একাত্তোরের অকুতভয় বীর, একজন গনমুখী সফল আমলা-একজন মেরুদন্ড ওয়ালা ব্যতিক্রমী নির্ভীক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার

August 31, 2022,

মুজিবুর রহমান মুজিব॥ একাত্তোরের অকুতভয় বীর, সত্য ও ন্যায়ের নির্ভীক সৈনিক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার গত চব্বিশে আগষ্ট দুপুর রাজধানীর ইউনাইটড হাসপাতালে মহান মৃতে্যুকে আলিঙ্গন করতঃ আশি বৎসর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন-তাঁর দুনিয়াবি জীবনের অবসান ঘটান। মের”দন্ড ওয়ালা আমলারআকস্মিক এবং অকাল মৃত্যো না হলেও দেশ ব্যাপী শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সারএর সাথে দীর্ঘদিন যাবত লড়াই করছিলেন একাত্তোরের এই অকুতভয় বীর। ম্যাসিভ হার্ট এটাকে আক্রান্ত হয়েছিলেন দীর্ঘ দেহী সুঠাম শরীরের অধিকারী হৃদয়বান-ভাগ্যবান মাহবুব তালুকদার। তারঁ আকস্মিক ইন্তিকালে দেশব্যাপী শোকের ছায়া নেমে আসে। নীতিও নৈতিকতার ক্রমোবনতি,সামাজিক মূল্য বোধের মারাত্মক রকমের অবক্ষয় ভ্রষ্টাচার ও আক্রার এই বাজারে তাঁর মত আদর্শ বাদি-সত্য ও ন্যায়ের নির্ভীক সৈনিকের বেঁচে থাকার খুবই প্রয়োজন ছিল। অধ্যাপনা, সাংবাদিকতা, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা, স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহকারি প্রেস সেক্রেটারি বর্নাট্য কর্ম জীবনের অধিকারি কর্ম বীর মাহবুব তালুকদার তাঁর নিখাদ দেশ প্রেম, পেশার প্রতি আনুগত্য, প্রজ্ঞা ও পন্ডিত্য এবং মেধা ও মনের গুনে খন্ড কালীন মানব জীবনকে করেছেন গৌরবান্বিত-মহিমান্বিত হয়েছেন সত্য ও ন্যায়ের একজন নির্ভীক সৈনিক একজন মাহবুব তালুকদার। সত্য কথনে বলেন লিখনে তাঁর তুলনা তিনি নিজে। একাত্তোরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব তালুকদার একজন কলম সৈনিক হিসাবে ও ছিলেন সত্য বাদি স্পষ্ট বাদি। ব্যতিক্রমী মাহবুব রচনা বলিতে তিনি দূঃসাহস ও প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। তার আমলার আমলনামা গ্রহ্ন বঙ্গঁভবন ও বাংলাদেশের অনেক অলিখিত ইতিহাসের নীরব স্বাক্ষী। বঙ্গঁবন্ধুর সরকারামলে তাঁর চাকরি প্রশাসন ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সদর্পে-স্বগৌরবে সরকারী চাকরি করে ৯৯সালে অতিরিক্ত সচিব হিসাবে অবসর গ্রহন করেন। পদ-পদবী বাড়তি সুযোগ সুবিধার লোভে আমলা মাহবুব তালুকদার সরকার কিংবা কর্তা ব্যক্তিদের মোসাহেব, চাটুকার, উমেদার হননি-দালালি, দলাদলি করেন নি, গনমুখী আমলা হিসাবে গনমানুষের স্বপক্ষে কাজ করছেন তালুকদারি-জমিদারি হাবভাব পোষন ও প্রদর্শন করেন নি। আমলা মাহবুব তালূকদার আমলা তন্ত্রের কাছে আত্ব সর্ম্পন করেন নি। বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুরের ¯েœহ আস্থা বিশ্বাস ভাজন ছিলেন বলে স্বঘোষিত প্রেসডেন্ট খুনী খন্দকার মুশতাক সরকারামলে মাহবুব তালুকদারকে ও,এস,ডি, করা হয়। সেই সময়কার সংস্থাপন সচিব ডাক সাইটে আমলা এইচ,টি ইমাম সাহেব অতি উৎসাহে পরমান্দে বঙ্গঁভবনের দরবার হলে বঙ্গঁবন্ধুর মন্ত্রীসভার বনিজ্য মন্ত্রী খন্দকার মুশতাক আহমদ এর নবগঠিত মন্ত্রীসভার শফথ গ্রহনানুষ্টানের আয়োজন করেছিলেন। বঙ্গঁ ভবনে বৈদেশিক সংবাদদাতা সমিতি সহসাংবাদিক সম্মেলন করে খুনী খন্দকার মুশতাক সরকার এর সাফাই গেয়ে বঙ্গঁভবনে আশ্রয় গ্রহনকারি কতেক বিপথগামী জুনিওর অবঃপদ চ্যোত সেনা কর্মকর্তাদের প্রশংসা করতঃ বলেছিলেন “দিস ইয়ং মেজরস আর দি সেইভার্স অব দি ন্যাশন”- এই তর”ন মেজর রাই জাতির রক্ষাকর্তা। আদর্শ আমলা মাহবুব