এবারের এইচএসসির ফলাফলে যে কারণে পিছিয়ে মৌলভীবাজার

September 5, 2016,

হোসাইন আহমদ॥ শিক্ষা উন্নয়নের ঝরনাধারা, শিক্ষা সভ্যতার মাপকাঠি। শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে পিছিয়ে পড়া জনপদ জাতীর জন্য কল্যাণ ভয়ে আনতে পারেনা। পিছিয়ে পড়া প্রবাসী মুখী এই জনপদকে সুশিক্ষিত করে তুলার জন্য সাবেক অর্থ ও অপরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী’র অক্লান্ত চেষ্টার ফলে কিছুটা হলেও এ জেলা শিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু এ বছরের ফলাফলে হতাশ হয়েছেন অভিবাবকসহ সচেতন মহল।
অনুসন্ধানে  জানাযায়, শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাব, সময়মতো ক্লাসে না আসা, বাণিজ্যিক মনোভাব, কোচিং বাণিজ্য এবং এক শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা ক্লাসের সময় ফাস্ট ফুডে বসে বয়/গার্লস ফ্রেন্ডদের নিয়ে আড্ডা, স্মার্ট ফোন ব্যবহার, সৃজনশীল প্রশ্ন সম্পর্কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ধারণার অভাব এবং ক্লাসে অমনযোগীসহ বিভিন্ন কারণে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় সিলেট শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পিছিয়ে রয়েছে মৌলভীবাজার। পাসের হার ৬০ দশমিক ৬২ শতাংশ। ১৪হাজার ৩শ’৪৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে কৃতকার্য হয়েছে ৮হাজার ৬শ ৯৬ জন। এই ফলাফলে অভিবাকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেক অভিবাবক শিক্ষক ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে এ ফলাফলের জন্য দায়ি করছেন। ২০১৫ সালে পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০১৪ সালের ফলাফলে সিলেট শিক্ষা বোর্ডে মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে মৌলভীবাজার জেলার ৫টি কলেজ। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ফলাললের দিক দিয়ে সব চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে জেলার  ৩৯ টি কলেজ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে ১৩৮৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে কৃতকার্য হয়েছেন ১১৩৫ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বিজ্ঞানে ১৩৫২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েচেন ৩১২ জন, বাণিজ্য বিভাগে ৪৮৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৪২৬ জন এবং মানবিক বিভাগে ৫৫১ জনের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩৯৭ জন। ২০১৪-১৫ শিক্ষা বর্ষে ১৯৪ জন এ প্লাস প্রাপ্ত শিক্ষার্থী মধ্যে এইচএসসিতে এ প্লাস পেয়েছে মাত্র ২৬ জন। বাকিরা বিভিন্ন গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে।
ইম্পিরিয়েল কলেজে এবার ৭০ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৫৩ জন। পাসের হার ৭৫ দশমিক ৭১ শতাংশ।
শাহ্ মোস্তফা কলেজে এবার ৮৩৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে কৃতকার্য হয়েছেন ৩৭২ জন। পাসের হার ৪৫%।
সরকারি মহিলা কলেজে ১০৮৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে কৃতকার্য হয়েছেন ৫০৯ জন। পাসের হার ৪৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। বিজ্ঞানে ১০৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েচেন ৪৪ জন, বাণিজ্য বিভাগে ৩৩১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৭৩ জন এবং মানবিক বিভাগে ৬৪৭ জনের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২৯০ জন। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বি ও সি গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
কাশীনাথ আলাউদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজে ১৩১ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে কৃতকার্য হয়েছেন ৫২ জন। পাসের হার ৩৩%।
হোয়াইট পার্লস কলেজে ২৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে কৃতকার্য হয়েছেন ১৮ জন। পাসের হার ৬৫%।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. ফজলুল আলী, মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ ফয়েজ আহমদ, কাশীনাথ আলাউদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আইয়ুব আলী, শাহ্ মোস্তফা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মুসফিকুর রহমান, ইম্পিরিয়েল কলেজের কো-অর্ডিনেটর মোঃ সিতাব আলী  ও হোসাইট পার্লস কলেজের প্রভাষক হুমায়ুন কবির শিক্ষকদের অবহেলার কথা অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অনুপস্থিত, নিয়মিত অধ্যায়ন না করা, সৃজনশীল প্রশ্ন সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব, স্মার্ট ফোন ব্যবহার, ইন্টারনেটের অপব্যবহার ও ফাস্ট ফুডে বসে অযতা সময় নষ্ট করার কারণে এবারের এইচএসসির ফলাফল ভালো হয়নি।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন অভিবাবক খারাপ ফলাফলের জন্য শিক্ষকদের দায়ি করে বলেন, বাণিজ্যিক মনোভাব, আন্তরিকতার সহিত পাঠদান না করা, কলেজ টাইমে কোচিং পড়ানো ও শিক্ষকদরে দায়িত্বহীন মনোভাবের কারণে শিক্ষার্থীরা বোর্ড পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারেনি।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com