ঐতিহ্য রক্ষা : কমলগঞ্জের শমশেরনগরে শিক্ষার্থীরা নতুন করে নির্মাণ করলো ইরানী তোরণ

January 26, 2017,

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ সুদুর মোগল ও পরবর্তী ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর। এলাকাটি সমাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ক্রীড়া ও শিক্ষা সব দিকেই এগিয়ে ছিল। প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত শমশেরনগরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা এখানে একটি বিমান বন্দর স্থাপন করেছিল। ভারত বর্ষে ব্রিটিশরা চায়ের গোড়াপত্তনকালে শমশেরনগরে স্থাপন করেছিল ইনডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন (আইটিএ)-র সদর দপ্তর।
এখানে পদার্পন করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ খ্যাতিমানরা। কুলাউড়ার লংলার জমিদার আলী আমজাদের বংশধর নওয়াব আলী হায়দর খাঁন ও নওয়াব ্আলী আজগর খাঁনের বিশেষ আমন্ত্রণে এদের মাঝে ১৯৫১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ইরানী রয়েল ইয়ার ফোর্সের একটি বিমানে শমশেরনগর বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। শমশেরনগর বিমান বন্দর থেকে লাল গালিচা স্থাপন করে রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিশেষ ট্রেনে নওয়াব বাড়ি গিয়ে ছিলেন ইরানের সে সময়কার শাহেন শাহ রেজা পাহলভী। এসময় শাহেন শাহের সফর সঙ্গী ছিলেন খাজা নাজিম উদ্দীন, ইসকান্দার মির্জা ও আয়রনম্যান খ্যাত আ্ইয়ূব খান। সে সময় ইরানের শাহেন শাহের সম্মানে শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ইট পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল একটি তোরণ। ইরানী তোরণ হিসাবে যার পরিচয়। অনুরুপ কিছুটা ছোট আকারের আরও একটি তোরণও নির্মিত হয়েছিল লংলা রেলওয়ে স্টেশন এলাকায়।


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শমশেরনগরে আরও পদার্পন করেছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোওরায়ার্দি, ইরানের শাহেন শাহ রেজা পাহলভী, জহরলাল নেহরু, নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু, মাওলানা জাফর আহমদ উসমানী, স্বভাব কবি মুকুন্দ দাস, কমরেড তোয়াহা, জুলফিকার আলী ভুট্রো ও শিল্প আব্বাস উদ্দীনসহ খ্যাতনাম গুনিজন।
ইরানী তোরণকে অনেকেই শমশেরনগর গেইট হিসাবে আখ্যায়িত করে। তবে কালে ভদ্রে ইট পাথরের একটি তোরণ ক্ষয় হতে থাকে। ডান দিকের তোরণটি গত তিন বছর আগে সিমেন্টবাহী একটি ট্রাকের আঘাতে ফাঁটল ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে স্থানীয়রা ভেঙ্গে ফেলে। পরে কয়েক দফা উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ মিলে নতুন করে তোরণ নির্মাণ করার কথা ভাবলেও আর সে কাজ হয়ে উঠেনি। তবে শমশেরনগর প্রাক্তন পূনর্মিলী-২০১৭কে কেন্দ্র করে স্থানীয় এ এ টি এম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০০১ সনের এসএসসি ব্যাচের ২৭ জন শিক্ষার্থী মিলে নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের অর্থায়নে ভেঙ্গে পড়া স্থানে নতুন করে একটি তোরণ ও বাম দিকের তোরণটিও সংস্কার করে। সংস্কার করে তোরণের দুই অংশেই টাইলস স্থাপন করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। আবার দুই দিকেই পাথরে খোদাই করে বাংলা ও ইংরেজী বর্ণে এই ইরানী তোরণ স্থাপনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিখে রেখে এই ঐতিহ্য রক্ষার উদ্যোগ গ্রহন করেছে। ২৭ জন শিক্ষার্থীর সবাই এখন কোন না কোনভাবে দেশে বিদেশে চাকুরী করছে। তারা জনপ্রতি ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা করে প্রাই দুই লাখ টাকা ব্যয় করে দিন রাত নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে তোরণটি সংস্কার করেছে। তোরণের গায়ে লিখে রাখা হয়েছে, এখানে কোন প্রকার পোষ্টার লাগানো যাবে না।
ঐতিহ্য রক্ষার এই গুরু দায়িত্ব পালন করেছে যারা তা হচ্ছে ডা: আব্দুল্লাহ ইবনে রশীদ চৌধুরী, নাজমীন নাহার চৌধুরী, জয়দ্বীপ পাল, রাসেল চৌধুরী (প্রবাসী), মিসকাত, দীপন, শাহীন, মিজান, খোকন, তমাল, সুমী, তমিজ, পার্থ, দুর্গেশ, সন্তোষ, রাজীব, লোপন, মাহফুজ, তানিয়া, মো: রুমমেজ,বায়েজ, করিম, সাজু, তাহমিনা, কবির, কায়েছ ও রোকশানা। এদের মাঝে দিন রাত উপস্থিত থেকে তোরণ নির্মাণ কাজে তদারকিতে থাকা রাসেল চৌধুরী ও লোপন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে শমশেরনগরের গৌরবময় ভূমিকা রয়েছে। আর ইরানী তোরণটি শমশেরনগরের ইতিহাসের একটি অংশ। ইতিহাস ঐতিহ্য ধরে রেখে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার তাগিদে তারা এ কাজটি করেছেন। তারা মনে করেন ইউনিয়ন পরিষদ ও বা উপজেলা প্রশাসন এর আগেই এ উদ্যোগ নিতে পারতেন।
২৭ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়ে এ তোরণ উদ্বোধন করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com