা আহত অশ্বের বিবরণ শুনে পশু চিকিৎসার ঔষধ পত্র গজ বেন্ডিজ-চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে থানা পুলিশের সঙ্গেঁ সঙ্গেঁ থানায় ছুটে আসেন-আন্তরিক ভাবে চিকিৎসা সেবা দেন। অশিক্ষিত অশ্ব হয়ত মনে করেছিল থানাই একমাত্র জায়গা যেখানে গেলে তাঁর মত অসহায় পশু ও ন্যায় বিচার পাবে। থানা পুলিশের কথা পশু কর্মকর্তা শুনবেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাবে-থানার কথা কোন পশু চিকিৎসক-কর্ম্মকর্তা ফেলতে পারবেন না। বুদ্ধিমান অশিক্ষিত অশ্ব ভেবে চিন্তে ঠিক কাজটি করেছিলেন বলে চিকিৎসা সেবা পেয়েছে, উপকৃত হয়েছে প্রাণে বেঁচেছে।
বৃটিশ ভারতে আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী “ল” এনফোসিং এজেন্সি হিসাবে ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর সৃষ্টি। সাত চল্লিশের ভারত বিভক্তি এবং পাকিস্তানী শাসনামলেও পুলিশ ধারাবাহিক ভাবে সেই দায়িত্ব পালন করলেও একাত্তোরের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রশিক্ষিত ও পোষাকে বাহিনী- ‘ইউনিফর্মড ফোর্স’ হিসাবে পুলিশ বাহিনীর বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং কৃতিত্বপূর্ণ অবদান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে। পাক হানাদার বাহিনীও মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ এ ভয়াবহ অভিযান চালায়। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতি সংঘের শান্তি মিশনে যোগদান কারি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কর্ম্মকর্তাবৃন্দ সততা, আন্তরিকতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে দেশের ভাব মূর্তি ও ইমেজ বৃদ্ধি করেছেন, দেশীয় বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারকে ও সম্বৃদ্ধ করেছেন।
পুলিশ বাহিনীর কতেক সদস্যের অসাধুতা ও দূর্নীতির কারনে গোটা বাহিনীকে দোষারূপ করার অবকাশ নেই। দেশীয় আইন শৃংঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনীর বিকল্প নেই। আধুনিক মানব সভ্যতা ও মানব জাতি একটি আইনগত কাঠামোর-“লিগেল ফ্রেইম ওয়ার্ক” এর উপর দাঁড়িয়ে আছে। আর এই আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী হচ্ছেন পুলিশ। পুলিশের হাতের লাঠি আকারে-প্রকারে ক্ষুদ্রাকৃতির হলেও এই লাঠি আইন ও ন্যায়ের প্রতীক।
ষাটের দশক থেকে সাংবাদিকতা ও সমাজ কর্ম্মে আছি। পেশাগত ভাবে সাংবাদিকতা অধ্যাপনা শেষে আইন অঙ্গঁনে আনাগুনা করছি। পেশাগত ও সামাজিক-রাজনৈতিক কারনে এই বাহিনীর কনেস্টবল থেকে কর্তা ব্যক্তিদেরকে কাছে থেকে দেখার-বুঝার সুযোগ হয়েছে। ইচ্ছা করলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা সমাজ বিকাশ জন কল্যানে সমাজ উন্নয়নে অনেক কিছুই করতে পারেন। আমাদের বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে একটি ঐহিত্যবাহী খান্দানী পরিবারের কৃতি সন্তান ই.এ.