একাত্তরের এক শরণার্থীর চিঠি
প্রিয় বাংলাদেশ,
আমি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের এক প্রান্তিক নারী শামছুন নাহার। সত্তরোর্ধ্ব বয়সে অসহনীয় রোগ-যন্ত্রণায় কুকঁড়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামে আমি নিজের বসতবাড়ী ছেড়ে দুই শিশু সন্তান নিয়ে ভারতের বিভিন্ন শরর্ণাথী শিবিরে যুদ্ধকালীন পুরোটা সময় জীবনের ঝূঁকি নিয়ে কাটিয়েছি।আমার স্বামী প্রয়াত আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি এম,এ,সবুর যুদ্ধের পুরো নয়টি মাস ভারতে এককোটি বাঙালীর আশ্রয়স্থল শরর্ণাথী শিবিরে ঘুরে ঘুরে তাদের খাদ্য ও রসদ সরবরাহ করেছেন । মৃত্যুকে মাথায় করে পাকিস্তানী বন্দুকের গুলির সম্মুখে এপার ওপার করে মুক্তিযোদ্ধাদরে তথ্য সরবরাহ করেছেন বিশ্বস্ততার সাথে। এ অপরাধে এদশেীয় রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা আমাদের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিলো। ক্ষেতের পাকা ধান কেটে নিয়েছিলো।একাত্তরে ভারতরে হালাহালি শহররে কাছে কমলপুর গ্রামে শত্রুর র্মটার বিষ্ফোরণের শব্দে আমাদের আড়াই মাস বয়সী নিষ্পাপ শিশু সন্তান শোয়েব এলাহীর কান ফেটে গিয়েছিলো। সে থেকে আজ অবধি সে মূক ও বধির হয়ে জীবন কাটাচ্ছে।পৃথিবীর সমস্ত শব্দ স্বাধীন বাংলার কোন বিজয় উল্লাস, কোন সুসংবাদ-দুঃসংবাদ তার কানে পৌছে না। আজও মা বলে ডাকতে পারছে না সে তার র্গভধারনিীকে।
আমার বড় ভাই বায়ান্নের ভাষা সৈনিক,বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহযোদ্ধা বাংলাাদেশ আওয়ামীলীগের প্রয়াত প্্েরসিডিয়াম সদস্য,বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ,মৌলভীবাজারের এমএনএ মোহাম্মদ ইলিয়াছ এমপি ৪নং সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছেন,ভারতে শরর্ণাথী শিবিরে ঘুরে ঘুরে তাদের খাদ্য ও রসদ সরবরাহ করেছেন।
আমি জীবনভর বঙ্গবন্ধুর আর্দশ. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেমন নিজের হৃদয়ে লালন করে আসছি। তেমনি আমার ৫ ছেলে ও ২ মেয়েকে আমার আর্দশে গড়ে তুলেছি।কোন ক্রান্তিকালে সে আর্দশ থেেক বিচ্যুত হয়নি যারা।
মুক্তিযোদ্ধা হওয়া না হওয়া নিয়ে সে আমার কোন আক্ষেপ নেই। আমি মনে করি, সার্টিফিকেট বা সূবিধা নেওয়ার জন্য আমার সন্তান,স্বামী,ভাই বা দেশের আপামর সাহসী র্সূযসন্তানেরা অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেনি। ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দু লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে লাল সবুজের পতাকায় বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের যে সোনার বাংলা এনে দিয়েছেন তাঁর সূযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার সুচারু নেতৃত্বে সে সোনার বাংলা আজ ধন-ধান্যে পুষ্পে ভরা। বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল আমার সোনার বাংলায় স্বাধীনতার সাতচল্লিশ বছর পরে হলেও স্বপরবিারে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীর বচিার হচ্ছে।তবু সোনালী শস্যভরা র্উবর জমিনের আগাছার মতো কিছু আগাছা আর্বজনা এখনো মাথা তুলছে বীর তিতুমীর শরীয়ত উল্যাহ্, মাস্টারদা র্সূযসেন,প্রীতিলতা, ক্ষুদিরাম, শেরে বাংলা,মাওলানা ভাসানীর এ বাংলায়।যতোদিন আগাছামুক্ত বা রাজাকার যুদ্ধাপরাধীমুক্ত হবে না বাংলাদশ, ততোদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে আমাদের উত্তর প্রজন্মকে।
র্দীঘদিন ধরে নানা রোগ-ব্যাধেিত আক্রান্ত হয়ে আমি আজ ক্লান্ত।বাংলাদেশ আমার জন্য দোয়া করো আমি যেনো সুস্থ অবস্থায় তোমাকে পুরোপুরি যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারমুক্ত স্বাধীন স্বদেশ হিসেবে দেখে যেতে পারি।জয়তু বাংলাদেশ,জয়তু তোমারই।
জয় বাংলা।
শামছুন নাহার
অনুলিখনঃ শাব্বির এলাহী,(তাঁর সন্তান)
লেখক,সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী,
মোবাইলঃ- ০১৭৩৬৪৪৬০৩৯
২২ ডিসেম্বর ২০২০ইং।
মন্তব্য করুন