তালুকদার চাকরি পদোন্নতি-পদায়ন ও বৈষিয়ক লোভ লালসা কিংবা প্রান ভয়ে এমন ঘৃন্যও নির্লজ্য কাজ-মিথ্যাচার করেন নি। সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহনের পর বর্তমান সরকারামলে বিগত হুদা কমিশনে তিনি ছিলেন এক নিঃসঙ্গ শেরপা। কমিশনে তিনি একাই একশয়ের মত বীরের মত লড়াই করেছেন। কঠিন, জটিল, দূরার”গ্য ব্যয় বহুল ও ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ও একাত্তোরের এই অকুতভয় বীর লড়াই করেছেন আপোষ হীন ভাবে মের”দন্ড সোঝা করে। মুক্তি যোদ্ধা মাহবুব তালুকদার মিঃ নুর”লহুদার নেতৃতাধীন নির্বাচন কমিশনের শৈথিল্য, গনতন্ত্র ও গনস্বার্থ বিরোধী ভূমিকার কারনে স্পষ্ট করে বলে ছিলেন প্রকৃত পক্ষে নির্বাচন এখন আইসি ইউতে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে গনতন্ত্র এখন লাইফ সাপোর্টে”। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে জানতেন মানতেন এবং মনে করতেন গনতন্ত্র ও সুশাসনই ছিল স্বাধীনতার মূল মন্ত্র। সত্তোরের সাধারন নির্বাচনে বঙ্গঁবন্ধু ও তার দল নিরংকুশ সংখ্যা গরিষ্টতা অর্জন করলেও পাকফৌজি প্রেসিডেন্ট লেঃ জেনারেল এ.এম ইয়াহিয়া খান বঙ্গঁবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙ্গাঁলাও বাঙ্গাাঁলির বির”দ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলে বীর বাঙ্গাঁলি বীর মুক্তি যোদ্ধাগন নয় মাসের মরনপর লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করেন। মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনার হিসাবে স্বাধীনতার মূলচেতনাগন তন্ত্র প্রতিষ্টা একটি অবাধ ও অংশ গ্রহন মূলক নির্বাচন আয়োজনের আপ্রান চেষ্টা করে তিনি হেরে গেছেন। এই পরাজয় একাত্তোরের এই অকুতভয় বীরকে বেদনাত করে। আমলাকবি ও কথা সাহিত্যিক মুক্তি যোদ্ধা মাহবুব তালুকদার একজন বন্ধু বৎসল, বিনয়ী, নিরীহ ভদ্র লোক। রূচীবান ও পোষক সচেতন। ষাটের দশকে তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগের নেতা ছিলেন। কেন্দিীয় ছাত্র লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক, স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্টার গোপন সংঘটন নিউ ক্লিয়াসের জনক মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়ক তাত্বিক শ্রদ্ধেয় সিরাজুল আলম খান এর ঘনিষ্ট বন্ধু তিনি। তার প্রিয় পত্রিকা দৈনিক মানব জমিন এর একটি সচিত্র সংবাদ আনন্দঘন পরিবেশ আমাদেরকে আবেগ আপ্লত করে। মাহবুব তালুকদার প্রিয় বন্ধুর প্রিয় মিষ্টি সন্দেশ সহ বিভিন্ন ফল মূলনিয়ে সিরাজুল আলমকে দেখতে যান সময় কাটান স্মৃতি চারন করেন, মিষ্টি মুখ করান। পরিনত বয়সে বাধ্যর্ক জানিত ব্যাধি অসুস্থতা কর্ম ব্যবস্থতার মাঝে ও তাঁর এই বন্ধু বাৎসল্য সহৃদয় সামাজিকতা প্রশংসনীয় অনুকরনীয়। শিক্ষানীয়। এখানে কোন রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য ফটোসেশন এবং ব্যক্তি গত স্বার্থ সংক্রান্ত সামান্যতম সংশ্লিষ্টতা ও ছিল না।আমাদের মত অভাজনমফস্মলির পক্ষে তাঁর কাছে যাবার কথা বলার সময় সুযোগ ও পরিবেশ ছিল না। দুই দফা তাঁর কাছে যাবার তাঁর মূল্যবান কথা শুনার সুযোগ হয়োছিল আমার। স্বাধীনতা উত্তরকালে একজন স্বপ্নবাজ মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত স্বদেশ ভূমিকে মনের মত করে গড়ে তোলা ও সাজাবার লক্ষে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও সুযোগ থাকা স্বত্বেওসরকারি চাকরিতে যাইনি পিতা মাতার ও তেমন দাবীছিল না। ফলতিঃ প্রিয় এই মফস্বল শহরেই থেকে গেলাম। পড়ে রইলাম। সাংবাদিকতা ও অধ্যাপনায় যৎ কিঞ্চিত জড়িত হইলাম। অপরূপ প্রাকৃতির নিস্বর্গ মন্ডিত ছায়ায় ঘেরা মায়া মমতা ভরা মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরীর সম্পাদক অতঃপর সহ-সভাপতি ছিলাম দীর্ঘদিন। মহকুমা প্রশাসক সাহেবানরা পদাধিকার বলে পাবলিক লাইব্রেরীর সভাপতি। এ সময় সরকারি কাজে মৌলভীবাজার আসেন সরকারের উপসচিব মাহবুব তালুকদার। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শক্তিমান সুলে খককে পাবলিক লাইব্রেরীর পক্ষ থেকে ঘরোয়া সম্ভর্ধনা প্রদান করি। সুঠামশরীরের অধিকারি সুবেশিও সুদর্শন মাহবুব তালুকদার এর শিষ্টাচার সৌজন্যবোধ ও বিনয় ভাষন মনে রাখার মত। তাঁর ফুলহাতা পৃন্টেড হাওয়াই সার্ট ও স্মার্টনেস বুদ্ধি দীপ্ত আলোচনা ও মত বিনিময় তর”ন যুবাদেরকে-আমাদেরকে আকৃষ্ট করেছিল। তাঁর বিনয়াচরনে আমরা বিমুগ্ধ বিমোহিত হয়ে ছিলাম। আমার শহর ও জেলার সু-সন্তান সাবেক সি.এস.পি অগ্রজ প্রতিম আব্দুল মূঈদ চৌধুরী মাহামান্য রাষ্টপতির সচিব থাকাকালে তাঁর সহোদর আমার প্রিয় সর্তীর্থ আব্দুল ওয়ালী চৌধুরী সাজ মানের সুবাদ ও সৌজন্যে সাংবাদিকতা সংক্রান্ত কাজে বঙ্গঁ ভবনে প্রবেশের পাশ পাই। আরেকবার লেঃ জেনালের এরশাদ সরকারের শাসনামলে আমাদের স্বদেশী জাকির খান চৌধুরী ভাইর বদৌলতে আমিও তৎকালীন পৌরপতি বন্ধুবর সৈয়দ মহসিন আলী সহ বাংলাদেশের সকল মুক্তি যোদ্ধাদের সম্ভর্ধনানুষ্টানে বঙ্গঁ ভবনে যোগ দেই। কিন্তু পদস্থ আমলা মাহবুব তালুকদার এর সাথে সাক্ষাত ও কথা বলার সযোগ পাইনি। কথা শিল্পি মাহবুব তালুকদার পরিনত বয়সে সফল মানব জীবন কাটিয়ে ইন্তিকাল করেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারামে মরহুমের জানাজা এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। তাঁর আন্তিমইচ্ছানুযায়ী তাঁকে তাঁর পছন্দমত স্থানে সমাহিত করা হয়। সি.ই.সি কাজি হাবিবুল আউয়াল যথাযথই বলেছেন তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর সাহিত্য কর্মের মাঝে। মাহবুব তালুকদারের মৃত্যোর পর জাতীয় পত্র পত্রিকায় মিডিয়া ভূবন বিশেষতঃ দৈনিক প্রথম আলো ও মানব জমিন তাকে মূল্যায়িত করেছেন। দৈনিক মানব জিমনে তাঁর কলাম “চাচার পে্যঁচাল” দার”ন পাঠক প্রিয়তা পেয়েছিল। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কলামিষ্ট আলী রিয়াজ, মানবজমিনের কাজল ঘোষ সাজেদুল হক প্রমুখ মাহবুব তালুকদারের কর্ম ও জীবন দর্শনের উপর আলোক পাত করতঃ তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন। ইসলামী আইনের বিধান মোতাবেক একজন মুমিনের মৃত্যোই সবশেষ নয় বরং এক অনন্ত মহাসময়ের শুর”। আলমে আরওয়া থেকে হাসরের ময়দান পর্যন্ত মানবাত্বার ক্রম বিকাশের ধারার মধ্যে দুনিয়াবী সময়টাই ক্ষন স্থায়ী ও অনির্ধারিত। এখন তাঁর শুর” বরযকই জীবন। একজন ভালা মানুষ, সহজ, সরল সাদা মনের মানুষ মহৎ মানুষ একাত্তোরের অকুতভয় বীর মের”দন্ড ওয়ালা আমলা মাহবুব তালুকদার এর উজ্জল স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি, তাঁর র”হের মাগফিরাত কামনা করছি, তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবার বর্গের জন্য রইল গভীর সমবেদনাও সহানুভূতি। মহান মালিক মরহুমকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান কর”ন-এই মোনাজাত সহ আমীন ছুম্মা আমীন।
[ষাটের দশকের সাংবাদিক। মুক্তি যোদ্ধা। এডভোকেট হাই কোর্ট। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার, প্রেসক্লাব।]

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com