চৌধুরী সাহেব পুলিশ সার্ভিসে যোগ দিয়ে নাম ডাকের সাথে ক্ষমতা ও প্রাপ্তির শীর্ষ বিন্দুতে আরোহন করেছিলেন দক্ষ আইজিপি হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। একজন সমাজ সংঘটক-দেশ সেবক হিসাবে ঢাকাস্থ জালালাবাদ এসোসিয়েশন সহ বিভিন্ন সামাজিক সংঘটন গড়ে তুলতে বলিষ্ট ভূমিকা রেখেছিলেন। পুলিশ সার্ভিসে কমিউনিটি পুলিশ এখন একটি সফল সামাজিক আন্দোলনের নাম। কমিউনিটি পুলিশ অন্ত প্রাণ ছিলেন জনবান্ধব পুলিশ প্রশাসক সাবেক আই.জি.পি. এ,কে,এম, শহীদুল হক সাহেব। বিগত দিনে আমাদের জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকাকালে তিনি কমিউনিটি পুলিশের উপর এক বিশাল ও বর্নাঢ্য সেমিনারের আয়োজন করেছিলেন। সৌভাগ্যবান আমি, সেমিনারে মূল প্রবন্ধটি ছিল আমার। মহান জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ (বর্ত্তমানে ডক্টর) এর প্রধান আতিথ্যে অনুষ্ঠিত সেই সেমিনারটি ছিল প্রাণবন্ত ও শিক্ষনীয়। জনাব হক আইজিপি হয়ে অবসর গ্রহণ করতঃ এখন ও আইনের শাসন ও জনকল্যানে জাতীয় দৈনিক সমূহে কলাম লিখছেন, টি.ভি.টক-শো- সমূহে বলছেন। ডি.এম.পি.র বর্ত্তমান কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম একদা আমাদের জেলা সদরের এ.এস.পি.এবং সুনামগঞ্জ জেলার এস.পি. ছিলেন। ডি.এম.পি-এর কমিশনার হিসাবে চাকরি জীবনের মেয়াদান্তে অবসরে যাবার কথা হলেও সরকার তাঁর সততা ও সুনামের মূল্যায়ন করেছেন, চাকরির মেয়াদ বাঁড়িয়ে একই পদে পূনঃ নিয়োগ দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করেছেন। তাঁর সততা ও সুনাম সর্বত্র প্রশংসিত। আমাদের রেঞ্জ ডি.আই.জি মফিজ উদ্দিন সাহেব একজন দক্ষ পুলিশ প্রশাসকের সাথে সাথে একজন কলম সৈনিক সু-লেখক ও বটেন। সিলেট রেঞ্জ এর আইন শৃংঙ্খলা পরিস্থিতি দেশীয় তুলনায় উন্নতই বলা চলে। বৈশ্বিক ব্যাধি ভয়াবহ ও ছোঁয়াছে করনা কালে যখন সিলেটে এক ভীতিকর অবস্থা, হাসপাতালে ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই পরিস্থিতি, আমি নিজেও করনা আক্রান্ত হয়ে আমাদের জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত হয়ে আমার আত্মীয় প্রফেসর ডা.আলমগীর আদিল সামদানীর বদান্যতায় তাঁর হাসপাতাল সিলেটের নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মৃত্যো পথ যাত্রী, আত্মীয়-স্বজন বন্ধু বান্ধব কারো মুখ দেখিনি- করনা রুগীর অবস্থা যতই করুন হউক-দেখা-দেখি নিষেধ-রেওয়াজ নেই-তখন চলছে-আইসোলেশন-কোয়ারেন্টাইন-সশিয়েল ডিসটেন্স- এর সিস্টেম, চলাফেরায় বিধি নিষেধের মাঝেও অনুজ প্রতিম কবি ও সাংবাদিক মুশতাক চৌধুরী সিলেটের মানব দরদি এস.পি.ফরিদ উদ্দিনের সাথে সাক্ষাত করে ফল মূল সহ আমার হাসপাতালে আমাকে দেখতে আসে। সাংবাদিক-কলামিষ্ট বন্ধুবর আফতাব চৌধুরীও ফল দুধ পাঠাতেন। আর কোন মানবের মুখ দেখিনি-কারো কোন সংবাদ পাই নি। এই কঠিন সময়ের মাঝে সিলেটের সুযোগ্য এস.