ঐতিহাসিক ৭ই মার্চকে জাতীয় দিবস ঘোষনার দাবীতে লন্ডনে সেমিনার
খায়রুল আলম লিংখন॥ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের প্রতিটি বাক্য একেকটি কাব্যের রসদ ধারণ করে, প্রতিটি বাক্য দিয়েই লেখা যায় একেকটি কাব্য- এমন মন্তব্য করেছেন কিংবদন্তী সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।
মঙ্গলবার ৭ই মার্চ বিকেলে পূর্ব লন্ডনের একটি কমিউনিটি সেন্টারে গবেষণা প্রতিষ্ঠান‘সেভেন্থ মার্চ ফাউন্ডেশন’(7th March Foundation) আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘সেভেন্থ মার্চ ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক কাউন্সিলার নুর উদ্দিন আহমেদ। যুব সংগঠক জামাল আহমেদ খানের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে মূল আলোচক ছিলেন একুশের গানের রচয়িতা বিশিষ্ট কলামিস্ট সাহিত্যিক সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী। আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রবীন সাংবাদিক, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ ভাষণের প্রত্যক্ষদর্শী আবু মুসা হাসান, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মি আনসার আহমেদ উল্লাহ, সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশা, সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা ফয়েজুল ইসলাম লস্কর, মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন, কয়েস চৌধুরী ও কার্ডিফ থেকে আগত কমিউনিটি সংগঠক ও সাংবাদিক মকিস মনসুর আহমদ প্রমূখ। কবিতা আবৃত্তি করেন এডভোকেট মুজিবুল হক মনি ও রুবি হক। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক আবু সাঈদ, মোস্তফা কামাল মিলন, আলিমুজ্জামান, সাংবাদিক আহাদ চৌধুরী বাবু, আলী আহমদ, শারমিন ফারিহা, জুলিয়া বাসার, হাসিনা হোসাইন তুহিন, রীনা মোশাররফ, সৈয়দ নিয়াজ আহমদ, সাংবাদিক শাহ মোস্তাফিজুর রহমান বেলাল, অজন্তা দেব রায়, শাহ সাফি কাদির, হেলাল আহমদ এম এ রউফ ও রহমত আলী প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্যে সাবেক কাউন্সিলার নুরুদ্দিন আহমদ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চকে জাতীয় দিবস ঘোষনার পক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।
মূল আলোচকের বক্তব্যে আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটিই ছিলো মূলত আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা। ভাষণের প্রতিটি কথায় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার ভেতরে থেকেই বিভিন্ন ভঙ্গিতে জাতিকে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার সংকেত দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি শুধু মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিই করেনি, আওয়ামী লীগের একটি অংশও এর বাইরে নেই, এমন অভিযোগ করে জাতীর জনকের ঘনিষ্ট এই প্রবীন সাংবাদিক বলেন, সম্পূর্ণ নিজের মন থেকে তাৎক্ষনিক এই অলিখিত ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। অথচ সিরাজুল আলম খানসহ অনেকেই বিভিন্ন ভাবে এই ভাষণ নিজেরা তৈরী করে দিয়েছন, এমন দাবি করেছেন পরবর্তীতে। বাস্তবতা হলো রেসকোর্স ময়দানে আসার আগে বেগম মুজিব তাঁকে জোড় করে শোবার ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বলেছিলেন ‘এখন একটু বিশ্রাম নাও, তোমার মন যা বলে, সমাবেশে গিয়ে তাই বলো’। গাফ্ফার চৌধুরীর অভিযোগ, ‘ইতিহাস আড়াল আওয়ামী লীগও কম করেনি’। কলকাতার মুজিব নগর সরকারের সদর দপ্তর, রেসকোর্স ময়দান যেখানে বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন, সেইসব ঐতিহাসিক স্থাপনা এখনও রাষ্ট্রিয় ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষনের কোন উদ্যোগ নেই আওয়ামী লীগ সরকারের। তিনি বলেন, কলকাতার মুজিব নগর সদর দপ্তর, মেহেরপুরের আম্রকানন ও প্রবাসী মুজিব নগর সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত এই ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেমন যেন এক উদাসিনতা। অতি উৎসাহি চাটুকারদের কারণে বঙ্গবন্ধুকে অনেক খেসারত দিতে হয়েছে এমন মন্তব্য করে প্রবীন সাংবাদিক গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার আঁশে পাশেও এখন এই চাটুকারদের অবস্থান দেখতে পাচ্ছি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ পৃথিবীর ৭টি শ্রেষ্ট ভাষণের একটি। অথচ কালার করার নামে এই ভাষণটিও কাট-পেইষ্ট করা হয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন আমার কাছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ কেউ সম্পাদনা করবে বা কাট পেষ্ট করে আগের অংশ পরে, পরের অংশ আগে দেবে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাসীন সময়ে এমন স্পর্ধা আমি কল্পনাও করতে পারিনা। আমেরিকার গ্রেটিসবার্গে ‘অফ দ্যা পিপল, বাই দ্যা পিপল, ফর দ্যা পিপল‘ লিখা আব্রাহাম লিঙ্কনের ভাস্কর্য দেখার নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে গাফফার চৌধুরী বলেন, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঠিক এমনি বঙ্গবন্ধুর একটি ভস্কর্য থাকবে, যার নিচে লেখা থাকবে দুনিয়া কাঁপানো তাঁর সেই ভাষণের অংশ ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম‘ এই স্বপ্ন আমি দেখছি গ্রেটিসবার্গ দর্শনের পর থেকেই। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে যে সরকার, বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বাধীন সেই সরকারের এ বিষয়ে কোন উৎসাহ দেখতে না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন বলে অভিমত ব্যাক্ত করেন.। সেমিনারে সেন্ট্রাল লন্ডন ছাড়া ও বৃটেনের বিভিন্ন শহর থেকে প্রচুর লোকের সমাঘম ঘটেছে.।
মন্তব্য করুন