এখনই শিক্ষার্থীদের পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ করার উপযুক্ত সময়

May 1, 2020,

হোসাইন আহমদ॥ বিশ্বব্যাপি করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে দীর্ঘ ২ মাস যাবত সকল স্থরের শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। যার কারণে অনেকটা বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা বাসা/বাড়িতে অবস্থান করছেন। সেই সুযোগে একান্ত পরিবারের সাথেই সময় পার করছেন তারা। স্বাভাবিক অবস্থায় যান্ত্রিক এ জীবনে শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে শহরে কিংবা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে অবস্থান করেন। ধর্মীয় উৎস কিংবা একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউই বাড়িতে আসেন না। সব মিলিয়ে বছরের ১৫/২০ দিন বাড়িতে সময় কাটান। বছরের বাকী সময়টুকু বাহিরে পার করেন। কিন্তু এবারের বিশ^ব্যাপি নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে অনেকটা অনিচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে সুস্থ্য রাখার জন্য শিক্ষার্থীরা ২ মাসের উপর বাড়িতে অবস্থান করছে। অবস্থার উন্নতি না হলে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সকল স্থরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এ ঘোষণা অব্যাহত থাকলে টানা প্রায় ৭ মাস শিক্ষার্থীরা বাড়িতে মা-বাবার সাথে অবস্থান করবে। এটা অভিভাবকদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। কারণ ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন গনমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি যে আমাদের দেশে শিক্ষিত জনসংখ্যা বাড়লেও নৈতিকতা ও যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ বাড়েনি। শিক্ষার্থীরা বড় বড় ডিগ্রী অর্জন করলেও মানবিক গুন তাদের মধ্যে জাগ্রত হয়নি। ধর্মীয় ক্ষেত্রেও অনেকটা তারা উদাসিন। মুসলমান, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, চাকমা, মারমা ও মনিপুরি সহ কোনো ধর্মের লোকই সঠিক ভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে চায়না। পর্যালোচনায় দেখা গেছে কোনো ধর্মের লোকই কাউকে খারাপ হতে বলেনি। কিন্তু আমরা ধর্মীয় বিধিবিধান মানতে চাইনা।

বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশলী বিশ^বিদ্যালয়সহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও মেধাবী ও নৈতিক গুণাবলী সম্পন্ন লোক তৈরি হচ্ছে না। যার করণে পদে পদে নাগরিকদের লাঞ্চণার শিকার হচ্ছেন। সরকারী কর্মচারীদের হাতে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এদেশের সাধারণ মানুষ। চলমান করোনা ভাইরাসের সময়ও অনেক বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তার হাতে দেশের নাগরিকরা অপধস্থ ও লাঞ্চিত হয়েছেন। সম্প্রতি যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভুমি) সাইয়েমা হাসান বয়স্ক দুই ব্যক্তিকে মাস্ক না পড়ার অবরাধে কান ধরে উঠবস করান এবং পাশাপাশি তাদের ছবি তুলেন। পরবর্তীতে এই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহত দেন। জামালপুরের জেলা প্রশাসক অফিসে অনৈতিক কাজ করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে ওএসডি করে। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসকের অনিয়মের সংবাদ পরিবেশন করায় ১৩ মার্চ রাতের আধারে মারধর করে বাংলাট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে ১ বছরের কারাদন্ড দেয় ভ্রাম্যমান আদালত। এভাবে শতশত উদাহরণ দেয়া যাবে যারা দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বসে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে দেশ ও মানবতা বিরোধী কাজ করছে। অনেক রাজনৈতিক নেতাও আছেন যারা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ প্রন্থায় কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সম্পদের পাহাড় গড়ছেন।

পর্যালোচনা করে দেখা যায় এরা সবই কিন্তু উচ্চ শিক্ষিত। বড় বড় ডিগ্রীধারী। সবাই দেশ-বিদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীট থেকে বড় বড় ডিগ্রী নিয়েছেন। এরাই বড় অবরাধী। গবেষকরা বলছেন এসকল শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে বড় বড় ডিগ্রী অর্জন করেছেন ঠিকই কিন্তু নৈতিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় শিক্ষা তারা অর্জন করতে পারেনি। আমাদের পরিবারও তাদেরকে এ শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা তাদেরকে লেখাপড়ার পাশাপাশি নৈতিক বা পারিবারিক শিক্ষা দিতে পারিনি। এটাই ছিল আমাদের বড় ব্যর্থতা। যার কারণে আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মচারীর কাছ থেকে হতশাজনক আচরন পাচ্ছি। অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে দেশের মালিকদের। অফিস-আদালতে গেলে মনে হয় তারা নয় (কর্মচারীরা নয়) আমরাই (জনগন) জেন তাদের কর্মচারী। তাদের আচার ব্যবহার দেখে মনে হয় তারাই যেন এদেশের মালিক।

তাই আসুন এসকল শিক্ষার্থীদের আগামী দিনের নৈতিকতা সম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলতে হলে উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া একান্ত প্রয়োজন। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়েই ভালো ও যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ তৈরি করা সম্ভব নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রত্যেক্ষ শিক্ষার্থীরাই বাড়িতে অবস্থান করছেন। অভিভাবকদের উচিত তাদের খোঁজ খবর নেয়া। পারিবারিক শিক্ষা দিয়ে তাদের নৈতিকতা সম্পন্ন একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। তাদের ভুল গুলো ধরিয়ে দিয়ে সংশোধনের চেষ্টা করা।

লেখকঃ সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com