পি. ফরিদ উদ্দিন সাহেব খাবারের প্যাকেট নিয়ে সমগ্র জেলা ব্যাপী মানুষের বাড়ি বাড়ি ছুটে গেছেন, মানব সেবার এক উজ্জল উদাহরণ স্থাপন করেছেন। অভিজ্ঞ সম্পাদক মুশতাক চৌধুরী যথার্য ভাবেই তাঁর এই মহৎ কর্ম্ম কান্ডের মূল্যায়ন করে এক খানি আকর্ষনীয় স্মারক গ্রহ্ণ বের করেছিলেন-প্রশংসিত হয়েছেন। আমাদের জেলার পুলিশ সুপার সুঠাম শরীরের অধিকারি সুদর্শন মোহাম্মদ জাকারিয়া ও একজন দক্ষ পুলিশ প্রশাসক। প্রবাসী অধ্যোষিত সীমান্তবর্ত্তী এই জেলার আইন শৃংঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে, উন্নতও বটে। পুলিশ সুপার মোঃ জাকারিয়া তাঁর কর্ম্ম তৎপরতা ও কর্ম্ম দক্ষতার কারনে সরকারের স্বীকৃতি এবং জন সাধারনের প্রশংসা প্রাপ্ত হচ্ছেন।
বাউফলের এক অশিক্ষিত অশ্ব থানায় এসে কোন সংলাপ, শুনানী, চিৎকার, চেচামেচি, ফি-উপরি-স্পীড মানি ছাড়া বিনা ফিতে-পূর্ন চিকিৎসা নিয়ে পূর্ন সুস্থ হয়ে নীরবে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল। আহত শরীর নিয়ে ধৈর্য্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিল। সামাজিক মূল্যবোধের মারাত্মক রকমের অবক্ষয় নৈতিকতার ক্রমোবনতি, পাপিয়া-কাউয়া কালচারের জোয়ার ও আমাদের খাই খাই, চাই চাই সমাজ ব্যবস্থার মাঝে এ এক ব্যতিক্রম বটে। কেডার, গুন্ডা, বে-আদব, বেদতমিজ, হাইব্রিডের দল যে ভাবে কারনে অকারনে থানায় ডুকে পাওয়ার-ফুটানি দেখান সেখানে আহত অশিক্ষিত অশ্ব ছিল নির্বাক।
বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক মানব জমিনের গত তেরো তারিখের সংখ্যার খবরে প্রকাশ বাউফলের কালাইয়া গ্রামের আবু সওদাগরের বখাটে ছেলে বাইশ বৎসর বয়সী মোঃ সিহান রাত আট টায় বাউফলের দশম শ্রেণির স্কুল ছাত্রীকে বল পূর্বক ধর্ষন করে পালিয়ে যায়। পটুয়াখালি জেনারেল হাসপাতালে ধর্ষিতার ডাক্তারি পরিক্ষা শেষে ভিকটিমের পিতা বাউফল থানায় ধর্ষনের মামলা দায়ের করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতঃ ধর্ষককে আইনের আওতায় আনার অঙ্গীঁকার ব্যক্ত করেন।
বাউফলে এক অশিক্ষিত অশ্ব আহত হয়ে থানায় এসে সাহায্য-চিকিৎসা প্রাপ্তির নীরব প্রত্যাশা পোষন করলে থানা কর্তৃপক্ষ এই পশুর সঙ্গেঁ পাষবিক আচরন করেন নি মানবিক আচরন করেছেন মনুষত্ব প্রদর্শন করেছেন। বাউফলের এক নর পশু আশরাফুল মকলুখাত-সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব হয়ে সওদাগর পুত্র সিহান এক নারীর, অসহায় স্কুল ছাত্রীর ইজ্জত লুন্ঠন করেছেন। এই নর পশুর পাষবিক কান্ডের সুবিচারে থানায় এজাহার হয়েছে। বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একটি আহত পশুকে যে মানবিক দায়িত্ব পালন করে পুলিশ সার্ভিসের ভূমিকা ও অবদানকে গৌরবোজ্জল করেছেন আশা করা যায় নর পশু মোঃ সিহানকে গ্রেপ্তার পূর্ব্বক আইনের আওতায় এনে সুবিচারের মর্মে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আহত অশ্বটির সুস্থতা কামনা করি, ধর্ষক মোঃ সিহানকে ধিক্কার এবং অনেক অনেক ঘৃনা, ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রীর জন্য অনেক সমবেদনা ও শুভ কামনা।
[ লেখক: ষাটের দশকের সাংবাদিক। মুক্তিযোদ্ধা। সিনিওর এডভোকেট হাইকোর্ট। সাবেক সভাপতি, জেলা বার ও মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব।]

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com