এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে
হোসাইন আহমদ॥ সংবাদ দর্পন দেশের চতুর্থ স্তম্ভ। এর উপর নির্ভর করে দেশেল স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, উন্নয়ন ও অগ্রগতি ইত্যাদি। যে দেশের সংবাদপত্র যত স্বাধীন ও নিরপক্ষ সেই দেশের গণতন্ত্র ততোই শক্তিশালী। কিন্তু আমাদের দেশে অনেকটাই এর উল্টো। অন্যান্য দেশে সংবাদকর্মীরা জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভুল, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নিয়মবহির্ভূত কাজ গুলো সংশোধনের জন্য মিডিয়াতে তুলে ধরেন। এটা ভাইরাল হওয়ার পরে অনেক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি সতর্ক ও সংশোধন হন। আবার অনেকেই অন্যায় কাজ থেকে দূরে সরে যান। পাশাপাশি সংবাদকর্মীরা তাদেরই গঠনমূলক ভালো কাজ গুলো তোলে ধরেন। যার কারনে অনেকেই ভালো কাজ করতে অনুপ্রাণিত হন।
এদিকে সংবাদকর্মীদের বড় একটি অংশ প্রতিনিয়ত এর উল্টো কাজ করছেন। আমরা অনেকেই মন্ত্রী, এমপি, সচিব, মেয়র, জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান, এমনকি ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত প্রেস সেক্রেটারী হিসেবে কাজ করছি। এ সকল জনপ্রতিনিধি সরকারী কর্মসূচি যেখানেই পালন করেন না কেন সেখানেই আমরা ক্যামেরা নিয়ে হাজির। সরকারি কর্মসূচির অংশ হিসেবে চাউল, ডাল, টিন, কাপড়, মশারি ও কয়েল ইত্যাদি বিতরণ করাই তাদের দায়িত্ব। এতো তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। এটা ফলাও করে আমরা নিউজ করতে ব্যস্থ। খেয়ে না খেয়ে নিজের সময়, ইন্টারনেট, কম্পিউটার, মোবাইল ফোনের টাকা ও মেধা ব্যয় করে আমরা তাদের ব্যক্তিগত প্রচারণা চালাচ্চি। এখানে ওই সকল সংবাদকর্মীদের লাভটা কি? কেনই বা তারা তাদের পিছনে পিছনে ঘুরছেন। কেনই বা তারা নিজেদের সময় ও টাকা নষ্ট করছেন? একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমার বুঝে আসতেছে না। আমরা সারাদিন কাজ করে মাস শেষে কত টাকা বেতন পাই এটা নিজেরাই জানি। পরিশ্রম ও সময় ব্যয় অনুযায়ী এ সম্মানি বর্তমান প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট নয়। তার পরেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশের দর্পন হিসেবে আমাদের উচিত ছিল যে সকল সরকারি আমলা ও জনপ্রতিনিধি অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত তাদের মুখোশ উন্মোচন করা। জাতির কাছে তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা। তাদের কথা ও কাজে মিল আছে কিনা সেটা জাতিকে জানানো। আমাদের সংবাদ হতে পারতো রাস্তার উন্নয়ন কত টাকা বরাদ্দ এসেছে, সে অনুযায়ী কত টাকার কাজ হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে ওয়ার্কওয়াটার মানা হচ্ছে কি না। সরকারি কর্মকর্তারা সঠিক সময়ে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দায়িত্ব পালন করছেন কি না। দাপ্তরিক কাজে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি আছে কি না। ক্ষমতাসীন দল কিংবা ব্যক্তি প্রশাসনকে ব্যবহার করে কোনো সুযোগ নিচ্ছেন কি না। এ সকল নিউজ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করার কথা ছিল আমাদের। কিন্তু এ দায়িত্ব কি আমরা সঠিকভাবে পালন করছি? কিছু সংখ্যকে পারলেও আমারা তাদের সহযোগীতা না করে বিভিন্ন মাধ্যমে তাদেরকে বেকায়দা পালানোর চেষ্টা করছি। ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দিয়ে হয়রানি করাচ্ছি। যার কারনে দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় সংবাদকর্মীরা যথাযথ সম্মান পাচ্ছেন না। মফস্বলে কর্মরত অনেক সংবাদকর্মীই হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। ভুলন্ডিত হচ্ছে মহান পেশার মর্যাদা।
এর মধ্যেও আশার দিক হলো ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের তালাশ, যমুনা টিভির ৩৬০ ডিগ্রী, দৈনিক যুগান্তরের ক্রাইম রিপোর্টার নেসারুল হক খোকন, মিজান মালিক, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিজামুল হক বিপুল ও প্রবাসী সাংবাদিক মুনজের আহমদ চৌধুরী সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা, সাপ্তাহিক পত্রিকা, টেলিভিশন ও অনলাইন গনমাধ্যমে কর্মরত শত শত সংবাদকর্মী। যারা নিজের জীবন বাজি রেখে মূল ধারায় কাজ করে যাচ্ছেন। তারা নিজের জীবনের চেয়ে পেশাগত মর্যাদাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তারাই সাগর-রুনির উত্তরাধিকারী হয়ে থাকবেন।
তাই আসুন আমরা দেশ ও জাতির কল্যাণে, দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজের পেশাগত মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে এ থেকে বেরিয়ে এসে মূল ধারায় কাজ করি।
মন্তব্য করুন